যেখানে দেখিবে ছাই (পর্ব -১)

যেখানে দেখিবে ছাই (পর্ব – ১)
-বিশ্বদীপ মুখার্জী

অন্য দিনের তুলনায় একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এলো মৃত্যুঞ্জয়। একে তো প্রচণ্ড ঠান্ডা, তায় আবার অল্প-অল্প বৃষ্টি। রোজ সকাল-বিকেল এদিক- ওদিক ঘুরতে যাওয়া তার অভ্যেস। ইভিনিং ওয়াক করার সাথে-সাথে রাত্রি আহারের ব্যবস্থাও সে করে নেয়। হোটেলের খাবার খেতে খুব একটা পছন্দ সে করে না। তাই কিছু সব্জী কিনে বাড়িতেই রান্না করে সে। কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হলো না। বাজার খুব ভালো বসেনি আজ, বৃষ্টির দরুণ। অগত্যা হোটেল থেকেই খাবার প্যাক করে নিয়ে আসতে হলো তাকে ।
বাড়িটা দু’তোলা, কিন্তু ছোটো। নিচের তলায় বাড়িওয়ালা থাকেন নিজের অসুস্থ স্ত্রীর সাথে, ওপরে একটি মাত্র ঘরে মৃত্যুঞ্জয়।
সিঁড়ি দিয়ে দু’তলায় উঠবার সময় নিজের ঘর থেকে বাড়ির মালিক দীনবন্ধু সরকার বেরিয়ে এলেন। বয়স ষাটের ওপর, কিন্তু দেহ এখনও বলিষ্ঠ। তাঁর বয়সের অনুমান লাগানো যেতে পারে মাথার পাকা চুল দেখে। মৃত্যুঞ্জয়কে বললেন – ‘তোমার সাথে কিছু কথা আছে, মৃত্যুঞ্জয়।’
মৃত্যুঞ্জয় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো দীনবন্ধুর দিকে।
‘কী কথা বন্ধু ?’
দীনবন্ধু মৃত্যুঞ্জয় থেকে বয়সে প্রায় পঁচিশ বছরের বড়, কিন্তু তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের থেকে কিছু কম না। দীনবন্ধু নামটা মৃত্যুঞ্জয়ের বেশ বড় লাগে। তাই সেটাকে ছোটো করে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করে সে।
‘ আমার ঘরে এসো। ‘
দীনবন্ধুর সাথে – সাথে মৃত্যুঞ্জয় তাঁর ঘরে ঢুকলো। ঘর বেশ বড় না। আসবাব-পত্র একটু বেশি তাই ঘরটা আরও ছোটো মনে হয়ে। ঘরের মাঝে খাট পাতা, তাতে শুয়ে আছেন দীনবন্ধু বাবুর অসুস্থ স্ত্রী। মৃত্যুঞ্জয়কে একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে দীনবন্ধু বাবু নিজে খাটে বসলেন। অতঃপর শুরু হলো তাদের বার্তা।
‘ মৃত্যুঞ্জয়, আমি তোমায় কথা দিয়েছিলাম যে তোমার পরিচয় আমি কাউকে দেবো না। কিন্তু আপসোস এটাই যে নিজের কথা আমি রাখতে পারলাম না।’ ঘাড় হেঁট করে দীনবন্ধু সরকার বললেন।
‘মানে!’ চমকে উঠলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘আমি বলতে বাধ্য হলাম। যাকে বলেছি,তার হয়তো তোমাকে প্রয়োজন।’
‘আমি তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না, বন্ধু ‘ মৃত্যুঞ্জয় বলল।
দীনবন্ধু বাবু একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন – ‘সুধাকর ঘোষাল আমার পুরনো বন্ধু। দু’ দিন থেকে তার ছেলে নিখোঁজ। সুধাকরের মেয়ের সাথে আজ সকালে বাজারে দেখা হলো। কথা হলো বেশ কিছুক্ষণ। রুমি নাম তার, ভালো নাম- তিস্তা ঘোষাল। তার সন্দেহ তার দাদাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রমাণের অভাবে কিছু করতে বা বলতে পারছে না সে। পুলিশ কতো দূর কী করবে, সেটা জানা নেই। তাই সে নিজেই এই ব্যাপারে তদন্ত করতে চাইছে। কথাটা শুনে ভয়ে আমার তো অবস্থা খারাপ। খুনের তদন্ত যে কতোটা কঠিন সেটা জানা আছে আমার। রুমির বয়সই বা কতো, যে ও খুনের তদন্ত করবে? তাই বাধ্য হয়ে আমি তোমার কথা ওকে বললাম। খানিক পরে সে আসবে এখানে, তোমার সাথে দেখা করতে।’
থামলেন দীনবন্ধু বাবু।
‘তার দাদাকে যে খুন করা হয়েছে, এই সন্দেহটা কী করে হয়ে তার?’ মৃত্যুঞ্জয় প্রশ্ন করলো।
সাথে-সাথে বাইরে থেকে এক জনের মিহিন কন্ঠ শোনা গেলো।
‘কাকু, আছো কী?’
দীনবন্ধু বাবু ঘর থেকে বেরোলেন। খানিক পর যখন ঘরে ঢুকলেন, তাঁর সাথে ছিলো এক যুবতী। বয়স আন্দাজ কুড়ির কাছাকাছি। বেশ ভালোই লম্বা। পরনে জিন্স টপ, সাথে এক ছাতা। মৃত্যুঞ্জয়ের বুঝতে সময় লাগলো না যে এই রুমি ঊরুফে তিস্তা ঘোষাল।

দীনবন্ধু বাবুর অসুস্থ স্ত্রীর কারণে সেখানে বসে কথা বলা সম্ভব ছিলো না। তাই সবাই মিলে মৃত্যুঞ্জয়ের ঘরে একত্র হলো। ছোট্টো ঘর। একটা কাঠের আলমারি ছাড়া একটা খাট এবং একটা চেয়ার ঘরে, সাথে ছোটো একটা গ্যাস এবং কিছু বাসনপত্র। খাটে দীনবন্ধু বাবু ও তিস্তা উপবেশন করলো, চেয়ারে বসলো মৃত্যুঞ্জয়। তিস্তার কিছু বলার আগেই মৃত্যুঞ্জয় তাকে জিজ্ঞেস করলো – ‘আপনার সন্দেহ কী করে হয়ে যে আপনার দাদাকে খুন করা হয়েছে?’
শুরুতেই প্রশ্নের ধাক্কা খেয়ে ঈষৎ ঘাবড়ে গেলো তিস্তা। ঢোঁক গিলে এক বার দীনবন্ধু বাবুর দিকে তাকালো, পরক্ষণেই মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল- ‘আমার দাদা খুব হাসিখুশি মানুষ। সারা দিন অনবরত কথা বলে যেতো আর নিজের আশেপাশের লোকেদের হাসিয়ে যেতো। দাদার অন্তর্ধান হওয়ার দু’তিন দিন আগে থেকে সে কেমন চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। বেশি কথা বলতো না, সারা দিন প্রায় গুম হয়ে থাকতো।’

‘কারণ জিজ্ঞেস করেননি?’
‘করেছিলাম। আমাকে শুধু বলল যে কাজের চাপ আছে।’ তিস্তা বলল।
‘কী কাজ করতো আপনার দাদা?’
‘ব্যাবসা করতো। দাদা আর তার একটা বন্ধু নীলকন্ঠদা মিলে একটা ব্যাবসা শুরু করেছিল। কসমেটিক্স-এর দোকান খুলে ছিলো একটা। দোকানটা খারাপ চলতো না।’
‘দোকানটা তার মানে এখন নীলকণ্ঠদার দায়িত্বে?’ জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’
‘ঠিক আছে। এবার নিজের বাড়ির সম্বন্ধে কিছু বলুন। মানে আপনার বাড়িতে কে, কে আছে ? ‘
‘আমাদের বাড়িতে দুটো পরিবার।’ তিস্তা বলতে শুরু করলো- ‘ এক আমাদের আর আমার জেঠুর পরিবার। আমাদের পরিবারে আমরা চার জন। বাবা, মা ও আমরা ভাই-বোন। জেঠুর পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচ। জেঠু, জেঠিমা তাদের দুই মেয়ে আর এক ছেলে। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। পাত্র বলতে গেলে ঘর জামাই।’
‘বলতে গেলে মানে?’
‘মানে, বড়দি নিজের বরকে নিয়ে আলাদা এক ভাড়া বাড়িতে থাকে। সেই বাড়ির ভাড়া আমার জেঠুই দেয়। জামাইবাবু আমাদের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করে। আসলে দুজনের লাভ ম্যারেজ। বড়দি জেঠুর খুবই প্রিয় তাই এই বিয়েটা মেনে নিয়েছে।’

‘হুম, বুঝলাম। আগে?’
‘জেঠুর ছোটো মেয়ে প্রিয়া আমার থেকে এক বছরের বড়। আমার কলেজেই সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ছেলে সৌভিক অনেক ছোটো । ইস্কুলে পড়ে সে। ক্লাস নাইনে। ‘কথা শেষ করে তিস্তা থামলো। তাকালো মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে

মৃত্যুঞ্জয় দু’ চোখ বন্ধ করে শুনছিলো।
‘কী নাম তোমার জেঠুর?’
‘সুধাময় ঘোষাল। বড় মেয়ের নাম শ্রাবন্তী, তার পর প্রিয়া। ছেলের নাম সুকান্ত।’
‘তোমার দাদার নাম জানা হলো না।’
‘ সুপ্রিয় ঘোষাল।’ তিস্তা জবাব দিলো।
‘ পুলিশে নিশ্চই মিসিং রিপোর্ট লেখানো হয়েছে?’
‘ আজ্ঞে। নীলকন্ঠদাকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো। জিজ্ঞাসাবাদ কী হলো জানি না। এখন তো দেখছি ছেড়ে দিয়েছে। ‘

‘ আচ্ছা , তুমি বললে যে তোমার জামাইবাবু তোমাদের দোকানের সেলসম্যান। কিসের দোকান তোমাদের?’
‘শাড়ির দোকান। জয়েন্ট। বাবা আর জেঠুর জয়েন্ট দোকান।’ তিস্তা এখন বেশ অনেকটাই ফ্রী হয়ে গেছে।
‘তোমাদের নিজেদের দোকান থাকতে তোমার দাদা আলাদা দোকান খুললো কেন?’
‘দাদার নিজের পায়ে দাঁড়াবার ইচ্ছে ছিলো। আমাদের শাড়ির দোকানটা অনেক পুরনো। আমার ঠাকুরদার দোকান। ঠাকুরদার পর বাবা ও জেঠু মিলে দোকানটা বড় করেছে। ঈশ্বরের কৃপায় দোকান বেশ ভালোই চলে। আমার দাদার মধ্যে শুরু থেকেই কিছু আলাদা করার ইচ্ছে ছিলো। যাকে বলে শূন্য থেকে শীর্ষে যাওয়া, দাদা সেই জিনিসটা পছন্দ করতো। তাই সে আলাদা বিজনেস শুরু করেছিলো।’

তিস্তার কথা শেষ হওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ ঘাড় হেঁট করে বসে রইল মৃত্যুঞ্জয়, তার পর জিজ্ঞেস করলো- ‘কখন বুঝলে যে তোমার দাদা মিসিং?’

‘এটা এক ছোটো জায়গা। তাই বেশি রাত পর্যন্ত দোকান দাদা কোনো দিনই খোলা রাখতো না। আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে দোকান বন্ধ করে সে বাড়ি চলে আসতো। সে দিন ফিরলো না। নীলকন্ঠদাকে জিজ্ঞেস করা হলো। সে নিজের বাড়িতে। আরও কিছু বন্ধু বান্ধবদের ফোন করা হলো, কিন্তু লাভ হলো না। দাদার মোবাইল সুইচ অফ বলছিলো। রাত বারোটা নাগাদ গিয়ে থানায় রিপোর্ট লেখানো হলো।

‘শেষ দুটো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা আছে। রাত বাড়ছে, আপনার এবার বাড়ি ফের উচিত।’ মৃত্যুঞ্জয় বলল।
তিস্তা নিজের মোবাইলে সময় দেখলো। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। বৃষ্টি থেমেছে, কিন্তু আকাশে এখনও ঘন মেঘের বাসা।
‘জিজ্ঞেস করুন।’
‘আপনার জামাইবাবুর নামটা বলুন এবং এটা বলুন যে তিনি আলাদা বাড়ি ভাড়া নিয়ে কেন থাকেন।আপনাদের বাড়ি তেই তো থাকতে পারতেন।’
‘আমার বাবার আপত্তি ছিলো। বাইরের লোককে বাড়ির অন্দরমহলে ঢোকাতে বাবা নারাজ ছিলো।’ তিস্তা বলল।

