পঙ্গুত্বের জয়
–সন্দীপা সরকার
কদিন ধরেই রিধিমার শরীর ভালো যাচ্ছেনা ৷ শরীরের উপসর্গ অনুযায়ী সে আশঙ্কা করছে মা হতে চলেছে ৷ অফিস থেকে ফেরার পথে রিধিমা প্রেগনেন্সি টেস্টের কিট কিনে পরদিন সকালেই টেস্ট করে দেখলো পজিটিভ ৷ স্বামী সোহমকে সঙ্গে করে পরদিনই অফিস কামাই করে ছুটলো গাইনোকোলজিস্টের কাছে পুরোপুরি সিওর হতে ৷ প্রাথমিক পরীক্ষায় ডাক্তারও জানালো রিধিমা মা হতে চলেছে ৷ আরো সিওর হতে পরদিন ডাক্তারের কথামত ইউরিন ও ব্লাড পরীক্ষা করতে দিয়ে এল ৷ অফিস সেদিনও গেলনা রিধিমা ৷ বিকেলে সোহমের আসার অপেক্ষা না করেই একলা চলে গেল ডাক্তারের চেম্বারে৷ রিপোর্ট দেখে ডাক্তারের মুখে অভিনন্দনবানী শুনে রিধিমার আর বুঝতে অসুবিধা হলনা সে মা হতে চলেছে ৷ ডাক্তারকে রিধিমা কথাটা শোনার পরই অনুনয় বিনয়ের মাধ্যমে জানাতে লাগলো ওর পক্ষে এখন মা হওয়া অসম্ভব যে ভাবে হোক এটাকে নষ্ট করতে হবে ৷ ডাক্তার সব শুনে জানালেন ৩ মাস হয়ে গেছে এখন আর কিছু করা যাবেনা ৷ আর প্রথম সন্তান সকলেরই বড় আকাঙ্খিত হয়,ওর বয়সটাও একদম ঠিক, শারীরিক কোন বাধাও নেই তাই এসব চিন্তা সরিয়ে ফেলে সুস্থ ভাবে নব জাতক বা জাতিকাকে এই পৃথিবীর আলো দেখাক ৷ রিধিমার কথাটা মনঃপুত হলনা রিপোর্টটা হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে আর একটা নার্সিংহোমের গাইনোকোলজিস্টের সাথে কথা বলল, একই উত্তর পেয়ে হতাশ মুখে বাড়ি ফিরে দেখলো সোহম তখনই বাড়ি ফিরেছে ৷ ওকে সব বলাতে সোহমও এখন বাবা হতে নারাজ ৷ রিধিমা সোহম দুজনেই সমবয়সী ২৬কোটায় বয়স ৷ সহপাঠী থেকে স্বামী-স্ত্রী হয়েছে ৷ দুজনেই উচ্চপদস্থ বিদেশী কোম্পানীতে কর্মরত ৷ রিধিমার কদিন পরই কানাডাতে ট্রান্সফার হওয়ার কথা চলছে ৷ এটা রিধিমার অনেক দিনের স্বপ্ন ৷ এখনই বাচ্চার মা হয়ে সে স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে চায়না সে ৷ সোহমও এত তাড়াতাড়ি কম বয়সে বাবা হতে চায়না ৷ দুজনেরই অমতের ফলে পরপর ৫দিন ধরে তারা বিভিন্ন নার্সিংহোম গুলি ঘুরতে থাকে ৷ মোটা টাকার বিনিময়েও কেউ একাজ করতে রাজি হলনা ৷ কারন এতে রিধিমার জীবন সংশয় হতে পারে এটা ভেবে ৷ শেষ অবধি রিধিমা বাজার চলতি গর্ভপাতের অষুধ গুলো খেতে থাকে ৷ চারদিনের দিন শরীরে তার প্রভাব শুরু হয় ৷ অসহ্য পেটে ব্যথা,বমি,গা ভরে এলার্জি ৷ রাতের দিকে পেটে ব্যথা এত বেড়ে যায় যে রিধিমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ৷ যখন জ্ঞান আসে দেখে নার্সিংহোমের বেডে ৷ পাশে সোহম সহ শ্বশুড় (শুভ্রাংশু বাবু) শাশুড়ি(মলিনা দেবী), ওনারা এই প্রথম জানলেন তাদের একমাত্র ছেলের বউ মা হতে চলেছে ৷ জ্ঞান ফিরেই