শিকারি
-অমিতাভ সরকার
আকাশে শারদমেঘ, নীল আবেশ, ঝিরি ঝিরি হাওয়া। ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ।হাল্কা নোনা ভাব, উজাড় করা প্রকৃতির ভালোবাসা। নৌকোর ছাউনিতে বসে চেটেপুটে খাওয়া। মাঝে মাঝে বৃদ্ধ মাঝির হুঁকোর গুরুক গুরুক টান। যুবক ছেলেকে মাঝে মাঝে নিজের আলত ভাষায় দিক নির্দেশ। অনুপম চলেছে তার বন্ধুর ছাত্রের বাড়িতে দুদিনের জন্য। উদ্দেশ্য ঘুরেফিরে কিছু দেখা ,কিছু জানা, কিছু বোঝা। চলেছে সাগরে। জিন্স আর হলুদ পাঞ্জাবি ,ঘারে ঝুলানো ব্যাগ, পায়ে চটি, গাল ভর্তি দাড়ি। মাঝে মাঝে সুনীল অথবা জীবনানন্দ ।চোখে আধুনিক পাওয়ার লাগানো চশমা। অনেক সময়ের যাত্রা ।সেল ফোনে কথা বলে নিলেই হবে ।বন্ধুর ছাত্র পারে এসে নিয়ে যাবে ।আধুনিক মোবাইলে উভয়ের ছবি আদান-প্রদান হয়ে গেছে। এটাই ভাবতে ভাবতে অনুপম চলেছে।
হঠাৎ করে মাঝির পাশে এসে বসলো, জিজ্ঞেস করল আপনি সাগরের বাসিন্দা ।ব্রিটিশ আমলের মানুষ নিশ্চয়ই? তা বাবা তোমার কি প্রয়োজন।
এইমি কিছু না ;– আমি প্রথম সাগর বেড়াতে যাচ্ছি এক বন্ধুর কাছে।আপনি সেই আমলের
কিছুযদি গল্প বলেন শুনতে শুনতে সময় কাটবে।
আমার ভালো লাগবে। এমনিতে এই বয়সের মানুষের সাথে যুবক-যুবতীরা কথা বলতে চায় না
বলা যেতে পারে পাত্তা দেয় না। কিন্তু এদের কাছে কত মুক্ত মনি মুক্ত আছে। এদের কত সোনালী দিন ছিল। কত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখেছেন। জীবন ভোর কত অভিজ্ঞতা ,সুখ দুঃখের সাক্ষী। কত রকমের সমাজ ইতিমধ্যে দেখে ফেলেছেন। একটু একটু করে কিছু জানতে পারলে ,পথ কত সুগম হবে। জানতে কার না ইচ্ছা থাকে, অনুপম ভাবতে থাকে। অনুপম ভাবতে থাকে। বৃদ্ধ ফোকলা দাঁতে হাসতে হাসতে খুব আনন্দের সঙ্গে একটা গল্প বলি ,বলে, বলতে শুরু করলেন।
দেখো ভাই তুমি তো প্রথম যাচ্ছো সাগরে ,তাহলে তুমিও আমার অতিথি ,তোমার কাছে গল্প I করতে পারলে আমিও কিছুটা অতিথি সেবা করতে পারব ,বলে হাসতে লাগলেন।
অনুপম কথার ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার বৃদ্ধকে দাদু বলে সম্বোধন করেছিল। ফলত:, বৃদ্ধ তাকে ভাই বলে আপন করতে পেরেছেন। এভাবে সম্পর্ক তৈরি হয়। বৃদ্ধ বলতে শুরু করেছেন দ্যাখো তুমি যখন নতুন এসেছ ,তখন তোমাকে প্রথমে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ জেনে নিতে হবে। অনুপম মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তিনি শুরু করলেন ওই দিকটা দেখো, দক্ষিণ দিক, আমাদের প্রিয় বঙ্গোপসাগর ,তার গায়ে গায়ে সুন্দরবন। অনুপমের মাথায় এলো প্রথমে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ,সুন্দরী গাছ, রক্তবরণ তার কাঠ ,অফুরন্ত বনস্পতি ,লবণাক্ত জল, জঙ্গলের মধু, জলে কুমির ,ইদানিং জলদস্যুদের ভয়। না- না সোনা গল্প, পড়া গল্প, মাথায় ভীড় করতে থাকে। বৃদ্ধ মাঝি বলতে থাকেন ,পূর্ব দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন ,ঐদিকে চেমা গাড়ি নামখানা নদী। আর ভাই উত্তরে মুড়িগঙ্গা ,পশ্চিমে হুগলি নদী ।এই ভাবে সাজানো আমাদের সাগর।
মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলেছে বক ,মাঝে মাঝে শামুকখোল ,পাড় ধরে কত রকমের বনফুল ,গাছ-গাছালি মাঝে মাঝে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মন কেমন করে ওঠে অনুপমের। সিমকে সঙ্গে আনা যাবেনা তাই আনা হয়নি ,ওএলে, এগুলো দেখতে পেত ।বুকের ভেতরটা মোচড় দিল, একটু অন্যমনষ্ক । আবেশভরা ভালোবাসার ঢেউ মনে মনে । সোমেশ্বরীকে সিম বলে ডাকে অনুপম। আর কতটা দাদু? দেরী আছে ভাই, সূর্য এখনো গাছের পেছনে যেতে দেরি আছে ।একটা দারুন গল্প বলি শুনতে থাকো ।আমি এক গোমস্তার বাড়িতে কাজ করতাম ,বাড়ি আমার কচুবেড়িয়া। কিন্তু যৌবন কালে সাগরে কাটিয়েছি। তখনকার দিনের রাজা নাই , রাজত্ব নাই । ফিরতে হয়েছিল কচুবেড়িয়া।জাত ব্যবসায় নামতে হলো। আমি এখন ছেলের সঙ্গে সঙ্গে ঘুড়ি ।সেই দোরো থেকে কচুবেড়িয়া যাতায়াত। অনুপম জিজ্ঞেস করল দোরো মানে? আরে নানা, হলদিয়া। আমরা দোরো নামেই জানি। বর্তমানে হলদিয়া নামে পরিচিত। বিষয়টা জানিনা। সে ফেরার সময় হবে খান। ক্রমশঃ—এখন যে গল্পটা শোনাবো বলেছিলাম সেটা শোনো। অনেক স্মৃতি অনেক ভালো-মন্দের সময় কেটেছে সাগরে। একটা দীর্ঘশ্বাস। অনুপমের লক্ষ্য এড়ায়নি। অনুপম ঘনিষ্ঠ হলো,আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলো। নৌকাএগিয়ে চলেছে। কত জনপদ কত, ঘাট ,পার হয়ে চলেছে ।আকাশে গাঙচিল ,মাঝে মাঝে শঙ্খচিলের আনাগোনা ।ঘাটে ঘাটে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ,যুবক-যুবতীদের , স্নান,কাপড় কাচা, কিশোর কিশোরীর সাঁতার কাটা, দেখতে দেখতে অনুপম এগিয়ে চলেছে ।সেই অদূরে। ঘাটের পার দিয়ে এগোনোর সময় নতুন বিবাহিতার কি সুন্দর লজ্জা জড়ানো হাসি ।আর আড় চোখে দেখা, অনুপমের চোখ এড়ায়নি ।অনুপমের কবি মন ছবি একে রেখেদিল হৃদয়ে ।হয়তোবা কোন সময়ে কলমের ডগায় এসে যাবে। দাদু একটা সিগারেট টানি,অনেকক্ষণ সিগারেট হয়নি। আপনি তো হুঁকো টানতে টানতে দারুন মজা নেন। এবারে এই সিগারেটা ধরিয়েদেখুন কেমন নতুন মজা,আরে না ভাই ছাড়।দেখ দাদু তুমি না ধড়ালে আমার ভালো লাগবে না ।অনুপম আরো ঘনিষ্ঠ হলো দুজনে সিগারেট ধরিয়ে সুখ টান দিতে থাকলো ।এবার অনুপম বলল শুরু কর দাদু।
শোন ভাই গোমস্তা বাড়ি ,বড় গেরস্থ ,অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম ।বড় বাবু মানে গোমোস্তাবাবু বড় ভালো মানুষ ছিলেন ।ভাই, ভাই বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে বড় সংসার। পরিবারের বেশির ভাগ লোকজন শিক্ষিত ছিলেন ।সৌখিন মানুষ। গোমস্তা বাড়িতে লোকজনের ছাড়ান ছিল না। প্রজারা, জমিদারের নায়েব ,লাটের অন্যান্য লোকজন। গোমস্তা বাবুর বন্ধুবান্ধব ,খানাপিনা লেগে থাকত। সাগরদ্বীপে চুরি-ডাকাতি আকছার ঘটত, জমিজমা ও ব্যবসা ছিল সেই সঙ্গে ভায়েরা ভালো ভালো চাকরি করতো কলকাতায়। সব মিলিয়ে জমজমাট পরিবার। বড়বাবু ও পরিবারের মহিলারা সকলে আমাকে ভালোবাসতেন ।বাড়ির অন্দরমহলে আমার অবাধ যাতায়াত ছিল ।আমি সবসময়ের সঙ্গী ছিলাম বড় বাবুর। পরপর চুরি-ডাকাতির ফলে সামলিয়ে থাকতে হতো। কলকাতার এক ভাই বড় বাবুর জন্য একটা ডবল ব্যারেল বিদেশী বন্দুকের ব্যবস্থা করেন। বন্দুকটি ছিল বড়বাবু সন্তান সম।
সেই সকাল বেলা উঠে বড়বাবুর প্রথম কাজ ছিল বন্দুক মোছামুছি ,তেল লাগিয়ে সব ঠিকঠাক করে রাখা। একটা দিনও নড়চড় হতো না। বড় বাবুরা নিজেদের চেষ্টায় পড়াশোনার জন্য একটা পাঠাগার গড়েছিলেন এবং একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় নিজস্ব জমিতে গড়ে তুলেছিলেন বুঝলে ভায়া। এখন চুরি ডাকাতি হয় না নিশ্চয়ই! এটা ভায়া সেই আমলের কথা।
অনুপম গল্প শুনতে শুনতে বেশ জমে যায়। মধ্যগগন থেকে সূর্য একটু ঢলে পড়েছে। আকাশে সাদা বকের ঘোরাঘুরি ,উড়ে গেল কয়েকটা মানিকজোড়। অনুপম দাদুকে শুধালোওগুলো কি পাখি। মানিকজোড়, উত্তর দিল দাদু। জানো মানিকজোড় পাখি সব সময় জোড়া জোড়া থাকে, কেউ কাউকে ছেড়ে থাকে না ।এই পাখি নিয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা আছে আমার। বলছি পরে। পাড়ের কাছাকাছি গাছগুলোয় নানা রকম পাখির ডাক শোনা যায় নিঃশব্দ দুপুরে ।