কমলার স্মৃতিচারণ
–মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ
কুন্তল ছিল কমলার একমাত্র সন্তান,
শৈশব থেকেই বাপ হারা ছেলেকে নিয়ে লড়াইটা ছিল কমলার!
দিনের পর দিন বাবুদের বাড়ি ঘর মুছে,কাপড় কেচে,বাসন মেজে চলতো কমলার সংসার।
পড়াশোনার প্রতি ভারি মনযোগ ছিল কুন্তলের।
কমলা তা ভালোই বুঝতে পারতো—-
তাইতো রাতের পর রাত জেগে,ঠোঙা বানিয়ে দিয়ে আসত কাক ডাকা ভোরে।
কমলার জীবনের কষ্টের কাহিনীর অন্তর্গত ছিল কুন্তল, সবই ছিল তাকেই ঘিরে—–
অভাবের সংসারে মা-ছেলের একটাই স্বপ্ন,
একদিন এ আঁধার কাটিয়ে রবির কিরণ এসে পড়বে জানালার এপারে,
তাদের স্পর্শ করে যাবে সোনালি রোদের ছটাক,,,,
বহু বছর কেটে গেছে——
আজ কমলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মা-ছেলের পুরোনো স্মৃতিচারণ করছে।
আজ আর সংসারে অভাব নেই,
কুন্তল আজ সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত,সে যে আজ বড়ো অফিসে চাকরি করে।
আজ কুন্তল বিবাহিত,নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছে।
তবে এতটুকু শান্তি নেই,ওদের বিবাহিত জীবনে—–
যত যুদ্ধ যেন বৃদ্ধা কমলাকে ঘিরে……
পাশের ঘরে প্রতিনিয়ত ছেলে-বউ এর অশান্তি যে চরমে…
শুনতে শুনতে কমলা দগ্ধে মরে!
যুদ্ধ যে চলে পাশের ঘরে!
আর যে সহ্য হয়না—-
কি কাজে লাগে উনি আমার?
কতোবার বলেছি,এসব দায়িত্ব আমি ঘাড়ে নিতে পারবনা…পারবনা…পারবনা…
শুধু বসে বসে অন্নের ধ্বংস ছাড়া আর কি আছে ?
রুনা তোমাকে কত্তো বার বলেছি! মা কে ওভাবে বলবেনা।
তুমিতো জানো,মা কতো কষ্ট করে আমাকে বড়ো করেছে,
মানুষ করেছে!
সে তো সব্বাই করে কুন্তল,
এটা তো ওনাদের দায়িত্ব…
আলটিমেটলি,ওনারা তোমাকে জন্ম দিয়েছে।
সেটাই তো বোঝাতে চাইছি রুনা….
উনি আমাকে জন্ম দিয়েছে,উনি যে আমার মা!
আমি ছাড়া কে দেখবে মাকে ?
এটাও কি আমার দায়িত্ব না!!
প্লিজ কুন্তল,
এক্সকিউজ দিওনা…
কালই আমি রনিতকে নিয়ে বাপির কাছে যাচ্ছি!
রুনা…
থাক,,,অনেক হয়েছে,
তুমি থাকো তোমার বৃদ্ধা মা কে নিয়ে—–
পাশের ঘর থেকে কমলা ছুটে এসে!
বাবু!
শুনেছি বৃদ্ধাশ্রমে নাকি আমার মতন অনেকে থাকেন,
দেখনা বাবা!
আমাকে একবার ওখানে রেখে আয় না!
এমনিতেও সারাটাদিন একঘরে থাকতে আমারও ভালো লাগে না,
শুনেছি ওখানে সবাই খুব ভালো থাকে!
তুই নাহলে মাঝেমধ্যে গিয়ে একটু দেখে আসিস!!!
মা তুমি শেষে বৃদ্ধাশ্রমে…
তাতে কি হয়েছে বাবা!
আমিতো তোমার হৃদয় থেকে দূরে যাচ্ছি না!
এতো বছর তো আমরা একসাথেই ছিলাম,
আজ একটু নিজের সংসারে মন দাও…..
তুমি না বাবা হয়েছ,,,,
মনের মতন করে সন্তান মানুষ করো,
আমি যে আজ আছি ,কাল নেই…..
ওদেরকে সাথে নিয়েই যে তোমাকে বাকিটা পথ চলতে হবে বাবা……!
তবে তোমার বাকিটা পথ বুঝি ওই বৃদ্ধা আ….
আমি জানি তুমি আমার লক্ষ্মী ছেলে!
এবার আমার একটা ব্যবস্থা করো বাবা!
যত তাড়াতাড়ি পারো…
মা…..
হ্যাঁ বাবা আমি সব সময়ই তোমার সাথে থাকবো!
নীরবে চোখের জল মুছে ঘরে গেল কমলা!
কুন্তলের বুকের হাহাকার বুঝি শুনতে পায়নি রুনা!
সত্যিই এবার বুঝি বিদায় দেবার পালা—-
এবার বুঝি সূর্য ডোবার পালা—-