রক্তের স্বাদ
-রাখী চক্রবর্তী
কথার দাদুর যে কটা দাঁত আছে তা প্রায় সব কটাই নড়বড়ে।তা বয়স তো আর কম হলো না দাদুর। 90 ছুঁই ছুঁই। কথার মা আজ সকালে দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল দাদুকে। যে কটা দাঁত আছে সবগুলো তুলে দুপাটি দাঁত বাধিয়ে দিতে বলল ডাক্তার বাবুকে। ডাক্তার বাবুর কম্পাউন্ডার কথার মা’কে আলাদা ভাবে বলল, এখানে থেকে দাঁতের পাটি কিনতে অনেক টাকা লাগবে। যদি আমার থেকে কেনেন তাহলে কম সম করে দু’পাটি ভাল দাঁতের ব্যাবস্থা করে দেবো। কথাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না তাই ওর মা ভাবলো একটু টাকা যদি বাঁচে তাহলে বেশ ভালই হবে। কম্পাউন্ডার দাদুর দাঁতের মাপ নিয়ে বেশ ভালো দু’পাটি দাঁত দাদুর মুখে লাগিয়ে দিল। কথার মা দাদুকে নিয়ে বাড়ি চলে এল। নতুন দাঁত লাগিয়ে দাদুও বেজায় খুশি। রাত্রি বেলায় খাবার পর দাদু দাঁত জোড়া খুলে একটা বাটিতে জল ঢেলে তার মধ্যে রেখে দিল। রাত তখন দুটো, দাদুর ঘর থেকে গোঁ গোঁ শব্দ শুনতে পেয়ে কথা ও তার মা দাদুর ঘরে গেল। কিন্তু দাদুর তো সাড়াশব্দ কিছুই নেই।নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে। তাহলে কিসের শব্দ ছিল ওটা।কথার মা দাদুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় দাঁতের বাটিটার দিকে চোখ গেল। ও মা ,,,দাঁতের বাটির জলটা পুরো লাল, যেন কেউ আলতা ঢেলে দিয়েছে। কথাও অবাক হয়ে গেল এ দৃশ্য দেখে। যাইহোক কথার মা বাটির জল যেই ফেলতে যাবে ঠিক তখুনি দাদু লাফ মেরে বিছানা থেকে নেমে এক নিঃশ্বাসে পুরো লাল জলটা খেয়ে নিল সাথে দাঁতের পাটিটাও। ভয়েতে মা মেয়ে বাবা গো মাগো বলে চিৎকার করে নিজেদের ঘরে এসে দরজা বন্ধো করে দিল। কথার বাবা তো কিছুই বুঝতে পারছে না। তোমরা তো বাবার ঘরে গেছিলে তাহলে ভয় পেলে কিসে। কথা পুরো ঘটনাটা ওর বাবাকে বলল। ওর বাবা ও বেশ চিন্তাতে পড়ে গেল।ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেল।
সকাল বেলায় ওরা তিনজনই একসাথে দাদুর ঘরে গেল। দাদু দাঁতটা ঘষে ঘষে পরিষ্কার করছে। ওদের দেখতে পেয়ে বলল, বৌমা খুব উপকার করলে মা।দাঁতের জন্য কিছুই খেতে পারছিলাম না। কাল রাত থেকে বেশ ভালো ভালো খাবার খাচ্ছি।
কথার মা বলল, “বাবা, রাতে তো আপনি চিঁড়ে দুধ খেলেন। ভালো খাবার আর দিতে পারলাম কৈ।”
কথা ভাবছে ,দাদু এ সব কি বলছে। কাল রাতের কথা কি দাদুকে বলা ঠিক হবে। না থাক, এই ভেবে কথা ওর মা বাবাকে নিয়ে দাদুর ঘর থেকে চলে গেল। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে দাদু শুয়ে আছে। কথার কিন্তু খটকা লাগছে। কাল রাতের ঘটনা কিছুতেই ও ভুলতে পারছে না। সন্ধ্যা বেলায় দাদুকে চা দিতে গিয়ে কথা চমকে গেল দাঁতের একটা পাটি পুরো লাল বারান্দাতে পড়ে আছে। এটা কে রাখল? দাদু,,দাদু বলে যেই দাদুর ঘরে ঢুকেছে কথা ওমনি দাদু নিজের মুখটা পা থেকে সরিয়ে নিল। কি রক্ত দাদুর পায়ে। ও দাদু কে কামড়ালো তোমাকে? দাঁড়াও ওষুধ আনছি। মা, মা, বলতে বলতে কথা বেরিয়ে গেল দাদুর ঘর থেকে। কিন্তু দাঁতের পাটিটা আবার কোথায় গেল নিমেষের মধ্যে।কথার মাও বাবা সব শুনে খুব চিন্তায় পড়ে গেল। রাত্রি বেলায় ওদের চোখে ঘুম নেই। ঠিক রাত দুটোর সময় চুপিচুপি ওরা তিনজন দাদুর ঘরের জানলাতে উঁকি মারছে দেখছে দাদু কি করছে। দাদু একটা দাঁতের পাটি হাতে নিয়ে নিজের ঘাড়ে কোপ মারছে আর বলছে, আহ কি ,,,স্বাদ! কি রক্ত,,,, । এই দেখে কথার মা ওর বাবাকে বলল, ঐ কম্পাউন্ডার এর কাছে কাল আমরা যাব। কি দাঁত দিয়েছে। সকাল বেলায় দাদুকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গেল সদর দরজার সামনে। সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত রক্তে মাখা। শুধু গোঁ গোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে। দাদুকে ওরা ঘরে নিয়ে এসে শোয়ালো। পাশের বাড়ি কাকিমা কাকুকে ডেকে সব বলল কথার মা। সেই কম্পাউন্ডার এর কাছে কথার বাবা ও পাড়ার ঐ কাকু গেল। কম্পাউন্ডার তো খুব ফ্যাসাদে পরলো। কিছু আর বলতেই চাইছে না। এদিকে কথার বাবাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। শেষমেশ ঝাঁপি থেকে বেড়াল বের হলো। কম্পাউন্ডার যা বলল,তাতে কথার বাবা অবাক হয়ে গেল।
“শ্মশানের ডোম এর সাথে আমার একটা সাইড বিজনেস আছে। অনেক মরারই দাঁত বাঁধানো থাকে।সেগুলো ভালো করে পরিষ্কার করে ডোম আমার কাছে বিক্রি করে আমি সেগুলো কাস্টমারদের দিই। কম পয়সায়। এই দাঁত বাঁধানোটা ছিল যাঁর তিনি খুন হয়েছিলেন। আমি এটা বুঝতে পারিনি যে এত কিছু হবে”।
কথার বাবা সব শুনে বাড়ি চলে এল।কিন্তু কথার দাদুর শরীর খুব খারাপ। হসপিটালে ভর্তি আছে এখন। পুরো শরীর ব্যান্ডেজে মোড়ানো। দাদুর দাঁত বাঁধানোগুলোকে কথার মা গঙ্গার জলে ফেলে দিয়ে বলল, যার দাঁত তার আত্মা যেন শান্তি পায়।