Site icon আলাপী মন

চরৈবেতি

চরৈবেতি
-পার্থসারথি

 

 

একটা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মাল্টিন্যাশানাল্ কোম্পানীতে কাজ করে রুদ্রাণী –মানে রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত।আগে ছিলো রুদ্রাণী পালৌধি –এরকম পদবী চেঞ্জেরও একটা ছোটো অথচ গুরত্ববহ প্রেক্ষাপট রয়েছে।
যাওয়া আসার জন্য তাকে কোম্পানী দামী এক্সেল প্রেসেন্ট করেছে-এমডি বলে কথা।ধ্রুপদী চাল চলনের সঙ্গে মানানসই গাড়ী ওকে নিতে আসে ঠিক সওয়া আটটায়।উর্দিধারী ড্রাইভার সিক্সথ্ ফ্লোরে ফরেস্ট অ্যামবিয়েন্স-কলিংবেল বাজিয়ে জানান দেয় তার আগমন বার্ত্তা।রুদ্রাণী তখন তার রূপচর্চায় ব্যস্ত—ভেনেস্তাকাঠের সাবেকী আমলের ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লাস্ট টাচ্!শৃঙ্খলিত জীবনের মানে খুঁজে পেতে চায় সে।বেডরুমের দরজায় অভ্যস্ত টোকা -মেডসার্ভেন্ট—
ম্যাডাম গাড়ি রেডী—-!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্রাণীর হাত আরও সুইপ্ট্–মেডসার্ভেন্ট কে চটজলদি সদর্থক উত্তর–ঠিক আছে আমি আসছি—
ফাইনাল চেকআপ–হেড টু ফুট!যেন গোটা শরীরটা জরিপ করে নিচ্ছে ও।ও বেশি মেকআপের ফ্যান নয়।মুখে-হাতে-গলায় ক্লাস এপার্ট দামী কোম্পানীর বডিলোশন্,আইলাইনারে সেনসিটিভ টান, অধরাঞ্জনীর সপ্রতিভ উল্লাস—মোডিফায়েড লুক আনতে–সালোয়ার কামিজ্–সাথে ছোট্ট অথচ আকর্ষণীয় একটা টিপ।জিনস বা ফরম্যাল প্যান্ট-শার্ট হলে ওটা মাইনাস্ ।ফ্রেঞ্চ পারফিউমের সৌরভে চারদিকে গন্ধ তুলে সানগ্লাস চোখে নেমে এলো রুদ্রাণী।পৌরুষোচিত সংযমের ঘেরাটোপ ভাঙানো চমকানো ঝাঁ চকচকে ওয়াইল্ড লুক।
কোনো রকম ইতস্তত নাকরে স্বভাবজাত রাজসিক ভঙ্গিমায় উঠে বসলো এ-সি গাড়ীতে।ড্রাইভার পেছনের গেট খুলে সসঙ্কোচে ম্যাডামের সাচ্ছ্যন্দের বিষয়ে সন্দিহান।নিজের হাতে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ড্রাইভার-সীটে বসে ক্লাসিক স্টার্ট–চোখের নিমেষে বেরিয়ে গেলো গাড়িটা।ঘড়ির কাঁটা তখন আটটা চল্লিশ ছুঁই ছুঁই।

এই অ্যাপার্টমেন্টের অন্যসব বাসিন্দাদের সন্দিগ্ধ দৃষ্টি এসে পড়ে তার উপর অর্থাৎ রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত যেন এক আশ্চর্য !!–সকলের দৃষ্টির চক্রব্যূহ ভেদ করার ক্ষমতাও রাখে ,মিড ফোর্টির ওই উগ্রাধূনিকা যুবতীটি।পৌরষের বাঁধভাঙানো- লোভ জাগানো- যৌবনের উপবনে তার দোসর মেলা ভার ;তাই পুরুষের লোভ আর নারীজনোচিত ঈর্ষাতে ইন্ধন যোগায় রুদ্রাণীর রুদ্র-যৌবন।সমগ্র নারীজাতির মনে আক্ষেপ আনা লুক তার –তাকে দেখা মাত্র একজন যুবতীর রুদ্রাণী হবার বাসনা অত্যন্ত প্রবল হয়ে পড়ে–তখন তাকে একটা অপূরিত পিপাসা তাড়া দেয়—ইস্!আমি যদি রুদ্রাণী হতাম!

