বুকের মাঝে
-রমলা মুখার্জী
আত্মীয়স্বজন আর অতিথিদের আগমনে উদিতির ছোট্ট বাড়িটা যেন সানাই-এর সুরের সাথে আনন্দে হাসছে। আজ যে তার মেয়ে ঝুলনের বিয়ে। প্রিয় বান্ধবীর মেয়ের বিয়েতে হিমিকাও দারুণ ব্যস্ত। অনেক কষ্টে সুমনের কাছ থেকে হিমিকা আজকের ছুটিটা আদায় করতে পেরেছে। অভিজ্ঞা বান্ধবীর ঘাড়ে বিয়ের প্রথাগত কাজকর্ম চাপিয়ে উদিতিও নিশ্চিন্ত। গত শ্রাবণেই তো হিমিকার মেয়ে খুশির বিয়ে হল। কত অশান্তি করেই না হোলো! খুশির পছন্দের আকাশ গরীব হলেও সৎ আর অনুভূতিপ্রবণ ছেলে। কিন্তু সুমন কিছুতেই বিয়েতে রাজি ছিল না। অর্থের দম্ভেই সুমন সব সময় ফুটছে,কারুর চাওয়া পাওয়াকে সে মূল্যই দেয় না। ঘর পোড়া গরু হিমিকা কিন্তু খুশিকে ভুল করতে দেয় নি।অনেক লড়াই করে সে খুশির আকাশ ছুঁয়েছে ।হঠাৎ হিমিকার চিন্তার সুতো কেটে যায় একজনের মিষ্টি ডাকে,
-হিমু, আমায় চিনতে পারছ?
-এই ডাক কি ভোলা যায়?
অতীত স্মৃতিতে হারিয়ে যায় হিমিকা, বড় সরকারী অফিসার সুমনের সাথে হিমিকার বাবা যখন হিমিকার বিয়ে ঠিক করলেন তখন গানের শিক্ষক তপনকে প্রত্যাখ্যান করে অনেক সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়ে হিমিকা সুমনের গলায় মালা দিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সুমনের ভয়ঙ্কর মেজাজ সামলাতে সামলাতেই হিমিকার এতটা বছর কেটে গেছে ।
-কি হল চুপ করে আছো কেন? সত্যিই কি চিনতে পার নি হিমু?
-চিনতে পেরেছি গো, তুমি ছাড়া এত আপন করে আমাকে আর কে ডাকবে বল?
-তুমি কি আর আগের মত গান কর? তোমার সুরেলা কন্ঠের সেই অসাধারণ গান কত দিন শুনিনি গো ।
-আর গান, দিনরাত মেজাজী বরের ফাইফরমাস খাটতে খাটতেই দিন চলে যায় ।
মনে পড়ে যায় হিমিকার তপনের সংগে নানান অনুষ্ঠানে গান করার কথা। কত পরিচিতি তখন হিমিকার,আর নন্দন চত্বরে তপনের সাথে কাটানো প্রেমের দিনগুলো…. সত্যিই সুখ যেন উপছে পড়ত। হিমিকার গাল বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা।
-আমায় ক্ষমা করে দাও তপু ।
-ক্ষমা কিসের হিমু। আমাকে সম্পূর্ণ করে বোঝার তোমার এই উপলব্ধি সেটাই তো আমার পরম প্রাপ্তি। দুজনেই দুজনের বুকের মাঝে আছি সেটাই বা কম কিসের বল?