রম্য রচনা

বিচারালয় 

বিচারালয়  (রম্য রচনা)

 -অমল দাস

সকাল দশ ঘটিকা, ঢাক ঢোল পিটাইয়া, হুঙ্কার তুলিয়া বিচারালয় বসিল। বিচারকের অনুচরেরা জনা কয়েক কয়েদীকে কাষ্ঠের ঘেরাটোপে দাঁড় করাইয়া দিলো। মৃত শুকনো কাষ্ঠের ন্যায় সম্মুখে ভাঁজ আসক্ত এক বৃদ্ধ বিশাল এক জমা খরচের পুস্তক খুলিতে লাগিলেন বিচারকের আসনের কিয়ৎ নিকটে। উক্ত পুস্তকই হইল অপরাধীদের জন্মকুণ্ডলী। এই স্থানে কোনরূপ আধুনিক যন্ত্রাংশ পরিলক্ষিত হইল না, এমন কি লিখিবার কলমখানিও কাষ্ঠের দ্বারা নির্মিত, যেটি বৃদ্ধ বোতলের কালির মধ্যে বারংবার চুবাইয়া লইতেছেন এবং চশমা ছাড়াই অত্যাধিক সম্মুখে অবনত হইয়া কিছু লিখিতেছেন। বিচারালয়ের দ্বারে দুই ষণ্ডামার্কা অতিকায় লম্বা চওড়া দস্যু পরিলক্ষিত হইতাছে, দস্যুই বটে মানুষ বা দেবতার কোন স্বরূপ ইহাদের মধ্যে পরিলক্ষিত নাই।

ভাবিতেছেন এমন বিচারালয় কি বর্তমান সমাজে অধিষ্ঠিত? আছে, আছে বৈকি, সুদূর দক্ষিণে সমুদ্রের তলদেশে পাতালের ঠিক উপরেই উক্ত বিচারালয়, এই স্থানে সকল মৃত মানবের বিচার হইয়া থাকে। ইহা যমালয়, হিন্দু পুরাণে বর্ণিত রইয়াছে।

দশটা বাজিতেই বিচারালয় খুলিয়া গেল। কিন্তু সকলে উপস্থিত হইলেও ন্যায়পালক যমরাজ আসিতে বিলম্ব করিলেন। সকালের প্রাতঃরাশ করিবার পর তাঁহার উদর পাকাইয়া আসিল। সেই হেতু তিনি কয়েকবার প্রাতঃক্রিয়ার মন্দির দর্শনে গিয়াছিলেন। তাহাতেই আসিতে কাল বিলম্ব ঘটিল। তিনি আসিয়া নিজ আসন লইবা মাত্র কয়েদীদের একজন সশব্দে একখান জোড় উদ্গার (ঢেকুর) দিয়া বসিল। শব্দ ধ্বনি এতই উচ্চ ছিল যে উপস্থিত সকলেই উহার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করিল। যমরাজ গম্ভীর হইয়া জানিতে চাহিলেন – ‘শান্ত পরিবেশে কে এই উদ্গার তুললো’?

-‘আজ্ঞে হুজুর আমি! আমি ভজন, সবাই ভজনা ডাকে। আমারে মাফ করবেন।’

করজোড় করিয়া ভজন মাফ চাহিল।

কৌতূহলী হইয়া যমরাজ জানিতে ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন – ‘কি খেয়েছিস  সকালে?’

-‘আজ্ঞে হুজুর ঐ গরম লুচির সাথে দুই-চারখান চিকেন কষা।’

চিকেন কষা শুনিবা মাত্র যমরাজের জিহ্বায় জল আসিয়া উপস্থিত হইল। তিনি যাহা আহার করিয়াছেন তাহাতে নিরামিষ আহারই বিদ্যমান ছিল। যমরাজ উদর সমস্যা ভুলিয়া গেলেন, ক্ষোভে হুঙ্কার দিয়া রাঁধুনিকেই ডাকাইলেন।

রাঁধুনি আসিতেই যমরাজ প্রশ্ন ছুঁড়িলেন – ‘কি হে.. তোকে যমালয়ে রান্নার জন্য রেখেছি কি অপরাধীদের মাংস রান্না করে দেওয়ার জন্য?’