সবার রুদ্রাণী হওয়ার বাসনা–কি কাজের মেয়ে!কি সংসারের নিয়মসিদ্ধ গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আসা গৃহকর্ত্রী— housewife! রুদ্রাণী সবই বোঝে বোধের জায়গায় no compromise ।বোধ-পারাবারে গোধুলি বেলায় একসময় বোঝা ও জানার মধ্যে একটা আত্মসন্তুষ্টির রঙছড়ানো আবিলতা মিশে থাকতো এখন সেটা আর নেই।চোখে রঙিন চশমায় তা মসৃণভাবে ঢেকে দিতে চায় রুদ্রাণী।বুকের মধ্যে চিনচিন করে ওঠে একটা ব্যথা—নিজের অজান্তেই যেন ও বলে ওঠে –তোমরা আর আমার সম্বন্ধে কতটুকু জানো—-
তাই লোভকাতর আর ঈর্ষাকাতর চোখগুলো আটকে যায় সুঠাম শরীরের যৌবনসিক্ত আধুনিকার শারীরিক ম্যাপে।রুদ্রাণী সুঅঙ্গনা বটে—সুন্দর আবেদনময়ীর রিক্ত বিলাস যেন —একাকীত্বের অভিসার!প্রকৃত অর্থে এখনো এই মধ্যচল্লিশে ষোড়শ বর্ষীয়াদের সঙ্গেও তুড়ি মেরে প্রতিযোগিতা লড়তে পারে ও।ওই যে বলেছিলাম আগে ছিল পালৌধি।কয়েক বছরের ব্যবধানমাত্র এখন সে বিচ্ছিন্না—আবার সেই দত্তগুপ্ত অর্থাৎ পৈতৃক পদবীটাকেই আকড়ে বাঁচা।
কলেজ লাইফ—প্রশান্ত পালৌধির সাথে চুটিয়ে প্রেম ,বাড়ির সকলের অমতে হুয়িমসিকেল্ ডিশিসন্!অতএব প্রশান্তঘরণী ।
তারপর ভালবাসার চাঁদে লাগলো গ্রহণ—ধীরে ধীরে শুরু হলো psychologically mental errosion সব ফুরিয়ে গেল একসময়।নিঃস্বা, রিক্তা রুদ্রাণী।মিউচুয়াল সেপারেশন্ই একমাত্র পথ।রুদ্রাণীর জীবন থেকে ভালবাসার প্রশান্তসাগর শুকিয়ে গেল।প্রশান্ত যে আবার বিয়ে করেছে সেখবরও সে পেয়েছে;তবু যেন কোনো হেলদোল নেই অন্ততঃ বাইরে থেকে তাই মনে হয়।
ইদানীং প্রায়শঃ হুরমুর করে ভাবনার বন্যা ধেয়ে এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়।কিন্তু না পারেনা ও মানসিকতার জোরে নিজেকে উদ্ধার করে আর আবিস্কার করে—মাল্টিন্যাশানাল্ কোম্পানীর এমডি–এম এস রুদ্রাণীকে।
এখন মিস্ বা মিসেস্ out of date সুবিধার্থে এই অভিযোজন–কি ?ভালোইতো!কিন্ত সকলেই সন্দিহান —রুদ্রাণীর রহস্যময়তার কাচেরঘরে ফাটল!সকলেই যেন সুন্দরী ডির্ভোসীর যৌবননিঃসৃত কস্তুরীর ঘ্রাণ পেয়েছে।সস্তার রূপ-মার্কেটে তরতাজা সুস্বাদু নারীমাংস!গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে!
সওদা হয়ে যায় give & take policy’র আদলে।দেওয়া নেওয়ার অলঙ্ঘ্য উলঙ্গ চুক্তির সেনসিটিভিটি!
একবিংশ শতাব্দী!নাকি মধ্যযুগ চিনতে হচ্ছে কি ভূল! কিজানি!
রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত গড্ডালিকা প্রবাহে গাভাসিয়ে দিয়ে আপোসের রাস্তা খুজে নেয়।হঠাৎ বিবেক জিঙ্গাসা করে রুদ্রাণী তুমিও শেষে—-?
পালৌধি থাকার সময়ে এই সমস্যা ফেস্ করতে হয়নি তাকে।তখন পুরুষালি দৃষ্টির কামাতুর আবেদন উপভোগ করতে ভাললাগতো ওর।কিন্তু দত্তগুপ্ততে ফিরে আসার পর,দশবছর থেকে শারীরিক-সালিশীর বেপর্দা চুক্তিতে সাইন করতে হয়েছে
তাকে।না তার জন্য ওর মধ্যে কোনো মেনিয়াক্ টেনডেনসি লক্ষ্য করেনি কেউ বরং স্বাভাবিক পূর্বাপেক্ষা আরও স্ট্যাটিস্টিক্যাল্।

এই ব্যাপারে রুদ্রাণীর নিজের উপর ছিলো একটা কড়া শাসন–শরীর আর মনের মাঝখানে একটা সেপারেশন্ ওয়াল তৈরী করে ফেলেছিল যেন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই।প্রায় দশ বার বছর আগে তখন সে সদ্যবিবাহিতা–শরীর জুড়ে যৌবনের ঢেউ,রূপের তটে ছলকে উঠছে।এখনও বা কম কিসে–এখনও তার শরীরে পুরুষালি ধৈর্য্যের বাঁধভাঙ্গাযৌবন —ভাটা পড়েনি একটুও।চারদিকে তাই পুরুষ পতঙ্গের ভীর সে একা অমানিশায় রূপবহ্নি।কাকে চাইবে ,কাকে নাচাইবে–ওখানে রুদ্রাণীর সূক্ষ হিসাব–ভূল হবার জো নেই।

