প্রশ্ন
-অমল দাস
সকালে বৈদেহী মেয়ে প্রত্যূষাকে পড়াতে বসেছে , সে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। মেয়েকে পড়াচ্ছে ঠিকই কিন্তু বৈদেহীর মনে আজ অন্য চিন্তা। সারা রাজ্য জুড়ে আজ পঞ্চায়েত নির্বাচন । স্বামী তমোঘ্ন পুলিশে চাকরি করে , তার আজ নদীয়ার কোন এক গ্রামে ডিউটি পড়েছে। চারিদিকে হিংসার আশঙ্কা রয়েছে । সেই হিংসার আগুন থেকে বৈদেহীর মন কি ভাবে চিন্তা মুক্ত হবে? উপায় নেই, কারণ হিংসা ছড়ালে পুলিশেরও তো সমস্যা হয়। এই নিয়ে নানা দুশ্চিন্তার মধ্যেই তাড়াতাড়ি মেয়েকে পড়িয়ে টিভিতে কার্টুন চালিয়ে দিয়ে বাড়ির কাছেই বাজারে চলে যায় রান্নার জন্য সব্জী আনতে। মেয়ে প্রত্যূষাকে বলে যায় – মা দুষ্টুমি করবে না! চুপচাপ বসে টিভি দেখো আমি যাব আর আসবো।
ছোট্ট প্রত্যূষা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। তারপর বলে- আমার জন্য ‘চকলেট’ আনবে মা ?
-হ্যাঁ আনবো মা , তুমি দুষ্টুমি করবে না!
প্রত্যূষা বিছনার খাটের উপর দাঁড়িয়ে মায়ের গলা ধরে একটা হামি দিয়ে বলল- তুমি বড় ‘চকলেট’ আনবে কিন্তু।
বাজার থেকে দ্রুত ফিরেই বৈদেহী সব্জী কাটতে কাটতে খবর দেখবে বলে টিভি চালাতে যায়, মেয়ে বাঁধা দিয়ে বলে – না মা তুমি দেখবে না , আমি কার্টুন দেখব। প্রত্যূষা রিমোর্ট নিয়ে খাটের কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। অন্য দিন হলে বৈদেহী হয়তো মেয়ের আব্দার মেনে নিত। কিন্তু আজ মন মানছে না । কোথায় অশান্তি হয়, কি হয় সেই চিন্তায় সে উদ্বিগ্ন । ইতিমধ্যে সে দুবার তমোঘ্নকে ফোন করেছে , কোন ঝামেলা হচ্ছে না তো ? জানার জন্য। তমোঘ্ন জানিয়েছে- না কোন ঝামেলা নেই , তুমি চিন্তা করো না , আর এভাবে বারবার ফোন করবে না।
কিন্তু চিন্তা নেই বললেই কি নেই !অশান্ত পরিবেশে স্বামী থাকলে কোন স্ত্রীই বা বাড়িতে মন স্থির রাখতে পারে!
বৈদেহী মেয়েকে বলল –মা রিমোর্ট দাও তোমার বাপি দূরে ডিউটি গেছে , আজকে টিভিতে দেখাবে, তুমিও দেখবে বাপিকে!
-তাই, বাপিকে দেখব কি মজা। এই বলে সে রিমোর্ট দিয়ে হাতেতালি দিয়ে আনন্দ ব্যক্ত করতে থাকে। সেই আনন্দ সুমিষ্ট শৈশব মুখমণ্ডলে দারুণ উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে।
বেলা দশটা বাজে ইতিমধ্যেই চারিদিকে ভোট রাজনীতির অশান্তি শুরু হয়ে গেছে যা টিভির পর্দায় ফলাও করে তুলে ধরছে বারবার খবর সংস্থাগুলি। মারামারি গুলি বোমার লড়াই পর্দায় ভেসে আসছে বারংবার । এদিকে সাংবাদিক , উপস্থাপকরা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে তার বীভৎসতার বিবরণ দিচ্ছে। এসব দেখে বৈদেহী মেয়েকে বলে –মা তুমি ও ঘরে যাও খেলা কর গিয়ে।
-না আমি যাব না বাপিকে দেখব, তুমি বললে যে বাপিকে দেখাবে।
-হ্যাঁ যখন দেখাবে আমি ডাকবো তোমাকে , এখন যাও!
