বিসর্জন
-সঞ্জিত মণ্ডল
শোভনা বাড়ির বড় বউ। যেমন স্নেহময়ী তেমনই সুন্দরী, মুখশ্রী যেন সত্যিকার দেবী প্রতিমার মতন। বছর দশেক আগে পাবনার জমিদার সোমেশ্বর চৌধুরীর সাথে বিয়ের পর সংসারের সর্বময় কর্তৃত্ব তারই হাতে। বিশাল একান্নবর্তী পরিবারে শোভনাই রাণী। শোভনা এখনো সন্তানহীনা। এবার জমিদার বাড়ির পুজো একশ বছরে পড়বে। শহর থেকে মান্যগণ্য আর সাহেবসুবো অতিথিদের আমন্ত্রণ করা হবে। তাই বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী রুদ্রমঙ্গলকে আনা হয়েছে। শিল্পীকে যেমন দেখতে তেমনি তার সুন্দর স্বাস্থ্য, তাকিয়েদেখার মতো। পুজোর তিন মাস আগে এসে সে ঠাকুর দালানে তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। অপূর্ব তার কাজ, সবাই দিনে একবার হলেও উঁকি দিয়ে যায়, বড় বউও বাদ থাকেনা। এসে গেল সেই পূণ্য লগন, বোধনের দিনে হলো প্রতিমার আবরণ উন্মোচন। সবাই অবাক হলো, এতো জীবন্ত মমতায় উদ্ভাসিত প্রতিমার আনন ঠিক যেন বড়ো বউ শোভনার মুখের মতন। ক্রুদ্ধ জমিদার ঈশারায় ডেকে নেয় পালোয়ান বদনকে। মন্ত্রণাঘরে চলে নিভৃত কথন।রুদ্রমঙ্গলের গুম ঘরে হারিয়ে যাওয়ার কথা কাকপক্ষীতে টের না পেলেও শোভনার অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে, সে জানে তার গর্ভে মাস দুই হল সন্তান এসেছে। মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় সে। পরদিন শোভনার ঠাকুরঝি সুমনা ভোরে নাইতে গেছিল খিড়কি পুকুরের স্নানের ঘাটে। নাওয়া হলো না, দৌড়ে এসে চীৎকার করে সবাইকে ডেকে জানালো ওগো, বড় বউদি আর নেইগো, দেখে এলুম খিড়কি পুকুরের জলে তার দেহ ভাসছে, একি করলে বউদি, বোধনেই যে তোমার বিসর্জন হয়ে গেলো।