সেই গাণিতিক হিসাবেই দশ দশটা বছর ধরে একটির পর একটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসেছে–আজ সে শুধুমাত্র নিজের ক্যালিতে গ্রীন ওয়ার্ল্ড মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীর এমডি।আজ তার ভোগের লিস্টে কি নেই –গাড়ি,ফ্ল্যাট,ফ্যাট স্যালারী প্যাকেজ,ইনসেনটিভ পার্কস যাবতীয় হীরে থেকে জীরে।তাহলে রুদ্রাণী অবশ্যই সুখী?–না–তবু যেন কোথায় একটা গরমিল!!
একটা নৈরাশ্যের কনকনে হাওয়া তার সারা শরীর কাঁপিয়ে তোলে।বিশেষ করে অবসর সময়ে–একা নিজের সঙ্গে নিজের মোকাবিলার সংবেদনশীল মুহূর্ত্তে।তবে এহেন মুহূর্ত্তের সম্মুখীন হওয়ার ফুরসৎ খুব কমই পায় ও।
ও তখন লাসভেগাসে –উপলক্ষ্যটা ছিল ইন্টারন্যাশানাল ট্রেড ফেয়ার–রুদ্রাণী সেখানে রিপ্রেজেন্ট করছিল ওর কোম্পানীকে সঙ্গে ছিল মাইকেল ক্রুক -চিফৃএক্সিকিউটিভ্ মার্কেটিং।বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে এমনটায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো।
মাইকেলকে নিয়ে তারা উঠেছিল সেখানে সাততারা হোটেল-ফিনিক্সে-রয়্যাল রিলেস্ক!রাজসিক বিলাসে মেলে ধরেছিলো সেদিন রুদ্রাণী নিজেকে।বিলাসী শয্যায় রাজসিক তন্ময়তার সমুদ্রমন্থন।মাইকেল কামার্ত, আপাদমস্তক একটা আস্ত নারী—ইচ্ছাপূরণের সেকি কুৎসিত রূপ !বাতাসও যেন থমকে যায় ওদের নগ্নতার উন্মত্তায়।নগ্নিকার শরীরে আলতো আবেশ সারাশরীর জুড়ে শিহরণ। হঠাৎ রুদ্রাণী জেগে ওঠে –বাধার প্রাচীর খাড়া হয় ওর আর মাইকেলের মাঝখানে—অপূরিত বাসনার পূনর্মোক্ষণ;মাইকেল কৈফিয়তের সুরে বলে ওঠে–What’s wrong with you?Are you well or don’t like to get it eagerly?
রুদ্রাণী যেন নিজের কাছেই নিজে হেরে যাচ্ছিল- ডানাভাঙা পাখির বার বার ওড়ার ব্যর্থ চেষ্টা যেন ।এইরকম অপ্রত্যাশিত যে তার জীবনে কখন ঘটতে পারে ,সে ভাবতেই পারেনি।ঘটনাচক্রে ঘটলো কিন্তু তাই –বিবেকের দ্বন্দ্ব শুরু হলো কোনো ভাবেই নিজেকে ভেজাতে পারছে না।
অভিজ্ঞ পৌরুষ,পরিমিত স্পর্শ তবু তার মন সায় দিচ্ছেনা।রুদ্রাণী এ ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞা –একজন পিএইচডি স্কলারের যেমনটা হওয়া প্রয়োজন।এতদিনের অভিজ্ঞতাই বলে দিচ্ছে তাকে–প্রকৃত পুরুষ এতটা ফোরপ্লে বা কামকেলির আশ্রয় নেয়না।কয়েকমিনিটের যৌনস্তুতি ব্যস্! তার পরেই চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যাওয়া।নারী তখন আর তার প্রকৃত সঙ্গিনী থাকে না ,হয়ে ওঠে ভোগ্য–চরমভাবেই ভোগের সামগ্রী।এবং এই ওয়ান সাইডেড্ সেক্সুয়্যালিটির কথা ভেবেই রুদ্রাণী পৌরুষ-সান্নিধ্য পেতে চেয়েছে।লড়াকু পৌরুষও ওর এই সেক্সুয়্যাল স্ট্যামিনারের কাছে কতবার নম্রফণী হয়েছে।
প্রতিপক্ষ কে তৃপ্ত করার অনায়াসলব্ধ কৌশল তার মতো আর কেউ জানে বলে মনে হয় না। সে যেন কলিক্রোড়সঞ্জাতা রতি–কোনো পুরুষই তার সাথে পেরে উঠতনা,অবশেষে পরিশ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়তো রোদে পোড়া গাছের মতো।ঘুমে ঢলে পড়া সেই অর্ধাচেতন পুরুষের নাসিকা গর্জনের শব্দে সে নিজেকে triumphant ভাবত আর মনে মনে বলতো–“Totally defeated! তবুও তো এমন কিছুই এগোয়নি! এইটুকুতেই একেবারে—-রক্তলাল তুলতুলে পুরন্ত ঠোঁটে চুম্বনেই দিশাহারা!ভাবছে কত যেন বীর-কত যেন আদায় করলো।আসলে নিলামতো আমি!একেবারে নিঙরে,শুষে নিলাম অনায়াসে।এখনো বাকি -অনেক বাকি।সমস্ত কিছু জীবন -যৌবন -সম্পদ সব! সব!”
সেই আত্মবিশ্বাস ও আত্মরতিরও পদস্খলন ঘটেছিল মধ্যচল্লিশের পূর্ণযুবতীর শারীরিক ব্যর্থতায়।হাল ছেড়ে হাহুতাশী!!-না কখ্খনো না –কোনো অবস্থাতেই হাল ছেড়ে দেবার পাত্রী রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত নয়!তাই primary blowটা সামলে উঠে মাইকেলের সুঠাম দেহটাকে সে দখল করেছিল।দেহটা কার? মাইকেলের না গ্রীন ওয়ার্ল্ড মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীর চিফ্এক্সিকিউটিভের?তা না হলে কিসের জন্য রুদ্রাণী!কিসের জন্য এই এতো কিছু -থিওরি মেকিং!মন যেন তার গেয়ে উঠতে চায়-“আমারও পরাণ যাহা চায় তুমি তাই ,তুমি তাই গো—”
ফোর প্লে বা কামকেলির কৌশলী প্রয়োগে একেবারে উন্মাদ করে তুলেছিল মাইকেলকে।আর তারপর just a recess—“জাস্ট এ মিনিট,ডার্লিং—-জাস্ট এ মিনিট–আই এম কামিং দেন আই মাস্ট গিভ্ ইউ মোর–মোর এন্ড মোর ওকে!” বলতে বলতে প্রায় ছুটে ঢুকে পড়ল টয়লেটে।পরিবর্ত্তন চায়! পরিবর্ত্তন–নিজস্ব শুষ্ক গোপনীয়তায় কৃত্রিম সুগন্ধী ক্রীমের প্রলেপ।তারপর কৃত্রিমতার জাল বিস্তার করে মাইকেল কে টেনে নিয়েছিল কৃত্রিম পিচ্ছিল ঐ রন্ধ্রপথে ।
সে রাত কেটেছিল বিনিদ্র।চোখে ছিলনা রুদ্রাণীর ঘুমের লেশ্,পরিবর্ত্তে ছিলো চকচকে শানিত দুটো লোভরিপু চরিতার্থতার ছলনামাখা চোখ –ও চোখে ঘুম আসতে নেই।এক সময় মাইকেল ক্লান্ত হয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লে- পা টিপে টিপে শিকারী চিতার মতো রুদ্রাণী ঢুকে পড়লো আবার টয়লেটে।আরশির সামনে এসে উদ্বেল যৌবনের রণক্ষেত্র তার শরীরটা খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করছে।পরীক্ষা করছে নিজের নগ্ন শরীরটাকে।আয়নায় স্বপ্রতিবিম্বে যেন বিবেক এসে দাঁড়ালো এবং জিজ্ঞাসা করল–“রুদ্রাণী তুমি ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে গিয়েছ; তা নাহলে কিসের জন্য ঐ আর্টিফিসিয়াল লুব্রিকেশন্?বলতে পারো?”রুদ্রাণী চমকে পিছু হটলো কয়েক পা–তবে কি!তবে কি রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত ফুরিয়ে আসছে?সেদিনই রুদ্রাণী টের পেয়েছিলো যৌবনযমুনায় এবার ভাটা পড়ে আসছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুরই পরিবর্ত্তন হয়–এটাইতো স্বাভাবিক। এইরকম কতো কথায়না মনে পড়তে লাগলো রুদ্রাণীর–একেবারে মেনিয়ার মতো পেয়ে বসলো তাকে। এইরকম মনবিকলনের শিকার আগে কখনো হয়নি সে ।হঠাৎ মাইকেল জেগে উঠলো চোখে মুখে একটা জৈবিক-পিপাসা।সে রুদ্রণীর অনুকম্পা পেতে বললো- ও!ডার্লিং ইউ আর দ্য বেস্ট -এন্ড ইভেন স্টিল —–স্টিল আপডেটেড্–স্টিল!
কথাগুলো শুনে রুদ্রাণীর ভেতরে একটা আশঙ্কার কালমেঘ জমে উঠলো।মাইকেলের ঐ একটা শব্দ-“স্টিল”বার বার যেন রুদ্রাণীর কানে অনুরণিত হতে লাগলো।যৌবনের রাজপ্রাসাদে তাহলে এখনো সে রাণী সাহেবাই আছে–কিন্তু এরপর?আর্টিফিশিয়াল লুব্রিকেশনের কৃত্রিম মসৃণতার ঘোর কেটে গেলে?তারও পরে!অনেক পরে—-??
একটা অনিবার্য অনিশ্চয়তা যেন তাকে তাড়া করে বেড়াতে লাগলো—আর এর থেকে অব্যাহতি পেতে রুদ্রাণী নিজেকে নিজের গোপনতম স্বস্তির ঈশান কোনে স্থাপন করলো।আর ঠিক তখনই–লাসভেগাসের বিলাসবহুল হোটেলের আরামশয্যা ভেদ করে উঠে এলো পনের বছর পুর্বের এক আবেগতাড়িত স্মৃতি।একটি বিদেশী সিনেমার নায়িকার সংলাপ-I am Novatna.People call me by my nick name with love– what about you——–রুদ্রাণী চমকে উঠেছিলো আর কান চেপে ধরেছিল।with love! —-আর কিছুই সে শোনেনি।আচ্ছা এমনি ভালবেসে তাকেও কি কেউ কোনো দিন কিছু বলেনি।বলেছে-বলেছে!কিন্তু কি বলেছে?কি?–কি?
গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক কষে থেমে যেতেই –ড্রাইভার শুনলো তার ম্যাডাম চিৎকার করে উঠলো—কি ?কি?
সে আশ্চর্য হয়ে রুদ্রাণীকে জিজ্ঞাসা করলো-কি হলো ম্যাডাম?
রুদ্রাণীর স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে।সানগ্লাসটায় চোখ ঢাকতে ঢাকতে এবং সেই সঙ্গে নিজেকে আবৃত করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত,গ্রীণওয়ার্ল্ড মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানীর এমডি আদ্যন্ত প্রফেশনাল্ হয়ে তার বিরক্তি উদ্গার করল–কি হলো থামলে কেন?রাস্তার মাঝে?রাবিশ্! –‘চলো! চলো!
যাইহোক অধস্তন কর্মচারীর মালিক বা মালকিনকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করাটা out of courtesy–।যতক্ষণ না তাঁরা কিছু বলছেন টুঁ টি নয়।কিচ্ছু জিজ্ঞাসা করা যাবেনা—এমনকি অপ্রস্তুত মুহূর্ত্তে কিছু দেখে ফেললেও না দেখার ভান করতে হবে—–নিশব্দে হুকুম পালন।কিঁউ কি হুকুমৎ উনকি এক্তিয়ার মে!
রুদ্রাণী!—–রুদ্রাণী মাই ডার্লিং !আদর করে ডাকতো একজনই আর সে হলো প্রশান্ত পালৌধি,রুদ্রাণীর এক্স হাস্বেন্ড।বাঙলা
উচ্চারণে নয় রীতিমতো কেতাদুরস্ত অ্যাঙ্গলিসাইসড্ সম্বোধন—“রুড্রাণী”।তখন কৃষ্ণচূড়ারতলে আশা ছিল ,ভাল ভালবাসাও ছিল মানে সবকিছুতেই with love থিওরি আর কি!ভালবাসা কিন্তু ঐ “রুড্রাণী “ডাকের দৌলতেই ঘরে পা রেখেছিল।’পিয়া অব তো আ যা’–আজান দিতে হয়নি তাকে অর্থাৎ প্রশান্ত পালৌধিকে।তার অনেক আগেই দ্বাবিংশতির যৌবনোপবনে লেগেছিল প্রেমের দখিনাবাতাস।তাজমহল মাফিক বাদশাহী অট্টালিকার দাপুটে ব্যক্তিত্ব-অ্যাটর্নি জেনারেল মিঃ রাজেন্দ্র দত্তগুপ্তের একমাত্র মেয়ে রুদ্রাণী।সে তখন শ্রীরাধা আর প্রশান্ত যেন শ্যামরায়।

