চোর
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাস
সবে ডিউটি থেকে রানাঘাট CRE রেল কোয়ার্টারে ফিরছি পাশেই রাজীব পল্লীতে অনেক লোকজনের ভিড়। দুটি পুলিস ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে,দেখেই বুঝে গেলাম ব্যপারটা কি। আসলে ওরা চোর ধরতে এসেছে। রাজীব পল্লী হলো একটি বস্তির নাম আর ওখানে বেশ কয়েক জন কিশোর থাকে বয়স পনের থেকে পঁচিশের মধ্যে হবে। কারুরই বাবা মা নেই সবাই উটকো। একটি বাড়িতে ওরা থাকে। আর রাত্রে চুরি টুরি করে যা পায় বড়িওয়ালাকে দিয়ে দেয় বদলে সারাদিনে দুবেলা খাবার পায়। ওদেরকে সবাই “ড্রেনডাইট” বলে ডাকে। আসলে ওরা ডেনড্রাইট রুমালে নিয়ে তার গন্ধ শুঁকে নেশা করে । আসল নাম কি ? বা নাম আছে কিনা সন্দেহ । তিনটি ছেলেকে ধরে পেটাতে পেটাতে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল। অমি পাশ কাটিয়ে চলে আসছি। ওদের মধ্যে একজনকে অমি ভূতো বলে ডাকি। ও করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইল।
দশ পনের দিন পরে পাড়ার দোকানের মোড়ে দেখি ভূতো বসে আছে।
অমি বললাম ——– কবে ছাড়া পেলি ?
ও বলল —–এইতো এখুনি।
অমি বললাম —— চুরি টুরি ছেড়ে কিছু একটা কর যা টাকা পয়সা লাগে অমি দেবো।
ও মাথা নিচু করে কনো কথা বলল না।
অমি বললাম —— ভূতো কাল কিন্তু স্বাধীনতা দিবস। কাল কিন্তু চুরি টুরি করিস না । যদি টাকা পয়সা লাগে তো বলিস অমি দিয়ে দেবো।
ও বলল —– ও কাল স্বধীনতা দিবস !
মানে আমদের মালিকের বকনা গরুটা সেদিন ছুটে গেছিল সারাদিন কেউ ধরতে পারেনি । মানে ওই দিন গরুটি স্বাধীন হয়ে গেছিল। একেইতো স্বাধীনতা বলে?
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে, —— হ্যাঁ, বলে চলে গেলাম।
বিকাল হলে পালচৌধুরীদের মাঠে বসে সবাই আড্ডা মারে ছোটরা খেলা করে। আমিও গুটি গুটি পায়ে শহরের মধ্যে দিয়ে মাঠে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি আগেকার জমিদার এখনকার প্রথম সারির নেতা ও ধনী ব্যক্তি পালচৌধুরীদের বাড়ীর সামনে অনেক মানুষের জটলা ও কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখি ল্যাম্প পোষ্টের সঙ্গে ভূতো বাঁধা আর দু’চার জন ওকে মেরেই যাচ্ছে। আমি ঠেকাতে যেই গেছি আমাকেও ওরা চোর বানিয়ে বসেছে । ব্যপারটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে সঙ্গে সংগে থানায় ফোন করে সব খুলে বললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিস ভ্যান এসে হাজির । যে বেশি মারছিল সে বলল স্যার এই ছেলেটি আমাদের বাড়ি থেকে সব সোনার গয়না চুরি করেছে। এর এই বস্তার মধ্যেই আছে। থানার বড় বাবুর আদেশে বস্তা খুলে মাটিতে ঢালা হলো। একি এতো সব ভারতের জাতীয় পতাকা । কাল স্বাধীনতা দিবস ছিল আজ শহরের পথেঘাটে যত পতাকা পড়ে ছিল সব ভূতো গুছিয়ে বস্তায় ভরেছে। থানার বড় বাবুর বুঝতে অসুবিধা হয়নি ব্যাপারটা কি। অমি, ভূতো আর যে ছেলেটি মারছিল তাকে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে লকাপে পুরে দিল। ভূতোর জামিনদার হয়ে আমি সই করলাম।
থানার বড় বাবুর আদেশে একটি ভ্যান রিক্সা কিনে ভূতোকে দেওয়া হলো। আর থানার পাশে একটি ভাঙ্গা ঘর ছিল ওখানে ভূতোর থাকার ব্যবস্থা করা হলো। আজ এক বছর পূর্ণ হলো ভূতোকে ফোনে ডেকে বললাম ষ্টেশনে যাবো চলে এসো। ভূতোর রিক্সায় যেতে যেতে অনেক কথা হলো তবে ওর একটা কথা আমার খুবই ভালো লাগলো। ও বলল — আজ এক বছর হলো আমি স্বাধীন হয়েছি। মনটা খুশিতে ভরে গেল।