অসহায় গণতন্ত্র!
-রীণা চ্যাটার্জী
‘গণতন্ত্র’ ঠিক কি? আজ আর যেন মেলাতে পারি না… সেই কোন ছোটবেলায় জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য পাঠ্যপুস্তকের তালিকা ধরে ‘গণতন্ত্র’ শব্দের সাথে পরিচয়। শিশু মনে অর্থবহ হয়ে ওঠার আগেই বোঝানো হলো সম্মানীয় এই বিশেষ শব্দটি … সম্মান স্বীকৃতি দিতে বদ্ধপরিকর আমরা। সম্মান-অসম্মান বুঝতে শেখার আগেই বোঝানো হলো এর অবমাননা অর্মাজনীয় অপরাধ। আর একটু বড়ো হলে বোঝানো হলো এর ভিত্তি, পরিধি, ব্যাপ্তি… বুঝলাম ‘গণতন্ত্র’ ছাড়া আমরা ‘অরক্ষিত’,’অসহায়’।’গণতন্ত্র’ অস্তিত্বে আমরা ‘সুরক্ষিত’…এর কান্ডারী যাঁরা, নির্বাচিত প্রতিনিধি আমাদের দ্বারা, তাঁরা আমাদের রক্ষাকারী, আমাদের পালনকর্তা। বিশেষ করে দেশের সুরক্ষায়, উন্নয়ন পরিকল্পনায় এঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও অপরিহার্য। তাই বড়ো সমারোহে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমাদের হাত ধরে এঁরা ক্ষমতাসীন হোন … আমাদের সুরক্ষার তাগিদে!!
ধারনাগুলো সব যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষাগুলো, বোধগুলো কিছুই যে মেলাতে পারছি না … বিগত,আগত বা আজকের দিনের নিরিখে। বুঝতে পারছি না এঁরা আছেন বলে আমরা সুরক্ষিত, নাকি এঁদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে আমরা অসহায়? বুঝতে পারি না.. এঁরা আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, নাকি আমরা এঁদের হাতের ক্রীড়ানক।
নির্বাচন তো গণতন্ত্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। তবে কেমন জানি ভয় হয় নির্বাচন দিন সামনে এলে…কতো নতুন, আরো কত নতুন ধরণের ভয়াবহ সন্ত্রাস দেখতে হবে! অসংখ্য ক্ষত-বিক্ষত,আহত, রক্তাক্ত, নিহতের সারি…. উফফফ আর যে সহ্য করতে পারিনা!! ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার এই অমানবিক প্রয়াস, ক্ষমতায় থাকার এই দম্ভ… আমাদের বড়ো অসহায়, অরক্ষিত করে তোলে। স্বার্থসিদ্ধির খেলায় মেতে ওঠা যুযুধান দুই পক্ষ, তাদের আঙ্গুলী হেলনে চলমান কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী অপরদিকে অসহায় জনগন। এইরূপেই বিরাজিত আমাদের আজকের ‘গণতন্ত্র’। এই সম্মানীয় ‘গণতন্ত্র’-এর ধারক ও বাহকরদের কাছে আমরা কতোটা ‘সুরক্ষিত’ ভবিষ্যতে? বর্তমানের ছবি দেখেই আতঙ্কে শিহরিত হয়ে যাই, মায়ের কোল, সিঁথির সিঁদুর, রাখী বাঁধা হাত, পিতৃস্নেহ, নারীর শ্লীলতা সব যে নিলামে তোলা হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের’ সাধন করতে নির্বাচন বিধির মাধ্যমে।
মহত্ব চাই না, একটু মানবিকতা চাই। ক্ষমতা থাক, ক্ষমতা রক্ষার লড়াইটা একটু বিধিসম্মত হোক। নির্লজ্জতা তো ছিল, আছে, থাকবে শুধু এতোটাই বেআব্রু যদি না হয়। সত্যভাষণ চাই না, মিথ্যার পারদটুকু আয়ত্তে থাকুক। থাকুক ‘গণতন্ত্র’ আমাদের মাঝে, আসুক ‘গণতন্ত্র’ আমাদের মাঝে নতুন সাজে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ভয়ে, ঘৃণায়, স্বার্থে নয়, ভালোবেসে বরণ করে নিক ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’…. এই সামান্য প্রচেষ্টা কি আমাদের তথাকথিত নির্বাচিত প্রতিনিধিরা করতে পারেন না! ভাবুন না হয় একটু ‘মাননীয়রা’…ক্ষতি কি? কথা দিলাম আমরা ‘অসহায় জনগন’ আপনাদের এই প্রচেষ্টায় সকলে সাথে থাকবো পূর্ণ শক্তি নিয়ে… হবে কি একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা ‘মাননীয়রা’?