দোয়েল, ফিঙে, টিয়া গুলো কি নিশ্চিন্তে সবুজ মাখা কৃষ্ণচূড়ার গাছে বসছে, আবার উড়ে যাচ্ছে আবার বসছ বড় বাবুরা শাক্ত ধর্মে বিশ্বাসী মাছ মাংস ছাড়া চলে না। বন্দুক পাওয়ার পর বড় বাবুর শিকারের নেশা চাপে। মাঝে মাঝে বন্ধুবান্ধব নিয়ে শিকার করতে যায়। সাগর পাড়ে সমৃদ্ধ মৃগ চারনক্ষেত্র। কি সুন্দর হরিণগুলোর ছোপ ছোপ দাগ শরীরে, বাঁকানো শিং ,টানা টানা চোখ ,খয়েরি রঙে সাজান মুখ, সৌন্দর্য অশেষ। বকরা গাছ, সোমা গাছের চারণ ভূমি ।বড় প্রিয় কেওড়া গাছের নীরবতা, বড়ই আদর্শ স্থল ,বড় সোহাগের চারণভূমি হরিণ ,শুকর ,বন মোরগ দের। সেই নীরবতায় আছড়ে
পড়তো মাঝে মাঝে বিদেশি ডবল ব্যারেল বন্দুক এর দুর্ধর্ষ অগ্নি বর্ষণ ।তীব্র গুলি পৌছে গিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিত কখনো বা মৃগ,কখনো বা শূকর, বনমোরগদের ।আকাশে উড়ে যাওয়া বকের সারির মাঝে ,কখনো বা জলাভূমি তীরে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ানো মানিকজরের ডানা ভেদ করে। তারপর বড়বাবু দের ছুটে যাওয়া। কি উল্লাস ,নিরীহ প্রাণী গুলির ছটফটানি দেখে, কিছুক্ষণের মধ্যে নিস্তেজ। কখনো বা থলের মধ্যে কখনো বা আমার ঘাড়ে কিংবা বন্ধুদের বাহনে চাপিয়ে বীরদর্পে ঘরে ফেরা। শিকারি বাবুর ঘারে বন্দুক গ্রামবাসীদের সাথে দেখা দেখি ,কখনো স্মিতে কথোপকথন।
এইভাবে উচ্ছল উদ্যাম জীবন চলতে থাকে। ছেলেমেয়েরা বড় হয় পড়াশুনো করে ,বিয়ে শাদী হয়, কারো বা কাছাকাছি কারো বা দূরে দূরে। সংসার ছোট হয় আবার সংসার বড় হয় ।আত্মীয় নতুন নতুন হয় যাওয়া-আসা লেগে থাকে। আনন্দ উৎসবের মাঝে জটিলতা আসতে থাকে। বয়স বাড়ে বড়বাবুর ,সাথে সাথে বড় গিন্নি মার, মেয়েগুলো বড় সুন্দরী বড় বাবুর,শিক্ষিত হয়েছিল, মন গুলো ছিল খোলা আকাশের মতো উজ্জ্বল , উচ্ছল ,বড় সংসারে থাকার ফলে সংসার ধর্মের রীতি রক্তের সঙ্গে মিশে ছিল। ঠিক সময়ে বিয়ে-শাদী বেশিরভাগ শেষ করতে পেরে ছিলেন বড়বাবু ছেলে মেয়েদের। মেয়েদের পাত্রস্থ করতে পেরে বড়ই নিশ্চিন্ত হন তিনি ।শরীর ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে ।মাঝে মাঝে অসুস্থ হতে থাকেন। পাড়া প্রতিবেশী ,নায়েব বাবুর পরিজন খোঁজখবর নিয়ে জান।
অনেক ইতিহাস আছে ভাই। সূর্য ইতিমধ্যে অনেকটা হেলতে শুরু করেছে। ভাদু কল্কি মুখে ফু দিয়ে আগুন ঠিক করে চিমটে দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুক গুরুক শুরু করলেন হাসতে হাসতে বললেন তুমি ভাই ধরাও অনুপম মুগ্ধ হয়ে গল্প শুনছিল ।