রিধিমার প্রশ্ন সোহমকে বাচ্চাটা সম্পর্কে ৷ সোহমের উত্তরের আগেই লেডি ডাক্তার খুব রাগান্বিত ভাবে উত্তর দিলেন এ যাত্রা দুজনেই বেঁচে গেছে ৷ এরপর এমন কিছু হলে দুজনকেই আর বাঁচানো যাবেনা ৷ একরাশ ক্ষোভ স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রনা নিয়ে রিধিমা বাড়ি ফিরলো ৷ মলিনা দেবী বা শুভ্রাংশু বাবু এনিয়ে আর কথা বাড়ালেননা ৷ তাঁরা এটা রিধিমার ছেলেমানুষি ভেবে ক্ষমা করে দিলেন ৷ মলিনা দেবী রিধিমাকে যাতে সুস্থ বংশধরের জন্ম দিতে পারে তার জন্য সেবা যত্ন করতে লাগলেন ৷ রিধিমাও আর কোনো গতি না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পাহাড় প্রমাণ রাগ মনে পুষে দশমাসের অপেক্ষা করতে লাগলো ৷
নির্দিষ্ট দিনে রিধিমা মা হল ঠিকই কিন্তু নিজের চরম ভুলের খেসারত দিতে হল নবজাতককে ৷ বাঁ হাতটি তার ছোট ও অবিকশিত হল ৷ স্বাভাবিক নয় ৷ যত দিন গেল বোঝা গেল বাচ্চাটির বাঁ পা-টিও সরু ও প্রায় অসার ৷ ৬ মাস বয়সে ডাক্তার জানালো রিধিমা যে অষুধ খেয়েছিল বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখাবে না বলে,তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শিশুটির বাঁ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৷ শিশুটির জীবনে নেমে এল পঙ্গুত্বের অভিশাপ ৷ একে অযাচিত তার ওপর পঙ্গু, রিধিমার নিজের সন্তানের ওপর কোন প্রকার টান, ভালোবাসা তৈরী হলনা ৷ কোনোদিনও ভালো করে কোলে নিয়েও দেখেনি নিজের প্রথম পুত্র সন্তানকে ৷ ১মাসের বেশী মাতৃদুগ্ধ থেকেও বঞ্চিত থাকলো শিশুটি ৷ রিধিমা বাচ্চা টিকে জন্মের পরও মেনে নিতে নারাজ ৷ মা হওয়ার ১ মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে নিজের অফিস আর বিদেশ যাওয়ার লক্ষ্য পূরনে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলল রিধিমা ৷ সোহমও তার পঙ্গু সন্তানকে মেনে নেয়নি ৷ সেও নিজের কর্মজীবন নিয়েই ব্যস্ত ৷
স্বপ্নিল( রিধিমা আর সোহমের ছেলে)দাদু ঠাকুমার স্নেহ থেকে কিন্তু এতটুকু বঞ্চিত হয়নি৷ নাতির পরিচর্যার সাথে চলল নাতিকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার প্রচেষ্টায় ডাক্তারের খোঁজ ৷ নাতির নামকরনটিও তাদের করা ৷ মা-বাবার যাবতীয় দায়িত্ব তাঁরাই পালন করে চলেছেন ৷ আজ স্বপ্নিলের মুখে ভাত ৷ সব আয়োজন মলিনাদেবী ও শুভ্রাংশু বাবুই করলেন ৷ কোন ত্রুটি রাখলেননা ৷ ধুমধাম করে নাতির অন্নপ্রাশন করলেন ৷
৮মাসের ছেলে স্বপ্নিলকে ফেলে রেখে রিধিমা চলে গেল কানাডাতে ৷ নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ৷ তার ৬মাস পরে সোহমও রিধিমার কাছে ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেল ৷ ছোট্ট স্বপ্নিল মা-বাবার ভালোবাসা কি তা বুঝতে পারলোনা ৷
