ভূ-স্বর্গ 

ভূ-স্বর্গ
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাস

 

 

ভ্রমণ করতে কে না ভালোবাসে কিন্তু ভ্রমণ করাই মানে আনন্দ করা কোন মতেই যেন নিরানন্দ না আসে। সেই দিকটা খুবই খেয়াল রাখতে হবে। চলুন ঘুরে আসা যাক ভূ-স্বর্গ থেকে। ভূ-স্বর্গকে দু’টি ভাগে ভাগ করতে হবে। ১) কাশ্মীর ২) লে। দু’টি ভাগ দুই সময়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে দুই জায়গা ভ্রমণ করলে দু’টির মজা পাবেন না। কোন ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে যাবেন কখনোই নিজেরা যাবেন না। সঙ্গে ভোটার কার্ড ও আঁধার কার্ড ও কয়েক কপি জেরক্স নিতে ভুলবেন না। ATM কার্ড সঙ্গে রাখবেন ক্যাস টাকা না দিয়ে পারলে দেবেন না। ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নেবেন সঙ্গে।  “Diamox 250mg” দিনে দুবার খাবার পর খাবেন তিন দিন পাহাড়ে ঢোকার ঠিক আগে। এই ঔষধটি দেহে অক্সিজেন নিতে সাহায্য করে।” —-কথা গুলি বলেছেন লে’র সরকারি হসপিটালের ডাক্তার।
কাশ্মীর সাধারনতঃ বরফের সময় যেতে হয় তা হলে বেশ মজা পাবেন। আগষ্ট নভেম্বর থেকে মার্চ এপ্রিল। তবে সারা বছরই যাওয়া যায়। জম্মু ষ্টেশনে নেমে ছোট ছোট বাস আছে তাতে করে শ্রীনগর (298 Km)। আর উচ্চতা 1530 মিটার সমুদ্র তল থেকে। শ্রীনগর শহর ঝিলম নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর কিনারাতে ব্যাট তৈরির কারখানা দেখতে পাবেন। শ্রীনগরে আট নয় দিন থাকলে প্রথমে ডাল লেকে ঘুরে নেবেন। এখানে খুবই বার্গেনীং হয়। শিকারায়  ছয় জন হলে 600 বা 300 টাকায় ফিট হয়ে যাবে। কাশ্মিরী মেয়ে বৌ ও বর সেজে ছবি তুলতে পারবেন। কেনা কাটায় সাবধান থাকবেন। হাউসবোটে রাত কাটাতে পারেন তবে অনেক টাকা খরচ হবে। এই ডাললেকে অনেক ছবির সুটিং হয়েছে।
লাদাখ শব্দের অর্থ গিরিবর্ত্মের দেশ। এটি একটি জেলা। লাদাখের সদর শহর লে।  এর উচ্চতা 3505 মিটার। শ্রীনগর থেকে লের দূরত্ব 434 কিলোমিটার। মাঝে কারগিলে এক রাত থাকতে হয়। 900 বছরের প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তি যাবার সময় পথে দেখে নেবেন। লে থেকে ণুব্রা উপত্যকা যাবেন এটা হিমালয়ের মরুভূমি বলে। এখানে দুই কুঁজ উট দেখতে পাবেন। এক রাত তাঁবুতে থাকতে হয়।
পরের দিন চলে যান প্যাংগং লেকে।”লে” শহর থেকে 222 কিলোমিটার দূরে। এখানে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ গাড়ি চলার রাস্তা চাংলা পাস পাবেন এর উচ্চতা 17350 ফুট। 14000 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই সরোবরের দৈর্ঘ্য 130 কিলোমিটার যার 40 কিলোমিটার ভারতের বাকি 90 কিলোমিটার চীন দখল করে নিয়েছে 1962 সালের যুদ্ধের পর থেকে। এই সরোবরটি এশিয়ার বৃহত্তম নোনা জলের লেক। এখানে রংয়ের বৈচিত্র খুবই সুন্দর জল সাতটি রংয়ের হয়। ব্রাক্ষ্মনী হাঁস ও সিগালের দল দেখতে পাবেন। এক রাত অবশ্যই এখানে থাকবেন তাঁবুতে।
পরের দিন চলে যান সো-মোরিরি লেক লে শহর থেকে 225 কিলোমিটার দূরে সিন্ধু নদ এর পাস দিয়ে চলে যাবেন। পথে একটু দাঁড়িয়ে মারমট (খরগোসের মতো দেখতে) দেখে নিন । এই সরোবরের জলের রং নীল। হাঁস পাখি দেখতে পাবেন। এখানেও এক রাত তাঁবুতে থাকতে হয়। মনে রাখবেন জুলাই, আগষ্টে বর্ষা হলেও লাদাখের আবহাওয়া খুবই ভালো থাকে।
শ্রীনগর থেকে লে যাবার পথে আর্যগ্রাম দেখে নিতে পারেন খুব সহজেই। আর্য গ্রাম প্রধানত পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ১) দা ২) বিমা ৩) হানু ৪) দারচিক ও ৫) গারকুন। তবে মনে রাখবেন কোন মতেই দারচিক ও গারকুনে যাবার অনুমতি নেই। প্রথম তিনটি গ্রাম ঘুরে দেখলে প্রান আনন্দে ভরে যাবে। এরা “দর্দ” জাতি বহু শতাব্দী পার হয়ে গেলেও এরা কিন্তু একদম পাল্টায়নি। নিজেদের মধ্যেই বিবাহ হয়। তবে মেয়েরা একটু অন্য রকম। বিদেশীদের বেশি ভালোবাসে তবে তা গোপনে। মনে রাখবেন ওখানকার খাবার না খাওয়াই ভালো যে সব টুরিষ্টরা নিজেরা রান্না করে খাওয়ায় তাদের সঙ্গে যাবেন। এক মাত্র পোষ্ট-পেইড মোবাইল কাজ করে। স্থানীয় প্রিপেইড সিম তুলে নিতে পারেন। নেট ভালো কাজ করে না।  লে থেকে মানালী তারপর  চণ্ডীগর হয়ে ফিরে আসুন ।

Loading

Leave A Comment