গোলাপ বালা
-শিবানী গুপ্ত
রানাঘাট লোক্যাল ট্রেনটা চাকদহ স্টেশনে থামতেই আমি উৎসুক। আমার চঞ্চল চোখদুটো আতিঁপাতি খুঁজে ফেরে অতি সুকুমার লাবনীঢলঢলে একটি মুখ। যার আয়তচোখের কাচে জলের স্বচ্ছতা, বিশ্বের সরলতা যার মুখের পরতে পরতে পরিস্ফুট। এদিক -ওদিকে চোখদুটো সার্চলাইটের মতোচরকি কেটে চলেছে, শুধুমাত্র একখানি পেলব মুখশ্রী। কি ব্যাপার! কাউকে তো দেখছিনা! এমনতো হবার কথা না, খবর তো দিয়েছিলাম, আমার যাবার সংকেত দিয়ে, তবে! স্টেশনে গাড়িটা প্রতিদিন পাঁচমিনিটের জন্য থামে, সময়তো হয়ে এলো, এখুনি ট্রেনটা চাকদহ থেকে বেড়িয়ে যাবে। কেমন আঁকুপাকু করে ওঠে মনটা, তবেকি, কোন সমস্যা এসে পড়লো! তাইকি আসতে পারছে না? বলেছিলাম, আমি রানাঘাট লোক্যাল ধরে কৃষ্ণনগর যাবো, কখন যাবো তাও বলেছিলাম। শুধু ওকে একটিবার চোখের দেখা দেখবো বলেইনা এপথে আসা—- রেলে লাউডস্পীকারে ট্রেন ছাড়ার সংকেত ঘোষনা হচ্ছে——– একটা অস্থির উচাটনের ঢেউ, একটা অদ্ভুত কষ্টের তীব্র মোচড় টের পাচ্ছি বুকের ভেতর, নিরাশার বালুচরে কি তবে কোন মরুদ্যান নেই! আমি কি খুব বেশী প্রত্যাশা করে ফেলেছি! হয়তো, আমারই অবিমৃষ্যকারিতার ফলশ্রুতি—- ট্রেন হুঁইসেল দিল। বেপরোয়া গোয়ার্তুমিই করে বসলাম কি, এতোবেশী প্রত্যাশা করা কি সমুচিত হলো! একটা ঝাকুনী দিয়ে মন্থর গতিতে ট্রেন চলতে সুরু করতেই বেপরোয়া অবুঝ চোখদুটো বুঝি ঝাপসা হতে যাচ্ছিল — এ্যাই যে, শুনছেন?প্লিজ ,একটু শুনুন —— ট্রেনের গতি তখনও শ্লথ, প্ল্যাটফর্ম চত্বর পেরোয়নি, অতি চেনা সুরেলা কন্ঠের ডাকে চমকে ওঠে জানালার দিকে তাকাতেই মনটা ফুলেল সুবাসে বিভোর —-সোমা! তুমি! ছুটতে ছুটতেই হাত বাড়িয়ে দেয় সোমা—নাও,আজকের দিনে এরচাইতে বড়ো কিছুনেই, তাই, এটাই তোমাকে দিতে এলাম, ধরো —– আমার সমস্ত অন্তর আলোকময়। ।দু’হাত বাড়িয়ে দিলাম অজান্তেই। ট্রেনের বেগ বাড়ার সাথে সাথেক্রমশঃ চারপাশে দৃশ্যাবলী, দোকানপাট, ঝুপরী, এমনকি সোমাও দৃষ্টিসীমার বাইরে —— এবার চোখ সেঁটে থাকে হাতের অঞ্জলিতে ধরে রাখা জিনিষটার দিকে,-একি! এতো টকটকে একটি লালগোলাপ! মুগ্ধতায় নিমেষে মনের আকাশে অনুরাগের রামধনু ঝলসে ওঠে, ওমা, তাইতো, আজতো গোলাপ দিবস! টকটকে লাল গোলাপের কবোষ্ণ নরম গালে আমার অনুরাগের চুম্বন এঁকে দিই পরম সোহাগে় এ যে আমার, একান্তই আমার গোলাপ বালা়।