যেখানে দেখিবে ছাই (পর্ব-২)
-বিশ্বদীপ মুখার্জী
মৃত্যুঞ্জয়ের এই কথায় এবার সুধাময় বাবু এগিয়ে এলেন। বললেন – ‘তার সাথে দেখা করা কি খুব প্রয়োজন?’
‘কেন? আপনার কোনো আপত্তি আছে তাতে?’ মৃত্যুঞ্জয়ের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন ।
‘না-না, আপত্তি হবে কিসের? দেখা করতেই পারেন। আসলে সে খুব লাজুক স্বভাবের আর কি।’ সুধাময় বাবু বললেন।
‘ছেলেদের লাজুক স্বভাব মানায় না সুধাময় বাবু। সেটা মেয়েদের আভূষণ। বিক্রম বাবুর ঠিকানাটা দেবেন।’
সুপ্রিয় ও নীলকন্ঠের দোকানটা বেশ সাজানো। গ্রাহক ছিলো না, নীলকন্ঠ হিসেবের খাতা খুলে কিছু হিসেব মেলাতে ব্যস্ত।
‘আপনার পার্টনার তো নেই। একলা-একলাই হিসেব মেলাচ্ছেন?’
অচেনা কন্ঠস্বর শুনে চমকে ঘাড় উঠিয়ে তাকালো নীলকন্ঠ। খানিক ভ্রুকুটি করে দেখলো, তার পর জিজ্ঞেস করলো – ‘আপনার পরিচয়?’
‘বিস্তৃত পরিচয় দেওয়ার মতো সময় নেই নীলকন্ঠ বাবু। আপনার জন্য এটুকু জানাই প্রয়োজনীয় যে আমি সি.আই.ডির লোক।’ সামনের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো মৃত্যুঞ্জয়।
সি.আই.ডি.র নাম শুনে ঈষৎ ঘাবড়ে গেলো নীলকন্ঠ। হঠাৎ সি.আই.ডি. তার দোকানে! তাহলে কি সুপ্রিয়র বাবা তার ছেলেকে খোঁজার জন্য সি.আই.ডি. লাগিয়েছেন? পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নীলকন্ঠ বলল – ‘আপনার এখানে কী প্রয়োজন সেটা বুঝলাম না তো।’
অট্টহাস্য করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘আমার এখানে কী প্রয়োজন হতে পারে নীলকন্ঠ বাবু? আপনার বন্ধু, আপনার বিজনেস পার্টনার সুপ্রিয় তো নিরুদ্দেশ। যতো দিন না সে ফেরত আসে, এই দোকানের আপনি তো মালিক। আর যদি সে ফেরত নাই আসে তাহলে তো আপনি রাজা, মশাই।’
‘আপনি বলতে কী চান?’ ঈষৎ গাম্ভীর্যের স্বরে নীলকন্ঠ প্রশ্ন করলো।
‘পঞ্চাশ শতাংশ পুঁজি লাগিয়ে একশো শতাংশের মালিক হওয়াটা খারাপ আইডিয়া নয়।’
মৃত্যুঞ্জয়ের এই কথায় প্রায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো নীলকন্ঠ।
‘আপনি বলতে চান আমি সুপ্রিয়র খুন করে তার লাশ লুকিয়ে রেখে দিয়েছি?’
‘আমি তো এমন কিছুই বলিনি মশাই। আমি তো এই সবে তদন্ত শুরু করেছি। যখন তদন্ত চলে তখন প্রত্যেককে সন্দেহ করাটা আমার কাজ। এমন কি সন্দেহের লিস্ট থেকে সুপ্রিয় নিজেও বাদ যায়নি।’
এ আবার কেমন বিচিত্র কথা। যার বিষয় তদন্ত চলছে, সে নিজেও সন্দেহের লিস্টে আছে? সত্যি, গোয়েন্দাদের মাথার ঠিক থাকে না। মুচকি হেসে নীলকন্ঠ বলল – ‘বলুন, কী জানতে চান।’
‘কসমেটিক্সের ব্যবসা করার প্ল্যানটা আপনার ছিলো না সুপ্রিয়র?’
