আমি তো আছি

আমি তো আছি
✍কাজরী মজুমদার
ত্রিপর্ণা খুব শখ করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন “তিস্তা” ।জীবনে চলার পথে তার মেয়ে যেন নদীর ধারার মতো বয়ে যেতে পারে,উন্মুক্ত,খোলা হওয়ায় এটাই তার স্বপ্ন।মেয়ের ওপর জোর করে কিছু করানোর কোনো ইচ্ছাই ত্রিপর্ণার ছিল না।আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সন্তানদের সব বিষয়ে পারদর্শী করে তোলারও ত্রিপর্ণার মানসিকতা নয়।তবে হ্যা,মেয়ে নিজের ইচ্ছায় কিছু শিখতে চাইলে অবশ্যই সে মেয়েকে তা শেখাবেন।এসব ব্যাপার নিয়ে ত্রিপর্ণা আর সৌমেনের অনেক আগেই কথা হয়ে গেছে।সৌমেনের আরো একটি সন্তানের আশা ছিল,তবে ত্রিপর্ণা তাকে পরিষ্কার জানিয়েছিল যে সে দুটি সন্তানকে তার একশোভাগ ভাগ করে দিতে পারবেন না।সে সৌমেনকে জানিয়েছিল তার মেয়েকে সে মানুষের মতো মানুষ করে দেখাবে,তার মানে প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ করে না।একজন সভ্য, ভদ্র,ভালো মনের মানুষ করে।তিস্তার বয়স এখন ছয় শেষ হয়ে সাতে পড়েছে।তিস্তা নামটা ত্রিপর্ণারই দেওয়া আর সৌমেনের দেওয়া ডাক নাম “রিয়া”।একদিন……
রিয়া,রিয়া….ওঠ না সোনা….রিয়া
-আজ তো সানডে মাম্মা,আজকে কেন উঠবো?
-ওঠ সোনা,আমার কথা আছে তোর সাথে
-আহ….. এখন তো সবে সাতটা বাজে, কেন মেয়েটাকে ডাকছো?
-কিছুই তো খবর রাখো না,বুঝবে কি করে?
-কি হয়েছে কি?
-কি হয়েছে?….দেখো….পড়ো এই পেইজটা,কি দিয়েছে পেপারে
-কই দেখি
কিছুক্ষণ পর
-রিয়া….মা একটু ওঠনা মা,পরে আবার শুয়ে পড়িস
-পাপা তুমিও ডাকছো?আজ তো আমার ঘুম ডে
-হ্যা মা,আবার ঘুমাশ এখন একটু ওঠ
কয়েক মুহূর্ত পর রিয়া চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসে
-কি পাপা?
-মাম্মা বলবে,কই বলো?
-বলছি কি রিয়া,তোর স্কুলে কি কোনো স্যার ,বা অন্য লোক কি তোদের ক্লাসে আসেন?
মেয়ে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে মার দিকে তাকিয়ে…
-মাম্মা কি বলছে বুঝঝিস মা?
তাও মেয়ের মুখে কোনো কথা নেই,ভ্রু কুঁচকে পা চুলকিয়ে যাচ্ছে
-(মেয়ের পাশে বসে আদর করে মেয়ের চুল ঠিক করতে করতে)বল না সোনা?ক্লাসে….
-আসে তো!
-স্যার কখনো তোকে কাছে ডেকে কিছু বলেছে?
-হ্যা বলেছে
-কি বলেছে সোনা?
-আমি কি জানি?
-তুই যে এক্ষুনি বললি স্যার কিছু বলে,কি বলে?
-স্যার বলে আমি গুড গার্ল
-আর কি বলে?
-এবার আমি ঘুমাই পাপা?
-শোন না সোনা,স্যার কখনো তোকে নিয়ে কোথাও গেছে?
-(বাবা) এসব কি বলছো ওকে?এখন থাক ,এবার ওকে শুতে দাও,ওকি এসব বুঝবে ,যে তুমি ওকে এসব জিজ্ঞেস করছো?
-জানি ও বুঝবে না,কিন্তু থাক বললে হবে না
মেয়ে ততক্ষনে বাবার গা ঘেষে শুয়ে পড়েছে।মেয়ের গায়ে পাতলা একটা চাদর ঢেকে,নিজের খোলা চুলটা হাতখোপা করতে করতে ত্রিপর্ণা রান্না ঘরে চলে গেল।রবিবারটা রিয়া আর তার বাবার ঘুম ডে তাই প্রায় সাড়ে ন’টায় ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে তিনজনে সকালের জল খাবারের জন্য বসে,রিয়া মাকে বলে উঠলো….