রুদ্রাণী ধনী বাপের একমাত্র মেয়ে।একসময় কনভেন্টের মেরিটরিয়াস্ স্টুডেন্ট সেে।ছোটবড় সমস্ত রকম হ্যান্ডসে সে সিদ্ধহস্তা—ভি বাল সারার খুব প্রিয় ছাত্রী ছিল সে।ফরমাল পার্টি থেকে রাজকীয় ডিনার—মোটকথা সাহেবী আদবকায়দা।প্রেসগিল্ড থেকে টেনিস ক্লাব সর্বত্র ওদের অবাধ বিচরণ।রুদ্রাণীর বাবা ,অ্যাটর্নিজেনারেল মিঃ রাজেন্দ্র দত্তগুপ্ত জাঁদরেল ব্যক্তিত্ব—একসময় বাঘে বলদে জল খেত যার ইশারায়।হাই-সোসাইটি কালচার।পুরদস্তুর বাদশাহী জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিল রুদ্রাণী।কেতাদূরস্ত সাহেবীয়ানায় বেড়ে উঠেছে সে।অধিকন্তু লাস্যময়ী-পুর্ণযুবতী অঙ্গে প্রত্যঙ্গে ঝাঁ চকচকে রাজসিকতা—যৌবনতরঙ্গহিল্লোলে শোভমান রূপসাগরের স্বপ্নপরী।পুরন্ত আদুরে ঠোঁট,টানা টানা চোখের অতল গভীরে কতকালের ইতিহাস যেন লুকানো।ক্লাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড।রুদ্রাণী প্রকৃতঅর্থেই রুদ্রাণী; নামের সার্থকতা তার চাল চলনে প্রতিমুহূর্ত্তে ব্যঞ্জিত।অতএব প্রশান্ত পালৌধির মতো মিডিলক্লাস ফ্যামিলির ছেলের সাথে এনগেজমেন্টতো দূরাস্ত—পরিচয় হওয়ারই কথা নয়।

কথায় বলেনা বাস্তব আর কল্পনা কালে কবুসে মিতালী পাতায়—রুদ্রাণীর জীবনেও ঘটেছিল ঠিক তাই।সময়ের সাথে সাথে গড়িয়ে ছিল ওদের সম্পর্ক।একসময় তা পর্যবসিত হয়েছিল দুরন্ত প্রেমে।

