অৌর প্যায়ার হো গয়া
-মহেশ্বর মাজি
সারা কলেজ সংকেতকে “চিতা” বলেই ডাকত।ওর সাথে পাঞ্জা লড়াইয়ে কেউ সহজে পেরে উঠত না।
এমনই শক্তিশালী ছিল হাতের মুঠো।
একটি মর্মান্তিক বাইক দুর্ঘটনায় সংকেতের ডানহাতটা এক সময় ভেঙে গেল।
ডাক্তার অনেক চেষ্টার পর সেটা জুড়ে দিয়েছেন।তবে জোরে চাপ দিতে চিরদিনের মত মানা করেছেন।
এখন সে আর কারো সাথে পাঞ্জা লড়াই-এ অংশগ্রহণ করে না।
মুম্বাই থেকে একটা কন্সট্রাকশন কোম্পানী তাকে কল করল।সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের জব।
সেবার মুম্বই থেকে ফিরছিল।পুজোতে অনেকগুলো ছুটি নিয়ে।
ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনার্স।লোকে লোকারণ্য।সকলেই নিজের গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে।
…ট্রেনটা ছেড়ে দিতেই সংকেত নিজের বার্থে যাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরছিল।তখনি চোখে পড়ল একটি মেয়ে।প্রাণপণে দৌড়চ্ছে উদ্দেশ্য ট্রেনটা ধরবে।কোন কারণে দেরী করে ফেলেছে।
সংকেত তাকে সাহায্যের জন্য ডানহাতটাই প্রসারিত করল।
হাতটা তার দুর্বল।সেটা ওই অচেনা মেয়েটি জানত না।
আর সংকেতের বিশ্বাস ছিল নিজের উপর।
…আর কী!!
সংকেত তাকে সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁচকা টানে বুকের মধ্যে টেনে নিল।
মেয়েটি প্রাথমিক আঘাতটা সামলে একটু বিরক্ত মুখ করে বলে উঠল,সব পুরুষ এক।মেয়েদের অসহায় দেখলে কোন না কোন ছুতোয় ব্যবহার করে নেবেই।
নেহাৎ পরশু দিদিটার বিয়ে।আর এয়ার লাইন্সে টিকিট পেলাম না।
তাই শেষমেষ তৎকাল কেটে ঝাঁপ দিতে হল। না হলে আমি আজ পর্যন্ত কোন অচেনা পুরুষের কাছে এভাবে হাত বাড়িয়ে লিফ্ট চাইনি।
আজকেই প্রথম। তাও সেই বিরক্তকর অভিজ্ঞতা।
মেনি..মেনি থ্যাঙ্কস অফ ইওর হার্টফুল হেল্পিং।
সংকেত অনেকগুলো কথা একসাথে শোনার পর কী উত্তর দেবে ঠিক খূঁজে পেল না। তাই চুপ করে নিজের বার্থে চলে গেল।
সেবার অনেকগুলো লাগেজ একসাথে সংকেত সিটের তলে সাজিয়ে এনেছিল।স্টেশন অব্দি তিনজন মারাঠি বন্ধু এসেছিল। লাগেজগুলো ঠিকমত সাজিয়ে দিতে।
কথা ছিল হাওড়ায় বাবা,মেশোমশায় আর দিদি,জামাইবাবু অপেক্ষা করবেন। তার জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাওয়ার তরে।
ট্রেন ঢোকার পর সংকেত কিছুক্ষণ ইতস্তত করল।কাউকে দেখতে পেল না।
তাই একটু কষ্ট করে নিজেই লাগেজগুলো টেনে টেনে এক জায়গায় জমা করল।
ততক্ষণে হন্তদন্তভাবে সকলে এসে হাজির হলেন।
এসেই তার মেশোমশায় অনেকটা ধমকের সুরে বলে উঠলেন,কী করছিস কী চিতা!
তোর কী মাথা টাথা খারাপ হল?
