মায়ের মন
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়
বান্টি ফোন ধরেই বললো–বাবাই,আমরা পুজোয় কলকাতা যাচ্ছি…তুমি যাবে তো?
—না,রে সোনা,ছুটি নেই… পরেরবার ঠিক যাবো।
—আমি আর দুষ্টুমি করবো না।তুমি তাহলে তাড়াতাড়ি আসবে তো??
—তোর দুষ্টুমি আমার ভালোই লাগে সোনা। কাজের খুব চাপ।এরা ছাড়লেই দৌড়ে চলে যাব তোর কাছে।
পাশের ঘর থেকে রিয়া শুনছে…বান্টি তার বাবাই-এর সাথে কত্ত গল্প,আবদার,খুনসুটিতে মেতেছে।আর্য রোজ ভিডিও কল কোরে ছেলের সাথে একঘন্টা বকবক করবেই।প্রায় একবছর হয়ে গেলো ও বদলী নিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লীতে চলে গেছে।
কেমন আছে?কি করছে?কি খাচ্ছে?আমার কথা ভাবে?
দূর যা পারে করুক।আমার থেকে এত্ত ভালোবাসা নিয়ে এখন তা অন্যকে বিলোচ্ছে…আর এই আর্যই ওকে একদিন না দেখে থাকতেই পারতো না…রিয়ার দু’চোখ জলে ভরে উঠলো।
ঠাকুরদালানে সবাই বসে… আড্ডা,গান,গল্প,মজা,হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে।সবাই এসেছে…শুধু ছোটজামাই আর্য আসেনি বলে নীলাদেবীর মনটা খারাপ…আর্য একাই হুল্লোড়ে বাড়ি মাতিয়ে রাখে ।
বান্টিকে বললেন—কি’রে বাবাকে আনলি না?
—বাবা তো দিল্লীতে।
—-কবে গেছে?
—ওই যে বড়দিনে সান্তাই তো বাবার হাত দিয়ে টেডিবিয়ারটা পাঠালো…ওটাকে জড়িয়েই তো আমি রোজ ঘুমোই।
নীলাদেবী মনে মনে ভাবলেন—দশমাস!! কই আর্য বা রিয়া তো তাকে একথা জানায়নি।মনে একটু খটকা লাগলো।
ঘুমোবার আগে রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন—জানিস,সংসারে অনেক কুকথা, মন্দ ব্যবহার,অভাব অভিযোগ সামলে তোদের বড় করেছি।মানিয়ে নিয়েছি ভালোমন্দের সাথে,সংসারকে আঁকড়ে থেকেছি…ছেড়ে যাইনি কখনো।সংসারের ঝড়ঝাপটা সামলেও ভালো থাকার চেষ্টা করেছি শুধু তোদের হাসিমুখগুলো দেখবো বলেই।আর ভালোবাসলে সব পারা যায় রে।
—-তুমিই আমার দুগ্গামা…তুমি সব বোঝো… তাইতো তোমার কাছে এলে বড় শান্তি পাই মা।
পুজো কাটলো।আজ দশমী।”মা” এর বিদায়। ‘দুগ্গামা” সবাইকে ভালো রেখো সারাটাবছর।
রাতে আর্য বিজয়াদশমীর প্রণাম জানিয়ে ফোন করলো শ্বশুড়-শাশুড়িমাকে।
শাশুড়িমা অনুযোগ করলেন—এবার তুমি এলেনা বলে পুজোবাড়ি অন্ধকার।এরপরের বার কিন্তু সবার আগে তোমার আসা চাই।
—হ্যাঁ মা নিশ্চয়ই।
রিয়া বোঝে এটাই মায়ের ভালোবাসার টান।আর এই টানেই আর্য ঠিক ফোন করেছে।
আর্যের বন্ধুত্ব,আর্যের ভালোবাসা সবসময় রিয়াকে ঘিরে থাকে।ওই যে রিয়ার একমাত্র friend, philosopher & guide….
রিয়া ভাবে–
মা হয়ে বান্টির হাসিমুখ দেখার জন্য একটু মানাতে পারবেনা?পারবেনা এই একবারের ভুলটাকে শুধরে দিতে??
খানিকবাদেই আর্যের মেসেজ
“তুমি আর বান্টি আমার সবটুকু ভালোবাসা নিও।আমাকে বাদ দিয়ে পুজো তা’হলে ভালোই কাটালে বলো??”
অনেকদিন বাদে রিয়া আজ রিপ্লাই দিলো—-“ভালো থেকো।আর পারলে সত্যি ভালোবেসো।”