রুদ্রাণীর বয়স তখন বড়জোর চব্বিশ—যৌবনযমুনায় উজানের টান।অতএব দত্তগুপ্ত থেকে পালৌধি।কেবলমাত্র ক্ষণিকের মোহে—হাই কালচারের মুখে ছাই দিয়ে যেন পথ ভূলে প্রশান্তের ঘরে অর্থাৎ প্রশান্ত ঘরণী।সংসারের সঙ মাত্র সার করে ন’টা বছর!—-প্রশান্তসাগরের তীরে রুদ্রাণী ঢেউয়ের উছলে পড়া।তারপর বিলম্বিত প্রত্যারর্ত্তনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সার্থক রূপায়ণ—–একসময় একশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ফুটন্ত প্রেমরস উষ্ণতা হারিয়ে মাইনাস স্কেলে।আদালতের নির্দেশ মেনে দুটো বছর মিউচুয়াল সেপারেশনে থাকা —-তারপর !আরকি ?সোজাসুজি ডিভোর্স কমিট্– নো নিগোশিয়েশন্!
রুদ্রাণী কিন্তু স্বমহিমায় উজ্জ্বল,শত জটিলতার মধ্যেও সে অত্যন্ত স্মার্ট।একসময় হাইকালচারের যে মানসিকতার দাপটে উঁচুতলা থেকে হাত বাড়িয়ে প্রশান্তের মতো একটা ছন্নছাড়া ছেলেকে আস্তাকুড় থেকে তুলে এনে ঠাঁই দিয়েছিল সে রাজপ্রাসাদে ,সেই রুদ্রাণীই আবার তাকে স্বপ্রয়োজনে বর্জ্জনও করেছে ঐ একই মানসিকতার দাপটে।সে যেন নিজের অস্তিত্ব নিয়েই এক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছে।তাই বলে সম্পূর্ণ প্রসেসটাতেই ভাঁউতা ছিলনা।প্রশান্তের রূপে সে সত্যিই আকৃষ্টা হয়েছিল একদিন।

এসি গাড়ির শীতল বিলাসিতায়,কালকাচের চৌকস্ নিরাপত্তায় শরীর এলিয়ে ব্যাকসিটেড্ রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত,নামকরা মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীর এমডি নিজের অজান্তে–তন্দ্রার ঘোরে ঘোষণা করে বসে তার স্বীকারোক্তি—“Only for sexual attraction—–nothing but being desirous fatally!!
আসলে প্রেম এই বিমূর্ত্ত বিশেষ্যপদটির আড়ালে লুকিয়ে ছিল দূর্বোধ্য এক জৈবিক অনুভূতির ভয়ঙ্কর যৌনতা।হঠাৎ স্মৃতির পুনর্মোক্ষণ—-যেন কোনো রোম্যান্টিক সিনেমার প্লে-ব্যাক্।

শহরজীবন তখনও এতটা সস্তার উমেদারী করেনি।জীবন এতটা মেকি আধুনিকতার পাঠ নিতে শেখেনি।আধুনিকতার সংজ্ঞায় ফ্ল্যাক্সিবল্ কোনো তকমা জুড়ে দেওয়া হয়নি।যৌবন তখন ঘরোয়া শাসনের চোখরাঙানিকে মূল্য দিত।আজ থেকে বাইশ বছর আগে– প্রশান্ত যখন ছিল একটা বেমানান গোছের মূর্ত্তিমান ছন্নছাড়া।

তারিখটা ছিল একত্রিশে ডিসেম্বর ,সময় বিকাল চারটে–টেনিস কোর্টে শর্টস পরিহিতা রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত– আভিজাত্যের প্রতীক যেন।এই রুদ্রাণীকে দেখে প্রশান্তের সেদিন মেনিয়াক টেনডেনসি দেখা দিয়েছিল।সফিস্টিকেটেড্ ক্লাবকালচারের সমস্ত নিয়মনীতি ভেঙে ফেলেছিল সেদিন ও।রকবাজী কায়দায় –হুইসেলিং!রুদ্রাণীর রুদ্রত্বকেই যেন চ্যালেঞ্জ থ্রো করল প্রশান্ত–বেলাল্লাপনার আর্টিস্টিক কৌশলে।মধ্যত্রিংশতির উল্লাসময়ী রুদ্রাণী –আপাদমস্তক উগ্র আধুনিকা ;সে জানে তাকে দেখে ছেলেরা মরে বাঁচে।আচ্ছাসা মর্দানাভি উনপে মরতে হ্যায়!
সাহসী স্মার্ট যুবক সে পছন্দ করে ;তাই বলে ওভার স্মার্ট –নো নো– নেভার টু বি টলারেটেড্ অ্যান্ড অ্যাট এনি কস্ট।প্রশান্তের এতটা দুঃসাহস যে ও আদৌ পছন্দ করছেনা ,সেটা প্রশান্তের বন্ধুরা ভাল করেই জানে।
প্রশান্তের ঐ হেন বেপরোয়া ভাব রুদ্রাণীর চ্যালেঞ্জ বলেই মনে হয়েছে।অতত্রব দেখে নিতে হবে ঐ ছেলেটার কতটা দম!তাই সে হঠাৎ ওদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল।প্রশান্ত তখন তার এক বন্ধুর কোলে মাথা রেখে নির্লজ্জভঙ্গিমায় শুয়ে আছে।তার বন্ধুরা তাকে ধমকের সুরে বলে ওঠে –আঃ প্রশান্ত ইয়ারকির একটা সীমা আছে?সব জায়গাতেই তুই একরকম।তোর কি একটুও কমনসেন্স থাকতে নেই?তুই কার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিস্?জানিস উনি অ্যাটর্নিজেনারেল মিঃ রাজেন্দ্র দত্তগুপ্তের একমাত্র মেয়ে—মিস রুদ্রাণী!
কথাগুলো যেন বাতাসে উড়েগেল –প্রশান্তের কোনো হেলদোলই নেই।সে আরও বেপরোয়া জোরগলায় গান ধরল–হাম্ তুম্ এক কামরেমে বন্দ হো অউর চাবি খো যা—-

প্রচণ্ড অপ্রতিভ হয়ে পড়েছিল টেবিলের বাকি সকলে।নিজস্ব রাজকীয় ভঙ্গিতে এসে দাঁড়াল রুদ্রাণী।হাতের টেনিস রাকেটটা দিয়ে প্রশান্তকে টার্গেট করে বাকিদের উদ্দ্যেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল–হু ইজূ দ্যাট মাঙ্কি?হুজ গেস্ট ?

আই অ্যাম প্রশান্ত পালৌধি নিড নো সুপারভিশন্,চটজলদি উত্তর দিল প্রশান্ত।—
——!!
আচমকা বুমেরাং এবং জবরদস্ত।রুদ্রাণী যেন খানিকটা হকচিয়ে গেল।এ যেন অ্যালোপ্যাথি–like cures like theory–
রুদ্রাণী গর্জ্জন করে উঠলো–হোয়াট!!
প্রশান্ত এবার রীতিমত স্বপ্রতিভভাবে অ্যাঙ্গিলিসাইস্ড্ উচ্চারণে জানাল—ম্যাডাম আই অ্যাম দ্য গেস্ট অব মাই ওন।অ্যান্ড ইউ আর সারটেনলি অন বিহাভ্ অব আওয়ার দ্যাট এনসেস্টরস্—” এপ্” বাই নেম।
রুদ্রাণীর ঠোঁটদুটো রাগে কাঁপতে আরম্ভ করলো।তার তাকে মাঙ্কি বলার জবাব এইভাবে –তাও আবার ভাষার চাতুর্য্যে !এতটা ঔদ্ধত্য ঐ ছেলেটার!সেকি জানেনা রুদ্রাণী দত্তগুপ্তের একচুয়াল হোয়্যারঅ্যাবাউটস?তাকে সে এপের প্রতিনিধি বলার সাহস পেল কোথ্থেকে!——
অতএব এ যার সুপারভিশনে এখানে ঢুকেছে তাকে ডাঁটবে।অসহ্য! রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত এই প্রথম কারও কাছে ধাক্কা খেল ।না হজম করে বসে থাকার মেয়ে সে নয় –ফিরিয়ে দেবে এই ইনসাল্ট শতগুণে।হঠাৎ তার মনে হল–উঁহু!–সামথিং স্পেশাল ইজ দেয়ার ইন হিম।রাগটাও যেন এক অজ্ঞাত কারণে স্তিমিত হতে লাগল।
রাগের আবরণে সত্যখোঁজার তত্ত্ব পুরে ছুঁড়ে মারল আবার প্রশ্ন–হুজ গেস্ট ?হুজ গেস্ট ইজ হি? অ্যান্ড আই ডু ওয়ান্ট টু নো দিস্।

জবাবটা দিলো প্রশান্ত খুব ঠাণ্ডা মাথায়–সারটেনলি ইউ আর ডিফ্।

হোয়াট,চিৎকার করে উঠলো রুদ্রাণী।

ইয়েস ইট ইজ্;বিকজ্ আই হ্যাভ্ মেনসানড্ বিফোর।
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো প্রশান্ত।কলারওয়ালা লাল রঙের শার্টে দারুণ মানিয়েছে ওকে তারউপর আবার বুকের বোতাম দুটো খোলা—-তার এই ড্রেসিং স্টাইলটা যেন” against the dresscode”বলে মনে হয়েছে রুদ্রাণীর।এই মুহুর্তে ওকে শুধুমাত্র এই কারণ দেখিয়েই ক্লাব থেকে বের করে দিয়ে ওর ঔদ্ধত্যের উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায়!মনে মনে এমনটা যখন ভাবছে তখন হঠাৎ তার চোখ পড়লো প্রশান্তের প্রশস্ত লোমশ বুকের দিকে—যেন সতেজ সবুজ ঘাসের প্রশস্ত লন যেখানে অনায়াসে ক্লান্তিহর বিনোদনে দুদণ্ড আরামতো করাই যায়।হঠাৎ রুদ্রাণীর গোপনতম ইচ্ছার চুল্লীতে কেযেন ইন্ধন যোগাতে লাগলো ;আগুনের নীল শিখায় ক্রমশঃ পুড়ে যেতে লাগলো তার প্রতিশোধস্পৃহার শালকাঠ।

হাইসোসাইটি কালচারে নারীস্বাধীনতা সো করার একটা প্রথা ছিলো– মেয়েদের গা খোলা চালচলন।বিপরীতপক্ষে পুরুষদের ছিল ঠিক উল্টোটা অর্থাৎ পোষাকে-আষাকে একটা রাখঢাক ভাব।তাই প্রশান্তের ঐহেন ড্রেসকালচার যেন এক অনিবার্য্য ব্যতিক্রম—–স্বর্গোদ্যানে শয়তান নির্দেশিত নিষিদ্ধ জ্ঞানফল!—-রুদ্রাণীকে পেয়ে বসলো যেন এক অমোঘ মোহ।প্রশান্তনামক চুম্বকের দুর্বার আকর্ষণ রুদ্রাণীনামক কাঁচা লৌহ খণ্ডটিকে একঝটকায় কাছে টেনে নিল।প্রশান্তের চোখে চোখ রাখল রুদ্রাণী—মানে হাইসোসাইটি কালচারে অভ্যস্তা রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত।রুদ্রাণীর প্রেমের পানসি এখন প্রশান্তসাগরের মোহনায় দিকভ্রান্ত–ন যযৌ ন তস্থৌ ।

প্রশান্তের চোখ যেন ক্রমশঃ গ্রাস করতে লাগল রুদ্রাণীর মনকে।ওর চোখের মণিতে রুদ্রাণী দেখতে পেল এক অতলান্তিক প্রেম যেন বাঙ্ময় হয়ে আছে।রুদ্রাণী আর নিছক কালচারের আবরণে নিজেকে ঢেকে রাখতে পারলনা।প্রশান্তের দৃষ্টি ওর সর্ব্বাঙ্গ দখল করে ফেলেছে।ওর দিকে এগিয়ে আসছে এক কালপুরুষ চোখে যার যুগসঞ্চিত বুভূক্ষা– সংহারী মূর্ত্তিতে!!সবকিছু তছনছ করে দিতে—-
exceptional!—-piercing!——full of sexual appeals!!
ঐ কালপুরুষ যেন রুদ্রাণীকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে আর বলছে–come on darling! come on! wouldn’t you once try me?