রাঁধুনি উত্তর করিল– ‘আজ্ঞে হুজুর আপনারা এইখানের সকলেই নিরামিষাশী, মাংস আপনাগো দিই কি কইরা?’

-‘তুই আমার কাছে জানতে চেয়েছিলি আমি মাংস খাব কি না? হতচ্ছাড়া! তাছাড়া এখানে  নিরামিষ, তো চিকেন কোথায় পেলি?’

ভজনার পাশে দাঁড়াইয়া থাকা পল্টু বলিয়া উঠিল- ‘হুজুর সব ঝোলঝাল মাইরি, এ ব্যাটা

ধাপার ভাগাড় দিয়া দশ দিনের মরা পচা মুরগী লইয়াইছে। আর রাঁধুনিরে দশ টাকা ঘুষ ধরাইয়া দিয়া চিকেন বানাইয়া ফেলাইছে।’

একথা শুনিয়া চিত্রগুপ্ত পাশে রাখা পিকদানিতে ওয়াক্ থু ওয়াক্ থু করিয়া নিষ্ঠীবন ফেলিতে লাগিলেন। যমরাজ জানিতে চাহিলেন – ‘কি হে চিত্রগুপ্ত তোমার আবার কি হোল? যে এখানেই…’

রাঁধুনি কহিল –‘ও বুড়া থুথু তো ফ্যালবেই হুজুর! পিঁয়াজ রসুনের গন্ধে উত্তাল হইয়া কাউরে না জানাইয়া ব্যাটা চিত্রগুপ্ত একখান মুরগীর ঠ্যাং লইয়া লুকাইয়া লুকাইয়া খাইতে ছিল। এমনকি ঝোল গড়াইয়া কুনুইতে নামলে লম্বা এক হাত জিভ বার কইরা তাও চাইট্যা চাইট্যা সাফ কইরা দিলো’।

এই কথা বলিয়াই সে দৌড়ে অন্দরে পলায়ন করিল।

চিত্রগুপ্ত বাংলার পঞ্চ সংখ্যার ন্যায় মুখমণ্ডল কিছুটা বাঁকাইয়া কহিলেন – ‘স্যার এটা মিথ্যে, সম্পূর্ণ মিথ্যে! আমাকে অপদস্থ করার জন্য বিরোধীদের চাল। আমি শ্বেতপত্র দাবী করছি। ভজনা ব্যাটা পচা মাংস এনে যমালয় অপবিত্র করে দিল, ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করছে স্যার, তাই….!’

যমরাজ বিরক্ত হইয়া কহিলেন – ‘তোমার আর সাফাই গান করতে হবে না চিত্রগুপ্ত! আমি তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনি, আর কি ভীমরতি হল তোমার আজকাল? ঐ বিদেশী শব্দগুলি তুমিও এডপ্ট্‌ করে ফেললে?’

আসামী ফদে হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল, বলিল – ‘হুজুর! এইডা কিন্তু অন্যায়, আপনি নিজে কইয়া নিজেই তো ইংরাজি কপচাইলেন’।

-‘ধুর ব্যাটা ম্লেচ্ছ! তুই আসামী তোর এখানে কথা বলার অধিকারই নেই।’

– ‘তা থাকবে ক্যান, সব জায়গাতেই তো দেহি যে যায় লঙ্কায় সেই হনু। বলি ক্ষমতাওয়াদেরই যদি চলবে আপনারা তো ভগবান এই আমাগো মত দুর্বল নরকীটগুলা পাঠান ক্যান? সব ক্ষমতাধারীদেরই রাখেন ওইখানে। এখানেই একটা ছোট জায়গা কইরা দেন আমাগো থাহনের লইগ্যা।’

ইতিমধ্যে নারদ মুনি আসিয়া প্রবেশ করিলেন – “নারায়ণ! নারায়ণ!’ বলিতে  বলিতে।  বিচারালয়ের সকলের তাঁহার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিলেন।

যমরাজ বলিলেন- ‘মহাশয় সকাল হতে কোথায় ছিলেন? আজ তো বিশেষ কিছু  খবরও পেলাম না।’

-‘নারায়ণ নারায়ণ আর বলেন না প্রভু! সক্কল দিকে যা ভুয়া নিউজ ছড়ায়ে পড়তাছে তাতে সত্য খবরের লইগ্যা রীতিমত লড়াই করতে হইতাছে আমারে দিনরাত্তির। এইবার একটু বেতন-টেতন বাড়াইয়া দিয়েন প্রভু।’

