বুমেরাং
–রেহানা দেবনাথ
জুলি আর তুলি দুই যমজ বোন। শরীরের ও মুখের মিল থাকলেও স্বভাবের মধ্যে পার্থক্য অনেক। বড়লোকের মেয়ে হলেও ওর বাবা ওদের সাধারণ ভাবে কড়া শাসনে মানুষ করেছে। জুলি খুব চঞ্চল আর তুলি শান্ত। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, দেদার খরচ করে বাবার কাছে বকা খাওয়া ওর রোজকার ব্যাপার আর তুলি ঠিক উল্টোটা বাবার কথামতো চলে। উচ্চমাধ্যমিক দেবার পর ওদের সম্বন্ধ দেখা চলতে থাকে। এমন সময় কলকাতার এক বিশাল ব্যবসায়ী শ্যামসুন্দর জুলিকে দেখতে এসে তুলিকেও দেখে ফেলে। শ্যামসুন্দর জানতে পারে যে ওরা যমজ দুই বোন। তখন সে বলে যে আমার তো মেয়ে পছন্দ হয়েছে তবে আমি দুজনকেই কিছু প্রশ্ন করতে চাই তারপর আমার সিদ্বান্ত জানাবো। ওদের বাবা তাতে সায় দেয়। প্রথম প্রশ্ন:তোমাদের হাতে প্রচুর ধন সম্পদ দেওয়া হলে তোমরা কি করবে? জুলি চটপট উত্তর খরচ করে ফেলবো, শপিং, রেস্টুরেন্টে খেয়ে আর দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়িয়ে। তুলি বললো আমি সব রেখে দেব আর আস্তে আস্তে খরচ করবো। দ্বিতীয় প্রশ্নঃ বিয়ের পর মেয়েদের নিজের সংসার নিয়ে ভাবা উচিৎ না নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে? জুলি বললো আগে নিজের কথা ভাবা উচিৎ তারপর অন্যের! তুলি বললো, না আগে সংসারের কথা ভাবা উচিৎ তারপর নিজের কথা।কিছুক্ষণ পর শ্যামসুন্দর জানায় যে সে খুব শান্ত স্বভাবের তাই তুলিকে তার নিজের জন্য পছন্দ হয়েছে আর তার প্রিয় বন্ধু চঞ্চলের জন্য জুলিকে পছন্দ করেছে। চঞ্চল চৌধুরী হচ্ছে উত্তর কলকাতার একজন ব্যবসায়ী।কথাবার্তা হয়ে যাবার পর শ্যামসুন্দর গাড়ী করে বাড়ি ফেরার পথে মনে মনে বলতে থাকে এবার চঞ্চলকে নাস্তানাবুদ করার সুযোগ পেয়েছি হাত ছাড়া করা চলবে না,সব বিষয়ে আমাকে টেক্কা দেওয়া! যেভাবেই হোক জুলির সঙ্গে বিয়ের জন্য রাজী করাতেই হবে।
শ্যামসুন্দর তার বন্ধুকে জুলির স্বভাব সম্বন্ধে উল্টোটা বলে, ও ছবি দেখায়। তাতে জুলিকে চঞ্চলের পছন্দ হয়ে যায়। মাসখানেকের মধ্যেই তিন বাড়ির মধ্যে সব দেখাদেখি, পাকা কথা হয়ে নিদিষ্ট দিনে একসাথে দুই বোনের বিয়ে হয়ে যায়।
দুই পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। এরপর বিয়ের এক বছরের পর জামাইসষ্ঠীতে দুই বোনের পরিবার আবার একসাথে মিলিত হলো। চঞ্চল আর জুলি খুব আনন্দ করছে, ওদের মধ্যে ভালোবাসা আর খুশি দেখে শ্যমসুন্দরের ঈর্ষা হলো। চঞ্চলের সুখ শান্তি নষ্ট করার জন্য জুলির সাথে বিয়ে দিয়েছে কিন্তু উল্টোটা হলো কি করে! ভাবতে ভাবতে শ্যামসুন্দর বাড়ির বাইরের দিকে পা বাড়ায়। হঠাৎ তার কানে এলো দুই বোনের কথা আর খিলখিল হাসি। শ্যামসুন্দর জানালার একপাশে দাঁড়িয়ে দেখে জুলি আর তুলি গল্প করছে। জুলি তুই যে বলেছিলিস তোর কাছে অনেক টাকা এলে তা খরচ করে শেষ করে দিবি তাহলে এখন কিভাবে বদলে গেলি, তুলি বিস্ময়ের সুরে বলে। জুলি বলে আরে তখন ওই উত্তরটা মাথায় এসেছিল তাই বলেছিলাম আর এখন ওর সম্পত্তি মানে তো আমার তাই অযথা খরচ না করে জমাতে শিখছি। তুলি ভ্রূ কুঁচকে বলে ধুর! জমানো ওসব আমার দ্বারা হবে না।বাবার ভয়ে যেগুলো করতে পারিনি তা এখন পুষিয়ে নিচ্ছি, রোজ শপিং, কিটি পার্টি, ক্লাব সব কিছুই করি দুহাতে টাকা ওড়াই! জুলি আশ্চর্য হয়ে বলে তুই যে টাকা জমানোর কথা বলেছিলিস! হুম! আমার তো মনে হয় তোর শ্যামদা ওই জন্যই আমাকে বিয়ে করেছে যা হিসেবি লোক, বলে হাসে তুলি। তারপর আবার বলে তোর শ্যামদা আমায় বলে কিনা এবার বাচ্চা নিয়ে নেবার কথা। আমার শাশুড়ি শ্বশুরের ইচ্ছে পরের বছরই নাতি নাতনির মুখ দেখবেন, আমিও বলে দিয়েছি আগে নিজে কিছু একটা করবো, লাইফটা এনজয় করবো, তারপর বাচ্চার কথা ভাববো। জুলি বলে চঞ্চল কিন্তু একটু অন্য ধরনের আমাকে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার কাজে যুক্ত করেছে, বলেছে আগে নিজের পরিচয় বানাও তারপর সংসারে লোক বাড়ানোর কথা ভাববে। আমিও কেমন ওর বশ হয়ে গেছি বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে জুলি। আমি আগে যা যা করতে পারিনি এখন তাই তাই করছি এই কদিন আগে দক্ষিণ ভারত ঘুরে এসেছি, আবার পরের মাসে উত্তর ভারত ঘুরতে যাব, বাচ্চা নেবার আগে লন্ডন, আমেরিকাও ঘুরে আসার প্ল্যান আছে উৎফুল্ল ভাবে তুলি বলতে থাকে। জুলি বলে আমাদের এখন বাইরে ঘুরতে যাওয়া হয়নি তবে আত্নীয়দের বাড়ি, গ্রামের বাড়ি ঘুরে এসেছি খুব ভালো লেগেছে। আপাতত বিদেশে ঘোরার কোনো প্ল্যান নেই। ওদের কথাবার্তা শুনে শ্যামসুন্দর মাথা চাপড়াতে থাকে আর বলতে থাকে এবারও চঞ্চলের কাছে হেরে গেলাম! ওর জীবনকে তছনছ করার জন্য যে কালবৈশাখীকে পাঠিয়ে ছিলাম তা ধীরে ধীরে শীতল বাতাসে পরিণত হয়ে গেল আর যে শান্তবায়ুকে নিজের জন্য প্রবাহিত করেছিলাম তা শক্তি সন্ঞ্চয় করে নিন্মচাপ হয়ে আমার জীবনকে ঘিরে থাকলো! এই কথা ভাবতে ভাবতে শ্যামসুন্দর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।