অন্য পৃথিবী
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাস
ধানবাদ ষ্টেশন থেকে 57 কিলোমিটার দূরে Parasnath Mandir (পারাস নাথ মন্দির ) এই তো সেদিন ঘুরে এলাম বিরাট বড় পাহাড়ের উপর মন্দির। পায়ে হেঁটেই উঠতে হয়। মাঝে মাঝে ছোট ছোট দোকান পাঠ আছে একটু বিশ্রাম করে নিতে পারেন। কৌতূহলের বিষয় হলো ওখানে জৈন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। পুরুষেরা সবসময় নগ্ন থাকেন আর মেয়েরা সাদা থান কাপড় পরেন। নগ্নতা আমাদের সমাজে যেমন ভয়ঙ্কর ওদের সমাজে তেমনি সহজ সরল। নগ্নতার অর্থ এখানে সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। মন্দিরে যাবার পথে একটি দোকানে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে পরলাম।
হঠাৎ একটি বাচ্চা মেয়ে এসে কিছু পয়সা চাইল । দেখে মনে হলো খুবই গরীব। পর্যটকদের কাছ থেকে কিছু আদায় করা ওদের পেশা বলা যায়। ভিক্ষা শব্দটা এখানে না বলাই ভালো। কারণ ভিক্ষা শব্দের মানে ওরা বোঝে কিনা সন্দেহ আছে। আমি একটু মজা করেই মানি ব্যাগ থেকে 2000 টাকার একটি নোট বের করে, বাচ্চা মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে দিলাম। নোটটি দেখে মেয়েটি যেন কারেন্টে শট খাবার মত পিছিয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে একটা শুকনো হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ও যেন বলতে চাইছে বাবু আমাদের দারিদ্রতা নিয়ে ব্যঙ্গ করো না॥
তৎক্ষনাৎ আমি ওর সামনে 5,10,20,50,100, 500 এবং 2000 টাকার নোট দু হাতে করে ওর সামনে ধরে বললাম যেটা পছন্দ হয় নিয়ে নাও। ও আবার হেসে ফেলল । এ বারের হাসিটা যেন আমার প্রান জুড়িয়ে দিল। তারপর পাঁচ টাকার নোটটি নিয়ে নিল। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম 2000 টাকার নোটটি না নিয়ে,পাঁচ টাকার নোটটি নিলে কেন ?
ও বলল —— বাবু ওটা নিয়ে ভাঙ্গাতে গেলেই সবাই ভাববে আমি চুরি করেছি।
সত্যি তো এমন কথা এক বারও ভাবিনিতো। আমরাই তো সেই সভ্য সমাজের মানুষ যারা এই সব কথা ভেবে থাকি। দোকানদারকে সাক্ষী রেখে দু হাজার টাকার নোটটি ওকে দিয়ে দিলাম। ও একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, সঙ্গে মুচকি হাসি দিয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেল।