Site icon আলাপী মন

।।নারীদিবস।।

।।নারীদিবস।।

-সোনালী চক্রবর্তী

 

ঘুম ভাংতেই ঠাকুর প্রণাম করে বালিশের পাশে রাখা ছোট্ট ঘড়িটার দিকে হাত বাড়ায় সাথী…ইস সাতটা বেজে গেছে!! ধড়ফড় করে উঠতে গিয়েই কোমরের ব্যথাটা যেন হুল ফুটিয়ে দিল। উফ্.. যতটা ভেবেছিল তার চেয়েও বেশী জোরে লেগেছে কালকের লাথিটা।

চায়ের জল চাপিয়ে চটপট চাল ধুয়ে নেয় সাথী। মনটা একটু খারাপ করছিল। আজো হয়তো রাজি হবেনা দীপক। মায়ের পেট ব্যথাটা কেমন আছে কে জানে। চায়ের কাপ হাতে দিয়ে একবার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ভরসা হলো না। ব্যথাটা খুব জ্বালাচ্ছে।
বাজার থেকে দীপক ফিরল শিস দিতে দিতে। রতনের দোকানে সবাই বলাবলি করছে আজ নাকি নারী দিবস। ব্যাপারটা ঠিক কি সেটা বড়বাজারের মশলার দোকানে খাতা লিখিয়ে দীপক ঠিক বোঝে নি তবে কিছু একটা উৎসব তো বটেই। আর সেটা মেয়েদের ।আজ তাই কাজে যাবে না মালিক কে ফোন করে বলে দেবে পেট ব্যথা আর পাতলা পাইখানা র কথা। পছন্দ করে বাজার করেছে সে। কাঁটাচচ্চড়ি আর লোটে মাছের ঝুড়ো খাবে। অনেকদিন সাথীর হাতের এই প্রিয় রান্নাগুলো খাওয়া হয়নি।
গলগল করে কথা বলে যাচ্ছিল দীপক।সাথী নিরবে কাজ সারতে থাকে। মাথায় শুধু গুনগুন করে পেটব্যথা… মা..।
দুপুরে খাওয়ার পর স্বামীর এঁটো থালা তুলতে তুলতে সাহস করে মা কে দেখতে যাওয়ার কথা বলেই ফেলে সাথী।
“আজ তো হবে না ! আজ বিকেলে রতন অনুপ বিজয় এরা সবাই আসবে তো! আজ উৎসবের দিন। মস্তি করবো একটু। ওই জন্যেই তো কাজ কামাই করলাম!”
ধীরগতিতে বাসনের পাঁজা নিয়ে কলতলার দিকে এগিয়ে যায় সাথী ।নাহ্ কোমরের ব্যথাটা আর নেই। বাকী সব কিছুর মতোই সয়ে গেছে।

……..লেখা শেষ করেই ল্যাপটপটা বন্ধ করলেন অনামিকা সেন। নেহাত খারাপ হয়নি গল্পটা। আজকের নারী দিবসের সান্ধ্য সাহিত্যসভার প্রধানা অতিথি হিসেবে এই গল্পটা দিয়েই নিজের বক্তৃতা শুরু করবেন তিনি। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে একটু পরেই পার্লারের মেয়েটি এসে যাবে। সাহিত্যসভার পর আরো ইমপরটেন্ট একটি এপয়েন্টমেন্ট আছে অনামিকার। মিস্টার পালিতের সাথে ককটেল ডিনার। সেই মিস্টার পালিত যাঁর অঙ্গুলিনির্দেশে বিদেশে বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলন এর ধ্বজা ওড়ে, আমন্ত্রিত লেখক তালিকা তৈরী হয়।অলস হাতে আলমারির পাল্লা খোলেন অনামিকা। বেজ শিফন নাকি অফ শোল্ডার এই আইভরি গাউনটা?
কোনটা এনে দেবে তাঁর বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র?
অদ্ভুত একটুকরো হাসি ফুটে ওঠে প্রখ্যাত লেখিকা অনামিকা সেন এর ঠোঁটের কোনায়।।

Exit mobile version