প্রতিশোধ
– কুমার প্রণবেশ
(১)
শিশিরকে গেস্ট হাউস কিপার, শিশিরের রুমের চাবিটার সাথে একটা খাম দিয়ে বলল,’সাব! আপকে লিয়ে এক কুরিয়ার আয়া।’ শিশির চাবির সাথে খামটা নিতে নিতে চমকে উঠলো। চেন্নাই পোর্টের গেস্ট হাউসের ঠিকানায় তাকে কে চিঠি পাঠাল! সে তো এই ঠিকানা কাউকে দেয়নি! অবশ্য মা, বাবা জানে যে সে চেন্নাই এলে এই পোর্ট গেস্ট হাউসে থাকে। মুম্বাইয়ে গেলে মুম্বাই পোর্টের গেস্ট হাউসে। সে মাসের মধ্যে দিন দশেক থাকে চেন্নাই আর দিন দশেক থাকে মুম্বাই। বাকি দশ দিন কলকাতায় বাবা, মার কাছে ঘুরে আসে। শিশির এক সময় মার্চেন্ট নেভিতে চাকরি করতো। বছর দশেক চাকরি করার পর, গত দু’বছর ধরে সে মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পোর্টে কন্টাক্ট পাইলট হিসাবে কাজ করছে। এখন সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চেন্নাই আর মুম্বাই পোর্টে কন্ট্রাক্ট বেসিসে পাইলটের কাজ করে।
বত্রিশ বছর বয়েস হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়ে সে করে নি। করেনি বললে ভুল হবে। বিয়ে করার একটু অসুবিধা ছিল। শিশিরের দিদি তনিমার বিয়েটা না হলে সে বিয়ে করতে চাইছিল না। শিশিরের দিদিকে দেখতে শুনতে ভালো, কলেজের লেকচারার। কিন্তু কোনো না কোনো কারণে তার বিয়ের সন্মন্ধ ভেঙে যাচ্ছিল। শেষে গত বছর তার বিয়ে হয়েছে অমিতদার সাথে। অমিতদা তনিমার ছোট বেলার বন্ধু। বহু বছর পর বিদেশ থেকে ফেরার পর তনিমার সাথে যোগাযোগ হয়। শেষে বিয়ে। বিয়ের পর শিশির মায়ের মুখে শুনেছে যে তার দিদি তনিমা নাকি ইচ্ছে করেই বিভিন্ন বাহানায় আগে যত সন্মন্ধ এসেছিল, সেগুলোকে ভেঙে দিত। সে নাকি অমিতদার দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিল। যাই হোক দিদির বিয়ে হতেই, শিশিরের মা, শিশিরের পেছনে পরে গেছে তার বিয়ের জন্য।
রুমের চাবিটা আর খামটা নিয়ে শিশির নিজের পাঁচ নম্বর রুমের দিকে এগোতে এগোতে, খামের পেছনটা দেখে আরও অবাক হয়ে গেল। এতো শুভ্রার চিঠি। শিশির নিজের রুমের দরজা খুলে খামটা বিছানায় রেখে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। খুব টায়ার্ড লাগছিল। আজ সারাদিনে সে প্রায় বারো তেরোটা মুভমেন্ট করেছে। কোনো জাহাজকে জেটিতে নিয়ে আসতে হয়েছে, কোনোটাকে আবার এঙ্কর-এ বাঁধতে হয়েছে। বেশ কয়েকটা জাহাজকে জেটি থেকে বের করে সমুদ্রের মধ্যে ছেড়ে আসতে হয়েছে। বাথরুমে স্নান করতে করতে তার মনে পড়ছিল শুভ্রার কথা।
মাস ছয়েক আগের কথা। শিশির তখন কোচিনের কন্ট্রাক্ট পাইলটের চাকরি ছেড়ে এসে কান্ডলা পোর্টের ভাদিনারে কন্ট্রাক্ট পাইলটের কাজ করছিল। থাকতো জামনগরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে। জামনগরে তখন তার বছর খানেক হয়ে গেছে। খুব একা লাগতো। পাইলটিং না থাকলে তাকে ফ্ল্যাটেই টিভি দেখে আর বই পড়ে কাটাতে হতো। মাস খানেকের মধ্যেই তার সাথে পরিচয় হয়েছিল সুবীর ব্যানার্জীর। সুবীর ব্যানার্জী তখন মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের জামনগর অফিসের হেড। উনিও এক সময় মার্চেন্ট নেভিতে চাকরি করতেন। তারাতলা থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে প্রথম জীবনে মার্চেন্ট নেভিতেই চাকরি করতেন। পরে তিনি মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের কলকাতা অফিসে জয়েন করেন। বছর পাঁচেক আগে প্রমোশন নিয়ে তিনি জামনগরে আসেন।
একদিন সুবীর ব্যানার্জী ভাদিনারে এসেছিলেন একটা জাহাজের ইনস্পেকশনে। সেদিন ওই জাহাজের পাইলটিংয়ের দায়িত্বে ছিল শিশির। আলাপ হয় জাহাজের হুইল হাউসে। শিশিরের সাথে পরিচয় করে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। কথায় কথায় প্রথমে শিশিরের ঠিকানা আর মোবাইল নম্বরটা নিলেন আর তারপর শিশিরকে নিজের ফ্ল্যাটের ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিয়ে বললেন,’যে কোনো রবিবার ফ্রি থাকলে চলে আসুন আমার ফ্ল্যাটে। জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।’