-মাম্মা আমি এখন স্কুলের হোম-ওয়ার্কটা করে নেব তারপরে কিন্তু টিভি দেখবো,আজ ডোরেমনের একটা মুভি হবে
রিয়া তার মাকে ভালোই চেনে,সে জানে তার হোম-ওয়ার্ক হয়ে গেলে মা আর টিভি দেখতে বারণ করবে না তবে কাজ ফেলে রেখে টিভি দেখলে তার মার বকা তাকে শুনতেই হবে।
-আজ তোকে পড়তে হবে না
-পড়তে হবে না?
রিয়া যেন নিজের কানে শোনা কথাও বিশ্বাস করতে পারছিল না
-হ্যা,পড়তে হবে না।তবে মুভি দেখার আগে ওই সময়টা আমরা গল্প করবো
-কি গল্প?
-কত গল্প থাকে না,মা মেয়ের
-মা মেয়ের?তাহলে পাপা শুনবে না?
-না
-কেন?না!পাপা না শুনলে আমিও শুনবো না
-আচ্ছা ঠিক আছে,আমরা একটা গেইম খেলবো।আমি তোকে যা যা বলবো,তুই গিয়ে পাপাকে বলবি,আবার পাপা এসে আমায় বলবে।তারপর আমি আবার তোকে পাপার কথাটা বলবো।তারপরে আমি বুঝতে পারব আমি তোকে যা বলবো তুই কতটা বুঝেছিস আর তুইও বুঝবি তোর কথা কতটা পাপা বুঝেছে।তার ওপর পয়েন্ট হবে
-না!এটা কোনো ভালো খেলা না,এটায় কোনো প্রাইজও নেই
-(বাবা) আছে তো,যদি তুই জিতে যাস তাহলে যেই ডলটা বিগ বাজারে দেখিয়েছিলি সেটা নেক্সট উইকে আমি নিয়ে আসবো
-সত্যি আনবে?
-হম্
-চলো মাম্মা আমরা মা মেয়ের গল্পটা পাপাকে লুকিয়ে লুকিয়ে করি
জলখাবার খাওয়া শেষ হতে না হতেই ত্রিপর্ণার রান্নার মাসি বকুল এসে হাজির।ত্রিপর্ণা উঠে বকুলকে কি কি করতে হবে বুঝিয়ে দিয়ে রান্না ঘরের লাগোয়া ডাইনিং হলে এসে দেখলো ততক্ষনে সৌমেন ব্যালকনিতে পেপারটা পড়তে বসে গেছে আর রিয়ার তখনও খাওয়া শেষ হয় নি।একটুই বাকি ছিল,তাই ত্রিপর্ণা বললো খিদে না থাকলে আর না খেতে।রিয়ার আজ মার সব কথাই খুব অবাক লাগছিল।যেই মা দিনরাত তাকে একটুও খাবার ফেললে বকে,বলে একটুও খাবার ফেললে ঠাকুর রেগে যায় আর পরে ঠাকুর খেতে দেয় না,সেখানে মা বলছে বাকিটা না খেলেও চলবে? রিয়া আর কিছু মুখে না বলে ছুট্টে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে মার নাইটিতে মুখটা কোনোমতে মুছেই….
-এবার খেলবে তো?
-আয় আমার কাছে বোস
বকুল গত কয়েক বছর ধরেই ত্রিপর্ণাদের বাড়িতে রান্নার কাজ করে।মোটামুটি ভালোই রান্না করে।ব্যবহারও বেশ ভালো,সৎ তবে একটাই দোষ ছিল ,ঘরে কে কি বলছে,সব কান পেতে শুনতো।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না,রান্নার কাজের মাঝে কান খাড়া করে ত্রিপর্ণাদের কথা শুনতে থাকলো।
-আচ্ছা বল্ তো রিয়া আমাদের কটা বডিপার্টস আছে?
-আইস,নৌস,হেড…..