‘ সুপ্রিয়র। তবে আমি এক কথায় রাজি হয়েছিলাম। আমার এক দূর সম্পর্কের মামা কসমেটিক্সের ব্যবসা করে বড়লোক হয়েছে। আজ তার নিজের বাড়ি , গাড়ি সব আছে, ওই ব্যবসার দৌলতে। তাই যখন সুপ্রিয় প্রস্তাবটা আমার কাছে রাখলো, আমি না করতে পারলাম না।’
‘ব্যবসাটা কতো দিনের?’
‘প্রায় দু’ বছর হলো।’
‘কোলকাতা গিয়ে মাল নিয়ে আসেন, না কোলকাতা থেকে অর্ডার করে মাল আনান?’
‘প্রত্যেক পনেরো দিনে এক বার করে কোলকাতা যাওয়া হয়ে। সেটা সুপ্রিয় নিজে যেতো।’
‘আপনি যেতেন না কেন?’
‘কোলকাতার হোলসেল মার্কেটে সুপ্রিয়র জানাশোনা আছে। তাই সস্তায় মাল পেতাম আমরা।’
দোকানের চারিপাশে এক বার ভালো করে চোখ ঘুরিয়ে মৃত্যুঞ্জয় জিজ্ঞেস করলো- ‘বিক্রি তো ভালোই হয় বলে মনে হচ্ছে। তাই না?’
দু’হাত জোর করে নীলকন্ঠ বলল- ‘ঈশ্বরের কৃপা।’
‘কার কৃপা সেটা পরে বোঝা যাবে। আচ্ছা, কোলকাতা সুপ্রিয় কি একলা যেতো?’
‘হ্যাঁ। আর কে যাবে সাথে? নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং মেল ধরতো। সেই ট্রেনেই ফিরে আসতো। আমি স্টেশানে গিয়ে তাকে রিসিভ করতাম। ফেরার সময় মাল থাকতো, তাই যেতাম আর কি।’
নীলকন্ঠ শুরুর দিকে যে ঘাবড়ে গিয়েছিল, তার থেকে অনেকটাই সামলে উঠেছিল।
‘যে দিন সুপ্রিয় নিরুদ্দেশ হয়, সে দিন তার আচরণ কেমন ছিলো?’
খানিক চিন্তা করে নীলকন্ঠ বলল- ‘তার দুু’ দিন আগে থেকেই সে কেমন যেন বদলে গিয়েছিল। বেশি কথা বলতো না। আমি ভাবলাম শরীর খারাপ হবে হয়তো। জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু মন মাফিক উত্তর পেলাম না।’
‘আপনাদের মাল রাখার জায়গা কোথায়? মানে কোলকাতা থেকে মাল এনে রাখেন কোথায়?’
‘এই দোকানে গোডাউন বলে কিছু নেই। আমার বাড়িতে জায়গার অভাব। তাই সুপ্রিয় নিজের বাড়িতেই রাখতো।’
‘দোকান সার্চ করতে পারি কী?’
‘অবশ্যই পারেন। কিন্তু সার্চ ওয়ারেন্ট লাগবে।’
মুচকি হাসলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘ভেরি স্মার্ট।’ উঠে দাঁড়ালো সে – ‘এখানকার মতো আসি। দরকারে আবার আসবো।’
দোকান থেকে বেরিয়ে সময় দেখলো মৃত্যুঞ্জয়। ধীরে-ধীরে বেলা বাড়ছে। এবার কোন দিকে যাওয়া যেতে পারে? থানা না বিক্রম পালিতের বাড়ি?
