রেখা

রেখা
-রাজীব লোচন বালা 

 

জীবনের নাম যদি তোমার সাথে লেখা রয় ওগো রেখা,
তোমার পরশে যদি হৃদয় মোর কথা কইতে চায়_
তবে কি তুমি আপন করে বেঁধে নেবে প্রেমের ডুরির অনুরাগে
এই প্রাণ যদি মোর বীতশ্রব্ধ হয়, তোমার পরশ কি পারবে ফিরাতে ।

তুমি রয়েছো মোর প্রেমের গুলশানে , রাঙ্গা ফুলগুলো গুছিয়ে নিয়ে,
তোমার হাতে করে মালা গেঁথে রেখো
মাঝরাতে উঠে উঠে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকো,
দেখিবারে পাবে তুমি দুচোখ ভরে আমার স্বপ্ন গুলো লেখা ছিল।

এক পলকের শুভদৃষ্টি ভুলিনি আমি সেই যে দেখেছিগো প্রিয়া,
শুষ্ক চোখ দুটো মোর তৃষ্ণার্ত হয়ে হয়ে একবার তোমায় দেখবে বলে ।
জানি না কখন কি কিবা কি যে হবে তোমার পরানে আমি জিড়িয়ে লইবো,
পারবে কি না ওগো তুমি , তোমার সাথে চিরকাল রইবো ।

তোমার নয়ন দুটি বাঁকা ভ্রু-এর মাঝে হরিণীর ন্যায় কোমল প্রস্ফুটিত,
তোমারই চোখ দিয়ে তিমিরেও আলো কিরণ আমি দেখি।
বিনুনি করা তব কেশের স্নিগ্ধা শোভায় পাহাড়িয়া ঝর্ণাও লজ্জা পায়,
আলোর কিরণে তুমি সবারে রাখো সেই রেখার মাঝে আমারেও রেখো।

স্নিগ্ধা জোৎস্নালোকিত তোমার মুখের হাসি পদ্ম ফোঁটায়,
তোমার শব্দগুলো আমার নিথর দেহে নূতন প্রাণ জাগায়।
কত যে বেসেছি ভালো , সে কথা তুমি যদি জানতে,
এই হৃদয় চিরে যদি দেখানো যেত, তবে তুমি জানতে ওগো রেখা।

তুমি রেখা নও ওই অঙ্ক পাতার , তোমাকে পাই আমি হৃদয়ে আমার_
তোমার স্নিগ্ধ হাসি যখনই খসে পড়ে ধরার পড়ে ওগো অপরূপা ,
শরতের মেঘের ভেলায় উড়ে চলা এক হিমেল হাওয়া ,
আর নীল সাগরের সেই মনের মিলন বেলা।

যে কথা মুখে বলা আজও হয়ে ওঠেনি, সাহস করেও তোমায় জানাতে পারিনি,
যে চোখের কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল ,দুটি দেহ এক হৃদয়ে
বাঁধা পড়েছিল ।
স্বপ্নের গল্পগুলো মেঘেরো খামে, তোমারিই নামে উড়ো চিঠি গুলো পাঠিয়েছিলাম,
তুমি পড়ে নিও , মিলিও নিও খুব যতনে তা লিখেছিলাম।

মনের ভাষা গুলো চোখের মনিতে ভেসে ওঠে জানো,
তোমার হাসি আমি দেখবো বলে কত কবিতায় আমার স্মৃতি আঁকি।
যে কথার শুরু চোখে , তোমায় এক পলক দেখে
মন চায় বলি একবার প্রাণের কাছে ডেকে।

সারা জীবন মোর কি এভাবেই কাটবে , তোমার হৃদয় দোয়ার খোলা রেখো,
আমি যেতে চাই , পেতে চাই তোমারে আমার মনের ঘরে।
আমার যা কিছু আছে আলোর মাঝে জানি আছে অন্ধকার,
আলোটুকু নিয়ে তুমি সাজাও এসে ছোট্ট আলোয় ভরা কুটির আমার ।

তোমারেই খোঁজে ছেড়েছি পবন দেখো নাহি মানে কোনো বর্ডার,
নীলাকাশে চেয়ে দেখো পাখিদের উড়ন্ত বাহার
যদি কভু যাও তুমি নদীর ধারে,
ভাসানো ফুল হয়ে দেখবো তোমায় শুধু দু-নয়ন ভরে,
যদি যাও পাথরের কিনারায় , থাকব বৃক্ষ হয়ে ছায়াদানে তোমায়।

একটা কথা ওগো তুমি শুনে রাখো, তোমাহীনা এ জীবন মোর
নীল দরিয়ায় ডুবন্ত তরী কূলকিনারাহীন নাবিক হয়ে রয়ে যাইবো।
ওগো তোমায় নিয়ে ভালোবেসে তোমার দেখা পাইবো বলে,
ছুটে চলেছি অকূলপাথারে তোমার রাঙ্গাহাসি দেখবো ভেবে।

ইহকাল আর পরকাল আমি থাকবো তোমার চিরকাল
যে যে সময় তোমারে দেখি চলে যাই জানি না কিভাবে কখন,
আজ নয় কাল তোমায় বলবো ভেবে এতগুলো দিন চলে গেল
পাখির বাসা যেমন হাওয়ায় দোলে, আমার প্রাণ তেমনি থাকিতে না পারে ।

তুমি জানো বন্ধু ওগো প্রাণের সখী
আমার হিয়ার অন্তর- বাহিরের জীবনের গতি
বহু অমাবস্যা পাড়ি দিয়ে জীবনে প্রথম চলার পথে
তোমার মতোন এমন পূর্ণিমা চাঁদনীর দেখা পেয়েছি।