ওভাবে ডানহাতে করে ভারি ব্যাগগুলো টেনে আনছিস?
তুই কী ভুলে গেছিস তোর ডানহাতে সামান্য চাপ দিতেও ডাক্তার মানা করেছেন?
এত জোর খাটাতে যাস কেন?…যদি বড়সড় বিপদ ঘটে বসে কোনদিন?
সেইসময় সেই মেয়েটিও কথাটা শুনতে পেল।সে ইচ্ছে করে একটু দেরীতেই বগি থেকে নামছিল।
হয়ত অবাঞ্ছিত পুরুষদের ছোঁয়া এড়াবার জন্য।
কথাটা শোনা মাত্রই তার হৃৎপিন্ডে ছলাৎ করে একটা রক্তের টেউ এসে আছাড় খেল।
সে মিছিমিছি ছেলেটাকে অপমান করেছে জানতে পেরে আর এক বিন্দু নিজেকে স্থির রাখতে পারল না।
সংকেতের সামনে গিয়ে হাতদুটো জড়ো করে বলে উঠল,আমায় ক্ষমা করবেন। না জেনে অনেককিছু বলে ফেলেছি। আয়্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি ।
সংকেত তৎক্ষণাত একটু হেসে বলে উঠল,কী করছেন কী ম্যাডাম ।.ইটস ওকে। আপনি ভুল কিছুই বলেননি। পুরুষদের প্রতি ধারণায় আপনার কোন ভুল নেই।
তবে আমি আপনাকে ওভাবে টানতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাধ্য না হলে যে আপনার ধারণাটা মিথ্যে হত।সেটাও তো সিওর নয়।
মেয়েটি প্রতি নমস্কার করে চলে যাওয়ার পর তার জামাইবাবু এক সময় কাঁধে ধাক্কা দিয়ে শালাবাবুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,চক্কর কেয়া হ্যায়?..কোই মিল গয়া কেয়া?
সংকেত হাল্কা হেসে উত্তরটা এড়িয়ে গেল।
একদিন পর হল ভর্তি বিয়ে বাড়ির ভিড়ে তাদের দুজনের আবার দেখা হয়ে গেল।
মেয়েটি অবাক হয়ে বলে উঠল,আপনি!..এখানে?
সংকেত এত ভিড়ের মধ্যেও মেয়েটির থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে জবাব দিল,ইনিই তাহলে আপনার দিদি?
আপনার বাবা আমার বাবার মনে হয় ফ্রেন্ড হন। বাবার শরীরটা হঠাৎ খারাপ হওয়াতে,আমাকেই গিফ্ট প্যাকেটটা দিয়ে পাঠালেন। ভেবেছিলাম,কোন রকমে হাতে ধরিয়ে কেটে পড়ব। এবার দেখছি না খেয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
…তবে একটা কথা মানতে হবে আপনার দিদি দেখতে খুব সুন্দর। আর হ্যাজব্যান্ডও গুড লুকিং।একদম রাজযোটক সেজেছে আর কি!
….সেই ভীড়ে কোন এক বেয়াদপ সংকেতকে পিছন থেকে একটা লম্বা চওড়া ধাক্কা মেরে দিল। টাল খেয়ে পড়ল একদম সেই পুরুষ বিদ্বেষী মেয়েটির বুকের মাঝে। একদম ভিড় ঠেলে লাল কার্পেটের মেঝেয় দুজন উপর নিচে পড়ে রইল।
মেয়েটি এর পরেও মুখে হাসিটি বজায় রেখে সংকেতের কানে কানে আস্তে করে বলে উঠল,আমার কিন্তু লাগেনি।
ডোন্ট মাইন্ড ।
খেয়ে যাবেন কিন্তু ।
তারপর ড্রেসটা ঠিক করে আবার বলে উঠল,বাই দ্য ওয়ে- আমার নাম প্রিয়া। যাওয়ার আগে একবার দেখা করে যাবেন।