ঠিকানার খোঁজে

ঠিকানার খোঁজে
-রুদ্র প্রসাদ 

 

 

এক অশান্ত মন আকুতি নিয়ে কোথা ধায় !
খুঁজে বেড়াই হেথা হোথা ক্ষণিকের শান্তি,
আলোকের পিয়াসী মন কেঁদে ফেরে হায়…;
অচিরেই হয় হতোদ্যম, জোটে শুধুই ভ্রান্তি !
মেপে নিতে বুভুক্ষু হৃদয়ের ক্ষীণ গভীরতা,
গেলাম ছুটে উত্তুঙ্গ মহা সাগরের কিনারে ;
বললে ঢেউ, ‘মনের দুঃখে, নিয়ে নিঃসঙ্গতা,
বৃথাই আছড়ে মরি এসে জনাকীর্ণ বালুচরে’।
অপরিণত হৃদয়ের অতলে অসার পরিব্যাপ্ত,
গেলাম উচ্ছাসে সমাহিত পবনের স্মরণে ;
সখেদে বলে এলোমেলো বাতাস, ‘আমি তো
হতাশ, আভূষণহীণতার বরণে আর মননে ।
তাই কখনও বা নিঃসীম শূন্যতায় চুপ করে,
আনমনে বয়ে চলি, তখন আমি খুবই শান্ত ;
কখনও বা ফুঁসে উঠি, ডাকি দুর্দমনীয় স্বরে,
আক্রোশে মাতাল সবকিছু করি যে অশান্ত’।
দেখতে ক্রমহ্রাসমান শক্তি, পর্বতের দেশে,
গেলাম হিমশীতল দুর্নিবার ছুটে চলা স্রোতে,
ক্ষতবিক্ষত পাথর বলে, ‘পেয়েছি অনায়াসে,
দৈন্যতা, খর্বতা ডিনামাইটের সবল আঘাতে’।
জানতে জীবনের গতি, গেলাম ছুটে নদীতে,
দুঃখী প্রবাহিণী অস্ফুটে বলে কুলুকুলু রবে ;
‘উন্নত সভ্যতার ময়লা রোজই জোটে মাথে,
আবর্জনা দিয়েই দূষিত করে চলেছে সবে ।
আজ কমে গেছে গভীরতা, সহনের শক্তি,
রণক্লান্ত আমি স্বীকার করেছি আজ নতি ;
সবার ভার বুকে নিয়ে কলুষিত, চাই মুক্তি,
পারছি না আর রাখতে বজায় স্বতঃগতি’।
দুরুদুরু বুকে সবশেষে গিয়ে মাটিরে শুধাই,
‘আছো কি আজও ? ওগো মা, স্নেহময়ী…,
কবলিত সকলেই, নিরাশা ছাড়া কিছুই নাই,
অগতির গতি, আশা-ভরসা তুমিই দয়াময়ী…’।
মাটি বলে, ‘অলক্ষ্যে সবারে নীরবে দেখে চলি,
মানবতাহীনতার বজ্জাতি আর স্ব – হানাহানি ;
নগ্ন ধ্বংসাবশেষে জর্জরিত, সব বাসনার বলি,
আপন সন্তানের রক্তেই সিঞ্চিত হই আপনি’ ।
নিঃস্তব্ধ আমি বধির হলাম, বাজল মনে ব্যথা,
মূঢ় আমি সামনে দেখি বুকে নিয়ে গভীর ক্ষত,
ভয়াল হীনমন্যতা নিষ্পেষিত কি ভীষণ কথা,
শোনাল আমায় এ ধরণীর ক্ষুদ্র ধূলিকণা যত !
ভগ্নাতুর হৃদয়ে ব্যাকুল, কূপমণ্ডুকতা নিয়ে…,
আঁধারের গোলকধাঁধায় খুঁজি মনের ঠিকানা,
কোথা গেলে শান্তি পাই, সবকিছুর বিনিময়ে ?
পথ আজও তো রয়ে গেছে অচেনা – অজানা ।
জলভরা চোখে দেখি, বসেছে তারার মেলা,
অসীম, অনন্ত আকাশ বলছে সেথায় সহাস্যে,
‘হতাশায় কাজ কি ? মিছে সব মায়ার খেলা,
চলছে বিবেকহীন অনাচার-রাজ প্রকাশ্যে ।
আত্মসংযমী, নির্ভীক, স্থিতপ্রাজ্ঞ হও অশেষ,
মনটাকে বড় কর, বিলিয়ে দাও পার্থিব যত,
সামান্য এ জীবন শূন্য হতে শুরু, শূন্যেই শেষ,
সবই হবে একদিন পঞ্চভূতে লীন, আছে যত’।
হয়ে গেলাম শান্ত, পেয়ে মনের মতো জবাব,
নতুন করে ভাবি আজ, জীবনটা সবার তরে ;
উদারতার এমন মহা-বীজমন্ত্রে ঘুচল অভাব,
মনকে সঠিক দিশা আকাশই তো দিতে পারে ।।

Loading

2 thoughts on “ঠিকানার খোঁজে

  1. এমন কবিতা পাঠের পর নিজে কে কবি বলে ভাবতে লজ্জা বোধ হয় ৷

    1. কি যে বলেন ! আপনাদের দেখা শেখার চেষ্টা করছি মাত্র, আমার সবকিছুই কেমন যেন এলোমেলো লেখা…, তবুও আপনাদের ভালো লাগে, এ তো আমার পরম সৌভাগ্য । আপনাদের স্নেহাশিসবলে চেষ্টা করে যাব সবসময়, দেখা যাক কি হয় । ধন্য যোগে কৃতজ্ঞতা সতত সুমনদা, ভালো থাকুন সবসময় ।

Leave A Comment