অক্ষরের আলপনা
-অনুশ্রী দাস
ছোট্ট রুমি যখন আমার কোল আলো করে এলো… সেই আলো সবার চোখে ছিল অন্ধকারের অমাবস্যা.. সবার মুখে কিছুটা বিরক্ত আর হতাশার কালো ছায়ায় মেয়েটাকে বুকে টেনে কান্না-হাসির দোটানায় মনে মনে বলেছিলাম ‘লক্ষ্মী এসেছে আমার ঘরে আমার আর চিন্তা কি..!?’
রুমির বাবার মিলের সামান্য আয়ে আমাদের সংসার চলতো কোনরকমে, নিজের না পাওয়া ইচ্ছেগুলোকে স্থির করে নিয়েছিলাম রুমির চোখেই দেখবো, আমার অচেনা অক্ষর জ্ঞানের জগতে রুমিকে বড় করেছি একটু করে.. কোনো শখ চর্চার ক্লাসে আমি রুমিকে পাঠাতে পারিনি কোনোদিন.. কিন্তু ও যে নরম গলা নিয়ে এসেছিল, সেই সুরে আমাদের ঘর ভরে থাকত… আমার চোখে জল আসত আনন্দে, পুজোর সময় পাড়ার স্টেজে ওর গলার গানে মুগ্ধ হয়ে যখন সবাইকে হাততালি দিতে দেখতাম…
আমার জ্ঞাতি জা,ননদদের দুধ ভাতে বেঁচে থাকা ছেলেদের চেয়ে রুমি যখন সাদা ডাল ভাত খেয়েও ওদের পেছনে রেখে সামনে এগিয়েছে তখন হিংসায় ওরা শুধু কন্যা দায়ের অর্থাভাবকে বড় করে দেখিয়ে রুমিকে আটকাতে চেয়েছে সমাজের বেড়ায়…
আমাদের বাড়ন্ত সংসারের হাল, আমাদের পাশাপাশি রুমিও ধরেছিল ছোট্ট হাতে… ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের অ আ ক খ পড়িয়ে নিজের দরকারটা নিজেই মিটিয়েছে অনেক ছোট থেকেই…
এরকম হাজারও কাহিনী আছে ওর দু’চার পয়সার সৎ সংগ্রামের..
আজ ছোট্ট রুমি অনেক বড় সরকারী অফিসার,অনেক বড় মানুষরাও সেলাম ঠোকে ওকে… আমাদের জামাই ও বড় অফিসে কাজ করে.. আর আমি আর রুমির বাবা এখন আর টালির ঘরে থাকি না…. আমাদের নিজেদের ফ্ল্যাট আজ শহরের বুকে…
– শুভ জন্মদিন মা… তোমার জন্য দেখ কি এনেছি..
কাগজের ভাঁজ খুলে দেখি ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’..
আমার জীবনের সব আশা মিটে গেছে, আমাকে প্রয়োজনের অনেক বেশি সুখ দিয়েছে রুমি.. কিন্তু আমার অনেক অনেক বই পড়তে পারার সুপ্ত স্বপ্নে , সোনার কাঠি ছুঁইয়ে অক্ষরের আলপনায় রুমি আমার জীবন আনন্দে সাজিয়ে দিয়েছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওনা …
দূর আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ জ্বল জ্বল করছে,চারিদিকে শাঁখের আওয়াজে কোজাগরীর আরাধনা… শিউলির হালকা গন্ধে তখন যেন আমি, আমার রক্ত মাংসের লক্ষ্মীকে ছুঁয়ে দেখছি…
Darun.
darun