আধোবুলিতে স্বপ্নিল এখন দাদুকে দাদা আর ঠাকুমাকে ঠামু বলতে শিখেছে ৷ দেড় বছরের স্বপ্নিল দাদুর হাত ধরে আজ প্রথম কিন্ডারগার্টেন গেল ৷ বসে বসেই সে আনন্দ উপভোগ করে,সঠিকভাবে চলতে দৌড়াতে সে পারেনা বাকী বাচ্চাদের মত ৷ এইভাবেই দাদা আর ঠাম্মুর ভালোবাসায় বেড়ে উঠছে সে ৷ আজ তার ৫বছরের জন্মদিন ৷ দাদু ঠাম্মু সেদিকেও কোন ত্রুটি রাখলেননা ৷ ঠাম্মু নাতির জন্য পায়েস রান্না করেছেন ৷ স্কুলের সব বন্ধুদের সে দাদার(দাদুর) কিনে দেওয়া চকলেট বিতরন করলো ৷ বিকেলে পাড়ার,স্কুলের কিছু বন্ধুদের নিমন্ত্রনও করা হল কেক কাটার অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য ৷ স্কুল থেকে এসেই মানদা মাসি(বাড়ির সর্বদা দেখাশোনার লোক) ও দাদার(দাদু) সাথে সে বেলুন দিয়ে বাড়ি সাজাতে বসে গেল সারযুক্ত ছোট্ট একটি হাত দিয়ে যতটা সম্ভব ৷ সে আজ মহা খুশি ৷
সেইদিন দুপুরের দিকে বাড়ির ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো ৷ মলিনা দেবী তুলেই অপর দিকের কন্ঠস্বর শুনে অশ্রুবিগলিত আধো হাসি মাখানো গলায় বললেন:—”আমি জানতাম আজকের দিন তুমি ভুলবেনা,একমাত্র ছেলের ৫ বছরের জন্মদিন কোন মা কি ভুলতে পারে?” ৷ কাছেই স্বপ্নিল বেলুন হাতে দাঁড়িয়ে ছিল,ফোনটা ওর কানে ধরিয়ে দিলেন ৷ রিধিমা ফোনের ওপার থেকে খুব রুক্ষ ভাবে জানালো একটা পঙ্গু ছেলের জন্মদিন নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যথা নেই ৷ কথাটা শুনে স্বপ্নিলের চোখে জল ৷ সে এখন পঙ্গু কথার মানেটা জানে ৷ তা দেখে মলিনা দেবী ফোনটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন রিধিমাকে কি এমন বলল রিধিমা যার জন্য তার প্রাণপ্রিয় দাদুভাইয়ের চোখে আজকের দিনে জল এল ৷ রিধিমা কথাটার পুনরাবৃত্তি করতে মলিনা দেবী শুধু ছিঃ বলে ফোনটা কেটে দিলেন ৷ কি জন্য রিধিমা ফোন করেছিল তা জানার আর চেষ্টা করলেন না ৷ তারপর ৪/৫ বার ফোনটা বেজে গেল মলিনা দেবী একবারও ফোন তুললেন না ৷
স্বপ্নিল এখন প্রথম শ্রেনীর ছাত্র ৷ ডাক্তারী চিকিৎসায় বাঁ পা একটু সচল ৷ তবে সে পুরোপুরি সার পাবেনা কোনদিন এ নির্মম সত্যটিও ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন শুভ্রাংশু বাবুকে ৷ স্বপ্নিলকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাঁতারে ভর্তি করেন শুভ্রাংশু বাবু ৷ কদিনেই স্বপ্নিল সাঁতারটা আয়ত্ত্ব করে নিল ৷ দাদুও স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন নাতিকে বড় সাঁতারু বানাবেন,তাঁর নাতি ইংলিশ চ্যানেল পার করবে ৷ সেই আশার বীজ স্বপ্নিলের মনেও দানা বেধেছে ৷ প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সে আপ্রাণ এগিয়ে যাচ্ছে ৷ প্রতিবছর সে সাঁতারে মেডেল আনে ৷ যে ক্লাবে সে প্রশিক্ষণ নেয় সেই কোচদেরও ভরসা স্বপ্নিল ইংলিশ চ্যানেল পার করতে পারবে ৷ স্কুলেও লেখাপড়ার জন্য সব শিক্ষকদের প্রিয় সে ৷ প্রথম দিকে কিছু সহপাঠী ওর হাঁটা চলা নিয়ে ব্যঙ্গ করতো পরবর্তীকালে শিক্ষকদের বকা ও বোঝানোর পর তারাও এখন ওর ভালো বন্ধু ৷ ছোট থেকে ওর একটাই অভাব মা বাবাকে কাছে না পাওয়া ৷ সব বন্ধুদের সাথে নিজের জীবনের বিস্তর ফারাক ওকে মাঝে মাঝে হতাশ করে ফেলতো খুব ছোট বেলায় ৷ এখন আর স্বপ্নিল মা বাবার কথা জিজ্ঞাসাও করেনা ৷
স্বপ্নিল এখন ১৬ বছরের ছেলে,আজ তার মাধ্যমিকের ফল বেরোলো ৷ পশ্চিমবঙ্গের মেধা তালিকায় দশম স্থান অধিকার করল ৷ তার সাথে লাগাতার প্রশিক্ষণ চলছে আর কদিন পরই ওর ইভেন্ট নিজের ও দাদার(দাদু)স্বপ্ন পূরণ করতে মরিয়া হয়ে দিবা রাত্র এক করে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে ৷ সেদিনই সোহম এতবছর পর বাড়িতে ফোন করলো,অফিস থেকে তাদের আবার কলকাতার অফিসে ট্রান্সফার করে দিয়েছে ৷ তারা ২দিনের মধ্যে কলকাতায় ফিরছে ৷ অফিসের দেওয়া নতুন ফ্ল্যাটে,এই খবরটা জানাতেই এতবছর পর ফোন ৷ মলিনা দেবী কোনপ্রকার উত্তর বা তাদের একমাত্র ছেলের সাফল্যের কথা কিছুই তাকে না জানিয়েই ফোনটা কেটে দিলেন ৷
আর ৬দিন পরই স্বপ্নিলের ইভেন্ট ৷ হঠাৎ সকালে সোহমের ফোনে সবার ঘুম ভাঙলো ৷ মলিনা দেবী ফোন ধরলেন ৷ জানতে পারলেন রিধিমার বড় এক্সিডেন্ট হয়েছে o- রক্ত লাগবে ৷ না পেলে ওকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা ৷ মলিনা দেবী শুভ্রাংশু বাবু পুরোনো সব বিভেদ ভুলে ছেলে বউয়ের এই বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াতে গেলেন ৷ যাওয়ার সময় স্বপ্নিলকেও জানালেন ৷ স্বপ্নিল সব শুনে বলল:—” ঠাম্মু ভুলে গেলে আমারই তো o- রক্তের গ্রুপ” ৷ ঠাম্মু এক চোখ জল নিয়ে নাতির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন:—”তুই রক্ত দিবি দাদুভাই?” স্বপ্নিল হেসে “নিশ্চয় দেব” বলে দাদা আর ঠাম্মুর সাথে নার্সিংহোমে গিয়ে সরাসরি ডাক্তারকে জানালো ওরও o- রক্ত ৷ সেই শুনে তাড়াতাড়ি সরাসরি রিধিমাকে স্বপ্নিলের থেকে রক্ত দেওয়া হল ৷ নিজের কাজ শেষ করে শুধু দাদা আর ঠাম্মুকে আসছি বলে বাড়ির দিকে রওনা দিল ৷ ফ্যাল ফ্যাল করে সোহম ছেলেকে দেখতে লাগলো ৷ দেড় বছরে যাকে সে শেষ বারের মত দেখেছিল ৷ লজ্জায় ছেলের মুখোমুখিও সে আজ দাঁড়াতে পারলনা ৷
