কাননের উৎসব
-রাখী চক্রবর্তী
চারিদিকে আলোর রোশনাই। পাড়ায় পাড়ায় উৎসবের মেজাজ। হয়তো বা কারোর মনে উৎসবের আনন্দধারা বয় আবার বাইরে শুধু লোক দেখানোর জন্য অনেকে উৎসবে মাততে চায়। অন্তরটা তাদের ফাঁকাই থাকে।
সকাল থেকে কানন মন খারাপ করে বসে আছে।দখিনা বাতাস সকাল বেলায় চুপ করে কাননের কানে বলে গেল, “তাড়াতাড়ি চল মণ্ডপে, মা এলো বলে। চল, চল”
আজ পঞ্চমী। মুখ গোমড়া করে বসে আছে আমাদের কানন। সব আনন্দ যেন মাটিতেই শেষ হয়ে গেল কাননের। কথায় কথায় মিথ্যে বলে বোলে খুব বকাবকি করেছে ওর মা,বাবা। ব্যস,পুজোর আনন্দ মাটি হয়ে গেল। এমনিতেই মিথ্যের আশ্রয় নেয় কানন এটা বাড়ির সবাই জানে। ছটফটে মেয়েটাকে কে যে মিথ্যা বলা শেখালো তাই নিয়ে কাননের মা যথেষ্ট চিন্তা করে। টাকা পয়সার অভাব নেই। তবুও মার ব্যাগ, বাবার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি হয়। বাড়ির সবাই জানে এটা কাননের কাজ। কিন্তু স্বীকার কিছুতেই করে না সে। ক্লাস সেভেন এ পড়ে কানন। এর মধ্যেই এত চুরি বিদ্যা। এবারে অবশ্য টাকার পরিমাণটা খুব বেশি। তাই এততো বকা খেতে হচ্ছে কাননকে। কাননের চোখে অনুশোচনার জল না দেখতে পেয়ে ওর মা তো অস্থির। কথাটা স্বীকার করলেই মিটে যায়। কিন্তু এ তো হবার না। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। কাননের মা এবার বলল, “অনেক হয়েছে, এবার মণ্ডপে চলো।”
কাননের রাগ ভাঙল বুঝি। মার সাথে কানন পাড়ার মণ্ডপে গেল। মা দুগ্গাকে দেখতে।
পুটির মা দুর থেকে কাননকে দেখতে পেয়ে কানন, কানন বলে চিৎকার করে ডাকছে। কাননের মা অসন্তুষ্ট হয়ে বলল,”যততো সব ছোটলোকদের সাথে তোমার ভাব।বাড়ি চলো মজা দেখাব”
পুটির মা হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলল, “পুটি এখন সুস্থ আছে কানন মা। তুমিই হলে আমার কাছে আসল দুর্গা।প্রণাম নাও মা।”
“কি যাতা কথা বলছ” কাননের মা বেশ রেগেই বলল।
যাতা কথা না বৌদি ,কাননের জন্য পুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলো। তা না হলে কি যে হতো।
“কি ,,,কি করেছে কানন,,,, বলো আমাকে?”
পুটির মা বলল, “কানন টাকাটা সময় মতো দিলো বলেই তো পুটির চিকিৎসাটা হল। নয় তো অজানা জ্বরে বিনা চিকিৎসাতে পুটি মারাই যেত।
সব শুনে কানন বলল ,”পিসি আমি তো টাকা দিই নি তোমাকে। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
“গত পরশু দিন রাত্রি বেলায় তুমি আমার হাতে দুই হাজার টাকা দিয়েছিল পুটির চিকিৎসার জন্য। আর বললে, “পুটিকে ভাল ডাক্তারা দেখাও।”
কানন বলল,”না পিসি আমি দিই নি..”
কাননের মা কাননের হাত টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেল। কাননের বাবা সব কথা শুনে বুঝতে পারল কি কাণ্ডটাই না করেছে কানন।
আজ ষষ্ঠী,
সুবলা সকাল সকাল কাজ করতে এসেছে কাননের বাড়িতে। কাজ শেষ করে যাবার সময় সুবলা কাননের বাবাকে বলল, “দাদা দুপুর বেলায় আপনি অবশ্যই মন্ডল পাড়াতে যাবেন। আপনি গোপন রাখতে বলেছিলেন কিন্তু আপনার যাওয়াটাই খুব দরকার।কারণ আমরা চাই বস্ত্রদানটা আপনার হাত দিয়েই হোক”
কাননের বাবা অবাক হয়ে, “কি বলছো এ সব?
কেন দাদা,,,আপনি তো দশ হাজার টাকা কাননের হাত দিয়ে পাঠালেন আর বলেছেন যে ব্যাপারটা গোপন রাখতে।যেন আপনার নামটা সামনে না আসে।”
কাননের মা তো ফুঁসছে।
কানন,,, এই কানন,,,এই চিৎকারে না আবার শিবের ধ্যান ভেঙে যায়
“কি বলছো মা?” যেন কানন কিছুটি জানে না
“তুমি সুবলাকে টাকা দিয়েছো?”
“না তো মা।”
“আবার মিথ্যে বলছো?”
“না মা আমি দিই নি”
সুবলা বলল,”ও কাননদি তুমি তো দিলে গো টাকাগুলো”আর বললে, বাবা পাঠিয়েছে বস্ত্রদানের জন্য।”
কাননের শিশুসুলভ জবাব, “মা দুগ্গা আমার রূপ ধরে গেছে গরীবদের জামাকাপড় দেবে বলে।” এই বলে এক ছুটে কানন মণ্ডপে এসে জোড় হাত করে মা দুগ্গা র সামনে দাঁড়িয়ে বলছে ,”মা আমি মিথ্যে কথা বলেছি আমাকে ক্ষমা করে দিও মা।ৎএর পর আরো মিথ্যা কথা বলবো।”
মা দুগ্গার চোখ দুটো যেন ছল ছল করছে আর মনে হয় মা বলছে ,”উৎসবের আনন্দ থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়,,,,,, দেখিস কানন”