Site icon আলাপী মন

নিষ্ঠুর সমাজ

নিষ্ঠুর সমাজ
-বিভূতি ভূষণ বিশ্বাস

 

 

সেদিন বিকালে ফুটবল খেলার মাঠে আমরা পাঁচ ভাই বোন খেলা করছিলাম,আর মা পাশে শুয়ে ছিলো হঠাৎ একটি লোক ট্যাক্সি থকে নেমে আমাকে কোলে নিয়ে চম্পট। আমি তো কথা বলতে পারিনা তাই অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম ভাই বোন আর মা’র দিকে,আস্তে আস্তে সব অস্পষ্ট হয়ে গেলো। দুই চার দিন খুব কান্না করেছি। এখন দেখছি এখানেই ভালো আছি। সময় মতো খাওয়া দাওয়া সব কিছুই পাই, তবে সব থেকে ভালো লাগে প্রভুর এক মাত্র মেয়েকে ও সব সময় আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

যাই হোক ধীরে ধীরে শিশু কাল কৈশোর যৌবন সবই কেটে গেলো এখন শরীরটা ভালো যাচ্ছে না, মাথা ঝিম ঝিম করে দাঁত শির শির করে প্রভুকে ছাড়া কাউকে আর চিনতে পারি না। হঠাৎ এক দিন মাথা খুব যন্ত্রণা করছিল বাড়ির মায়া ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম নিরুদ্দেশের পথে । এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম।

আমাকে দেখে দোকানদার গরম জল ছুঁড়ে মারলো। আমি আর ধৈর্য্য ধরতে পারলাম না ওকে কামড়ে দিলাম । সবাই হই হই করে পাগলা কুকুর পাগলা কুকুর বলে তাড়া করলো। কতো দূর আর পালাবো। বড় বড় লোহার রড নিয়ে সবাই আমাকে ঘিরে ফেললো এক জন মাথায় সজোরে মারলো। ভাগ্য ভালো মাথায় না লেগে সামনের ডান পায়ে লাগলো ।

তিন পা দিয়ে দৌড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম। সপাটে আর একটা মারলো, সামনের বাঁ পাটাও গেলো । পিছনের দু’পাই ভরসা,মানুষ হলে দৌড়াতে পারতাম । ব্যকুল দৃষ্টিতে চেয়ে আছি কখন মাথায় শেষ আঘাতটা পড়বে। ভাবতে ভাবতে সজোরে মাথায় শেষ আঘাতটা পড়লো। ধীরে ধীরে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। হঠাৎ কে যেন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে দেখার চেষ্টা করলাম। আবছা দেখলাম এতো আমার প্রভু। প্রভুর কোলে মাথা রেখে নিষ্ঠুর সমাজ থেকে চিরতরে বিদায় নিলাম।

Exit mobile version