Site icon আলাপী মন

পেত্নীর আঁচড়

পেত্নীর আঁচড়
-রেহানা দেবনাথ

চাঁদনির আট বছরের মেয়ে সোনাই এর, পর একটি ছেলে হয়। শ্বশুর বাড়ির সবাই খুব খুশী কারণ ওদের বাড়িতে সবার মেয়ে এই প্রথম ছেলে হয়েছে। শাশুড়ি ও শ্বশুর মিলে ছেলের নাম রাখলো দীপ। সোনাইকে চাঁদনি, সৌমেন ও পরিবারের অন্য সবাই খুব ভালোবাসে। দীপ মাস ছয়েকের হবার পর থেকেই একটা বিপত্তি দেখা দিল! প্রতিদিন তার শরীরে অনেকটা লম্বা নখের আঁচড়ের দাগ দেখা গেল। বাড়ির সবাই খুব সাবধানে দীপকে কোলে নেয়। এতটা আঁচড় লাগার কোনো কারণও কেউ খুঁজে পেল না। তারপর থেকে বাচ্চাটির শরীর খারাপ হতে শুরু করলো। ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হলো না। প্রতিদিন হাতে, পায়ে, পেটে অথবা মুখে আঁচড়ের দাগ পড়তে থাকে।আত্মীয় স্বজনেরা প্রতিবেশীরা বলতে থাকে এই নিশ্চয় অশুভ আত্মার কাজ। সকলের পরামর্শে চাঁদনী ছেলেকে নিয়ে বাবা সদানন্দজীর কাছে গেলে, তিনি মন্ত্রশক্তির দ্বারা জানায় যে শাকচুন্নি পেত্নীর কান্ড। মোটা টাকার বিনিময়ে টোটকা, তাবিজ মন্ত্রপুত জল আরও কত কি দেয় কিন্তু তাতেও কিছু হয় না। পেত্নীর আঁচড়ের চিহ্ন বাড়তে থাকে। মন্দির, মসজিদ, গীর্জা যে যেখানে বলেছে বাড়ির লোকেরা সেখানে ছুটেছে তবুও পেত্নীর আঁচড় থেকে ছেলেকে রক্ষা করতে পারেনি। সব কিছু যখন ব্যর্থ হয়ে গেল তখন হঠাৎ একদিন চাঁদনি ঘুমন্ত ছেলের কাছে বসেছিল বাইরে একটা শব্দে সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, কিছুটা যাবার পর তার মনে কি হলো সে ছেলের কাছে ফিরে এলো। ঘরে ঢুকে দেখে পেত্নী তার ছেলের মুখে আঁচড় বসাচ্ছে। চাঁদনিকে দেখতে পেয়ে ছুটে পালায় পাশের ঘরে। চাঁদনি প্রথমে হতভম্ভ হয়ে গেলেও পরে নিজেকে সামলে পাশের ঘরে গিয়ে মেয়েকে শান্ত গলায় জিগ্যেস করে, সে কেন তার ভাইয়ের সঙ্গে এমন করছিল। তাতে সোনাই জানায় যে দীপ হবার আগে পরিবারের সকলে ওকে অনেক আদর করতো, ভালবাসতো কিন্তু দীপ হবার পর থেকেই ওকে নিয়ে মেতে থাকে ওকে কেউ কোলে নেয় না, আদর করে না, এমনকি মায়ের কাছেও থাকতে পারে না। সব কিছুর জন্য ও ভাইকে দোষী মনে করে শাস্তি দেয়।চাঁদনি বুঝতে পারে ছেলের শরীরের উপর আঁচড় দেখে তার কষ্ট সহজে বুঝতে পেরেছে কিন্তু তার মেয়ের মনের ভিতরে যে আঁচড় প্রতিনিয়ত সবাই মিলে কেটেছে তার কষ্ট কেউ বুঝতে পারে নি। তারপর থেকে সোনাইয়ের প্রতি আগের চেয়েও বেশি করে যত্ন শুরু করে আর তখন থেকে ছেলের শরীরে পেত্নীর আঁচড়ও আর পড়ে না।

Exit mobile version