প্রতিবাদের প্রতিবাদ
-রীণা চ্যাটার্জী
একটা গুঞ্জন উঠলো ,খুব শোরগোল উঠেছে সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমের দেওয়াল জুড়ে –‘প্রতিবাদ’ শুরু হলো।
যারা জানে না তারা জানতে চাইলো ‘কি হয়েছে?’, জানতে বসে গেল কেউ কেউ, উত্তাল হয়ে উঠলো কিছুক্ষণ এই প্রতিবাদের প্রতিযোগিতায়। বেশ একটা প্রতিবাদী বাতাবরণ। সংবাদ মাধ্যমে বারবার শিরোনাম, কিছু বিশেষ ব্যক্তিত্বের মতামত, কিছু বিসদৃশ অশ্লীল তরজা, কিছু কথোপকথন, কিছু তথ্য পরিবেশন যেমন- কোথায়,কখন, কিভাবে ঘটনাটি ঘটেছে ,কত তীব্র প্রতিবাদ পালিত হচ্ছে। যার ঘরে বোকাবাক্সে সংবাদ মাধ্যম সেই তথ্য পরিবেশন করছে সেই পরিবারের সতর্ক অভিভাবক পাশে বসা শিশুটির কথা ভেবে অন্য চ্যানেল ঘুরিয়ে দিচ্ছেন,কেউ কেউ খেয়াল ও করছেন না।পরের পর্যায়ে হয় শিশুটির সরল প্রশ্ন ‘….. মানে কি’ তার অভিভাবককে, অথবা বন্ধু মহলে শব্দটি সম্পর্কে পল্লবগ্ৰাহী আলোচনা পর্ব। প্রতিবাদ হলো কি?
আবার সামাজিক মাধ্যমের দেওয়াল ভরে যাচ্ছে কটূক্তি ভরা প্রতিবাদে। দেখে মনে হয় যে যত অশ্লীল ভাষা প্রয়োগে প্রতিবাদ করবে তত মুখর,সফল হবে তার দেওয়াল। মন্তব্য, অভিব্যক্তি গণিতের মাপকাঠি ও বটে! তাই শব্দ ভান্ডার উজাড় করে অশ্লীলতা মাখো প্রতিবাদের নামে। প্রতিবাদী হলেন নাকি দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা চালালেন… ঠিক বোধগম্য হলো না।
অশ্লীল অন্যায় ঘটনার প্রতিবাদ কি অশ্লীলতা সহযোগেই করতে হবে? কিভাবে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে সমাজ এই ধরণের প্রতিবাদ থেকে? অপরাধ প্রবণতা কতোটা কমছে? সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব কি শুধু এইটুকুই? সংবাদ সংগ্ৰহ, পরিবেশন, নিজেদের প্রয়োজনে জনপ্রিয় করে তোলার প্রচেষ্টা! তা সামঝোতার বিকিকিনিতে যতই নিম্নমানের হয়ে যাক না কেন? দায়িত্ব কি নয়, প্রতিবাদের সংগঠিত রূপ দেওয়া, সত্য জনমানসে তুলে ধরা, যাতে সেই প্রতিবাদ এতোটাই বজ্র কঠিন হবে যে ‘গদি’ টলে যাবে ধৃতরাষ্ট্রের? গান্ধারী একবার চোখের আবরণ সরাবে দুর্যোধোন, দুঃশাসনকে চিনে নিতে, দ্রৌপদীর লাজ রাখতে।
অশ্লীলতা দায়ে প্রতিবাদ গতি হারাচ্ছে জনজীবনে। ‘প্রতিবাদের নামে নোংরামি হচ্ছে’- এই কথার দায়ে প্রতিবাদ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদের নামে জনপ্রিয়তা নয় শোধন চাই। মাধ্যম নির্ভর যুগে সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যমকে এই দায়িত্ব নিতে হবে যাতে প্রতিবাদ বিক্ষিপ্ত, বিরত না হয়ে সম্মিলিত হয়। যাতে উদ্দেশ্য সফল, সার্থক ও কার্যকরী হয়। প্রতিবাদী, প্রতিবাদ সমার্থক হয়ে উঠুক। দায় এড়িয়ে নয় দায়িত্ব নিয়ে ,’হোক প্রতিবাদ’।