বানান বিভ্রাট

বানান বিভ্রাট
-কুমার প্রণবেশ

 

 

যখন চোখ খুললাম, বুঝলাম মারা গেছি। সবাই কাঁদছে। বারান্দার মাঝামাঝি আমায় হালকা শুয়ে রাখা হয়েছে। সবাই মাথা চাপড়াচ্ছে। বিশু বলছে, “ভাই দু’শো টাকার পোঙ্গা মারা গেলো। কাল বললাম আমি চাট আনি ও মাল আনুক, দেখলি তো এবার।” পল্টুও চুপ করে শুনছে চোখে জল। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছি “এরা নাকি বন্ধু।” যাই হোক আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো নিমতলা, সেখানেও আজ ভীড়, আমার নাম্বার আসতে আসতে অনেক দেরী হলো, তাও দের আয়ে দুরুস্ত আয়ে, সময় এলো আমার বারবিকিউ হওয়ার। আর গল্প শুরু এখন থেকে। চেক ইন করে কেবিন লাগেজ নিয়ে বসলাম বল হরি এয়ারলাইন্সের উইন্ডো সিটে, ডেইলি রাত বারোটায় এটা ছাড়ে সবাইকে নিয়ে ঠিক রাত একটায় পৌঁছে যায় গন্তব্যে। দেখলাম হুইল চেয়ারে মদন কাকু উঠছে ফ্লাইটে,”আরে কাকা, তুমি তো আগের বছর টিকিট কেটেছিলে, তাহলে …”

-আমার গান্ডু ছেলে গয়া নিয়ে পিন্ড দেবে ভেবে শালা অফিস থেকে ছুটিই পেলো না। কালকে গিয়ে ভাসালো, সেখান থেকে ফ্লাইটে উঠতে গিয়ে বলছে “আপনার তো কলকাতা”, আবার ওরা মাইগ্রেট করিয়ে এখানে পাঠালো। বসতে দে।

ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে নিয়ে আসা হলো একটা বড় হল ঘরে, লেখা জে.এম.সি.। বুঝলাম আমাদের পূর্ত ভবনের মতন। আমার ডাক এলো,

-কি ভাবে??
-ফ্লাইটে।
-আহা মরলে কি ভাবে।
-কষ্টের গল্প।
-শোনাতে হবে না, কি করে হলো খালি বলো।
-প্যান্টের চেন আটকে।
– এ বাওয়া। এবার তাহলে এই লাইনে কেন? পাশেরটায় যাও।

-আরে পুরোটা শুনুন।
-কি??
-প্যান্টটা মেলা ছিলো, খাওয়ার টেবিলের ওপরে, বৃষ্টির জন্যে, বাইরে মেলি নি। আমার চেন এমনি লুস রাখতাম, কিন্তু মুড়িঘন্টর মধ্যে কখন যে খুলে পরেছে, বুঝি নি, গিলে নিয়েছিলাম, ওটা আর নিঃশ্বাস একসাথে আটকালো। আচ্ছা এটা একটা বেনিফিট অফ ডাউট দিয়ে ফেরানো যায় না আমায়।
-হুঁ, রাতে আমি বাথরুম করতে গিয়ে মশারির দড়ি গলায় আটকে মারা যাই, কেউ শালা আমার কথা ভেবেছিল তখন।।যাই হোক হবি কি??
-মানে, ভূত ছাড়া আর কি অপশন আছে??
-আরে তোমার হবি কি মানে কি ভালোবাসো?
-গল্প লিখতে।
-কোথায় লেখো??
-ফেসবুকে।
-ওখানে লিখে লেখক??আমি মোবাইলে ক্রিকেট খেলতাম তাহলে আমিও শচীন।
-আরে বাবা প্রচুর লোকে লেখা পড়ে। কত লাইকস আর কমেন্টস।
-পড়ে।তা কিসের গল্প লেখো??
-স্যার প্রেমের সাথে টুইস্ট থাকে।
-যেমন??
-ধরুন একটা ছেলে রোজ জানলা দিয়ে একটা মেয়েকে দেখে, গল্প এগোচ্ছে এগোচ্ছে, হঠাৎ সামনে আরেকটা বাড়ি হয়ে যায়। তারপর..
-তারপর?
-এবার নতুন ফ্ল্যাটের জানলায় আরেকটি মেয়ে আসে, ছেলেটা এবার তাকে দেখে, রোজ দেখে, তারপর
-তারপর?
-ছেলেটার রুম চেঞ্জ হয়ে যায়, বাস্তু দোষের জন্যে ওর মা ওখানে থাকা শুরু করে, তারপর,
-তারপর?
-এখানেই শেষ করে দিই, ছোট গল্প মানে তিনটে প্রেম একসাথে দেখাই, শেষটা পাঠক ভেবে নেবে।
-তোমার টিকিট আর.এ.সি. ছিলো নরকের জন্যে, আমি কনফার্ম করছি, তাড়াতাড়ি যাও।
-কাকা কাকা প্লিজ একটা চান্স, একটা গল্প লিখতে দাও, বাজে হলে..
-আচ্ছা বানান ভুল হলে কিন্তু নরক, রাজি??
-বেশ।

লিখে জমা দিলাম,

“দিপু আর বিসু দুই বনধু, একসাথে বর হয়েচে। দিপুর বাবা সভাবে খুব বালো, বিসুর বাবা আবার রাগছটা, কথায় কথায় রেগে জায়, কিন্তূ দিপু আর বিসু একদম আলাদা, তারা জেমন নর্ম তেমন ভদরো, দুজনেই একসাথে একটা স্কূল এর থেকে পাশ করে এখন চাকরী করছে। দুজনেরই বিয়ের যন্য মেয়ে দেখা হয়, দুজনের বিয়েও হয়, এবার আর তারা একা নয় তাদের দোষর যোটে, তারা এবার বীজনেশ সুরু করে, এবং দুই মহিলা হয় তাদের বীজনেসের স্লিপিং পার্টনার। শালটা ২০০৯ রিসেশন হিট করেছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে আর টাকা ধাঁর দেওয়া হচ্ছে না, ডুবে জেতে থাকে তাদের ব্যাবসা, চার যনেই আর কিছু না বুঝতে পেরে মানে কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে ছাদে যায় একসাথে ঝাপ দেবে বলে।”

এই অবধি পড়েই আমার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারা হয় স্ক্রীপ্ট টা, বলা হয়, “এটা গল্প? যা ইচ্ছে লেখা, যাচ্ছেতাই, তার ওপর চারজনকে একসাথে মারা হচ্ছে, সমাজের প্রতি…”

এক সেকেন্ড, লাস্টের টুকু পড়ুন,

” হটাৎ বিসুর ফোনে ফোন আসে যে এশ বি আই থেকে ওদের লন স্যাঙ্কসন হয়ে জায়।” স্যার বললাম না হ্যাপি এন্ডিং আমার গল্পে টুইস্টটাই আসল স্যার।

-কিন্তু এটার মানে কি দাঁড়ালো,

একটা সুযোগ দিন, দেখুন এতো বানান ভুল তাও লোকে পড়ছে আর হাসছে, প্লিজ একটা সুযোগ। বানান ভুল করি ঠিকই কিন্তু গল্প ভালো বলি, লোকে ঠিক পড়বে। একটা স্যার একটা। আরেকটা শোনাবো??

এই মালটাকে স্বর্গে পাঠা, এখানে রাখা যাচ্ছে না।।

Loading

One thought on “বানান বিভ্রাট

Leave A Comment