Site icon আলাপী মন

রবি ঠাকুরের খাওয়া দাওয়া

রবি ঠাকুরের খাওয়া দাওয়া
-ফারুক আব্দুল্লাহ

 

 

রবীন্দ্রনাথ আমদের সবার প্রিয় কবি এবং শ্রদ্ধার ব্যক্তি। প্রিয় মানুষদের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার আগ্রহ বোধহয় কমবেশি সবারই থাকে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়েও আমাদের কৌতূহলের অন্ত নেই। লেখক রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে সুপরিচিত হলেও তার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক আজও অনেকের কাছেই অজানা। রবীন্দ্রনাথের চরিত্রের এমনই এক ঊল্লেখযোগ্য দিক হল তার ‘ভোজনরসিকতা’
রবীন্দ্রনাথ ছোটোবেলা থেকেই খেতে খুব ভালবাসতেন এবং আমৃত্যু কাল পর্যন্ত খাবারের প্রতি তার ভালোবাসা থেকেই গেছিল। এ সম্পর্কে কবির বাল্যকালে লেখা একটি কবিতার ঊল্লেখ করা যেতে পারে যেখানে তিনি প্রাতরাশের বিভিন্ন খাদ্য সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।

‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতেই কদলী দলি।
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতেই হাপুস-হুপুস শব্দ।
চারিদিক নিঃশব্দ। পিঁপড়ে কান্দিয়া যায় পাতে’।

রবীন্দ্রনাথ সারাদিনে বেশ কয়েকবার খেতেন। তিনি ভোরবেলায় খুব তাড়াতাড়ি উঠে পরতেন,তার দিনের শুরু হত এক কাপ চা অথবা কফি খেয়ে। একটু বেলা হয়ে প্রাতঃরাশে ভেজা বাদাম,মধু সহযোগে টোস্ট এবং এক কাপ দুধ। আবার মাঝে মাঝে তার ছোটবেলার প্রিয় খাবার সন্দেস,কলা,দুধে ফেলে মেখে খেতেন। এর পর সকাল দশটা নাগাদ তিনি লেবুর রস খেতেন, এবং মধ্যাহ্ন ভোজনে রবীন্দ্রনাথ ভাত খেতেন, তবে তিনি ভাত খুব অল্প পরিমাণে খেতেন। বিকেলে কবির জন্য বরাদ্দ ছিল মুড়ি ও চা। কবির রাতের খাবারে থাকত সব্জির স্যুপ কয়েকটি লুচি ও তরকারী। রবীন্দ্রনাথ দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই মিলে ঘরের মেঝেতে বসে খেতেন কিন্তু রাতের বেলায় তিনি খেতেন ডায়নিং টেবিলে বসে।

আমিষ ও নিরামিষ সব ধরনের খাবারই রবীন্দ্রনাথের পছন্দের তালিকায় ছিল। দেশী বিদেশী কোন খাবারেই তার অরুচি ছিল না। তার প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল ব্রিটিশ পদ, আপেল দিয়ে রান্না খাসীর মাংস, তুর্কী কাবাব, তিনি বিদেশে গিয়ে যে সব খাবার খেতেন সেগুলির রান্না পদ্ধতি জেনে ঠাকুর বাড়ির রান্না ঘরে সেগুলি করার অনুরোধ করতেন। ঠাকুর বাড়ির মেয়েরা রান্না নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালাতেন, নিত্য নতুন খাবারের পদ তৈরিতে তারা সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। তারা অতি সাধারণ উপাদান যেমন পটল ও আলুর খোসা দিয়েও সুস্বাদু পদ তৈরি করতেন। রবীন্দ্রনাথের একটি স্বাভাব ছিল তিনি দেশে বিদেশে যেখানেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতেন সেখানকার মেনুকার্ড তিনি সংগ্রহ করতেন এবং সেগুলি তিনি সংরক্ষণ করে রাখতেন এই ঘটনা থেকেই রবীন্দ্রনাথের ভোজন রসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

দেশীয় খাবারের মধ্যে, কৈ মাছের তরকারী,চিতল মাছের পেটি ভাজা, এছাড়া ভাপা ইলিশ, ফুলকপি দিয়ে তৈরি নানান পদ ছিল রবীন্দ্রনাথের খুব প্রিয়। এছাড়া মিষ্টি খাবারের মধ্যে পায়েস, চন্দ্রপুলি, ক্ষীর, নারকেল দিয়ে তৈরি মিষ্টি, দই এর মালপোয়া, চিঁড়ের পুলি,মানকচুর জিলিপি, আমসত্ত্ব এগুলি খেতে খুব ভালবাসতেন তিনি। তবে পায়েস ও পিঠে পুলির প্রতি কবির টান ছিল বেশি।

রবীন্দ্রনাথের ফলের প্রতিও একটা আকর্ষণ ছিল। তিনি দুপুরের খাওয়ার আগে ফল খেতেন যেমন পাকা পেপে, কলা, বাতাবি লেবু আমের সময় আম তবে আম ছিল রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয় ফল। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস এলে রবীন্দ্রনাথের ভীষণ খুশী হতেন। কবি আম কেটে খেতে পছন্দ করতেন না তিনি আম চুষে খেতেন। টমি ওয়াডা নামে রবীন্দ্র অনুরাগী এক জাপানী ভদ্র মহিলার আমন্ত্রণে দ্বিতীয়বার কবি জাপানে যাওয়ার কথা ভাবতে থাকেন, কিন্তু সেটি আমের সময় ছিল রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমের ভক্ত ফলে পাকা আমের লোভ তার জাপান যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাড়ায়। অবশেষে ঠিক হয় বড় বড় বরফ বক্সে করে আমও কবির সাথে জাপান যাবে।

তথ্য সূত্র
১) দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায়, অজানা রবীন্দ্রনাথ,এ পি পি,১১৭, কেশব চন্দ্র সেন স্ট্রিট,কলকাতা-৭০০০০৯
২)http//Bengalcuisine.in/tagorean_cuisine
৩) http//hindustantimes.com/india/savour…

Exit mobile version