সেদিন ছিল রবিবার। সেদিন রাত্রে শিশিরের রওনা হওয়ার কথা আমেদাবাদের উদ্যেশ্যে। পরদিন সকালের ফ্লাইটে তার কলকাতা ফেরার কথা। শিশির সবে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে নিজের হাতে চা বানিয়ে টিভির দিকে চোখ রেখে খাটের ওপর বসেই চাটা খাচ্ছিল। হঠাৎ খাটের ওপর পরে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো। প্লেট সমেত চাটা বিছানার ওপর রেখে শিশির মোবাইলটা কানে দিয়ে বলল,’হ্যালো!’ শিশিরকে চমকে দিয়ে ওপাশ থেকে ভেসে সুবীর ব্যানার্জীর গলা,’ঘুমোচ্ছিলে না উঠে পড়েছো? শোনো আমি দশ মিনিটের মধ্যে তোমার ফ্ল্যাটের নিচে পৌঁছে তোমায় রিং করছি। নীচে নেমে এসো কিন্তু। আর হ্যাঁ, আজ দুপুরে তুমি আমার সাথে আমার ফ্ল্যাটেই লাঞ্চ করবে। তৈরি হয়ে নাও। আমি দশ মিনিটের মধ্যেই আসছি।’ কথা শেষ করেই সুবীর ব্যানার্জী ফোনটা কেটে দিল। শিশির এরকম ফোনের আশা করেনি। সে সাধারণত কারো বাড়িতে যায় না। এমনকি যোগাযোগও কারো সাথে রাখে না। সেদিন জাহাজের হুইল হাউসে সুবীর ব্যানার্জী তার মোবাইল নম্বর দিলেও, শিশির সেটা সেভ করেও রাখে নি। এমনকি তার ফ্ল্যাটের ঠিকানা লেখা ভিসিটিং কার্ডটাও ফেলে দিয়েছিল। শিশির ভাবছিল কি করা যায়! হঠাৎ তার মনে হলো, গিয়েই দেখা যাক না। ভাবতে ভাবতে শিশির বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল।
সুবীর ব্যানার্জীর দু’হাতে দুটো বাজারের থলে। শিশিরের হাতেও একটা থলে। তাই শিশিরই বা হাত দিয়ে কলিং বেলটা বাজালো। মুহূর্তে দরজা খুলে দিল সুবীর ব্যানার্জীর স্ত্রী। শিশির তার দিকে তাকিয়ে রইল। শিশিরের চোখে মুগ্ধতা। শিশির মনে মনে ভাবছিল অসামান্য সুন্দরী এই মহিলা। শিশিরের চমক ভাঙলো সুবীর ব্যানার্জীর স্ত্রীয়ের কথায়,’আসুন ভেতরে আসুন।’ শিশির আর সুবীর ব্যানার্জী ড্রইংরুমে ঢুকতেই, সুবীর ব্যানার্জীর স্ত্রী, হেসে শিশিরের হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা নিতে নিতে বললেন,’আপনি বসুন।’ এই কথা বলে তিনি রান্নাঘরের দিকে এগোতে লাগলেন। পেছনে পেছনে সুবীর ব্যানার্জী দু’হাতে দু’টো ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে গেলেন।
শিশির ড্রইং রুমের সোফায় বসতে না বসতেই সুবীর ব্যানার্জী আর তার স্ত্রী ড্রইং রুমে ফিরে এলেন। সুবীর ব্যানার্জী, শিশিরকে তার স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,’শুভ্রা! আগে একটু আমাদের চা করে দাও। তারপর তুমি জল খাবার আর দুপুরের রান্নাবান্না যা করার করো।’ তার স্ত্রী শিশিরের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। তারপর বললেন,’হ্যাঁ, তোমরা বসো। এক্ষুনি দিচ্ছি।’
সুবীর ব্যানার্জী আর শিশির ড্রইং রুমে বসে চা খাচ্ছিল আর সুবীর ব্যানার্জীর স্ত্রী তখন রান্না ঘরে জল খাবার বানানোর কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ সেন্টার টেবিলে রাখা সুবীর ব্যানার্জীর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। সুবীর ব্যানার্জী ফোনটা তুলে নিয়ে হ্যালো বলেই চুপ হয়ে গেলেন। শিশির বুঝতে পারছিল যে ওপাশ থেকে কেউ কিছু বলছেন আর সুবীর ব্যানার্জী তা শুনছেন। সুবীর ব্যানার্জী হঠাৎ বললেন,’আমি ইরউইন হসপিটালে এক্ষুনি পৌঁছাচ্ছি।’ এই কথা বলে সুবীর ব্যানার্জী ফোনটা সেন্টার টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন,’সর্বনাশ!’ তারপর রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে বললেন,’শুভ্রা! শুনছো? রণজয়দার হার্ট এট্যাক হয়েছে। আমাকে এখুনি ইরউইন হসপিটালে যেতে হবে।’
শুভ্রাবউদি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইং রুমে এলেন। তাকে দেখেই আবার সুবীরদা বললেন, ‘শোনো আমি আসছি। গিয়ে দেখি কি অবস্থা! ঘন্টাখানেকের মধ্যে ফিরে আসবো। তুমি একটু পরে শিশিরকে জল খাবার দিও। হয়তো আমি তার মধ্যেই ফিরে আসতে পারব। শিশির! সরি! তুমি একটু বসো, টিভি দেখ। অবশ্য শুভ্রার সাথেও একটু কথা বার্তা বলে সময় কাটাতে পারো। শুভ্রা আমি আসছি।’ এই কথা বলে সুবীরদা সেন্টার টেবিল থেকে মোবাইল ফোন আর গাড়ির চাবিটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। শুভ্রাবউদি ড্রইং রুমের বাইরের দরজাটা বন্ধ করে শিশিরের দিকে ম্লান হেসে বলল,’ মানুষটার হার্ট এট্যাক আজকেই হওয়ার ছিল! এই কথা বলে শুভ্রাবউদি রান্না ঘরে চলে গেলেন। শিশির কি আর করে, সেন্টার টেবিল থেকে টাইমস অফ ইন্ডিয়াটা তুলে নিয়ে চোখ বোলাতে লাগলো।
শিশিরের খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। খুব বেশি পরিচয় নেই সুবীরদার সাথে। সেই সুবীরদার ফ্ল্যাটে সুবীরদার অনুপস্থিতিতে তার ড্রইং রুমে বসে থাকা। তার ওপর ফ্ল্যাটে তার অসামান্য সুন্দরী স্ত্রী যেখানে রয়েছেন। সবে তখন পনের বিশ মিনিট হয়েছে সুবীরদা বেরিয়ে গেছেন। হটাৎ শুভ্রাবউদি হাতে একটা ট্রে নিয়ে ড্রইং রুমে এলো। ট্রেটা সেন্টার টেবিলে রাখল। শিশির দেখে দু’টো প্লেটে অমলেট আর দু’কাপ চা। শুভ্রাবউদি শিশিরের মুখোমুখি সোফায় বসতে বসতে বললেন,’নিন এটা খান। সুবীর যতই বলুক, ও আধ ঘন্টা কেন, এক-দেড় ঘন্টার আগে আসতে পারবে বলে মনে হয় না।’ এই কথা বলে শুভ্রাবউদি অমলেটের একটা প্লেট নিজের হাতে তুলে নিল।