চিত্রগুপ্ত চক্ষু দুই উপরে উত্থিত কইরা বলিয়া উঠিলেন – ‘নারদমশায় চিটিংবাজী করলে হবে না কিন্তু, এই মাত্র কদিন আগেই ডি.এ. বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আপনাকে।’

-‘নারায়ণ নারায়ণ, দেছেন বৈকি নিচ্চই দেছেন! কিন্তু পুরাপুরি শতাংশ এহনো পাতে পড়ে নায়, আর যা দেছেন তা জি.এস.টি. বিলের আগে। প্রভু! এহন ট্যাক্স ফাঁকি দিতে খুবই অসুবিধা হইতাছে। আবার পেট্রোল ডিজেলের উপর যে পরিমাণ লাগাম ছাড়া দাম বাড়তেয়াছে হেইতে ট্রাভেলিং এলাউন্সও অনেক বাড়ছে প্রভু! আমাগো বারোমাসে তেরো উৎসবে আরও চৌদ্দ গুষ্ঠির উৎসব জুড়তাছে, রোজ বউ ছেলে মেয়ের বায়না মিটাইয়া বিড়ি খাওনেরও পয়সা থাহেনা প্রভু।’

যমরাজ বলিলেন- ‘শান্ত হন নারদমশায়, একটা সুখটান দিতে দিতেই না হয় খবর বলুন।’  ইহার পর  যমরাজ অপরাধীদিগের প্রাতি দৃষ্টি রাখিয়া বলিলেন – ‘এই তোদের কাছে বিড়ি থাকলে দে একটা ওনাকে।’

পল্টু লুঙ্গির ভাঁজে লুকাইয়া রাখা বিড়ি বাহির করিয়া নারদমশাইকে শুধাইলেন – ‘কর্তা দুর্গা বিড়ি আছে চলবে তো?’

-‘নারায়ণ নারায়ণ! চলবে, আলবাৎ চলবে কত দিন ধইরা ভাবছি একবার বিড়ি টানমু। ঐ গানটা তো আমারে মোহিত কইরা ফেলছিল “বিড়ি জ্বালাইলে জিগার সে পিয়া, জিগার মা ভরি আগ হ্যায়।….. আহা….’

চিত্রগুপ্ত ক্রোধে লোহিত হইয়া জরাজীর্ণ শরীরটা লইয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন এবং কর্কশ কণ্ঠে বলিলেন – ‘দেখলেন স্যার এই মনুষ্যগুলির স্পর্ধা? কি ভয়ঙ্কর! এরা অসুর নাশিনী দেবী দুর্গাকে পরাস্ত করে বিড়িতে রূপ দিলো। এদের থেকে সাবধান স্যার, কঠিন শাস্তি হওয়া চাই।’

যমরাজ গম্ভীর ভাব প্রকাশ করিয়া কহিলেন- ‘সত্যিই চিন্তার বিষয় এরা তো কোন দিন আমাকেও বোতল বন্দি করে দেবে। এদের কপালে কঠিন শাস্তি আছে।’

পল্টু বলিল- ‘অন্যায় হুজুর অন্যায় অভিযোগ, দেবী দুর্গা পরাস্ত হয়নায়, বিড়িটার নাম দুর্গা। আপনি চাইলে আপনার নামেও একটা ব্যান্ড (ব্রান্ড) চালু হতে পারে, দেশী না হইলে বিদেশী কইরা দিমু! আপনি হয়তো জানেন না হুজুর ভগবান ‘রাম’ এর নামেই ব্যান্ড চলে খুব চাহিদা মাইরি, আপনিও হিট হইয়া যাবেন! কোন কথা হইবে না বস্‌।’

এতক্ষণে কাঠগড়ায় আর এক আসামীর দিকে দেখিলেন যমরাজ। সে চুপ করিয়া মাথা নত করিয়া দুই হাত বগলে চাপিয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। বয়স বেশি বোধ হইল না, অল্পই হইবে। যমরাজ জানিতে আগ্রহ করিলেন – ‘কি হে ছোঁড়া তুই চুপ কেন? কি নাম তোর?’ চিত্রগুপ্তের দিকে তাকিয়ে– ‘এই নিষ্পাপ শিশু কি করেছে চিত্রগুপ্ত?’