যখন ছিলাম আমরা এগারোর ঘরে, বান্ধবী তুমি মোর মরমে ছিলে,
যেদিন তোমার কন্ঠ শুনেছি , আমার চিত্ত থেমে যেত।
তোমার আসা- যাওয়া দেখিয়া রইতাম,
একদিবস চলে গেলে বিরহ জ্বালায় সারাটা দিন খুঁজে বেড়াইতাম।

তোমার চাহুনি আজও মনে পড়ে জানে সেই দিন রেখছি যতনে,
আমি বোধহয় এখন ওগো হয়েছি পাগল এই সায়রে
তরী হয়ে এসে তুমি ধরো আমারে ,
প্রাণপ্রেয়সী ওগো কাছে টানো শেষ হওয়ার আগে।

তুমি জানো আজও বলিনি , আমার কবিতায় তুমি নতুন তুলি,
আঁকব তোমায় বীণার সুরে , ছন্দে ছন্দে প্রেমের পরশে,
তুমি সাথে থেকো, যেও নাগো দূরে, তোমায় হারাতে চাই না বারেবারে।
সত্যি করে বলো আমার আমি তোমার হৃদয় কি না,
তুমি আমার সুখ- দুঃখের পরাণ বন্ধু কি না ?

হৃদয়ে লিখেছি নাম তব, সে নাম কভু মুছবে না,
আমার প্রাণ জীবন হতে বের হয়ে গেলেও তোমার পলক ভুলবে না।
গভীর হয় গো যেখানে ভালোবাসা তোমারই কথা ওগো,
সেখানে থাকে না মুখের কোনো ভাষা।

যা কিছু ভালো আমার তোমারে দিলাম , সারাজীবন হাসি- খুশি থেকো
তুমি না হাসিলে ব্যাথা বড় আমি পাই , নিজেরে দোষী তখন মনে হয়,
আমি সাগরের পাড়ে ভেসে ভেসে তোমার হাস্যোজ্জ্বল বদনখানা দেখে রইব।

তাতেই আমার প্রাণ জুড়াবে , পদ্ম পাতায় টলমল জলবিন্দু হয়ে ,
যখন তোমার কথা শুনি একাগ্র চিত্তে হৃদয় বুনেছি।
জীবনে এক ঝলক দেখিয়া তোমায় পাগল হয়েছি
সারা জনম তোমারে আপনজন ভেবে বুকের মাঝে রাখতে চাই ।

তুমি স্বর্গে সেই যা দিয়ে আগুনেও প্রেমের অনল বহে,
তোমার সহসা চোখের বাণে এই হৃদয় মোর বিঁধে গেছে।
আজও বাঁশি বাজে দেখো চেয়ে শ্রীকুঞ্জকাননে
তারই তালে নৃত্যকারী মোরা দুজনে হইবে ভানুদয় জানি প্রভাতে।

অরুণ- বরুণ , পবন- অগ্নিকে সাক্ষী রেখে
মিলাবে – মিলিব এক হৃদয়তে হাতে হাত রেখে পবিত্র বন্ধনে।
জানি না কি করে হবে সাহস দিয়ো প্রভু চাই বলিবারে,
এ জীবন তেমাকে দিয়ে , জনমে জনমে যেন পাই তোমারে।

কত কথা কত ব্যাথা আমার লুকিয়ে রাখা
জানো নাগো তুমি-সেই হারানোর ব্যাথা।
যেও না ছেড়ে মোরে কভু বড্ড কষ্ট হবে ,
মালা দুটো বানিয়ে রেখো যত্ন করে তোমারে পরাবো জনমে- জনমে ।

জীবনের শেষ গান তোমার জন্য রহিবে ওগো অনুপমা,
ক্লান্ত হয়ে যদি যাইগো আমি, তুমি হইয়ো প্রাণ -ছায়া।
যেখানেই থাকো তুমি ভালো থেকো, খোলা রেখো দরজাখানি
একই প্রাণ- মনে একাত্ম হতে ।

কালবৈশাখীর ঝড়ে ভাঙ্গবে না কভু বন্ধন মোদের প্রিয়তমা,
মনে রেখো তোমায় আমি স্বপ্নে দেখি একই মালার হৃদয়তলে।
সরায়ো না মোরে তব অম্লান হাসিমাখা মধুর কন্ঠ হতে,
জীবন ভর তোমায় ভালোবাসিব , এই বন্ধন তুমি প্রভু হতে চেয়ে নিও।

নাম তোমার রেখা, সত্যেরিই আঁকা ঈশ্বরের পরম সৃষ্টি,
যতনে যতনে গড়েছে তোমায় এত সুন্দর শব্দ- হাসি দিয়ে।
এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু , তুমি শুধু ভালোবাসা দিও,
সদা যেন হাসিমুখে থাকো তুমি , রাজীবের রেখা হয়ে সদা প্রেমের হৃদয়ে।

Loading

3 thoughts on “রেখা

  1. অনবদ্য বর্ণনা করেছেন প্রিয়কবি।
    মনে হল নিজের কারও উদ্দেশ্যে প্রেম নিবেদন।
    তাৎপর্যপূর্ণ অসাধারণ প্রেমমূলক কবিতা।

  2. 🌹 💐অসাধারণ কবিতা।
    অনিন্দ্য অনন্য বর্ণনা করেছেন প্রেমিকার 🌹💐

Leave A Comment