‘ এই নিয়ে তোমার জেঠুর সাথে তোমার বাবার কথা কাটাকাটি হয়েনি?’
‘ না।’
‘বেশ। নাম কী মহাশয়ের?’
‘বিক্রম পালিত।’
অতঃপর চলে গেলো তিস্তা। পুনরায় শুরু হলো
অল্প-অল্প বৃষ্টি ।
অশান্ত ছিলো তিস্তার মন । মৃত্যুঞ্জয়ের আসল পরিচয় তাকে দীনবন্ধু বাবু দিয়ে দিয়েছেন । এতো বড় এক আই পি এস অফিসার কি তিস্তার সাহায্য করবে? সকালে যখন বাজারে দীনবন্ধু সরকারের সাথে তিস্তার দেখা হয়েছিল, তখন তিস্তার সব কথা শুনে তিনি বলেছিলেন – ‘এ সব ব্যাপারে একলা এগোনো ঠিক নয় রুমি। কারুর সাহায্য তোকে নিতেই হবে।’
‘কার সাহায্য নেবো, কাকু?’
খানিক চিন্তা করে সরকার বাবু বলেছিলেন – ‘আজ সন্ধ্যাতে আমার বাড়ি আসিস। আমার ভাড়াটেকে তুই হয়তো দেখেছিস, মৃত্যুঞ্জয়। এক সময় সে আই.পি.এস. অফিসার ছিলো। এখন সে কাজ ছেড়ে দিয়েছে। তার কাজ করার পদ্ধতি সরকারের পছন্দ হয়নি। অনেক বড়-বড় রহস্য সমাধান সে করেছে। তুই যদি চাস, তাহলে তার সাহায্য নিতে পারিস।’
‘সে কি আমাকে সাহায্য করবে?’
‘আমি বলবো তাকে।’

তিস্তার চলে যাওয়ার পর দীনবন্ধু সরকার মৃত্যুঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করলেন – ‘কী ভাবলে মৃত্যুঞ্জয়? সাহায্য করবে রুমিকে?’
‘সে এখন অবধি যা-যা বলেছে, সেটা যদি সব ঠিক থাকে তাহলে নিশ্চই সাহায্য করবো।’

মৃত্যুঞ্জয় রাত্রি আহারের সরঞ্জাম নিয়ে বসে গেলো।

 

পর দিন সকালে মৃত্যুঞ্জয়ের ফোন আসার পর মেজাজটা বেশ ভালো ছিলো তিস্তার। মৃত্যুঞ্জয় ফোনে তাকে বলেছিল – ‘আমি দেড় ঘন্টার ভেতরে আপনাদের বাড়ি পৌঁছাবো। বাড়ির সকলকে থাকতে বলবেন।’

তার মানে মৃত্যুঞ্জয় তদন্ত করতে রাজি হয়েছে। তিস্তা কথাটা গত রাতেই নিজের বাবাকে জানিয়েছিল। এক রাশ বিরক্তির স্বরে সুধাকর ঘোষাল নিজের মেয়েকে বলেছিলেন – ‘দরকারটা কী ছিলো? পুলিশকে তো জানানো হয়েছে। পুলিশের থেকে বেশি ক্ষমতা নিশ্চয়ই এক গোয়েন্দার হবে না।’
‘সে আতিপাতি গোয়েন্দা নয় বাবা। এক প্রাক্তন আই পি এস অফিসার। কোলকাতায় সি.আই.ডি. তে কাজ করতো।’
নিজের মেয়েকে বেশি ঘাঁটালেন না সুধাকর ঘোষাল।

সারা রাত বৃষ্টিপাতের পর সকালের আকাশটা বেশ পরিস্কার। রোদ উঠেছে, কিন্তু শীত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়নি। রোজকার মতো মর্নিং ওয়াক করে এসে মৃত্যুঞ্জয় ভাবলো এক বার থানা থেকে ঘুরে আসা যাক। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হলো তাকে। এতো সকালে থানাতে বড় বাবু নিশ্চই আসবেন না। পাহাড়ের জায়গায় লোকেদের ঘুম একটু দেরীতেই ভাঙ্গে। তায় যদি পুলিশের লোক হয়, তাহলে তো কথাই নেই। থানায় গিয়ে লাভ নেই, তার থেকে ভালো হয় যদি ঘোষালদের বাড়ি ঘুরে আসা যায়। তার কাছে ছিলো তিস্তার মোবাইল নম্বর, ফোন করলো তিস্তাকে।