হঠাৎ প্রশান্ত হাতটা বাড়িয়ে দিল রুদ্রাণীর দিকে–সব কেমন যেন গোলমাল হয়ে যেতে লাগল রুদ্রাণীর।শর্টসপরা রুদ্রাণী সারা শরীরে যেন একটা তিরতিরে কাঁপন অনুভব করতে লাগলো; সারা শরীর কামনায় জর্জরিত –একসময় সমস্ত বিচার বুদ্ধির বেড়া টপকে রুদ্রাণীও হাত মেলালো।অজগর এবার শিকার ধরেছে।রুদ্রাণী মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগল –yes! yes youngman I just want you—- ।

সকলে অবাক বিস্ময়ে দেখছিল,সমস্তদিক থেকে মূর্তিমান বাউণ্ডুলে ঐ প্রশান্ত পালৌধির প্রেমে বিবশ হয়ে ,অ্যাটর্নিজেনারেল রাজেন্দ্র দত্তগুপ্তের একমাত্র মেয়ে তাকে নিয়ে একেবারে নিভৃত এককোনায় গিয়ে টেবিলের নির্জনতায়, তাও আবার নিজের গেস্ট হিসাবে সমাদর করে বসাচ্ছে।নিজেও বসেছে গা ঘেঁসাঘেসি করে—মুখোমুখি নয় কারণ সেখানেও হয়তো একটা দূরত্ববোধের মনস্তত্ব কাজ করতে পারে।
কিছুক্ষণ দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে থাকল কোনো এক অজানা ভাবের রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত আকর্ষণে—হঠাৎ নীরবতা ভেঙে প্রশান্ত বলে উঠলো–রুদ্রাণী ইউ আর দ্য বেস্ট।
——ইউ আর নাথিং বাট এ ক্রিয়েশান ওয়ান অ্যান্ড ইউনিক্—-ইউ আর লাইক আ ওয়েসিস্ —–এভরিবডি ক্যান কোয়েন্চ্ হিস্ থার্স্ট কামিং নেয়ার ইউ —–ইউ আর ডেনরাজাসলি ফেয়ার ওয়ান।
ইউ আর এভার লাস্টিং ইউথ্ —-হে দেবী তোমার যেন আদি নেই ,অন্ত নেই।
বিছানায় শুয়ে রুদ্রাণীকে সোহাগের কায়দায় বলতো এসব প্রশান্ত।বলত বহুত পেয়ার সে –with love।রুদ্রাণীকে টানা অনেকটা সময় ধরেই প্রশান্ত ভালবেসেছিল। তার একেবারে নিজস্ব রীতিতে— পারফেক্টলি ইন হিস্ ওন ওয়াইল্ড স্টাইল।অপরপক্ষে রুদ্রাণী !অমোঘ এক জৈবিক আকর্ষণে কাটিয়ে দিয়েছিল অনেকগুলো দিন—-অনেক গুলো মাস—-অনেকগুলো বছর।একটা নস্ট্যালজিয়া তাকে পেয়ে বসেছিল।তার দৈহিক সুষমার খ্যাতি ,প্রশান্তের মুখ থেকে শুনে শুনে ওর মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাসের প্রাবল্য দেখা দিয়েছিল। ও বিশ্বাস করতো তার এই শরীরী ভান্ডার চিরদিনই যেন যৌবন মদিরায় “হরদম হ্যায় হরদম ভরপুর মদ!”থাকবে” because she is the very gift of cupid”—কামদেবের আশীর্ব্বাদধন্যা। কামদেবের প্রসাদে যৌনতার জীবন্ত প্রতীক ,রতিক্রীড়া নিপুনা স্বর্গবারাঙ্গনা।সে স্থূল শরীরে অনায়াসে রচনা করতে পারতো উত্তেজনার দাবানল যে আগুনে পৌরষোচিত বর্বরতা পুড়ে ছাই হয়ে যেত —আর রুদ্রাণী হয়ে উঠত আরও উগ্রযৌবনময়ী ,রতিক্রীড়াপটীয়সী—–এ শক্তি যেন তার স্বয়ংক্রিয় শক্তি।
একসময় স্ত্রীর এহেন গুপ্তরহস্যের পরিচয় পেয়ে প্রশান্ত যারপরনাই কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিল বইকি!প্রথম সেই ফুলশয্যার রাতেই এটা টের পেয়ে প্রশান্ত বলেছিল–you are all but like this –virgin class apart —virgin!—still a dangerous attraction!

রুদ্রাণী যেন পিনড্রপ-সাইলেন্স্ –আসলে ওর মুখে কথা বলার কোনো প্রয়োজন ছিলনা ;কারণ রুদ্রাণী থিওরিতে বিশ্বাস করেনা ও বিশ্বাস করে প্র্যাকটিকাল্।প্রশান্তের মন্তব্যকে দারুণভাবে সমর্থন জানিয়েছিল সেদিন ওর যৌবনোদ্দাম শরীর দিয়ে —-প্রশান্তের সামনে তুলে ধরেছিল ভোগের নৈবেদ্য তার নিজের শরীর।সেদিনই প্রশান্ত ঐ ভোগ্যবস্তুটিকে সার্টিফাই করেছিল,বলেছিল-you are nothing but a ——cupid made you in his leisure time and with no faults.

কিন্তু এতোকিছু সত্বেও মন যেন রুদ্রাণীকে সায় দিচ্ছিলনা।মনে মনে একটা যুদ্ধক্ষেত্র তৈরী হয়ে গিয়েছিল অনেক আগে থেকেই।যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত জংলী মানসিকতার ঝাঁঝালো পৌরুষের সান্নিধ্য পাওয়ার নেশা একদিন পেয়ে বসেছিল তাকে।আর তারজন্য সে তার জাত -মান-সংস্কার সবকিছুকে দুহাতে সরিয়ে রাস্তা তৈরী করে নিয়েছিল–ধীরে ধীরে সেই রাস্তা হয়ে উঠছিল কন্টকময়—জঞ্জালে পরিপুর্ণ চলার অযোগ্য। সেদিন সে ঝোঁকের মাথায় প্রশান্তকে মেনে নিয়েছিল—-কারণ সে ভেবেছিল সময়ের স্টিয়ারিংটা নিজের হাতে শক্তকরে ধরে প্রশান্তনামক জীবনগাড়িটার গতিমুখ ঘোরাবে —-সফিস্টিকেশনের দিকে। কিন্তু না!সেটা সে পারেনি—-হাইসোসাইটিকালচারের ড্রেসিংরুমে প্রশান্ত যে একেবারেই বেমানান সেটা বুঝতে পেরেছিল–পরীক্ষিত সত্যরূপে। আভিজাত্যের কোনোপাঠকেই প্রশান্তের বন্যস্বভাব ফলপ্রসু হতে দেয়নি। প্রশান্তের আদিমতা বারবার রুদ্রাণীকে মনে করিয়ে দিয়েছে -হি কান্ট বিলং টু আওয়ার ওন কালচার। প্রশান্ত যেন বার বার বলতে চেয়েছে–“আমি মুক্ত বিহঙ্গ নীলআকাশেই আমাকে মানায় ;আভিজাত্যের সোনার খাঁচায় নয়।”