শিশিরের চোখ তখন শুভ্রাবউদির দিকে। সে মনে মনে ভাবছিল কি অসামান্য সুন্দর দেখতে! ভগবান যেন যত রূপ- সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছেন তাকে। গায়ের রঙ টুকটুকে ফর্সা, টানা টানা চোখ, কোমর ছাপানো ঘন চুল। ঠিক নাকের নিচে একটু বাদিকে একটা কালো তিল। ওই তিলটা যেন মুখটাকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলেছে। শিশির হঠাৎ শুভ্রা বউদির কথায় চমকে উঠল,’কই, আপনি খান।’ শিশির একটু লজ্জা পেল। সে যেন ধরা পড়ে গেল! সে বলল,’হ্যাঁ, হ্যাঁ খাচ্ছি।’ এই কথা বলে শিশির অমলেটের প্লেটটা হাতে তুলে নিল।
শুভ্রাবউদি খেতে খেতে আবার বলে উঠল,’সুবীরের মুখে শুনেছি, আপনি এখনও বিয়ে করেন নি। কেন সুন্দরী মেয়ে খুঁজে পাচ্ছেন না?’ শুভ্রাবউদির কথায় শিশির একটু থতমত খেয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’ ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। আসলে আমার দিদির বিয়েটা আটকে রয়েছিল। তাই নিজের বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করার সুযোগ ছিল না। তবে রিসেন্টলি দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। হয়তো এবার আমার পালা।’ তারপর হটাৎ শিশিরের কি হলো কে জানে! সে হাসতে হাসতে বলেই ফেলল,’ তবে আপনাকে যদি আমি আপনার বিয়ের আগে দেখতাম, তবে হয়তো দিদিকে ভুলে যেতাম।’ শুভ্রাবউদি কপট চোখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল,’ ও! তাই বুঝি ওরকম লুকিয়ে লুকিয়ে বার বার আমাকে দেখছিলেন?’ শিশির ভেবে পেল না, সে এর কি উত্তর দেবে! কিন্তু সে আর এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলল,’ এরকম সুন্দরী মহিলার মুখ থেকে “আপনি”, “আপনি” শুনতে একদম ভালো লাগছে না। আমাকে তুমি বলেই ডাকুন।’ শুভ্রাবউদি একটা ইঙ্গিতপূর্ণ চাহনির সাথে হাসি মিশিয়ে বলল, ‘তাই বুঝি? তা বেশ। তুমি বলেই ডাকবো। তুমিও আমাকে তুমি বলেই ডেকো।’ শুভ্রাবউদির কথা শেষ হলো না। তার আগেই রান্না ঘরে রাখা শুভ্রাবউদির মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। শুভ্রাবউদি দৌড়ে গেল রান্না ঘরের দিকে।
(২)
শুভ্রাবউদি মোবাইল ফোনটা কানে নিয়ে ফিরে এলো ড্রইং রুমে। শিশির তাকিয়ে ছিল শুভ্রাবউদির দিকে। সে বুঝতে পারছিল যে শুভ্রাবউদি সুবীরদার সাথে কথা বলছে। হটাৎ শুভ্রাবউদি বলল,’ হ্যাঁ, দিচ্ছি।’ এই কথা বলে সে মোবাইল ফোনটি শিশিরের হাতে দিয়ে বলল,’সুবীর।’ শিশির ফোনটা কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সুবীরদার গলা,’ শিশির! রণজয়দাকে নিয়ে আমরা আমেদাবাদ রওনা দিচ্ছি। সরি! তোমাকে বাড়িতে ডেকে, আমি নিজেই থাকতে পারছি না। তবে তুমি কিন্তু জল খাবার এবং দুপুরের খাওয়ার খেয়েই ফিরবে। আমি শুভ্রাকে বলে দিয়েছি। তুমি আবার ইতস্তত করো না যেন।’ শিশির কি আর বলে। বললো,’ঠিক আছে।’ শিশির ফোনটা শুভ্রাবউদির হাতে দিল। শুভ্রাবউদি ফোনটা হাতে নিতে নিতে শিশিরের দিকে তাকিয়ে হাসলো। শিশিরের যেন মনে হলো শুভ্রাবউদি যেন সুবীরদার আমেদাবাদ যাওয়ার খবরে খুশিই হলো।
দু’জনেরই অমলেট খাওয়া শেষ হলেও চা খাওয়া বাকি ছিল। চাটা ততক্ষণে প্রায় ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।শুভ্রাবউদি দু’চুমুকে চাটা শেষ করে বলল, ‘খুব মুশকিল হলো। তুমি তো বোর ফিল করবে। এক কাজ করছি, তাড়াতাড়ি মাংসটা রেঁধে ভাত বসিয়ে দিচ্ছি। ডাল তো হয়েই গেছে। শুধু খাওয়ার আগে বেগুনগুলো ভেজে নেবো।’ এই কথা বলে শুভ্রাবউদি রান্না ঘরে চলে গেল। ততক্ষণে শিশিরের চা খাওয়াও শেষ। সে বসে রইল।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল দুপুর দুটোর মধ্যেই। খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই শুভ্রাবউদি বলল, ‘চলো, একটু আড্ডা দেওয়া যাক। একবারে বিকেলে চা খেয়ে ঘরে যেও।’ শিশির বলল,’বউদি! বিকেল পর্যন্ত আছি। তারপর কিন্তু আর থাকা যাবে না। রাত্রের ট্রেনে আমেদাবাদ যেতে হবে। কাল সকালে আমার আমেদাবাদ থেকে কলকাতার ফ্লাইট ধরতে হবে।’ শুভ্রাবউদি চোখ পাকিয়ে বলল,’ উহু, বউদি নয়, শুভ্রা। বুঝলে?’ শিশির উত্তর না দিয়ে শুধু হাসলো।
ড্রইং রুমের সোফায় বসে চলল দুজনের গল্প। কখন যে ঘড়ির ঘন্টার কাঁটা বিকেল পাঁচটা ছাড়িয়ে ছটার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল, তা আর ওদের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ শিশিরের ড্রইং রুমের ওয়াল ক্লকে চোখ পড়তেই সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’ ও মাই গড! ছটা বাজতে চলল। শুভ্রা আমি যাচ্ছি।’ শুভ্রা হটাৎ শিশিরের হাত দু’টো ধরে বলল, ‘আরে আর পাঁচ মিনিট বসো। আমি চা টা বানিয়ে আনছি।’ শিশির কি আর করে! আবার বসে পড়ল। শুভ্রা চা বানাতে রান্না ঘরে চলে গেল।