-‘আর কাকে নিষ্পাপ বলছেন প্রভু? মুখে যাবেন না! ওর কর্ম দেখেন! এক নারীকে যৌন হেনস্থা করে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে এই বালক।’

আশ্চর্য হইয়া চাহিলেন যমরাজ, বলিলেন- ‘বল কি গুপ্ত? এই বালকের এন্টেনায় এত শক্তি? একে যত্ন করে রেখো, এল.ই.ডি. টিভিতে আর কেবল্‌ লাইন বা ডিস লাগাবো না! এর এন্টেনা বসিয়ে দেব কেমন হবে?’

এই কথা শুনিয়া সকলেই হো হো হি হি করিয়া দন্তের উন্মুক্ত বিকাশ ঘটাইলেন।

তিনি সিংহাসন হইতে উঠিয়া দুই পা অগ্রসর হইয়া এবার জানতে চাইলেন – ‘তা! ছোঁড়া এত তাড়াতাড়ি এখানে কিভাবে? ফাঁসি টাসি হোল না কি?’

চিত্রগুপ্ত বিস্ময়ের সাথে কহিলেন –‘ফাঁসি..? প্রভু ধরা পড়ে বিচার চলতে চলতে এ ছেলের ‘বা..” মা…নে সব পেকে বুড়ো হয়ে যেত তবু শাস্তি হত না। পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে গাড়ির তলায় পিষে গিয়েছিল।’

-‘বেশ বেশ পিষে গেছে যখন স্টিলের গ্লাস বসিয়ে গোল গোল চাকতির মত কেটে ভেজে যারা নর মাংসের স্বাদ নেয় তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিও।’  ইহা বলিয়া তিনি আবার সিংহাসনে আসিয়া বসিলেন। মৃদু সুরে উচ্চারণ করিলেন- ‘শরীরটা ভালো লাগছে না! ধন্বন্তরিকে ডাকিলাম সেও আসতে বিলম্ব করছে। তা গুপ্ত আজ কত কি আছে?’

-‘প্রায় ২৫- ২৬ হাজার কেস আছে প্রভু।’

-‘বল কি ২৫ হাজার!’ চমকিয়া শিরে হাত রাখিয়া বলিলেন যমরাজ।

-‘স্যার তাই তো করি রোজ, রুটিন হয়ে গেছে। তাই সংখ্যা হয়তো মালুম হয় না।’

চিন্তার রূপরেখা যমরাজের মুখমণ্ডলে সৌর কিরণের ন্যায় উদিত হইল। কিছুক্ষণ ভাবে নিমগ্ন থাকিয়া নারদ মুনির কাছে জানতে চাহিলেন- ‘মুনিবর এতো মৃত্যুর কারণ কি আপনি তো সাংবাদিক আপনার কাছে তো একটা সার্বিক রিপোর্ট জানা যায়।’

-‘প্রভু ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে ছয় নম্বর, তারপরও মানুষ-জন খাইতে না পাইয়া মইরা  যায়, বেকারত্বের জন্য ছেলে-পুলে আত্মহত্যা করে, মহিলাগো ঘরে বাইরে দুই হিংসায় মরণ হয়, উন্নয়নের ঠ্যালায় রাস্তা চওড়া চকচকে হওয়া আর হেইতে বেপরওয়া গাড়ির দুর্ঘটনা, এছাড়া বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব মিলাইয়া এই সংখ্যা। হালফিলে আবার ফেসবুক আর হোয়াটস্‌ অ্যাপের মারফৎ ‘মব লিংচিং’ খুব ‘হট নিউজ।’

-‘মব লিংচিং’ সেটা কি জিনিস?

