অণু গল্প

শতঘনী

শতঘনী
-রাখী চক্রবর্তী

 

 

ছোট্ট থেকেই মার প্রতি সব অত্যাচার, অবিচার দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে পিতৃহারা বিশু।
বাপের বাড়ি বেশ অবস্থাপন্ন, তাই দুই সন্তানকে নিয়ে সদ্য স্বামীহারা উমা বাপের ভিটেতে এসেছিল সন্তান দুটোকে মানুষ করবে বলে। তখন সিদু দুই বছরের আর বিশু তিন বছরের। তখন মায়ের কোলেই পিতার ছত্র ছায়া দেখেছিল ওই দুটি শিশু।

উমা বেশি লেখা পড়া জানত না। নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করাতে বাপের বাড়ির লোকদের কাছে সে মৃত বললেই চলে। যা কিছু স্বামীর সম্পত্তি ছিল সব তারই চিকিৎসাতে ব্যায় হল। উমার শেষ সম্বল স্বামীর ভিটেটাকেও বিক্রি করতে হল তবুও শেষ রক্ষা করা গেল না।
বাপের বাড়িতে উমা এখন “কাজের মেয়ে “হিসাবে পরিচিত। সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে সে শুধুমাত্র ছেলে দুটোকে মানুষ করবে বলে।
বিশু তার মায়ের প্রতি অত্যাচারের প্রতিটি চিত্র খণ্ড খণ্ড করে মনের খাতায় এঁকে রেখেছে। কারণ একদিন বিশু তার বড় মামাকে বলেছিল,মাকে দিয়ে সব কাজ করাও কেন? তাতে বড় মামা বিশুর মাকে পোড়া কাঠ দিয়ে হাতে মেরেছিল। বিশু বুঝে গেছে প্রতিবাদ করলেই মার ওপর অত্যাচারের মাত্রা ওরা বাড়িয়ে দেবে। তাই এখন সে বোবা।
সময়ের অমোঘ নিয়মে ও মায়ের ইচ্ছা শক্তির জোরে বিশু এখন কলেজে পড়ে । সেদিন বড় মামা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বাড়ির সবাইকে বলছে,পতাকা হাতে বিশুকে দেখলাম। উমাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বললেন ,মিটিং মিছিল করে এ বাড়িতে থাকা যাবে না।বাড়িতে আরও বাচ্চারা আছে। সব নষ্ট হয়ে যাবে এ ছেলের জন্য ।
রাস্তা দিয়ে বিশুর সাথে অগণিত মানুষ যাচ্ছে মিছিলে। বিশুর কন্ঠ এবার সোচ্চার প্রতিবাদে “হোক প্রতিবাদ; ;;;গর্জে উঠুক আকাশ, বাতাস পাহাড় পর্বত “। বিশুর মামা মামীরা ছাদে উঠে তার প্রতিবাদের মিছিল দেখছে। এ কোন বিশুকে তারা দেখছে।
উমার চোখ চিকচিক করছে। উমা পেরেছে সন্তানকে মানুষ করতে। বিশু হোক সারা বিশ্বের প্রতিবাদের স্তবক ।আর কোন নিরীহ মানুষ মরবে না। বড় মামা বেগতিক দেখে উমাকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বার করতে যাবে সেই মূহুর্তে বিশু মার হাত ধরে বলল,এটা তোমার ও বাড়ি মা। আজ থেকে তুমি শুধু মা হয়ে থাকবে। কাজের মেয়ে হয়ে না।
বিশু ছোট বেলায় পারেনি মার প্রতি অত্যাচারের শোধ নিতে। এখন সে বড় হয়েছে। মার অধিকার মাকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এবার বিশু চলল অন্য কোন মায়ের ঘর বসাতে। এইভাবে সে চলতে থাকবে জীবনভর

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page