থানায় গেলো না মৃত্যুঞ্জয়। থানায় যথা সময় যাওয়া যাবে, এখন গিয়ে লাভ নেই। বিক্রম পালিত এখন নিশ্চই নিজের বাড়িতে হবে না। ঘোষালদের দোকান খোলার সময় হয়ে গেছে, বিক্রম পালিত দোকানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে হবে। তাই এখন সব থেকে ভালো কাজ বাড়ি ফিরে যাওয়া। বাড়ি গিয়ে মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করা যাবে যে আগামী পদক্ষেপ কী নেওয়া যেতে পারে।
বাড়ি গিয়ে অবাক হলো মৃত্যুঞ্জয়। সে দেখলো দীনবন্ধু বাবুর সাথে তাঁর ঘরে বসে গল্প করছে তিস্তা। মৃত্যুঞ্জয়কে দেখে উঠে দাঁড়ালো সে। লঘু কদমে এগিয়ে এলো তার দিকে।
‘কিছু কথা বলার ছিলো আপনার সাথে। এসে দেখলাম আপনি ফেরেননি। তাই কাকুর সাথে বসে গল্প করছিলাম।’ তিস্তা বলল মৃত্যুঞ্জয়কে ।
‘ওপরে আসুন।’ মৃত্যুঞ্জয় দু’তলায় নিজের ঘরের দিকে এগোলো। পেছন-পেছন তিস্তা।
তিস্তাকে চেয়ারে বসতে দিয়ে নিজে ঘরের একটি মাত্র জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো মৃত্যুঞ্জয়। জানালা খুলে দিলো। সূর্যের আলো প্রবেশ করলো ঘরে। জ্যাকেটের পকেট থেকে সিগারেটের ডিবে ও লাইটার বার করে একটা সিগারেট ধরিয়ে মৃত্যুঞ্জয় বলল- ‘বলুন।’
‘সব থাকে আগে তো আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি আপনাকে। আপনি আমায় সাহায্য করছেন, এটা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। একটা আরও কথা আপনাকে বলতে চাই, যেটা কাল বলা হয়েনি।’
‘কী কথা?’ সিগারেটে একটা টান দিয়ে জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘কিছু দিন আগেকার কথা।’ তিস্তা বলতে শুরু করলো- ‘দাদা আর নীলকন্ঠদার মধ্যে চরম অশান্তি হয়েছিল। কী ব্যাপারে, সেটা জানি না। দাদার সাথে একটা দরকারী কাজ ছিলো আমার। তাই দাদার দোকানে আমি যাই। গিয়ে দেখি দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলছে। গলার স্বর দু’জনেরই উঁচু। আমায় দেখে দুজনেই শান্ত হয়ে গেলো। ঘটনার ঠিক দু’দিন পর দাদা কোথাও চলে গেলো। আমি ভাবলাম কলকাতা গেছে হবে, দোকানের জিনিসপত্র আনতে। দাদা চার দিন পর ফিরলো, খালি হাতে। দোকানের জিনিসপত্র দাদা ট্রেন থেকে নেমে সোজা বাড়ি তেই নিয়ে আসে। কিন্তু সে বার কোনো জিনিস আনেনি। কারণ জিজ্ঞেস করাতে বলল যে সে নাকি জিনিস আনতে যায়নি। কিছু টাকা বাকি ছিলো, সেটা পেমেন্ট করতে গিয়েছিল। কিন্তু দাদা সর্বদা ব্যাংকের মাধ্যমেই পেমেন্ট করতো। আমার খটকা লেগেছিল ঠিকই, কিন্তু এ বিষয় দাদাকে আর কোনো প্রশ্ন করিনি।’
নিজের কথা শেষ করলো তিস্তা।
‘ঘটনাটা গত কাল যদি জানাতেন তাহলে বেশি ভালো হতো। আপনার দাদা কসমেটিক্সের সব জিনিস কলকাতার কোন দোকান থেকে কিনতো সেটা কি আপনার জানা আছে?’
‘না। সেই বিষয় কোনো ইনফরমেশন আমার কাছে নেই।’
তিস্তার চলে যাওয়ার পর মৃত্যুঞ্জয় অনেকক্ষণ নিজের ঘরে বসে থাকলো। নেলপলিশের শিশিগুলো বেশ ভালো করে পরীক্ষণ করলো। তার পর একটা ফোন করে সন্ধ্যের অপেক্ষা করতে লাগলো ।
সন্ধ্যে সাত টা নাগাদ ঘোষালদের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রায় সাতটা তিরিশ নাগাদ মৃত্যুঞ্জয় বিক্রম পালিতের বাড়ি পৌঁছালো। দুটো ঘরের একতলা অতি সাধারণ বাড়ি। স্বামী-স্ত্রী একটা ঘরে থাকে, দ্বিতীয়টি বন্ধ থাকে। বেশ পুরুষালী চেহারা বিক্রম পালিতের, সাথে মিশুকে। অবাক লাগলো মৃত্যুঞ্জয়ের। সুধাময় বাবু তো অন্য কথা বলেছিলেন। বিক্রম নাকি লাজুক। এ তো বিক্রমের এক অন্য রূপ দেখলো মৃত্যুঞ্জয়। সুধাময় ঘোষালের জ্যেষ্ঠা পুত্রী শ্রাবন্তী নিজেও খুব মিশুকে। মৃত্যুঞ্জয়ের আপ্যায়ন বেশ ভালোই হলো সেখানে।
মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রম বলল- ‘আমি ভাবলাম আপনি হয়তো সকালেই আসবেন। তাই দোকানে দেরি করে গেলাম।’
মৃত্যুঞ্জয় সেই কথার কোনো জবাব না দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলো- ‘সুপ্রিয়র সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিলো?’
‘খুবই ভালো। এমনই তো বেশি দেখা হতো না তার সাথে, কিন্তু যখনই দেখা হতো হেসে কথা বলতো। খুব হাসি মুখী ছেলে, আর তেমনই মেহনতী।
‘আপনার বাড়ি কোথায়?’ মৃত্যুঞ্জয়ের দ্বিতীয় প্রশ্ন।
‘কুচবিহারের দিকে। আর যদি পৈতৃক বাড়ি জিজ্ঞেস করেন, ্ সেটা বেলঘরিয়া তে।’
‘বেলঘরিয়া মানে সেই দমদমের পরের স্টেশন?’
‘আজ্ঞে। আপনি তো জানেন দেখছি।’ এক গাল হেসে বিক্রম বলল।
‘কেউ থাকে সেখানে?’
‘থাকে বৈকি। আমার দুই কাক এবং তাদের পরিবার।’
‘যাতায়াত আছে?’
এক দীর্ঘস্বাস ফেলে বিক্রম বলল – ‘বহু দিন যাওয়া হয়নি। ছোটো বেলায় এক বার গিয়েছিলাম, মনে আছে। সেটাই শেষ। আমার বাবা চা বাগানে কাজ পেয়ে চলে আসেন এদিকে। তবে থেকে আমরা উত্তর বঙ্গবাসী হয়ে গেছি।’
‘যাতায়াত নেই কিন্তু যোগাযোগ তো হবে?’
‘হুম, তা আছে। আজকাল ফেসবুক আর হোয়াটস’অ্যাপের দৌলতে যোগাযোগ করাটা বিশেষ বড় ব্যাপার না।’
ইতিমধ্যেই শ্রাবন্তী কিছু জলখাবার নিয়ে এলো। কিছু লুচি ও তরকারি। খাবারের থালাটা মৃত্যুঞ্জয়ের সামনে রেখে নিজে বিক্রমের পাশে গিয়ে বসলো। মৃত্যুঞ্জয়ের উদ্দেশে বলল- ‘আমাদের পরিচয় দার্জিলিং এ। সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। প্রথমে বন্ধুত্ব, তার পর প্রেম। যা হয় আর কি। দার্জিলিং এর চা বাগানের অবস্থা যে খুব ভালো না সেটা হয়তো আপনি জানেন। বিক্রমের রোজগার খুব একটা ভালো হতো না সেখানে। আর এদিকে আমি তো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। বিয়ে করবো তো একেই। শেষে আমার জেদের সামনে হার মেনে বাবা নিজের দোকানে কাজ করার প্রস্তাবটা দেয়। তবে থেকে বিক্রম এখানেই আছে।’
শ্রাবন্তী বেশ খোলা মনে কথা গুলো বলে গেলো।
‘আপনারা ওই বাড়িতেই তো থাকতে পারতেন?’ প্রশ্ন করলো মৃত্যুঞ্জয়।
ঈষৎ বিষন্ন হয়ে গেলো শ্রাবন্তীর মুখ।
‘পারতাম। কিন্তু আমার কাকার আপত্তি ছিলো। কাকা শুরু থেকেই এই বিয়ের বিরুদ্ধে।’
যে ঘরে তারা বসে ছিলো, সেই ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার পথ। দরজায় তালা।