আর মনে মনে ছবি আঁকছিল সাগরের দ্রষ্টব্য বিষয়গুলোর উপর ।বন জঙ্গল তার খুব পছন্দ। দাদুর কথায় সায় দিয়ে সিগারেট ধরালো। সুখটান দিতে দিতে বললে । দাদু হওয়া বেশ মিষ্টি লাগছে । বেশপ্রফুল্লতা আছে হাওয়ায়।ঘন্টাখানেক লাগবে পৌঁছতে আর কচুবেরিয়া,দাদু যোগ করলেন। নানা সংসারে নানা টানাপড়েন। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল বেশ দূরে ।এক বৈষ্ণব ধর্ম প্রিয় সংসারে, অদ্ভুতভাবে মেয়ের বাড়িতে শাক্ত বৈষ্ণব ধর্মের সমন্বয় ।এক ধারে কালীপুজো অন্য ধারে হরি কীর্তন ,কোন বিরোধ নাই এখানে ,সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত যিনি কৃষ্ণ তিনি কালী এই বলে থামলেন দাদু।
একবার প্রচন্ড বন্যা হয়েছিল সাগরে ।জমিজমা বাড়িঘর খাদ্যবস্তু সবশেষ ।হাহাকার ,কান্নার রোল চারিদিকে ,এক মুঠো ভাত, একটু ফ্যান চেয়ে পাই না কেউ ।গেরস্থ বাড়ি নায়েব বাড়িতেও টানাটানি। বৃটিশ লাইটের গোলা ভর্তি ভর্তি ধান। মানুষ না খেয়ে মরছে ,গর্জে উঠলেন শিকারি। বললেন মানুষ বাঁচলে আবার ধান হবে হবে ,মানুষ মরে গেলে ধানের গোলায় ধান থেকে কি হবে। ভেঙ্গে ফেল ধানের গোলা, নিজে দাঁড়িয়ে সমস্ত গ্রামবাসীকে প্রয়োজন মত ধান ভাগ ভাগ করে বিলিয়ে দিলেন । শিকারির নামে জয় জয় উঠলো। কানে কানে পৌঁছে গেল কাছে খবর বৃটিশ লাইটের কাছে।খুশি হলেন তাকে তিরস্কার এর বদলে পুরস্কৃত করে তার নাম দিলেন সাগর সিংহ। বললেন এই সময়ে সরকারের কাছে ঐরকম বদ্ধ দ্বীপে ত্রাণ
পৌঁছনো পৌঁছানো সম্ভব ছিল না ।অনুপমের ইতিমধ্যে মনে হল সাগর
দেখা প্রায় শেষ হতে চলেছে।
হ্যাঁ তোমাকে বলব বলেছিলাম মানিকজোড় পাখি সম্বন্ধে ।
একবার শিকারির জালে বকের সাথে মানিকজোড়ের একটা পাখি ফাঁসের মধ্যে আটকে যায় বাইরের পাখিটা জালের আশপাশে ঘোরাঘুরি ,চিৎকার। ওখান থেকে সরে না, গ্রামবাসীর ভিড় কোন রকম ভয় ডর কিছু নাই, পাখিটা কোথাও গেল না শিকারির কাছে খবর গেল, শিকারি আসলো সঙ্গী আমি ।বললে ও যাবে না আমাকে বললো ধরে ফেল পাখিটা। ফাঁস খুলে সমস্ত পাখি বস্তাবন্দী করে ঘরে নিয়ে এসে গ্রামের কাছাকাছিস কলকে নিয়ে ভুরিভোজ হল ।শিকারি ছেলেমেয়ে দের বন্দুক চালনা শিখিয়ে ছিলেন। যদি ডাকাত পরে তারা যেন জুঝতে পারে । ডাকাতরা ভয় পেতে শুরু করে। এমুখো হয়নি আর।