চা খেতে খেতে শুভ্রা বলল,’ তোমার ট্রেন তো রাত দশটায়। তুমি এক কাজ করো, চা খেয়ে ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তোমার লাগেজ নিয়ে এখানেই চলে এসো। আমি রাত্রের খাবার বানিয়ে ফেলছি। খেয়ে এখান থেকেই স্টেশনে চলে যেও। রাত্রে তুমি রুটি খাও না ভাত?’ শিশির বলল,’ রুটি।’ শুনে শুভ্রা বলল,’ ও তাহলে তো অসুবিধা নেই। আমিও রুটি খাই। কয়েকটা রুটি বানিয়ে নিচ্ছি, আর দুপুরের মাংসটা একটু গরম করলেই হয়ে যাবে।’ ইতিমধ্যে শিশিরের চা খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। সে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। শুভ্রাবউদি দরজা খুলে পাশে দাঁড়ালো। শিশির তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বেরিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে শিশির পেছন ফিরে তাকালো। দেখে শুভ্রা তার দিকে তাকিয়ে আছে। শিশিরের যেন মনে হল, শুভ্রার চোখে ভালোবাসার অভিব্যক্তি।
জামনগর খুব ছোট শহর। শিশির অটো রিকশা ধরে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে ফ্রেশ হয়ে লাগেজ গুছিয়ে আবার অটো রিকশা ধরে যখন সুবীরদার ফ্ল্যাটে পৌছালো, তখন বাজে সবে সাড়ে সাতটা। কলিং বেল টিপতেই শুভ্রা দরজা খুলে হাসি মুখে দাঁড়ালো। শিশির যেন শুভ্রাকে দেখে আরও একবার চমকে উঠলো। সে বুঝলো শুভ্রাও ইতিমধ্যে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। শাড়ি ছেড়ে হালকা নীল রঙের একটা গাউন পড়েছে। চোখে কাজল পড়েছে, ভিজে এলো চুলের কিছুটা সামনের দিকে বুকের ওপর ছড়িয়ে পড়েছে। শিশির ঘরে ঢুকতেই শুভ্রা বলল,’তুমি তোমার সেল নম্বরটা আগে আমায় বলোতো, পরে যাওয়ার সময় আমি তাড়াহুড়োয় হয়তো ভুলে যাবো।’ এই কথা বলে সে সেন্টার টেবিল থেকে তার মোবাইল ফোনটা হাতে নিল। শিশির তার মোবাইল নম্বরটা বলল আর শুভ্রা সেটা তার মোবাইল ফোনে সেভ করে নিল। শুরু হলো আবার আড্ডা। তবে এবার আড্ডায় কথা ছিল অনেক কম। বেশির ভাগ সময়টাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে বসেছিল।
দেখতে দেখতে সাড়ে আটটা বেজে গেল। দুজনে মিলে ডাইনিং টেবিলে মুখোমুখি বসে খেল। খাওয়ার সময় কথা হলো না। সেই একে অপরকে দেখার নেশায় যেন ওদের পেয়ে বসেছিল।
সাড়ে ন’টা বাজতেই শিশির নিজের ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দরজার দিকে এগিয়ে গেল। শুভ্রা দরজার কাছে এসে দরজাটা না খুলে, হটাৎ শিশিরের গলা জড়িয়ে ধরে মুখটা শিশিরের বুকে রেখে ফিস ফিস করে বলল,’ইচ্ছে ছিল গোটা একটা রাত তোমার সাথে কাটাই। কিন্তু আজ তো আর হলো না। কথা দাও, আমায় তোমার একটা রাত দেবে।’ শিশিরের শরীর তখন থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। সে হঠাৎ শুভ্রার এরকম আচরণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। কোনোক্রমে বলল, ‘হুঁ, একটা রাত..’ শিশিরের কথা শেষ হলো না। শুভ্রা নিজের মুখটা তুলে, শিশিরের মুখটা হাতে ধরে নিচের দিকে নামিয়ে শিশিরের দু’ গালে দুটো চুমু খেয়ে বলল,’থ্যাঙ্ক ইউ! অপেক্ষায় থাকবো।’ শুভ্রা দরজা খুলে দিতেই শিশির দরজা দিয়ে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। সিঁড়ির বাঁকে শিশির ফিরে তাকিয়ে দেখে শুভ্রা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কিন্তু চোখের কোনটা চিক চিক করছে। শিশির বুঝলো শুভ্রা চোখে খুশির অশ্রু।
কলকাতায় শিশির তিন দিন ছিল। সেই তিন দিন যেন তার আর কাটতে চাইছিল না। সে জামনগরে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিল। বেশির ভাগটা সময় সে নিজের ঘরেই কাটিয়েছিল। এমনকি পাড়ার ক্লাবে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারার ইছেও তার হয়নি। তার আগে সে বাড়িতে এলেই সন্ধ্যের পর পাড়ার ক্লাবে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত। কিন্তু সেবার তার সে ইছেও হয়নি। কলকাতায় থাকার ওই তিন দিন, সে দিনের বেলা শুভ্রার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলত। তার যেন ফোন ছাড়তে ইচ্ছে করতো না।
জামনগরে ফিরেই সে প্রথম দিন শুভ্রার সাথে দেখা করতে পারেনি। কারণ প্রথম দিন এসেই সে ভাদিনার চলে গিয়েছিল পাইলটিং করতে। দ্বিতীয় দিন সকাল সাড়ে দশটার সময় সে পৌঁছে গেল শুভ্রার কাছে। ফোন করেই গিয়েছিল। সুবীরদা ততক্ষণে অফিস বেরিয়ে গিয়েছিল। ঘরে ঢুকেই শিশির, শুভ্রাকে বলল, ‘একটা গোটা রাত কবে তোমায় দিতে পারব জানি না। তবে আজ আমার গোটা দিনটা তোমায় দিলাম।’ শিশিরের কথা শুনে শুভ্রা হেসে বলল,’ তোমায় একটু বেশি সময়ের জন্য একাকী পেতে চেয়েছিলাম। তাই বলেছিলাম গোটা রাত। তবে সেই পাওয়ার সময়টা দিন হলেও ক্ষতি নেই। আজ তো তোমাকে একাকী পেয়ে গেলাম।’ শিশির উত্তর না দিয়ে শুধু হেসেছিল।
কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা মুখে প্রকাশ না করলেও, তাদের ভালোবাসার সম্মতি ছিল তাদের চোখের ভাষায়। তাই সেদিনই ওরা দুজনে বাঁধ ভাঙা প্রেমের জোয়ারে ভেসে গেল দুপুরে শুভ্রার বেডরুমের নরম বিছানায়। সুবীরদা তখন তার অফিসের কাজের ব্যস্ততায়।
তখন শিশির আর শুভ্রার সম্পর্কের সবে দু’মাস হয়েছে। সেই দুদু’ বেশ কয়েকবার শিশির শুভ্রার সাথে পুরো দিনটা শুভ্রার ফ্ল্যাটেই কাটিয়েছে। সেই দিন গুলোতে প্রায়ই শিশির শুভ্রার রূপের নদীতে বার বার স্নান করে নিজে তৃপ্ত হয়েছে আর শুভ্রাকেও তৃপ্তি দিয়েছে।
সেদিনও ফোনে কথামত শিশির শুভ্রার ফ্ল্যাটে সকাল সাড়ে দশটায় পৌঁছেছিল। চা খেতে খেতে হঠাৎই শুভ্রা বলল,’ আমাদের এই সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে কি তুমি কিছু ভেবেছো? আমার কথা তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো?’ শিশির এই বিষয়টা নিয়ে অনেক চিন্তা ইতিমধ্যেই করেছিল। এই চিন্তায় বহু দিন রাত্রে তার ঘুম হয় নি। কিন্তু সে জানে, এই সমস্যার সমাধান তার হাতে নেই। তাই সে এই প্রশ্ন তার মাথায় বহুবার এলেও, সে কোনোদিন মুখ ফুটে সে কথা শুভ্রাকে বলে নি। কিন্তু সেই প্রশ্ন আজ শুভ্রা করতেই সে বলটা শুভ্রার কোর্টে ফেলে দিয়ে বলল,’পরিণতি দিতে চাইলে দিতে পারো। আমার অসুবিধা নেই। তবে তোমার বাঁধা তোমাকেই অতিক্রম করতে হবে।’ শিশিরের কথায় শুভ্রা বলল, ‘এই পরিণতির কথা আমার মাথায় অনেক দিন ধরেই ঘুরছে। কিন্তু আজ এই প্রশ্ন কেন তোমাকে করলাম জানো?’ শিশির শুভ্রার মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। শুভ্রা হঠাৎ মাথা নিচু করে বলল,’ গতকালই রিপোর্টটা হাতে পেয়েছি। তোমার ভালোবাসা আমার পেটে বাসা বেঁধেছে।’
শুভ্রার কথার অর্থ বুঝতে শিশিরের একটুও ভুল হয় নি। সে চায়ের কাপটা, হাত থেকে সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে, উঠে দাঁড়ালো। শুভ্রাকে কোলে তুলে নিয়ে তাকে চুমুতে ভরিয়ে দিল। শুভ্রা শিশিরের গলা জড়িয়ে ধরে খুশি মেশানো চাপা গলায় বলল,’ আরে ছাড়ো, ছাড়ো, আমি পড়ে যাবো।’ শিশির তাকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আবার চুমুতে ভরিয়ে দিল। শেষে শুভ্রার মুখোমুখি বসে বলল,’ চলো, আজ আর তোমার রান্না করে কাজ নেই। আরাম হোটেলে গিয়ে দুজনে খেয়ে এই খুশির খবরটা সেলিব্রেট করি।’ শুভ্রা হঠাৎ একটু গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর বলল,’সে না হয়, অন্য দিন সেলিব্রেট করা যাবে। তার আগে তোমার সাথে আমার একটু আলোচনা দরকার।’
শুভ্রার গম্ভীর মুখ দেখে শিশির একটু ঘাবড়ে গেল। সে অবাক হয়ে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলল,’কি আলোচনা?’ শুভ্রা কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর মাথা নিচু করে বলতে লাগল, ‘যে প্রশ্ন আমি আজ তোমায় করেছিলাম, তার উত্তর তুমি আমার কাছ থেকেই শুনতে চাও, তা আমি বুঝেছি। তোমায় বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু তাও বলছি তোমায়। আমাদের এই সম্পর্কের কোনো পরিণতি কিন্তু নেই। তাও, তুমি আমায় ভালোবাসো, আমিও তোমায় ভালোবাসি, আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি, এগুলো সব সত্যি আর এগুলো চিরকাল সত্যি হয়েই বেঁচে থাকবে। কিন্তু আমি সুবীরকে ডিভোর্স দিতে চাই না। ফলে তোমাকে সম্পূর্ণ রূপে আমার জীবনে স্থান দেওয়া কখনোই সম্ভব হবে না। তাই ভাবছিলাম, এই ব্যাপারে তুমি কি ভাবছো, সেটাও আমার জানা দরকার।’
শুভ্রার কথা শুনে শিশির পুরোপুরি ভেঙে পড়ল। সে বলল,’ তুমি, এ কী কথা বলছো। তোমার কথা অনুযায়ী চিরকাল আমি তোমার সাথে লুকিয়ে লুকিয়েই মেলামেশা করব? তা কি করে সম্ভব?’ শুধু কি তাই? আমার জীবনে আমি চিরকাল একাই কাটাব?’ শুভ্রা বলল,’তা কেন? আমি তো আছি, চিরকাল তোমার সাথে।’ শিশির, শুভ্রার কথায় অসহিষ্ণু হয়ে পড়ল। সে বলল,’তা হয় না? এক নয় তুমি সুবীরদাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে গ্রহণ করো, আর তা না হলে আমাকে বিদায় দাও।’ এই কথা বলে শিশির সোফা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। শুভ্রা, শিশিরের পেছন পেছন এগোতে এগোতে বলল,’তুমি লক্ষ্মীটি, আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো। আগে আমার পুরো কথা শোনো।.. শিশির শুভ্রার কথা আর শোনার মতো অবস্থায় ছিল না। সে নিজেই ড্রইংরুমের দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। পেছন থেকে শুভ্রা ডাকলেও, শিশির আর পেছন ফিরে তাকায় নি। শুভ্রার ফ্ল্যাট থেকে নেমে অটো রিকশায় বসতেই শিশিরের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। দেখে শুভ্রার ফোন। শিশির ফোনটা কেটে দিয়ে পরক্ষণেই শুভ্রার নম্বরটাকে ব্লক করে দিল।
