মহালয়ার ভোরে
-কৃষ্ণ বর্মন
আজ মহালয়ার ভোরে
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের দৃপ্ত স্ত্রোত পাঠ ও মন্ত্র উচ্চারণ শুনেছি আমি।
শুনেছি “বাজলো তোমার আলোর বেণু”।
জেগেছে দুর্গা জেগেছে শক্তি।
তর্পনে আর অর্পনে জেগেছে ঘুমিয়ে থাকা শুভ শক্তি।
আজ ভোরেই তো হয়েছে
সুরের হাতে অসুরের বিনাশ।
অশুভ শক্তির নিধনে শুভ শক্তি পেয়েছে অমরত্ব।
সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্গতির অনিবার্য করালগ্রাস থেকে
মানব মুক্তির মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে
প্রভাতী মহালয়ায়, গঙ্গার ঘাটে, মন্দিরে।
শান্তি,শক্তি ও সাম্যের অমোঘ বাণী শুনিয়েছে
মুখরিত আকাশ বাতাস।
আজই আমি শুনেছি
সদ্য বিবাহিতাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার খবর।
আজই বাড়ি ফেরার সুনসান পথে পা বাড়িয়ে
বাড়ি ফেরেনি সুজাতা।
হয়তো কাল সকালে হদিশ মিলবে
ট্রেন লাইনের ঝোপে কিংবা খালে।
আজই ভোরে চুপি চুপি
তোয়াল দিয়ে মুড়ে প্লাস্টিকের প্যাকেটে
ডাস্টবিনে ফেলে রেখে গেছে
সদ্য অঙ্কুরিত উমাকে।
আজকের দিনেও মেয়েটি গলায় বক্সের সুরে
গান গাইতে গাইতে হাত পেতেছে নিত্যযাত্রীদের কাছে।
বৃদ্ধাশ্রমে দরজার দিকে পথ চেয়ে বসে থাকা
অপাংক্তেয় বুড়িটার অপেক্ষা শেষ হয়নি আজও।
আজ সকালেই গোপনে কন্যাভ্রুণের গর্ভপাত
করিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়েছে হানিফাকে।
ঋতুকালের মাসিক দিনে মনের ভুলে
ঠাকুর ঘরে চলে গিয়েছিল বলে
সারা দুপুর বাড়ির উঠোনে কাঠফাটা রোদ্দুরে
এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে সীমন্তিনীকে।
আজ ভোরেই অসুরের বিনাশ হয়েছে।
এবারও ঘর আলো করে বাপের বাড়ি আসছে উমা।