দেখতে দেখতে চলে এল ইভেন্ট,লক্ষ্য ইংলিশ চ্যানেল পার করা ৷ দাদা ঠাম্মুর আশীর্বাদ নিয়ে কোচের সাথে চলে গেল স্বপ্ন পূরণের পথে ৷
টানা একমাস পর আজ স্বপ্নিল ফিরলো দাদা ও নিজের স্বপ্ন পূরণ করে ৷ পঙ্গুত্বকে জয় করে ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়া বিজয়ীর খেতাব নিয়ে ৷ হই হই রবে স্বপ্নিলকে অভ্যর্থনা জানাতে সকলে মালা হাতে হাজির ৷ সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো কে আগে মালা পড়াবে সে উদ্দেশ্যে ৷ উপচে পড়া ভিড় ঠেলে সামনের সারিতে থাকা ওর দাদার কাছে আগে এল ৷ দাদা নাতিকে জড়িয়ে ধরে গর্বের কান্নায় ভেঙে পড়লেন, সাথে ঠাম্মুও ৷ দুজনকে প্রণাম জানিয়ে এগিয়ে গেল রিপোর্টারদের প্রশ্নের উত্তর দিতে, এমন সময় পেছন থেকে কার হাত ওর কাঁধে পড়ল ৷ ঘুরে দেখলো ওর জন্মদাত্রীর হাত ৷ পাশে জন্মদাতাও দাঁড়িয়ে ৷ রিধিমা ছেলের হাতদুটো ধরে বলতে লাগলো “আমি আজ গর্বিত তুমি আমার সন্তান বলে, তোমার মাধ্যমিকের সাফল্যের পরে এই আর একটা সাফল্যে আমি কতটা খুশি বোঝাতে পারবোনা ৷ তুমি আদর্শ সন্তান, আমার প্রাণদাতাও বটে ৷ তোমার বাবার কাছে আমি সব শুনেছি, তুমি সেদিন আমাকে রক্ত না দিলে…..” বলে কান্নায় ফেটে পরলো রিধিমা ৷ স্বপ্নিল মায়ের হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল:—”আপনার জায়গায় যে কোন মানুষ থাকলেই তার প্রাণ বাঁচাতে তাকে আমি রক্ত দিতাম ৷ এতে আমাকে মহান ভাবার কিছু নেই” ৷ বলে সে রিপোর্টারদের প্রশ্নের জবাব দিতে শুরু করলো ৷ এটা ওটা বলার পর রিপোর্টাররা যখন ওর সাফল্যে মা বাবা কতটা খুশি ও তাদের অবদান জানতে চাইলো স্বপ্নিল একটু হেসে বলল “ছোটো থেকেই মা বাবা কি জিনিস তা আমার জানা নেই৷ মা বাবা,দাদু ঠাকুমা সবই আমার দাদা ও ঠাম্মু ৷ ইনারা না থাকলে আমি আজ বেঁচেও থাকতাম না ৷ আমার মা বাবা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তাও জানিনা ৷ কারন পঙ্গু সন্তান কে তারা ঘৃনার চোখে দেখতেন ৷ এই জন্য সারাজীবন আমি মা বাবার স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত থেকে গেছি ৷ আমার জীবনে এগিয়ে চলার মূল উদ্যোক্তা আমার দাদা-ঠাম্মি ও তার সাথে আমার কোচরা ৷ ” বলে স্বপ্নিল দাদা ঠাম্মুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঠাম্মুর হাত ধরলো অন্যদিকে দাদু তার বাঁ হাতটা ধরল, দুদিকে হাত ধরে “বাড়ি চল” বলে হাঁটতে শুরু করলো ৷ সঙ্গে বাজতে থাকলো ক্লাব ব্যান্ডপার্টিদের ড্রামে গর্বের বাজনা ৷ সাথে হিপ হিপ হুর-রে ধ্বনি সতীর্থ ও প্রতিবেশীদের ৷ দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে অহঙ্কার চূর্ণ বিচূর্ণ হওয়া এক দোষী সর্বহারা মা-বাবা রিধিমা ও সোহম ৷
সমাপ্ত:—