‘ঘোষাল ভিলা’ যখন পৌঁছালো মৃত্যুঞ্জয়, তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে আটটা বাজে। সুধাময় ঘোষালের বড় মেয়ে ও জামাই ভিন্ন বাড়িতে প্রত্যেকেই ছিলো। দু’তোলা বাড়ি, বেশ বড়। নিচের তলায় সুধাকর ঘোষালের পরিবার থাকে, এবং ওপর তলায় থাকে সুধাময় ঘোষালের পরিবার। প্রত্যেকের সাথে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিচয় করালো তিস্তা।
‘আপনার দাদার কি আলাদা কোনো ঘর আছে?’ তিস্তাকে জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘আজ্ঞে হ্যাঁ ।’
‘ঘরটা কি এক বার দেখতে পারি?’
‘অবশ্যই, অবশ্যই।’ এবার সুধাকর ঘোষাল এগিয়ে এলেন।
ছোটোখাটো গোলগাল চেহারা সুধাকর বাবুর। মাথায় কাঁচাপাকা চুল, খুবই অল্প। দু’ভাইকে দেখতে অনেকটা একই রকম।
সুপ্রিয় ঘোষালের ঘর নিচের তলায়, তালা বন্ধ ছিলো তাতে। চাবি দিয়ে তালা খুললেন সুধাকর বাবু। বেশ বড় ঘর। দেয়ালে এক এল.ই.ডি. টিভি, মিউসিক সিস্টম, খাটে দামী বেড কভার পাতা। এক নজর দেখে মনে হয়ে সুপ্রিয় খুব শৌখিন ছেলে ছিলো। মৃত্যুঞ্জয় ভালো করে ঘুরে ঘুরে চারিদিকে দেখতে লাগলো। এক বার শুধু সুধাকর বাবুকে জিজ্ঞেস করলো – ‘পুলিশ কি এ ঘরে এসেছিল এক বারো?’
‘ না মশাই। এ ঘরে কেন? রিপোর্ট লেখাবার পর থেকে এক বারও এই বাড়িতেই তাদের পা পরেনি। গত কাল দুপুরের দিকে এক বার থানায় গিয়েছিলাম। বড় বাবুর সাথে দেখা হলো না।’

খাটের নিচে ঝুঁকে দেখলো মৃত্যুঞ্জয়। কাঠের বেশ কিছু বাক্স দেখতে পেলো সে। একে-একে সেগুলোকে বার করলো। তিস্তা এবং তার খুড়তুতো বোন প্রিয়া সাহায্য করলো মৃত্যুঞ্জয়কে। বাক্সগুলোকে খুলতেই মেয়েদের সাজগোজের জিনিস বেরোতে লাগলো, কসমেটিক্স। লিপিস্টিক, নেলপোলিশ, লুজ ইত্যাদি। দু’ চারটে লিপিস্টিক ও নেলপোলিশ নিজের কাছে রেখে বাকিগুলো বাক্সে ভরে বাক্সগুলো পুনরায় যথাস্থানে রেখে দিলো মৃত্যুঞ্জয়। ঘরের এক কণাতে ছিলো প্লাস্টিকের এক ডাস্টবিন। মৃত্যুঞ্জয় সে দিকে এগোলো। ডাস্টবিনের যাবতীয় জিনিস মাটিতে ফেললো সে। কিছু জিনিস নিজের প্যান্টের পকেটে রেখে বাকিগুলো পুনরায় ডাস্টবিনে চালান করলো।
‘না, আর কিছু দেখার নেই এই ঘরে। চলুন।’
ঘর থেকে বেরিয়ে সুধাকর ঘোষালকে মৃত্যুঞ্জয় জিজ্ঞেস করলো – ‘সুপ্রিয় কি মাঝে-মাঝে কোলকাতা যেতো?’
‘হ্যাঁ, তা যেতো বইকি। দোকানের মাল কেনার ব্যাপার ছিলো। প্রায়ই যেতো কোলকাতা। ‘সুধাকর বাবু জবাব দিলেন।’
‘সুপ্রিয়র দোকানের ঠিকানাটা চাই আমার’।সুধাকর বাবু মৃত্যুঞ্জয়কে ঠিকানা দিয়ে বললেন – ‘নীলকন্ঠকে সেখানেই পেয়ে যাবেন আপনি।’
‘নীলকন্ঠকে তো পেয়ে যাবো কিন্তু বিক্রম বাবুর সাথে দেখা করাটাও যে প্রয়োজন।’

চলবে…………………..

Loading

Leave A Comment