রিয়া খুব মন দিয়ে মনে করে করে মাকে সব বললো,শেষ হওয়ার পর
-ভেরি গুড সোনা, এবার বলি শোন, আমাদের সব বডিপার্টস দু ভাগে ভাগ করা ,গুড আর ব্যাড
-ম্যাম তো এরকম বলে নি
-জানি ম্যাম বলেন নি।ম্যামরা এসব বলেন না,এসব মা মেয়ের কথা।দ্যাখ তুই যে বডিপার্টসের কথা বললি সেগুলো গুড। সেগুলোতে কারো হাত লেগে গেলে, সেটা রাস্তার যে সিগনাল থাকে সেই সিগনালের সবুজ রঙের মতো হবে ,মানে এটা কোনো চিন্তার কিছু নয়।কিন্তু আমাদের শরীরে যে তিনটি ব্যাড বডি পার্টস আছে সেটায় যদি কারোর ছোঁয়া লাগার পর সে সরি বলে বুঝতে হবে যদিও এটা ভালো না কিন্তু সে একবারেই সরি বলছে তাহলে সিগনালের ইয়েল্ল লাইটের মতো কিছু না হলেও সজাগ থাকতে হবে আর যদি কেউ ওই তিন জায়গায় সরি বলুক আর না বলুক তাও বার বার হাত দেয় তাহলে সিগনালের লাল লাইটের মতো রেগে লাল হয়ে যেতে হবে,তবে সেটা মনে মনে এবং মাম্মাকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে
-কোন তিনটে বডি পার্টস?
ত্রিপর্ণা খুব বিস্তারিত ভাবে মেয়েকে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনটি বিশেষ বডি পার্টসের কথা বললো,ছোট্ট রিয়া,অবাক হয়ে মার কথা শুনছে আর ভাবছে,এত কথা কি সে ঠিক করে পাপাকে বলতে পারবে? তার মানে কি তাহলে ডলটা পাবে না রিয়া? যদিও রিয়া এসব কথায় কোনো উৎসাহ পাচ্ছিলো না কিন্তু
ডলের লোভটাও তো সে ছাড়তে পারছে না তাই আবার মন দিয়ে মার কথা শুনতে লাগলো
-একটা কথা সব সময় মনে রাখবি,তোর যদি ঐ তিন জায়গায় আমরা কেউ কখনো ভুল করে হাত লাগিয়ে ফেলি তাহলে আমাদেরও সরি বলতে হবে,যদি না বলি তাহলে তুই বুঝবি আমরা ভালো লোক নই।আর যদি সঙ্গে সঙ্গে সরি বলি তাহলে তখন তুই বুঝবি আমাদের ভুল করে লেগে গেছে।সে তোর মা হোক আর বাবা হোক। এই সব ব্যাপারে যদি সজাগ না থাকিস তখন ঠাকুর খুব কষ্ট পায় ,ভাবে আমার দেওয়া শরীরের কোনো খেয়াল রাখে না?তখন ঠাকুর রেগে গিয়ে এমন শাস্তি দেয় যে পরে হসপিটালে ভর্তি হতে হয়
-ঠিক আছে মাম্মা,আমি রেড লাইটের মতো কেউ কিছু করলে তোমায় আর গডকে বলে দেব
-গুড সোনা,কিন্তু গডও খুব চালাক হয়,তাই পরীক্ষা করার জন্য অনেক সময় দুষ্টু লোক পাঠাবে।ধর গড কখনো ম্যাজিক করে স্যারের ভিতরে, কিম্বা দাদার ভিতরে,কিম্বা কাকুর ভিতরে দুষ্টু লোক ঢুকিয়ে দিলো আর তারা তোকে আদর করে টফি দিয়ে বা ডল দিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে গেল আর সেখানে নিয়ে ব্যাড বডি পার্টসে হাত দিয়ে বললো বাড়িতে কাউকে কিছু বলবে না,তাহলে কিন্তু তোমার মাকে এই করবো,তোমার বাবাকে ওই করবো ,আরো অনেক কিছু বলে ভয় দেখাবে ,তখন তুই বলবি “না আমি কাউকে কিছু বলবো না”,কিন্তু বাড়িতে এসে সবার আগে মাম্মাকে বলবি,মাম্মা না থাকলে পাপাকে বলবি।
         যখন তোর কিছু বিপদ হয় তখন গড তোর মাম্মা পাপাকে সব থেকে বেশী শক্তি দেয়।যেমন ধর রোজ মাম্মার রাতে খুব ঘুম পায় ,চোখ খুলে রাখতেই পারে না কিন্তু যখন তোর জ্বর বা কোনো বেশী কিছু শরীর খারাপ হয় তখন?তখন গড এমন শক্তি দেয় মাম্মার চোখে ঘুমই আসে না,সারা রাতই জেগে থাকে।একটা কথা সারাজীবন মনে রাখবি মাম্মা তোর জন্য অনেক বড় যুদ্ধ করতে পারে,আর মাম্মা পাপা একসাথে থাকলে সারা দুনিয়ায় আমাদের কেউ হারাতে পারবে না কিন্তু লড়তে গেলে জানতেতো হবে গড কোন দুষ্টু লোক পাঠিয়েছে
এবার রিয়ার মুখটা কেমন হয়ে গেল,বললো….