শুভ্রার কথায় আর ব্যবহারে শিশির এতটাই আঘাত পেয়েছিল যে, সে আর জামনগরে থাকতে চায়নি। পরদিনই কান্ডলা পোর্টের কন্ট্রাক্ট পাইলটের চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুম্বাই চলে গিয়েছিল। সেখানে সিম্যান ক্লাবে দিন পনেরো ছিল। তারপর সে এক সাথে মুম্বাই আর চেন্নাই পোর্টের কন্ট্রাক্ট পাইলটের কাজটা পেয়ে যায়।
জামনগর থেকে চলে আসার পর, শিশির যতবার শুভ্রার বিষয়টা নিয়ে ভেবেছে, ততবারই তার মনে হয়েছে যে শুভ্রা তাকে কোনোদিন ভালোবাসে নি। যে কোনো কারণেই হোক তাকে শুধু ব্যবহার করেছে। কারণটা শিশির আজও বুঝে উঠতে পারে নি। হতে পারে শুভ্রা তার শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য শিশিরকে ব্যবহার করেছে! এমনও হতে পারে যে সুবীরদা সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম। তাই শুভ্রা, শিশিরকে ব্যবহার করেছে! তাই সে আর শুভ্রার সাথে কথা বলতে চায়নি।
এই সব ভাবতে ভাবতে শিশির বাথরুম থেকে বেরিয়ে, পাজামা, পাঞ্জাবি পড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুভ্রার চিঠির খামটা হাতে নিয়ে খুলে ফেলল।
(৩)
প্রিয়তম,
তোমার জন্য আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। তুমি সেদিন হঠাৎ করে আমায় ভুল বুঝে চলে গেলে। আমার কথা শুনতে পর্যন্ত চাইলে না। আমি ফোন করেছিলাম, তুমি ফোন কেটে দিলে। পরে অনেক বার ফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোন লাগলো না। হয়তো তুমি আমার নম্বরটা ব্লক করে রেখেছো। একবার ভেবেছিলাম অন্য কোন নম্বর থেকে তোমায় ফোন করব, কিন্তু তা আর করিনি এই ভেবে যে তুমি আমার ওপর রেগে আছো, তাই আমার গলার আওয়াজ পেলেই হয়তো ফোন কেটে দেবে। আশা করেছিলাম তোমার রাগ একটু কমলে, তুমি নিজে থেকেই আমায় ফোন করবে। কিন্তু একমাস হয়ে গেল, তোমার ফোন না পেয়ে আমি খুব চিন্তায় আছি। জানি তুমি খুব মানসিক কষ্ট পাচ্ছো। ইতিমধ্যে গত কাল খবর পেলাম তুমি জামনগর ছেড়ে চলে গেছ এবং চেন্নাই আর মুম্বাই পোর্টে কাজ করছো। তাই এই চিঠি আমি চেন্নাই পোর্টের গেস্ট হাউসের ঠিকানায় পাঠাচ্ছি। এই চিঠির একটা ফটো কপি আমি মুম্বাই পোর্টের গেস্ট হাউসের ঠিকানায়ও পাঠাচ্ছি। আশা করি যে কোন একটা চিঠি তোমার হাতে হয়তো পৌঁছবে।
এবার বলি আমার কথা। সেদিন তুমি আমার পুরো কথা না শুনেই চলে গিয়েছিলে। আজ একটু ধৈর্য ধরে এই চিঠির বাকি অংশটা পড়ে দেখো।
আমার সাথে সুবীরের মেলামেশার শুরু, সেই ছোট্ট বেলা থেকে। আমার আর সুবীরের বাবা দুজনেই কলকাতা পোর্টের অফিসার ছিলেন। পাশাপাশি কোয়ার্টারে থাকতেন। আমার আর সুবীরের জন্ম, বেড়ে ওঠা, সবই ওই পোর্ট কোয়ার্টারে। সুবীর আমার থেকে পাঁচ বছরের বড়। এক সময় সুবীরকে আমি দাদামনি বলে ডাকতাম। সেই দাদামনি কথাটা গায়েব হয়ে যায় যখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। সুবীর তখন হায়ার সেকেন্ডারি দেবে। বুঝতেই পারছো, ওইটুকু বয়েস থেকেই আমরা একে অপরের প্রেমে পড়েছিলাম। আমি বি.এ. পাস করার পর আমার সাথে যখন সুবীরের বিয়ে হলো, তখন সুবীর মার্চেন্ট নেভিতে চাকরি করে। বিয়ের পর প্রথম ছমাস আমার সুবীরের সাথে জাহাজেই কেটেছিল। এরপর থেকে আমার জীবনটা একাকীত্বে ভরে গিয়েছিল। প্রায় তিন বছর আমি একাই কাটিয়েছি। বছরের মধ্যে দু’তিন মাস সুবীর ছুটিতে বাড়িতে থাকতো।
শেষে সুবীর মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টে কলকাতার অফিসে জয়েন করে। ফলে আমার একাকীত্ব দূর হলেও অন্য সমস্যা দেখা দিল। ততদিনে সুবীরের বাবা রিটায়ার করে গেছেন। তার একটা জমি কেনা ছিল দমদমে। রিটায়ার করার ঠিক আগেই তিনি সেই দমদমের জমিতে বাড়ি বানিয়েছিলেন। সেখানেই আমরা থাকতাম। আমাদের বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যেই সুবীরের ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। দমদমের সেই বাড়িতে তখন আমরা এক সাথে থাকতাম। আমরা মানে, আমি, সুবীর, সুবীরের ভাই, তার স্ত্রী আর সুবীরের বাবা, মা। সুবীর মার্চেন্ট নেভি থেকে ফেরার পর পরই শুরু হলো আমার ওপর মানসিক অত্যাচার। এই অত্যাচারটা শুরু হয়েছিল সুবীরের ভাইয়ের ছেলে হওয়ার পর। প্রায়ই দুপুরে খেতে বসে, সুবীরের মা, সুবীরের ভাইয়ের বউয়ের সামনেই আমাকে খোটা দিয়ে বলতেন, ‘তোমাদের খুশির খবর যে কবে শুনবো, কে জানে!’ কোনোদিন হয়তো বলত, ‘আমাদের সুবীরের কপালটাই খারাপ! চার বছর হতে চলল, কি যে হবে কে জানে?’