-না আমি যাব না। এই বলে রাগ করে মুখ ফুলিয়ে খাটের কোণে বসে থাকে।
বৈদেহী আর জোর করে নি। এদিকে মালদা, হুগলী , দিনাজপুর , বাঁকুড়া , নদীয়া সব জায়গারই হিংসার মর্মান্তিক ছবি তুলে ধরছে নিউজ চ্যানেলে এবং সব ক্ষেত্রেই পুলিশ কেমন যেন নির্বাক নিশ্চল ঠুঁটো জগন্নাথের মত ভূমিকা পালন করছে । যার জন্য সাংবাদিকরা , আলোচনা মঞ্চের ব্যক্তিরা পুলিশকে যাচ্ছেতাই ভাবে বিদ্রুপ করে চলেছে । যা দেখে বৈদেহীর খারাপ লাগতে থাকে , মেয়েও চুপ করে শুনতে থাকে । সে সব না বুঝলেও বাবা পুলিশ তা সে জানে, আর পুলিশকে খারাপ বলছে তাও একটু বোঝে। নদীয়ার খবর দেখাতেই বৈদেহী নিজেকে স্থির না রাখতে পেরে তমোঘ্নকে ফোন করে। দু তিন বার রিং হওয়ার পর সে ফোন তোলে, তোমাকে তো বললাম বারবার ফোন করবে না , আবার কেন করছ ?
-তুমি রাগ করো না , নদীয়ায় ঝামেলা হচ্ছে দেখাচ্ছে তাই…
কথা শেষ হয়নি মেয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে আব্দার করে – আমাকে দাও আমি বাপির সাথে কথা বলব । এই বলে কাপড় ধরে টানতে লাগে।
বৈদেহী ফোনেই বলে ওঠে – বা বা তোমার মেয়ে যা হয়েছে ! আর কি বলি! নাও তার সাথে একটু কথা বল সে চিৎকার করছে বাপির সাথে কথা বলবে।
তমোঘ্ন একটু রেগেই বলে- না এখন না পরে কথা বলব রাখো।
আরে রাগ করছ কেন? ও কথা শোনে না তা তো জানো! একটু খানি বলেই রেখে দিও । এরপর ‘এই নাও’ বলে মেয়ের কানে ফোন ধরে দিল।
তমোঘ্ন বলে ওঠে – হ্যালো! সোনা মা কি করছ তুমি ? মাকে বিরক্ত করনা যেন!
এ কথা সে শুনল কি না বোঝা গেল না । সে তার মত করে বলতে লাগলো – ও বাপি লোক গুলো খুব দুষ্টু মারামারি করছে তুমি ধরছ না কেন? টিভিতে বলছে পুলিশ খারাপ , তুমিও খারাপ পুলিশ বাপি ?
তমোঘ্ন চকিত হয়ে যায় । এমন অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে সে হতবাক । হঠাৎ করে কি উত্তর দেবে তার ভাবনাতেই আসছিল না। সে শুধু বলল- মা আমি এসে সব বলব তোমাকে , মাকে ফোন দাও।
-এই নাও, বলে বৈদেহীকে ফোন দিয়ে প্রত্যুষা খেলতে লাগে।
– তোমার কি সেন্স নেই বৈদেহী ? ওইটুকু মেয়েকে ভায়োলেন্স দেখাচ্ছ ? একটু রেগেই বলে ওঠে তমোঘ্ন।
-আচ্ছা নিউজ দেখছি তাতে ওইটুকু মেয়ের মনে কি প্রশ্ন জাগছে কি করে বুঝবো । তাছাড়া ওকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে সেটা সমস্যা নয় , কিন্তু এত বড় পুলিশ প্রশাসন চোখ কান বন্ধ করে থাকলে তো নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে চলে যাবে, প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে । এই দায়িত্ব তোমরা এড়িয়ে যেতে পারো না তাই না …?
এর কোন জবাব তমোঘ্নের কাছে নেই, থাকলেও হয় তো সে নিরুপায়। তাই সে চুপ থেকে ফোনটা কেটে দিলো। সাময়িক ভাবে হয়তো সে মেয়েকে স্ত্রীকে এড়িয়ে গেল কিন্তু নিজের কাছে , আগামীর কাছে! পারবে কি ? জানা নেই….।
সত্যি প্রশ্ন.. খুব সুন্দর
ধন্যবাদ প্রিয়
দায়িত্ব বোধ আর সচেতনতা এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে। খুব প্রাসঙ্গিক বিষয় উঠে এসেছে গল্পে।
ধন্যবাদ প্রিয়
গল্প নয় এতো চলমান জীবেনের ছবি—
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল চরিত্র গুলো যেন জীবন্ত —
পুলিশ প্রশাসনের সামনে তুলে ধরা প্রশ্নটাও যুক্তিযুক্ত👌👏
অশেষ ধন্যবাদ প্রিয়