Site icon আলাপী মন

ভালোবাসার কাছে নতজানু

ভালোবাসার কাছে নতজানু
– অঞ্জনা গোড়িয়া

হসপিটালের ১৩ নম্বর বেডের রুগী দেখতে গিয়েই চমকে গেল প্রভাত।
কে ঐ বেডে? আমার রজনী ? এ কেমন রূপ? অনেক কথাই মনে পড়ে গেল প্রভাতের।
কাহিনী শুরু–
প্রভাত -রজনী চিরসাথী ,সেই ছোট্ট বেলা থেকেই এদের একসাথে পথ চলা ,বেড়ে ওঠা ।
রজনীর হাতের ওপর হাতটা রেখে ,মাথাটা প্রভাতের কোলে ,কত ঘুনসুঁটি আর হাসির ফোয়ারা। এ কাহিনী এক দুরন্ত প্রেমের জ্বলন্ত উদাহরণ। এ কাহিনী পড়ে যাওয়া থেকে উঠে দাঁড়ানোর।দুনিয়াকে বুঝিয়ে দেওয়ার সাহস, ভালোবাসা আর ভরসা পেলে আবার জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসা যায়।
প্রভাত ডাক্তারী পড়তে বিদেশে ব্যস্ত, রজনী অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ,কবে আসবে তার অন্তরের প্রিয়তম। এমনই সময় রজনীর বাবা মৃত্যু শয্যায়,কাতর প্রার্থনা বাবার । রজনীর বিয়ে নিজ চোখে দেখে যেতে চায় , বাবার মাথায় হাত রেখে রজনী কথা দিল বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করবেই। না ! কোন মতেই জানানো যাবে না প্রভাতকে ,তার যে ফাইনাল বছর ,সব ছেড়ে যদি ছুটে আসে ?? কি হবে ওর ভবিষ্যৎ?
বুকে পাথর চেপে নিঃশব্দে হলো মাল্যদান। বাবা , বাড়ির সবাই খুব খুশি ।আজ বাবা বহুদুরে। রজনী আজ সংসারী তবু বড় একা ।
প্রভাত দেশে ফিরে জানতে পারলো রজনীর নতুন জীবনের কথা। তারপর কেটে গেছে একবছর। এখন এই হসপিটালেই দেখা সেই চেনা রজনীর সাথে।

রজনীর দিব্যি চলছিল সংসার ,হঠাৎ ই এক মোটর দুর্ঘটায় মারা গেল রজনীর স্বামী ,আর রজনী শিরদাঁড়ায় মারাত্মক আঘাত পেলো। একমাস কোমায় আচ্ছন্ন । শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিত্যাগ করল রজনীকে। বাপের বাড়ি বলতে বৃদ্ধা মা আর ভাই। কি হবে এবার?? সেই থেকেই হসপিটালের বেডে মৃতপ্রায় অবস্থায় শায়িত রজনী।

প্রভাত ,রজনী কে কত বছর পরে দেখছে এক রুগীর বেশে।আজ অনেক বড়ো ডাক্তার তবু সে নিঃস্ব ।এক নিমেষেই রজনীকে আবার আপন করে নিলো। সে জানতো রজনী পঙ্গু হয়ে যাবে ,আর হয়তো সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারবে না। তবু সে সাহসী তবু সে প্রেমিক তবু সে চিরসাথী হয়ে রজনীর পাশে দাঁড়ালো। জ্ঞান ফিরালো রজনীর ,কিন্তু পঙ্গুত্ব গ্রাস করলো তাকে। প্রভাত কোন দ্বিধা না করেই সহধর্মিনী রূপে তাঁকে গ্রহণ করলো । আজ ওদের দুজনের একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান। তিন বছর অতিক্রান্ত ।কোলে তুলেই প্রভাত প্রথম প্রথম রজনীর সমস্ত কাজ করে দিত। এখন বসেবসেই সব কাজ করে নিজ হাতে রজনী, একটা হুইল চেয়ার আছে বটে। রজনীর মনেও অদম্য সাহস আর জোর। সোজা হয়ে দাঁড়াবেই সে।রজনীর কোন হীনমন্যতা বোধ আসতেই দেয় নি প্রভাত। প্রভাতের কোন আফশোষ অনুশোচনা নেই। দুজনের মুখেই ঝলমলে হাসি আর ভালোবাসা। এরই নাম প্রেম। শুধু একটা মানুষের দৈহিক সৌন্দয্য দেখে ভালোবাসা নয় অন্তরের প্রেম একে অপরের প্রতি বিশ্বাস কঠিন বাস্তবকেও হাসি মুখে জয় করতে শেখায়। শারিরীক সমস্যার কথা জেনেও প্রভাত পিছু হটে নি । তাই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ওরা , বড়োই সুখী। প্রতিকূলতা পঙ্গুত্ব অসহায়তার কাছে ভালোবাসা নতজানু।
প্রভাতের আলোই রজনীর সব অন্ধকার দূর হয়ে আলোর ঠিকানায় ছুটছে ।

Exit mobile version