প্রথম দিকে সুবীরের মায়ের এই সব কথা আমি গায়ে মাখতাম না। রাত্রে সুবীরকেও বলতাম না। ভাবতাম, সারাদিন পরিশ্রম করে যে মানুষটা ঘরে ফেরে, তাকে এসব কথা বলা উচিত নয়। তাছাড়া বিয়ের চার বছর হয়ে গেলেও, সে ভাবে তো আমি আর সুবীর এক সাথে থাকতে পারি নি। আরও কিছুদিন যাক না, দেখি কি হয়! এই ভাবনার মধ্যেই দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেল। সুবীরের মায়ের ওই ধরণের খোঁটা আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে তখন। বাধ্য হয়ে সুবীরকে একদিন বললাম সব কিছু। সুবীর শুনে বলল, ‘মায়ের কথাটা আমাদের এবার একটু সিরিয়াসলি ভাবতে হবে।’ শুনে আমি বললাম, ‘এমন তো নয় যে আমাদের দুজনের মধ্যে কারো শারীরিক সমস্যা আছে?’ আমার কথা শুনে সুবীর বলল, ‘হতেই পারে। এক কাজ করো, তুমি কাল পাঁচটার সময় আমার অফিসে চলে এসো। আমি একজন বড় গায়নোকলিজিস্টের এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছি।’
পরদিন গিয়েছিলাম আমি আর সুবীর সেই ডাক্তারের কাছে। আমার সমস্ত কিছু টেস্ট হলো। ডাক্তার সুবীরকে বললেন,’এবার আপনার সিমেনটা টেস্ট করিয়ে আমাকে রিপোর্টটা দেখিয়ে যাবেন।’
তারপর সুবীর একদিন আমাকে অফিস থেকে ফিরে বলল, ‘আজ সিমেন টেস্ট করিয়ে ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখিয়ে এসেছি। তার কথা অনুযায়ী, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে একটু দেরি হয়। ওসব নিয়ে টেনশন নেওয়ার দরকার নেই। তবে ডাক্তার এও বলেছেন যে বছরখানেক ওয়েট করার পরও যদি সেরকম কিছু পজিটিভ না পাওয়া যায় তো আমরা যেন ওনার কাছে যাই। উনি বলছিলেন এই বিষয়ে মেডিকেল সায়েন্স অনেক এগিয়ে গেছে। নতুন নতুন রাস্তা আবিষ্কার হয়েছে।’
এরপর দেখতে দেখতে আরও একটা বছর কেটে গেল। কিছুই হলো না। তবে ততদিনে সুবীরের মায়ের অত্যাচার চরমে উঠে গেছে। শুধু সুবীরের মাই নয়, আমি আমার বাড়িতে গেলে, সেখানেও আমার মায়ের সেই একই প্রশ্ন।
এই রকম যখন অবস্থা, ঠিক তখন সুবীরের প্রমোশন হলো জামনগরে। একই সাথে আনন্দ আর খুশির মধ্যে শুরু করে দিলাম জামনগর যাওয়ার প্রস্তুতি। আনন্দ হচ্ছিল এই ভেবে যে আর নিয়মিত সুবীরের মায়ের মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হবে না। সঙ্গে খারাপও লাগছিল আত্মীয় পরিজনদের ছেড়ে যেতে হবে, এই ভেবে।
প্রমোশন অর্ডার পাওয়ার পরদিনই সুবীর জামনগরের উদ্যেশ্যে রওনা হয়ে গেল। ঘরের জিনিসপত্র সেরকম কিছু নিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন ছিল না। সুবীর বলেই গিয়েছিল যে সে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কিছু ফার্নিচার কিনে নেবে। যতদিন ফ্ল্যাট ভাড়া না পাওয়া যায়, ততদিন সে এম.এম.ডি. র গেস্ট হাউসে থাকবে।
সুবীর চলে যাওয়ার পরের সপ্তাহে, সে আমাকে ফোন করে বলল, ‘ফ্ল্যাট নিয়ে নিয়েছি। একটা খাট, আলমারী, সোফা সেট, সেন্টার টেবিল, চার চেয়ারের একটা ডাইনিং টেবিলও কিনে ফেলেছি। বাকি জিনিস পত্র তুমি এসে দেখে শুনে কিনে নিও। বিশেষ করে রান্না ঘরের জিনিসপত্র। তুমি দু’চার দিনের মধ্যে চলে এসো।’
সেদিন আমার কলকাতা থেকে মুম্বাই হয়ে জামনগর যাওয়ার কথা। সুবীর আমার জন্য বিকেলে জামনগর এয়ার পোর্টে ওয়েট করবে। সকাল বেলা আমি একটা বড় সুটকেসে আমার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র রাখতে লাগলাম। হঠাৎ মনে হলো, সুবীর সেদিন তাড়াহুড়োয় চলে গেছে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেলে যায়নি তো! এই ভেবে আমি সুবীরের আলমারীটা খুলে ফেললাম। খুলে দেখি, আলমারীতে কাগজ পত্র ছাড়া, সেরকম কিছুই নেই। কি মনে হলো, আমি আলমারীর লকারটা খুলে ফেললাম। দেখি কিছু ব্যাংকের কাগজ পত্র আর একটা মেডিকেল রিপোর্ট। মেডিকেল রিপোর্ট! কিসের! ভাবতে ভাবতে খুলে পড়তে লাগলাম রিপোর্টটা। রিপোর্ট পড়ে আমি চমকে উঠেছিলাম। রিপোর্টটা ছিল সুবীরের সিমেন রিপোর্ট।
রিপোর্ট পড়েই বুঝলাম, সুবীর কোনো দিনই বাবা হতে পারবে না। তার স্পার্ম কাউন্ট শুধু যে কম, তা নয়। একটিভ স্পার্ম নেই বললেই চলে। রিপোর্ট পড়ে ঘরের মধ্যে বসে আমি কাঁদতে লাগলাম। হঠাৎ মনে হলো, সুবীরের মা আমার ঘরের দিকে আসছেন। মনে হলো রিপোর্টটা তার মুখে ছুড়ে মেরে বলি, ‘নাতির মুখ দেখার এত শখ, তো ছেলেকে একটু বলুন যে আপনি নাতির মুখ দেখতে চান।’ কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে ছিলাম। চোখের জল মুছে তার সাথে স্বাভাবিক আচরণই করেছিলাম।
সুবীরের ওই মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে আমি জামনগর আসার পরও সুবীরের সাথে তা নিয়ে কোনো আলোচনা করি নি। তবে মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। শুধু কষ্টই নয়, আমি মনে মনে সুবীরকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম।
