নীল তিমি
-বিভূতি ভূষণ বিশ্বাস
আর দু পিস মাংস দিই? দেন খাসির মাংস বলে কথা। এই মশাই বয়স তো কম হলো না একটু সামলে খেও!!! পাশ থেকে বৌ বললো। আসলে ও খাসির মাংস খায়না বাড়িতেও রান্না হয় না। সেইজন্য নেমন্তন্ন বাড়িতে এসে আচ্ছা করে খাই। জন্মদিনের নেমন্তন্ন খাওয়া বেশ ভালোই হলো। খাওয়া দাওয়া সেরে উঠতেই দেখি রায়বাবু। মানে শহরের নামকরা উকিল অমলেশ রায়। বললেন কেমন রান্না হয়েছে? বললাম খুবই ভালো। কিন্তু ছেলে কই? ঐ তো ঘরে। এই অভি এই দেখ তোর কাকু!! কোনো হেল দোল নেই। অগত্যা আমি ঘরে ঢুকে দেখি খুব ব্যস্ত কম্পউটার নিয়ে হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি সব করছে। বাঁ হাতে সুন্দর লাল রং এর একটি ট্যাটু F57 লেখাl —— কিরে অভি জন্মদিন কেমন কাটলো? কোনো উত্তর পেলাম না। আরো যেনো ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। অবশেষে বাড়ি চলে এলাম।
বুঝলে গিন্নি খাওয়া মনে হচ্ছে একটু বেশিই হয়ে গেছে। তা হবে না, যে ভাবে খাচ্ছিলে পাশের লোক জন হাঁ করে তোমার খাওয়া দেখছিলো। আমার তো বাপু লজ্জা করছিল। আর লজ্জা! কথা বলতে বলতে ও ঘুমিয়ে পড়লো। আমার তো ঘুম আসছে না তার উপর মনে হচ্ছে পেট ফুলে দুটো হয়ে গেছে। তাকিয়ে দেখি দুটো বাজে। আস্তে আস্তে উঠে সামনের রাস্তায় গেলাম একটু হাটা চলা করলে যদি পেটটা কমে। আরে এ কি ডেডবডি নাকি রাস্তার পাশে সটান পরে আছে। ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে দেখি —- এতো অভি মরলো কি করে? নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখি নিশ্বাস চলছে। মানে মরে নি একটু ধাক্কা দিতেই অভি লাফিয়ে উঠলো আমিও লাফিয়ে উঠলাম। কিরে অভি এতো রাতে রাস্তার পাশে জঙ্গলে শুয়ে কেন? কোনো কথা না বলে হনহন করে সোজা বাড়ি চলে গেলো।
বেশ কদিন পরে এক বিকালে খেলার মাঠের পাশে অভি দেখি চুপচাপ বসে আছে। কিরে অভি শরীর খারাপ নাকি? কাছে যেতেই দেখি ওর বাঁ হাতে লাল রং এর খুব সুন্দর তিমি মাছের ট্যাটু। কি রে এটা কোথা থেকে বানালি? ও কোনো কথা না বলে চোখ দুটি মোটা মোটা করে আমার দিকে তাকিয়ে, হন হন করে বাড়ির দিকে চলে গেলো।
কি গো আজকের খবরের কাগজ দেখেছো—- না না দেখা হয় নি!! তাড়াতাড়ি দেখো ছেলে পুলে কি সব গেম টেম খেলে মরে যাচ্ছে। পেপারের হেডিং দেখেই আমি হতবাক “নীল তিমি পঞ্চাশ এপিসোড পার করলেই মৃত্যু।” পঞ্চাশ দিনে পঞ্চাশ এপিসোড। এই যে শোনো অভির জন্ম দিন কবে ছিলো গো আগের মাসের আগের মাসে আজ পঞ্চাশ দিন হচ্ছে। আরে বাপরে এক দৌড়ে ওদের বাড়ি চলে গেলাম।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে অভিদের বাড়ি গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। বিরাট গাম্ভীর্য নিয়ে থাকতো ওর মা ইস্কুল টিচার কিনা আজই দেখলাম কাঁদতে ওর বাবাও কাঁদছে। অভি দেখি দোতলার ছাদের কার্ণিশে দাঁড়িয়ে দরজা জানলা সব ভিতর থেকে বন্ধ । অনেকে অনেক রকম ভাবে ওকে বোঝাচ্ছে কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। চোখের সামনে ঝপাত করে লাফ দিলো ব্যাস সব শেষ। সবাই হাউ হাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে। আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি অভির কিচ্ছু হয়নি। ওর বাবা তিনতলা করার জন্য বালি এনে রেখেছিলো অভি সেই বালির গাদার উপর পড়েছে। অভিকে বুকে জড়িয়ে ওর বাবা মা’র সে কি কান্না। অভি এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন সব দেখছে আর কি সব ভাবছে।