কবিতা

সেদিন ছিল পঁচিশে বৈশাখ

সেদিন ছিল ২৫শে বৈশা

-পারমিতা চ্যাটার্জী

 

 

বেশি কিছু চাইনা তোমার থেকে
শুধু একটা সুন্দর সকাল উপহার দেবে আমায়?
রোজ সকালে খবরের কাগজের পাতায় কি যে পড়ে যাও বুঝি না–
কখনও তো বলনা, ” এই চায়ের কাপটা নিয়ে একটু বোস আমার কাছে–
কখনও তো বল না তোমার গাছের ফুলগুলো বড় সুন্দর–
আমি তো এইটুকুই শুনতে চাই শুধু–
মুখ গম্ভীর করে কাগজের পাতা থেকে মুখ না তুলেই চায়ের কাপটা হাতে তুলে নাও–
তারপর শুধু বল তাড়াতাড়ি বেড়োতে হবে আমায় — অনেক কাজ পরে আছে অফিসে —
আর হ্যাঁ লাঞ্চটাও একটু বেশি দিও — আমার জিনিস গুলো সব গুছিয়ে সামনে রেখো-
শুধু হুকুমের সুরে কথা বলে যেতে তুমি ক্লান্ত হয়ে যাওনা?
আমার দীর্ঘনিশ্বাসের শব্দ তোমার কানে পৌঁছোয় না–
আমি প্রতিদিন একটু একটু করে হতাশায় ডুবে যাই–
— হারিয়ে যায় আমার প্রতিদিনের সকাল-
বিকেলের স্নিগ্ধ গোধূলি আসতে আসতে মিলিয়ে যায় নীল আকাশের বুকে–
নেমে আসে সন্ধ্যা, আকাশের বুকে ফুটে ওঠে অসংখ্য তারা–
আমি সেই তারার মাঝে খুঁজে চলি হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নদের —
হঠাত্ চমকে উঠি টিভিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঝগড়ার আওয়াজে —
বুঝতে পারি তুমি এসে গেছ—-
আমায় দেখে বললে চা হয়েছে না কি?
ম্লান হেসে উত্তর দিলাম– হয়ে গেছে দিচ্ছি–।
গতবার ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের ছবিটা মালা দিয়ে সাজিয়ে ছিলাম, সামনে কাঁসার রেকাবে রেখেছিলাম একমুঠো চাঁপাফুল–
ঘরটা ফুলের গন্ধে ভরে আছে সেই সাথে ভরে আছে আমার প্রাণটাও, আজ যে আমার জীবনের পরম বন্ধুর জন্মদিন—
মনে মনে গাইলাম –“তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”।
নিজেকেও সাজিয়েছিলাম একটু নতুন সাজে–
তুমি ঘরে ঢুকেই বললে বাহ্ সুন্দর ফুলের গন্ধে ঘরটা ভরে আছে তো?
আমি মৃদুসুরে বললাম– আজ ২৫শে বৈশাখ–
— তুমি দায়সারা ভাবে বললে, ও তা ভালো করেছ– অনেকদিন রবীন্দ্রসংগীত শোনা হয়না– আজ আমার অফিসের এক কলিগ শর্মিষ্ঠা নামে খুব সুন্দর গাইল রবীন্দ্রসংগীত মনটা যেন ভরে গেল– ও চা দেবেতো না কি–
রান্নাঘরে গিয়ে চা বানাতে বানাতে চোখদুটো নিজের অজান্তে ঝাপসা হয়ে গেল– আমার তানপুরাটায় ধূলো জমে গেছে— কার জন্য গাইব? গান শোনার লোকটাই তো বেসুরো, সে অন্য লোকের সুরে মুগ্ধ হয় আমার গান শোনার সময় হয়না–।
চায়ের কাপটা তোমার হাতে দিতে তুমি একটা চুমুক দিয়ে বললে বাহ্ খুব ভালে চা টা — কোন পাতাটার করলে গো?
আমি উদাস উত্তর দিলাম –যে পাতায় রোজ করি-
আমি আমার নিজের ঘরে ফিরে এলাম– কানে আসছিল — টিভির তীব্র শব্দ, রাজনৈতিক নেতাদের একঘেয়ে কচকচানি —
আমি দরজাটা ভিজিয়ে এলাম–
ভিতর থেকে কে যেন বলে উঠল— মনের দরজাটা ভেজাতে পারবি কি?
না সত্যি তা পারবনা–
— তবে শুধু শুধু ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজেকে আড়াল করে লাভ কি? এই তোর ঘর এই নিয়েই থাকতে হবে– যেটুকু পেলি ওইযে বলল চা টা ভালো হয়েছে, ওইটুকুই তোর পাওনা– এর চেয়ে বেশি আশা করলে নিরাশা আরও বাড়বে–
আমি তবুও একচিলতে জানলার ফাঁক দিয়ে আকাশটাকে দেখতে চেষ্টা করলাম– মনে হল আমার আকাশটা অনেক অনেক দূরে চলে গেছে–
তবু গুণগুণ করে গেয়ে উঠলাম বহুদিন পর–” যখন জমবে ধূলা তানপুরাটার তারগুলায়, তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে, তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে”। কানে এলো — কি গো খেতে দেবে না কি?
আমার সুরটা কেটে গেল–।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page