নারদ কহিল – ‘এতো বিস্তারে কওয়া যাবে না আগে বেতন বাড়ায়েন। আর হ্যাঁ মোবাইল নিয়া ন্যান হোয়াটস্‌ অ্যাপে খবর পাঠাইয়া দিমু, এতো মৌখিক সংবাদ আর করা যাবে না, ,এইগুলা ভাইরাল হয় না, খবর এমন দিমু যেন ভাইরাল হয় তাই সক্কলে মোবাইল ন্যান। এহন আমি যাই!’ ‘নারায়ণ নারায়ণ!’ বলিয়া সে বাহির হইয়া গেল।

ফদে কথার রেশ ধরিয়া বলিয়া উঠিল- ‘গণধোলাই স্যার গণধোলাই। আমিও বিনা কারণে এই ধোলাইয়ের শিকার।’

-‘কিসের গণধোলাই?’ যমরাজের প্রশ্ন।

-‘ঐ যে মব লিংচিং! গরু চোর, শিশু চোর, মোবাইল চোর, টাকা চোর, অন্যের বউ চোরকে গণধোলাই।’

যমরাজ চিত্রগুপ্তের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন –‘আচ্ছা গুপ্ত জম্মু কাশ্মীরে তো ‘মব লিংচিং’ শুনিনা ! সেখানে যে শত শত যুবক দেশ রক্ষাকারীদের পাথর দিয়ে একত্রে আঘাত করে। ওখানে দেখি বলে বিদ্রোহ, এ কেমন দ্বিচারিতা।’

চিত্রগুপ্ত খাতার পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন –‘প্রভু বিভাজনে, তোষণে আর মানবতা নাই!’ একটু থামিয়া আবার কহিলেন- ‘বড় কঠিন দিন আসছে, যেভাবে ৩৭ কোটি থেকে ১৩৩ কোটি হয়েছে তেমনি আমাদের এই ছোট্ট সংসারে জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। এরপর এখানে আর ঠাঁই দেওয়া যাবে না! স্বর্গ বা নরক তো পাঁচ দশটা নেই যে তাড়িয়ে দিলে রোহিঙ্গা-সিরিয়ানদের মত জল জঙ্গল পেরিয়ে অন্য দেশে ঢুকে যাবে। তারপর আবার ঢঙ্গী মানবতাবাদীরা যদি ঝাণ্ডা তোলে ধর্না দেয় এদের থাকতে দিতে হবে বলে তাহলেই হল! আমাদেরও গা বাঁচাতে হবে প্রভু।’

গভীর চিন্তা মগ্ন হইয়া যমরাজ কহিলেন-‘হুম জন্ম মৃত্যু কমাতে হবে, অমানুষ কমিয়ে মানুষ পাঠাতে হবে না হলে আমাদেরও অস্ত্বিত্বের সঙ্কট দেখা দেবে।’

ইতিমধ্যে ধন্বন্তরি আসিয়া উপস্থিত, বিচারালয় নিশ্চুপ গম্ভীর দেখিয়া ধীর পদে যমরাজের নিকট আসিয়া প্রশ্ন করিলেন- ‘প্রভু কি পীড়া আপনার?’

ধন্বন্তরিকে কাছে পাইয়া তিনি একটু চিন্তামগ্ন দশা হইতে উত্তরণ লইয়া সোজা হইয়া বসিতে গেলেন, উক্ত সময় নিম্নাঙ্গ হইতে বায়ু প্রবাহিত হইল। যাহাতে ধন্বন্তরি নাক দূষিত হইল তথাপি সন্মান রক্ষার্থে তিনি মুখ ফিরাইলেন না। শুধু জানিতে চাহিলেন- ‘সত্য বলবেন নয় বিপদ! প্রাতে কি সেবন করলেন?’

যমরাজ ধন্বন্তরির কানে গিয়া বলিলেন –‘কাউকে বলো না সকালে রান্নার মশলা কষা ভাগাড়ের পচা মাংস খেয়ে ফেলেছিলাম।’

Loading

4 Comments

  • Anonymous

    অপূর্ব একটি রম্য রচনা সাধুভাষার স্পর্শে মন মধ্যে পুলক জাগাইয়া তাহার সার্থকতা প্রতিপন্ন করিয়া দিয়াছে । তবে লেখাটি পড়িয়া ইহা অনুমেয় যে ইহা কবির সাধুভাষায় রচনার প্রথম প্রায়শ উত্তোরোতর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি ।

    • অমল

      হ্যাঁ বন্ধু এটা একটা প্রচেষ্টা, আগামীতে আরো ভালো করবার চেষ্টায় থাকবো, ধন্যবাদ।

Leave A Comment

You cannot copy content of this page