ইতিমধ্যে শিকারী ভীষণ অসুস্থ ,বিছানা গত হয়ে পড়ে। বিছানায় প্রস্রাব মলত্যাগ অনিচ্ছাকৃত সমান্য আহার। আত্মীয় পরিজন আসা-যাওয়া শুরু হয়ে গেছে ।নানা কথা আকাশে বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছে ।মেয়ে জামাইরা এসে পড়েছে বাড়িতে ।প্রাণ ধুক ধুক করছে , প্রাণ বেরোচ্ছে না। পাপের ফল ভোগ করছে শিকারি। স্থির হলো পুরোহিত ডেকে প্রায়শ্চিত্ত করার। বড়মা মেয়েদের চাপে রাজি হলেন কান্না ভেজা চোখে তার দীর্ঘদিনের প্রিয় সখা সুখ-দুঃখের মাখামাখি জীবনের অঙ্গচ্ছেদ করতে ।এটাই বিধাতার লিখন ।চির সমাপ্তির পথে এগোন। দাদু সূর্য!গাছ গাছালির পিছনে হেলে পড়েছে হুগলি নদীর জলে সূর্যের মিষ্টি আলো, জলে ছলাৎ ছলাৎ মোহময় শব্দের সাথে নদী যেন জীবনের কথা বলে চলেছে অনুপম ভাবছে । ঢেউ ঢেউয়ে কথার শুরুবিলীন হচ্ছে আবার শুরু হচ্ছে। অনুপম বলল কত দূর ।এবার বাক পেরোলেই কচুবেড়িয়া দাদু বললেন। ইতিমধ্যে বন্ধুর ছাত্রেরফোন আপনি আর কত দূরে। এসে গেছি । বাকের কাছাকাছি।তাহলে তো এসে গেছেন। আমি কচুবেড়িয়া ঘাটে অপেক্ষা করছি। ফোন বন্ধ হল।
পুরোহিত শুরু করেছেন প্রায়শ্চিত্তের পূজন। একধারে কালীপূজা অন্য ধরে হরিনাম সংকীর্তন। বড়মারচোখে অঝোর ধারা। বয়স্কদের মুখে কি হয় কি হয় ।ছেলেপিলের উৎসব লেগেছে ।এতো লোকজন বড়মা বারবার প্রিয় সখাকে দেখে যাচ্ছে ।দাসদাসীরা কাছাকাছি দেখভাল করছে ,এক মেয়ে কাছে আছে । বড় বাবুর হঠাৎ করে টান উঠল ।কি যেন বলতে চাইছেন, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না ।বড়মা ছুটে এলেন। তিনি বুঝলেন বড়বাবু কি বলতে চাইছেন ।তিনি হাত তোলার চেষ্টা করছেন পারছেন না। বড়মা ছুটে গিয়ে বড় বাবুরবিদেশি দুই নলা বন্দুক বার করে নিয়ে এলেন ।ইশারায় বললেন বন্দুকের বাট ঠোঁটের কাছে ধরতে ।তিনি চুম্বন করলেন ।বললেন ঘাড়ে বন্দুক রাখতে। বন্দুক ঘারে রাখা হলো। জল খেতে চাইলেন ,তাড়াতাড়ি মুখে জল দিলেন বড় গিন্নি মা। একটু সুস্থ অনুভব করলেন ।মনে হল প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে জ্বলে ওঠা ।ধীরে ধীরে আবার নিস্তেজ হতে থাকলো ।
সবাই দাঁড়িয়ে ।বড়মা বললেন ।তোমরা সবাই মুখে জল দাও। গিন্নিমার চোখের জল বাঁধ মানে না। শিকারি চলে গেলেন ঘাড়ে বন্দুক নিয়ে সংকীর্তন এর সাথে । শাক্তর তেজ নিয়ে।নৌকা ঘাটে পৌঁছল ।বন্ধুর ছাত্র ঘাটে হাজির ।অনুপম দাদু কে নমস্কার জানিয়ে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে কচুবেড়িয়া থেকে সাগরের বাসে চেপে বসল বন্ধুর ছাত্রেরসাথে । জানালার কাঁচখুলে চলন্ত বাসে যেতে যেতে প্রকৃতিকে ছুঁতে থাকল অনুপম।