- অন্তর্দাহন
-রুদ্র প্রসাদ
ভুল করে তব দ্বারে এসেছিনু,
দাও নি তো কভু ফিরায়ে ।
আজ আমি হীন, অতিশয় ক্ষীণ,
সবই তো গিয়াছে হারায়ে !
রুক্ষ – শুষ্ক এ ধরাতে নেই,
আর সেই প্রিয় মধুমাস,
হর্ষ-বিষাদে, ‘পিউ কাঁহা’ রবে –
আজ এ হৃদয় উদাস ।
যত ফুল আজ ঝরে গেছে দেখ,
দিয়াছে গন্ধ বিলায়ে !
তবু সদা জাগি তব স্মৃতি লয়ে,
আলয়ে তন্দ্রা ভুলায়ে !!
তব হৃদয়েতে জাগে আজ দেখি,
বলো কার মুখ খানি ?
ভুলে গেছ কি তুমি, সাঁঝবেলার,
সেই শপথের বাণী ???
আবেগের সেই কথা তবে কি গো,
আগে ছিল শুধুই ছল !
কাঙ্ক্ষিত ক্ষণে, না হেরিলে –
হত যে আঁখি ছল – ছল !!!
আজ বুঝি বা তব পৌষ – পার্বণ ?
ভিখারী দুয়ারে দাঁড়ায়ে —
পড়ে শুধু তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস,
জীর্ণ পাঁজর ছাড়ায়ে !!!
কেতকী, কদম, যুথিকা কুসুমে,
কত না গেঁথেছি মালিকা,
আসি নানা ছলে, পরেছিলে গলে,
ওগো চঞ্চলা বালিকা ।
নুপুরধ্বনির সেই সেদিনের স্মৃতি,
সবই কি গো ছিল ভুল,
নিবিড়, নিভৃতে দোলা দিয়েছিল,
তব কালো – এলো চুল !
কনক চাঁপার সুমিষ্ট সুবাস,
আছিল বাতাসে ছড়ায়ে !
কাঁপা কাঁপা হাতে, অধীরানন্দে,
ধরেছিলে মোরে জড়ায়ে ।
থর থর থর – ভীরু হৃদয়ের,
আধোলাজ – হাতছানি ,
করেছিল তোমা, এ ভূমিহীনের
অন্তর দেশের রানী ।
সেই স্মৃতি আজ বিস্মৃতি তলে,
গোপনে গিয়াছে হারায়ে !
শুধু হেরিবারে সেই হাসি মুখ,
ভিখারী যে দুয়ারে দাঁড়ায়ে ।
ধন্য এ জনম – কোটি জনমের,
তুমি প্রেয়সী, ওগো প্রিয়তমা,
মনে মনে প্রতিক্ষণে, অজস্র বার
ছুঁয়েছি – চুমেছি যে তোমা ।
বাহুডোরে নয়, হৃদি ভরে থাকো,
প্রেমস্মৃতিসুধা ভরায়ে,
স্বার্থক হোক এ সুমহতী প্রেম,
নিঃস্বর্গ প্রভা ছড়ায়ে ।
ক্ষোভ নাই মোর, ক্ষোভ নাই প্রিয়া,
লোভ নাই, মোর লোভ নাই ।
আজ বিরহে কাঁদুক ‘কৃষ্ণ’চন্দ্র –
‘আয়ান’-এর ঘরে যাক ‘রাই’ ।।