-মাম্মা আমি আর পাপার থেকে ডলটা পাবোনা।আমি এত কথা পাপাকে বলতেই তো পারবো না,আমি হেরে গেলাম
-না হারিশ নি,আমার কটা প্রশ্নের উত্তর দে তাহলে বাকিটা আর খেলতে হবে না আর তুই ডলও পেয়ে যাবি
-তাই?বলো কি?
-আমাদের তিনটা ব্যাড বডি পার্টস কোন কোনটা?
-***** ,  ******,   ******
-গুড, কখন আমরা বুঝবো যে লোক বা মহিলা বা যেই হোক সে ভালো না?
-(একটু ভেবে) যখন কেউ ওখানে হাত লাগার সঙ্গে সঙ্গেও সরি বলবে না
-(মেয়েকে জড়িয়ে আদর করে) এই তো আমার রিয়া সোনা সব শিখে গেছে।এবার বল কখন বুঝবো আমরা যে ঠাকুর দুষ্টু লোক পাঠিয়েছে?
-যখন আমায় বলবে মাকে বলবে না,বাবাকে বলবে না
-হ্যা, একদম ঠিক।কিন্তু তোকে একটা কথা বলা হয় নি।আজ থেকে তোর আমার আর পাপার মধ্যে একটা পাস ওয়ার্ড থাকবে,মানে মাম্মা যেমন ফোন লক করে রাখে ,যখন খুলতে হয় তখন পাসওয়ার্ড দিলে খুলে যায় ঠিক তেমন।আচ্ছা বল তুই কোন খেলাটা খেলতে সব থেকে বেশী ভালোবাসিস?
-আমি?……ম……ম……টিচার টিচার বোর্ডে লিখে লিখে
-ঠিক আছে আজ থেকে আমাদের তিনজনের পাসওয়ার্ড হবে “টিচার”।মানে ধর কখনো কোনো চেনা লোক বা অচেনা কেউ তোর স্কুলে গিয়ে বললো তোমার বাবা তো অফিসের কাজে বাইরে গেছে,তোমার মার খুব শরীর খারাপ ,তোমার মা আমার সাথে তোমায় বাড়ী যেতে বলেছে,ধর সে আমাদের আত্মীয় বা পাশের বাড়ীর কেউ।তুই জিজ্ঞেস করবি”মাম্মা আরো কিছু বলেছে?” যদি সে তোকে বলে হ্যা বলেছে”টিচার” বলতে,বুঝবি ওকে আমি সত্যিই পাঠিয়েছি তাই ও আমাদের পাসওয়ার্ড টা জানে আর যদি “টিচার” বলতে না পারে বুঝবি সে মিথ্যা কথা বলে তোকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে ।তখন তুই তার সাথে কিছুতেই যাবি না,আমার বা পাপার অপেক্ষা করবি বা স্কুলের ম্যামদের বলে দিবি।মনে থাকবে সোনা?
-এখন তো থাকবে,কিন্তু মাম্মা আমি পরে যদি পাসওয়ার্ড ভুলে যাই
-কেন ভুলবি, মাম্মা তোকে ভুলতেই দেবে না,রোজ আমি তোকে একবার মনে করিয়ে দেব(মেয়েকে টেনে নিজের কোলে নিয়ে আদর করে) আমি এই কথা গুলো মাঝে মাঝেই তোকে বলবো ,যাতে তুই ভুলে না যাস।তবে কখনো কিছুতে ভয় পাবি না রিয়া।মাম্মা গডের থেকে তোকে নিয়ে এসেছে তাই তোর সব কিছু মাম্মা বোঝে,বুঝবে,যে যাই করুক মাম্মা সব সময় তোর পাশে থাকবে,মাম্মা তোর জন্য সব করতে পারে,তোকে শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে,সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে,আর সব কথা মাম্মাকে জানাতে হবে,দেখবি গড এত খুশি হয়ে যাবে যে তুই যা চাইবি তাই পেয়ে যাবি
-মাম্মা গেইম শেষ?
-হ্যা সোনা শেষ
-এখন তাহলে পাপাকে গিয়ে কিছু বলতে হবে না?
-পাপাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর মাম্মা বলেছে আমার সব কিছুর জন্য সব সময় মাম্মা থাকবে,তুমিও থাকবে তো পাপা?
