গৃহবধূর মনের কথা
-সোনালী গুপ্ত
” সারাদিন ত বাড়িতে রয়েছ বুঝবে কি করে বাইরে বেরিয়ে পয়সা রোজগার করার কষ্ট কত? আমার পয়সায় ফুটানি করছ লজ্জা করেনা? এখন ত তোমাদের কত সুবিধা আর আমাদের মায়েদের কত কষ্ট করতে হয়েছে।” যে কোন গৃহবধূ কে এই কথাগুলি জীবনের কোন না কোন সময়ে শুনতে হয়। প্রতিবাদ করলেই অশান্তি। কারোর কারোর কপালে না হয় দুটো চড় থাপ্পড় জুটল। শিক্ষিত সমাজের মানুষ দের মনে হয়না গৃহবধূর সংজ্ঞা এখন বদলে গেছে। এখন আমরা শুধু বাড়িতে রান্নাঘরে বন্দী থাকিনা। আমাদের বাইরে বেড়োতে হয়। সংসার টা চালানোর জন্য আমাদের অনেক রূপ ধারণ করতে হয়। কখনো নার্স, কখন শিক্ষিকা কিংবা সংসারের বাজেট মন্ত্রী। এখন শিক্ষিতা পূত্রবধূ ঘরে আনা হয়। যে তার সন্তানের প্রথম শিক্ষিকা। অনেক কটুকথার মধ্য দিয়ে, অনেক না ভাললাগাকে মনের অনিচ্ছায় ভাল লাগিয়ে একটা অন্য পরিবারের অচেনা মানুষদের আপন করে নেয়। আগেকার গৃহবধূ দের এখনকার গৃহবধূদের মত অত বাইরে বেড়োতে হত না। এখন আমরা সন্তানের স্কুল, ব্যাংক, বাজার দোকান করা সব কাজ করি এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে বরের অফিস পার্টিতেও যাই। এবার আসি বরের পয়সাতে ফুটানীর কথায়। প্রতিটা দিন সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে, সুস্বাস্থ্যর অধিকারী হয়ে স্বামীরা যে অফিসে যান তার জন্য সারাবছরে অন্তত একটা ধন্যবাদ আমাদের পাওনা। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই গৃহবধূরা চেষ্টা করেন তাদের স্বামীরা যেন ঠিকমতো খেয়ে সঠিক সময়ে অফিস যেতে পারেন। কর্তা বাইরের খাবার খেয়ে অসুস্থ না হয়ে যান সেদিকে ও আমাদের নজর সর্বদা। ” ঠিক আছে তুমি শান্তিতে কাজ কর আমি ছেলের স্কুল মিটিং এও যাব এবং কালকে শাশুড়ি মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছেও যাব।” আজকালকার দিনের শিক্ষিত গৃহবধূরা প্রায় সময় এই কথা বলেন কর্তাদের। সেই জীবন সঙ্গীর পয়সাতে কি তার স্ত্রীর কোন অধিকার নেই? তাহলে কেন আমাদের এখন শুনতে হয় আমরা বরের পয়সাতে ফুটানী করছি? আমাদের কোনদিন ছুটি নেই, প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই, গ্র্যাচুইটি নেই, নেই কোন পেনশন। আছে শুধু একটি তুলনা মূলক গঞ্জনা “অমুক বাড়ির বৌদি কত কিছু করতে পারে আর তুমি কিছুই পারনা।”