‘ওই ঘরটা কি বন্ধ থাকে?’ জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘হ্যাঁ। আমাদের একটা ঘরেই কাজ চলে যায়। যদি কোনো দিন গেস্ট আসে, তাহলে তাদের ওই ঘরে থাকতে দিই।’ শ্রাবন্তী বলল।
খাওয়া শেষ করে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো মৃত্যুঞ্জয়। যাওয়ার আগে বিক্রম থেকে নিয়ে নিলো তাদের পৈতৃক বাড়ির ও কুচবিহারের বাড়ির ঠিকানা।
মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই তিস্তার মন মেজাজ খুব একটা ভালো ছিলো না। নিজের নিরুদ্দেশ ছেলের শোকে তার মায়ের শরীর দিনে-দিনে অবনতির দিকে এগোচ্ছে। সুধাকর বাবু ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বার থানার চক্কর লাগিয়ে নিয়েছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বড় বাবুর এক কথা- ‘আমরা খুঁজছি।’
পর দিন সকালে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে তিস্তা দীনবন্ধু বাবুর বাড়ির দিকে রওনা দিলো। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যখন দীনবন্ধু বাবুর কাছে সে জানতে পারলো যে মৃত্যুঞ্জয় আজ ভোরে কোথাও চলে গেছে। কোথায় গেলো মৃত্যুঞ্জয়? তাহলে কি সে আর তিস্তাকে সাহায্য করবে না? পুলিশের ওপর তিস্তার শুরু থেকেই বিশ্বাস ছিলো না। চারিপাশে নিবিড় অন্ধকারের মধ্যে স্নিগ্ধ আভা হয়ে ফুটে উঠেছিল মৃত্যুঞ্জয়ের আবির্ভাব। কিন্তু সেই আভাটাও এখন নিরুদ্দেশ। তিস্তার মুখ আরো ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। দীনবন্ধু সরকার তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললেন- ‘চিন্তা করিস না, মা। মৃত্যুঞ্জয় ঠিক ফিরে আসবে। আমি তাকে বহু বছর ধরে চিনি। তখন আমরা কলকাতায় থাকতাম। আমার মেয়ের খুন হয়ে গিয়েছিল। সেই কেসটা মৃত্যুঞ্জয় তদন্ত করেছিল। আমি আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম যে আমার মেয়ের খুনি কোনো দিন ধরা পরবে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় হাল ছাড়েনি। খুনিকে আদালত পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়। আমি জানি, যে দায়িত্ব সে নেয় সেটা পুরো না করা অবধি সে শান্তি পায়ে না। চিন্তা করিস না, মৃত্যুঞ্জয় ঠিক ফিরে আসবে।’
দু’দিন ধরে মৃত্যুঞ্জয়ের কোনো খোঁজখবর নেই। তিস্তা অনবরত তাকে ফোন করে চলেছে, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। মৃত্যুঞ্জয়ের ফোনের সুইচ অফ। মৃত্যুঞ্জয়ের ওপর থেকে ধীরে-ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলছিল তিস্তা। এর মধ্যে পুলিশ অল্প সক্রিয় হয়েছে। কসমেটিক্সের দোকান তোলপাড় করে রেড মারলো পুলিশ। কিছুই পেলো না সেখান থেকে। আবারও নীলকন্ঠকে থানায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। জেরা করা হলো বেশ অনেকক্ষণ। নতুন তথ্য কিছুই পেলো না পুলিশ। অগত্যা ছেড়ে দিতে হলো নীলকন্ঠকে। থানার বড় বাবু সুধাকর ঘোষালকে বললেন- ‘ওই নীলকন্ঠই গণ্ডগোল করেছে। কোনো প্রমাণ পাচ্ছি না তাই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। শালা, দোকানের একলা মালিক হওয়ার ফিকিরে আছে। কিন্তু আমি যত দিন আছি, সেটা সম্ভব হতে দেবো না।’