সে বার বার তাকে সফিস্টিকেটেড করে তোলার সেনসিটিভ্ প্রসেসিং-এ একটা করে wild-error প্ল্যান্ট করে দিয়েছে—নিজস্ব সপ্রতিভ পৌরুষ আর শিক্ষাদীক্ষাকে একটা মাত্রা দিতে ; কিন্তু রুদ্রাণী সেটাকে তার ফল্ট ভেবে ভূল করতে থেকেছে। রুদ্রাণীকে বার বার সে বোঝাতে চেষ্টাকরেছে তার একান্ত নিজস্বতার কথা।কখনও সে উন্মাদের মতো প্রমান করতে চেয়েছে রুদ্রাণীর মেকি সাহেবী কায়দার অসাড়ত্ব।
প্রশান্ত পালৌধি অল অ্যালং ব্রিলিয়ান্ট স্কলার -বর্তমানে সে রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটির ইংরাজী সাহিত্যের হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট —টেনিসে আন্তর্জাতিক স্তরে বেশ কয়েকবার খেতাব জয়—তার খামতি কোথায়। তাই পরিস্থিতির সীমাবদ্ধতার বাইরে সে হাঁটতে শিখেছে সেই ছোটবেলা থেকেই আর তাই তাকে আপাতদৃষ্টিতে যাযাবর বলেই মনে হতে পারে! কারণ সে মিডিলক্লাস ফ্যামিলি থেকে লড়াই করে উঠে এসেছে— জীবন দর্শন তার নখদর্পণে।এখানটাতেই রুদ্রাণীর সঙ্গে তার ইগোর লড়াই তবুও প্রশান্ত পালৌধিকে নস্যাৎ করার কোনো সূত্রই খুঁজে পায়নি রুদ্রাণী তাদের হাইসোসাইটিকালচারের ম্যানুয়ালে। অতএব শুরূ হল একটা মানসিক ভূমিকম্প উভয়দিক থেকেই —ক্রমশঃ সম্পর্কের ফাটল বাড়তে লাগলো।যার প্রভাব পড়লো প্রশান্তের পিতৃত্বের অধিকার অর্জনের প্রয়াসের উপর—রুদ্রাণীই সেখানে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ালো।তাদের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশঃ বাড়তে লাগলো ,বাড়তে লাগলো উভয়ের অনীহা উভয়ের প্রতি।বন্যহস্তীর মতো খেপে উঠলো প্রশান্ত, রুদ্রাণীনামক হস্তিনীকে থেঁতলে দিতে চাইলো তার উন্মত্ততা।যেন দুই বন্যহস্তী আর হস্তিনীর প্রাণঘাতী লড়াই।একসময় রুদ্রাণীকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইলো সে।

তাদের দুজনের মধ্যে শুরু হয়ে গেল এক ইগোর লড়াই–যেখানে নিগোশিয়েশনের প্রবেশ নিষেধ।এইভাবে কেটে গিয়েছিল অনেকগুলো বছর।চব্বিশ থেকে পঁয়ত্রিশ—তখনও ওদের শারীরিক সম্পর্কের অমোঘ টানে ভাটা পড়েনি।অকপট শরীরীসখ্যতায় উভয়ের মধ্যে ছিল অকৃত্রিম –আদিম —ছটফট করা উদগ্র কামনার শরীর নিঙরে নেওয়া চৌম্বকতা;কারণ প্রশান্তের কাছে রুদ্রাণী ছিল বরাবরুই —very gift of the cupid।রুদ্রাণী এই শক্তির প্রসাদেই মধ্যচল্লিশে পৌঁছেও নিরুদ্বিগ্ন।শারীরিক সৌন্দর্যের ভান্ডারে তার তাই প্রাচুর্যের আবিলতা—একি কম কথা! সে যেন কামদেব ঔরস-সঞ্জাতা উর্ব্বসী–স্বর্গবারাঙ্গনা।

তারপর—-!!!!বর্তমানের পাথুরে পথের শেষে—-!!
gift of the cupid!—-রুদ্রাণীর মানসিকতা?
ভূমিকম্পপররর্তী ধ্বংসাবশেষ যেন।অসহ্য ক্ষোভে আর হতাশায় ফেটে পড়লো সে—–এখন এই মধ্যচল্লিশে তার কানে কানে কে যেন বলে —Rudrani you have already been finihed .Nothing is left in you ,the gift of the cupid.
ঠাণ্ডা এসি গাড়িতে ঐ কথাগুলোই যেন তার মানসিক অস্বস্তির গোপন গুহায় প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো—কুলকুল করে ঘামতে লাগলো রুদ্রাণী দত্তগুপ্ত—তার ভেতরের নারীসত্তা ঢুকরে কেঁদে উঠতে চাইছিলো।ওর বিবেক ওকে বারবার কঠিন থেকে কঠিনতর প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলতে লাগলো।বিবেক ওকে যেন বললো–“রুদ্রাণী তুমি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো হতে পারলেনা কেন? যারা বিয়ে করে অনেক অমিল সত্ত্বেও সন্তান-সন্ততির মা হয়ে অবিচ্ছিনা থেকে গিয়েছে স্বামী–সন্তান–সংসারের নিরাপদতম গণ্ডির ভেতরে।আর তুমি? আজ না ঘরকা না ঘাটকা ছিঃ!রুদ্রাণী ছিঃ!ছিঃ–ছিঃ!”—-রুদ্রাণী হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো–শীট্–শীট্–শীট্!
কিহলো ম্যাডাম?বলে ড্রাইভার হঠাৎ এমার্জেন্সি ব্রেক কষলো।

রুদ্রাণী প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে উঠলো–কিহলো থামলে কেন?এভাবে থামার কোনো মানে হয়?কোনোভাবেই থামা চলবেনা।চলতেই হবে যে করে হোক।চলো!চলো!চলো!
=সমাপ্ত=

Exit mobile version