রিয়া ছুট্টে চলে গেল পাপার কাছে,এত ছোট মাথায় এত ভারী ভারী কথা …..পালিয়ে রিয়া যেন বাঁচলো।
ত্রিপর্ণাও যেন একটু শান্তি পেলো এত কিছু মেয়েকে বলে আর মেয়ের উত্তর শুনে।এবার রান্না ঘরে গিয়ে বকুল মাসি কি করছে দেখতে গিয়ে দেখে বকুল মাসির অনেক কাজ বাকি,ত্রিপর্ণা একটু বিরক্ত হয়েই বললো….
-একি!এখনোও তো তোমার কিছুই হয় নি?কি করছিলে এতক্ষণ?
-দিদি আমি ,মানে….. আমি তোমার কথা শুনছিলাম
-আমার কথা শুনেছিলে মানে?
-ওই যে তুমি সোনামণিকে বোঝাচ্ছিলে?
-এবাবা তুমি সব শুনেছ নাকি,তাহলে তো পাসওয়ার্ড টা পাল্টাতে হবে
-হ্যা শুনেছি।তুমি তো জানো আমার অনেক দেরিতে বিয়ে হয়েছে তাই আমার ছেলে মেয়ে আমার বয়সের তুলনায় অনেক ছোট।তুমি যখন সোনামণিকে ওসব বলা শুরু করেছিলে তখন আমার মনে হলো ছিঃ ছিঃ তুমি মা হয়ে এত ছোট বাচ্চাকে কি সব বলছো,কিন্তু তোমার সব কথা শুনে মনে হলো সত্যিই আমাদের সবার মেয়েদের এভাবে শিখিয়ে রাখা উচিৎ, তাই মন দিয়ে তোমার কথা শুনছিলাম
-আচ্ছা ঠিক আছে ,তুমিও বাড়িতে গিয়ে ওদের এভাবে বলো
-না দিদি,আমি মেয়ের সাথে এসব বলতে পারবো না ,আমার খুব লজ্জা করবে
কথাটা শুনেই ত্রিপর্ণার হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেল….
-লজ্জা করবে?কিসের লজ্জা?তোমাদের এসব নেকমির জন্য বাচ্চা গুলো আগে থেকে কিছু জানতে পারে না আর এসব নানা রকমের বিপদে পরে।যখন ওদের সাথে একটা বিপদ ঘটে যাবে তখন তুমি পারবে তো সহ্য করতে,পারবে তো সব ঠিক করে দিতে,তখন তোমার লজ্জা করবে না?
-দিদি রাগ করো না,আমি কি পড়াশুনা করেছি?আমি কি তোমার মত এত কিছু জানি? তোমায় একটা কথা বলবো দিদি?
-কি বলো?
-আমার মেয়েকে একদিন নিয়ে আসবো,তুমি একদিন ওকেও ভালো করে বুঝিয়ে দেবে?
-(কিছু মুহূর্ত বকুলের দিকে তাকিয়ে) ঠিক আছে দেব
-তুমি বলো কবে মেয়েকে নিয়ে আসবো?
-শুধু মেয়েকে নিয়ে আসবে কেন?তোমার ছেলেও তো ছোট ওকেও নিয়ে আসবে। তুমি জানো ছেলেদের সাথেও যে অনেক কিছু হয়?
-ছেলেদের সাথেও?
-হ্যা ,তবে মেয়েদের মতো এত হয় না। আসলে শিশুগুলো এত কষ্ট পায় বা সহ্য করে কেন জানো? ভয়ে,লজ্জায়।অসহায় শিশুগুলোকে যদি আগে থেকেই আমরা নানা পরিস্থিতির কথা বলে রাখি আর ওদের পাশে আছি ওদের বিশ্বাস দি তাহলে এত কিছু হয় না।তুমি পড়াশুনা করোনি তো কি হয়েছে ?তুমি তো মা, তুমি নিজের ছেলে মেয়েকে প্রমাণ করে বোঝাতে পারবে না,যে তুমি ওদের পাশে সব সময় আছো? আমরা বাইরের খারাপ কিছু ঠিক করতে পারবো না ঠিকই কিন্তু নিজের অমূল্য সম্পদটাকে তো আগলে রাখতে পারি।যখন আমরা সব বাবা মায়েরা এভাবে আগলে আগলে রাখবো তখন খারাপ কিছু তাদের ছুঁতে ভয় পাবে।
             মায়েদের একটা কথাতেই সন্তানরা মনে অনেক বেশী শক্তি পায় ,যদি আমরা বলি”আমি তো আছি”

Loading

Leave A Comment