পরিণতি

পরিণতি
-রাখী চক্রবর্তী

“এতো রাতে ছাদের রেলিংএ বসে দিশা কি করছে,,,,,না,,,,হুম,, এই নিয়ে তিনদিন হল। মেয়েটা কি করে এত রাতে সুভাষদাকে বলতেই হবে”।রাতে বাথরুমে যাবার সময় সমীর গত তিনদিন ধরে এই দৃশ্য দেখছে। যথারীতি সকালে বাজারে যাওয়ার সময় সমীর সুভাষদাকে ডেকে বলল,সুভাষদা দিশা রোজ রাতে কি করে ছাদে ?
সুভাষদা তো অবাক হয়ে বলল,দিশা …ও তো এখানে নেই। ও তো মাসীর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। কেন বলতো সমীর কি হয়েছে? ছাদে ঘোরা নিয়ে কি যেন বলছিলে?
না না সুভাষদা ও কিছু না। কিন্তু সমীরের মনে একটা জিজ্ঞাসা থেকেই গেল। কৌতুহলের তো শেষ নেই সমীরের। যাইহোক রাতে আবার কি হয় দেখতে হবে।এইসব ভাবতে ভাবতে বাজার করে এসে সব কথা সমীর তার মিসেস সংযুক্তাকে বলল। রাত ঠিক দুটো সংযুক্তা আর সমীরের নজর সুভাষদার বাড়ির ছাদের দিকে। আজ ওরা দেখল দিশা রেলিং বেয়ে হাঁটছে। ভয়ে ভয়ে ওরা ঘরে চলে এল। দিশা তো মাসীর বাড়ি তাহলে এটা কে? পুরো দিশার মতো দেখতে। পরের দিন সকালে সংযুক্তা সুভাষদার বাড়ি গেল সুভাষদার মিসেস মানে মিতাদিকে কাল রাতের সব ঘটনা খুলে বলল।মিতাদি বলল,দিশা তো এক সপ্তাহ বাড়িতেই নেই। কি যাতা বলছ? সংযুক্তা আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ফিরে এল। সুভাষদা ও মিতাদি সোসাইটির কারোর সাথে কথা বলছে না। সুভাষদা অফিস যাচ্ছে না। মিতাদি খামোশ থাকে সবসময়। কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। সংযুক্তা মিতাদির কুশল জানার জন্য ওদের বাড়ি গেছে পরের দিন বিকেল বেলায়। কিন্তু মিতা দি চুপ করে বসে আছে।

সংযুক্তা তো মাথামুণ্ডু কিছু ই বুঝলো না। যাইহোক রাত বারোটার সময় সুভাষদা ও মিতাদি পুরানো এলবাম নিয়ে দিশার ফটো দেখছে। হটাৎ দিশার মুখটা বেলার মুখে পরিণত হল নিমেষের মধ্যে। ভয়ে কাঁটা হয়ে গেল দুজনেই। এটা কি করে সম্ভব। এবার বেলার ফটো বার করতেই তাতে দেখল দিশার মুখ। হাত পা তাদের অসাড়। বোবা হয়ে গেল দুজনে। চলে গেল 20 বছর আগের ঘটনায়। তখন 22বছরের যুবতী বেলা সুভাষকে ভালোবেসে আত্মহারা হয়ে গেছে। সে আর কিছু চায় না সুভাষকে ছাড়া। এদিকে মিতা কিছুতেই এটা মেনে নেবে না। সুভাষের সন্তান তখন মিতার গর্ভে। বেলা সুভাষদের দুর সম্পর্কের আত্মীয়া।প্রেম পত্রের ভয় দেখিয়ে বেলা সুভাষকে কাছে পেতে চায়। কারণ বেলা জেনে গিয়েছে যে মিতা সুভাষকে ভালোবাসে। মিতা আর সুভাষ দুজনে ঠিক করল বেলাকে চিরঘুমের দেশে পাঠিয়ে দেবে।
তাতে সবদিকে রক্ষা পাবে। মন্দিরে সুভাষ ও মিতা বিয়ে করে ফেরার সময় বেলার সাথে ওদের মুখোমুখি হলে বেলা আবার ভয় দেখাতে শুরু করল। তখন সুভাষ বলল বেলাকে একটু ওদিকে চল তোমার সাথে কথা আছে। ওরা তিনজন আর শুনশান রেল লাইন।আচমকা ট্রেন আসতেই একটা ধাক্কা, ,?,ব্যাস, ,,,আপদ শেষ ।
টিরং টিরং হ্যালো মা,”আমার এখানে ভালো লাগছে না। আমি কাল বাড়ি আসব”। ফোনটা কেটে গেল।তোমার মোবাইলটা তো বললে খারাপ হয়েছে তাহলে,,,,, বেশ ভয়ে ভয়ে বলল মিতাদি সুভাষদাকে।সুভাষদা বলল, তাহলে এখন ঠিক হল। দাঁড়াও দিশাকে একবার ফোন করি,দিশা কেমন আছিস মা? দিশা বলল, কখন থেকে ফোন করছিলাম লাইন ই পাচ্ছি না কার সাথে এতো কথা বলো না,,, বুঝতে পারিনা। মিতাদি বলল ,তুই তো এই মাত্র ফোন করলি। দিশা বলল ,পাগল নাকি ,,,আমি শুয়েছিলাম। এখন রাখ আমি কাল বাড়ি আসছি। ফোন কেটে গেল। খুব সকালে দিশা বাড়ি ফিরলো। মা ,বাবা যেন হাতে প্রাণ পেল। বিকেলে খুব চিৎকার করে কার সাথে যেন দিশা ফোনে কথা বলছে। মিতাদি কিছুই বুঝতে পারছে না।মেয়ের মুখ গম্ভীর। কোনও কথা নেই। রাতে ডিনার না করে দিশা ঘরে চলে গেল। সুভাষদা ও মিতাদি চিন্তায় বিষণ্ণ হয়ে আছে। রাত্রি বেলায় একটু তন্দ্রা এলো সুভাষদা ও মিতাদি ঘুমিয়ে পড়লো। ভোরবেলাতে সোসাইটির সবার চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে দেখল দিশা রাস্তায় পড়ে আছে রক্তের বন্যা বইছে। পুলিশ এল এসে দিশার ঘর থেকে একা চিরকুট পেল তাতে লেখা ছিল, “বিবেক আমাকে ঠকালো মা।ও আমাকে ভালোবাসে না। ও অন্য কাউকে ভালবাসে।” সুভাষদা ও মিতাদি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে আর হয়তো মনে মনে ভাবছে পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।

Loading

Leave A Comment