দেশমাতার সুযোগ্য সন্তান

দেশমাতার সুযোগ্য সন্তান
-তন্ময় সিংহ রায়

 

 

“তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ, তোমরাই আনবে সুদিন, তোমরাই গড়বে সুন্দর সমাজ।” আর কাউকে বিশেষ বলতে শোনা যায়না। বর্তমানের ক্যানভাসে ‘দুরত্ব বা নিয়মিত যেভাবেই সম্ভব, সিংহভাগের আগামি উদ্দেশ্য অর্জিত ডিগ্রীকে বিক্রয়যোগ্য করার মাধ্যমে নিজেকে সমাজে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল প্রতিষ্ঠা করে একান্তই ব্যক্তিগত সুখী জীবনে প্রবেশের পথ সম্ভব হলে শ্বেত মার্বেলে মুড়ে দেওয়া ও পাশাপাশি সম্পূর্ণ জীবন শিক্ষিত শব্দের রসাস্বাদন করা।’- এই যন্ত্রণাদায়ক ছবিই বারে বারে ভেসে ওঠে। কোনো অভিভাবকই সমাজকে নিয়ে ভাবনার বীজ বোনেনা, ‘শুধু তোরা নিজের পায়ে দাঁড়া।’…….. পুঁথিগত শিক্ষার ‘ডক্টর অব ফিলোসফি’-রা সমাজে ভীষনরুপে বিশিষ্টজনের তালিকায় তাদের নাম খোদাই করতে যথেষ্ঠ সক্ষমতার পরিচয় বহন করেছেন কিন্তু আজ সামাজিক শিক্ষায় আট উত্তীর্ণের অভাবের ক্রমবর্ধমান ফলাফল,… সমাজের কোনায় কোনায় ঝোপে ঝাড়ে স্ফুলিঙ্গ ভবিষ্যতের ভয়াবহ দাবানলের সংকেত বহন করে চলেছে আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থাকবে সেই দাবানলের জীবন্ত সাক্ষী। খাদ্যে দুর্নীতি, চিকিৎসায় দুর্নীতি, শিক্ষায় দুর্নীতি, স্বাস্থ্যে দুর্নীতি, এমনকি ধর্মেও! দুর্নীতির তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে বাতাস মাটি ও জল আজ আই.সি.ইউ-তে। দুর্ভাগ্যবশত: দুর্নীতমুক্ত ২৩ ঘন্টা ৬০ মিনিট বোধকরি এ জীবনে আর দেখা সম্ভব নয়। চারিদিকে ফাঁকা আওয়াজের বজ্রপাতে সমাজের আকাশে আলোর ঘনঘটা, শুধু বৃষ্টিই নিরুত্তর। নি:স্বার্থ সমাজসেবী আজ গ্যাসীয় বস্তু। চারিদিকে শুধু অর্থাবৃত চোখজোড়ার লোলুপ দৃষ্টির অবাধ বিচরণ। ‘আরো চাই, আরো চাই’ ধ্বনিতে আকাশে বাতাসে শুধুই হাহাকার তবুও নাকি আমরা দেশমায়ের সু্যোগ্য সন্তান। বিড়াল, কুকুর পুষছি গৃহে আর হিংসা ও ঈর্ষ্বা পুষছি মনে যার ফলে সুমধুর সম্পর্কে আজ রিখটার স্কেলের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যকীয়, তবুও নাকি আমরা দেশ মাতার সুযোগ্য সন্তান। অতি যত্নে আত্মকেন্দ্রিক বীজ বপনের মাধ্যমে আমরাই সমাজটাকে বানাচ্ছি হোমার, তবুও নাকি আমরা দেশমাতার সুযোগ্য সন্তান। কিছু ব্যতিক্রম স্বীকার করেও উল্লেখ্য যে, বর্তমানের এমন সন্তান গর্ভে ধারণে দেশমাতৃকা যে কি পরিমাণ কলঙ্কিতা, তা সেই জানে। গান্ধীজির টুকরোর বিনিময়ে, প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে হাজার হাজার সততা আর আদর্শকে খুন করে গুম করা হচ্ছে তাদের আদর্শহীন লাশগুলোকে, নিলামে দাম চড়ছে মনুষ্যত্বের। ‘শুধু নিজে বাঁঁচবো আর সাথে থাকবে আমার পরিবার।’ এই হলো বর্তমান সমাজের অধিকাংশের মুখ্য মন্ত্র। পেট ভর্তি কান্না নিয়েও যে চেষ্টা করছে তার আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখার তার ছবি শিরোনামে আসে কম বিশেষত জীবন তার যন্ত্রণাবিদ্ধ। ঝুল কালি মাখা বিবেকানন্দ ও নেতাজীকে সময় বিশেষে শুধু পালন করা হয় বাকি সারা বছর এরা প্রাণহীন আসবাবপত্রের সাথেই সহবাসে রত থাকে অথবা দেওয়ালেই শুধু টাঙিয়ে রাখা হয় তাদের আদর্শকে, তবুও আমরা নাকি দেশমাতার সুযোগ্য সন্তান।

Loading

Leave A Comment