এই ভাবেই আরও পাঁচটা বছর চলে গেল। গত পাঁচ বছরে আর কলকাতা যাওয়া হয়নি। সুবীর কলকাতায় যেতে চাইতো না। কারণটা ঠিক আমি বুঝতে পারি না। তবে ফোনে কলকাতার সাথে যোগাযোগ ছিল। সেই ফোনেও মাঝে মধ্যে সুবীরের মায়ের সেই পুরোনো কথাগুলো শুনতে হতো। শুনলেই সুবীরের ওপর রাগ হতো। ইচ্ছে হতো এর প্রতিশোধ নিতে। কেন জানো? সুবীরের সাথে আমার সম্পর্ক সেই ছোটবেলা থেকেই খুব খোলামেলা। আমরা মনের সব কথা একে অপরের সাথে শেয়ার করতাম। তাই মনে মনে ভাবতাম, সুবীর তার এই মেডিকেল রিপোর্টের ব্যাপারে কেন আমাকে মিথ্যা কথা বলল। সে কি সত্যি কথা বললে, তার প্রতি আমার ভালোবাসা কমে যেত? না তাকে আমি ছেড়ে চলে যেতাম? সে জানতো, দিনের পর দিন তার মা আমাকে অপমান করতো। সব জেনেও সে কেন কোনোদিন প্রতিবাদ করে নি।
প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে হলেও, তা আমি মনের মধ্যেই চেপে রেখেছিলাম। চেষ্টা করলে আমি অনেক আগেই প্রতিশোধ নিতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। এরপর আমার জীবনে এলে তুমি। তোমাকে আমি সত্যিই ভালোবেসেছি। সেই ভালোবাসার মধ্যে কোনো স্বার্থ ছিল না। ভালোবেসেছি বলেই আমি আমার সর্বস্ব উজাড় করে তোমায় দিয়েছি।
কিন্তু মাথায় দুর্বুদ্ধি এলো যেদিন আমার প্রেগনেন্সির রিপোর্টটা হাতে এলো। মুহূর্তের মধ্যে জেগে উঠল আমার প্রতিশোধ স্পৃহা। ঠিক করলাম, তোমার ভালোবাসার ফসল দিয়েই আমি সুবীরের ওপর প্রতিশোধ নেব। তার সঙ্গে থেকেই আমি তোমার সন্তানকে মানুষ করে তুলব। আমি যেমন বিয়ের পর থেকে কোনো দোষ না করেও জ্বলে পুড়ে মরেছি, কথায় কথায় অপমানিত হয়েছি, সুবীরও তার বাকি জীবনটা জ্বলে পুড়ে মরুক। আর যদি সুবীর এটা মেনে নিতে না পারে, তো আমি তোমার সন্তানকে নিয়ে বাকি জীবনটা একাই কাটিয়ে দেব।
তুমি চলে যাওয়ার দশ দিন পর সুবীর জানলো আমার প্রেগনেন্সির কথা। না, আমি তাকে এই খবর দিইনি। আমি শুধু ফোন করে সুবীরের মাকে খবরটা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম,’ আপনাকেই প্রথম জানালাম, কারণ আপনি এগারো বছর ধরে এই খবরটার জন্য উতলা হয়ে বসে ছিলেন।’ সুবীর তার মায়ের মুখ থেকে খবরটা শুনেও কোনো রিয়্যাক্ট করল না। অপমানটা হজম করে নিয়েছে বোধ হয়। অবশ্য তার হজম করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তবে সুবীরের পরিবর্তন হলো খবরটা শোনার পর থেকে। সে আজকাল অফিস থেকে সাতটা, সাড়ে সাতটার মধ্যে ফেরে না। ফেরে রাত দশটা নাগাদ। ফিরে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে। আমার সাথেও খুব একটা কথা বলে না।
যাই হোক ফিরে আসি, তোমার আর আমার কথায়। সেদিন আমি প্রতিশোধ স্পৃহায় অন্ধ হয়ে তোমায় অপমান করে ফেলেছিলাম। তোমার ভালোবাসার অমর্যাদা করেছিলাম। তোমার সেদিনের কথাতেই আমি বুঝেছিলাম, আমি ভুল করছি। আমি নিজে স্বার্থপর হয়ে পড়েছি। কিন্তু তোমাকে সেকথা বলার সুযোগ তুমি সেদিন আমাকে দিলে না। তোমার কথা ঠিক। তোমার জীবন নষ্ট করার কোনো অধিকার আমার নেই। তাছাড়া তুমি যেমন আমাকে ভালোবাসো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তাই এই ভালোবাসার পরিণতি হওয়া অবশ্যই উচিত। কিন্তু জানি না, খুব বেশি দেরি আমি করে ফেলেছি কি না। তাছাড়া তুমি অপমানিত হয়ে আমার সম্পর্কে কি ভাবছো, তা আমি জানি না।
ইতিমধ্যে আমি আমার মা, বাবাকে সব জানিয়েছি। তারা খুব কষ্ট পেলেও, আমার সিদ্ধান্তকে তারা মেনে নিয়েছে। আমি আগামী পরশু পাকাপাকি ভাবে কলকাতা যাচ্ছি। আমার বাবা, মা যে বাড়িতে থাকেন, সেই বাড়ি, বাবা আমার দাদাকে লিখে দিলেও, আমার নামে সোদপুরে বাবা একটা ফ্ল্যাট কিনে রেখেছিল। এতদিন ভাড়া দেওয়া ছিল। পুরোনো ভাড়াটে চলে যাওয়ার পর, এখনও নতুন ভাড়াটে আসে নি। আমি কলকাতায় গিয়ে সেখানেই উঠব। আর কলকাতা পৌছেই আমি উকিলের সাথে পরামর্শ করে সুবীরকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠাবো। বাকি জীবনটা একাই কাটাবো মনস্থ করেছি।
তবে তোমাকে ফিরে পাবার আশা মনে বাঁচিয়ে রেখেছি। তবে সে আশা পূর্ণ হবে কি না জানি না। কারণ আমি অনেক বড় পাপ করেছি। আমি যে তোমার ভালোবাসাকে অপমান করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। যত দিন বেঁচে থাকব, তোমাকেই ভালোবেসে বেঁচে থাকব। আর তোমার ভালোবাসার স্মৃতি তো চিরকাল আমার সাথেই থাকবে।
শেষে বলি, যদি আমাকে ক্ষমা করে, সব ভুলে গিয়ে আবার আমাকে গ্রহণ করতে পারো, তবে আমায় ফোন করো। চিঠির খামের পেছনে দেখো আমার নতুন মোবাইল নম্বরটা দেওয়া আছে। তোমার অপেক্ষায় আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব। তুমি না এলে বুঝবো, তোমার ভালোবাসার অপমানের জন্য এটাই আমার প্রায়শ্চিত্ত। আর যদি ফিরে আসো, বুঝবো আমার ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিল না।
যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। তোমার ভালোবাসা আপাতত আমার জঠরে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।
তোমার শুভ্রা
শিশির চিঠিটা বিছানার ওপর রেখে উঠে বসল। হাত দিয়ে চোখের জল মুচল। বিছানা থেকে উঠে টেবিলের ওপর থেকে মোবাইল ফোনটা তুলে নিল। ফিরে এলো বিছানায়। চিঠির খামের পেছন দিকে লেখা নম্বরে ফোন করল।
….সমাপ্ত…….