Site icon আলাপী মন

জঙ্গলে আত্মা বদল

জঙ্গলে আত্মা বদল
-রাখী চক্রবর্তী

 

 

বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, করাত্ করাত্ বাজ পড়ছে। ঘন জঙ্গলে একাকী আমি। রাত বারোটা বাজে। ঠিক এখনি জঙ্গলের পাশের ডোবা থেকে একটা পদ্ম ফুল তুলে আনতে হবে আমাকে। তা না হলে আমার কার্য সিদ্ধি হবে না।আমাকে অমরত্ব লাভ করতেই হবে। তান্ত্রিক বাবা অভয় দিয়েছে। আমাকে কাজটা করতেই হবে।”,,,,,,কনাদ জ্বরের ঘোরে ভুল বকছে। কনাদের মাথার পাশে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে। কনাদের মা মানে আমার ফুল কাকিমার তার ছেলেকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। কি যে তান্ত্রিকের পাল্লায় পড়েছে। এদিকে জ্বরটা ও নামছে না। রাত দুটো বাজে ভোরের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। পূব আকাশে সুর্য্যি মামার দেখা মিলতেই বাড়ির সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এখনই কনাদকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে। কিন্তু কনাদ তো অঘোরে ঘুমাচ্ছে। আর গায়ে জ্বরটা নেই। যাক, মা কালী সব রক্ষা করেছে। বাড়ির পরিবেশটা এখন বেশ ভালো। সামনে কালীপুজো তার জন্য অনেক কেনাকাটা আছে। আমরা সবাই রায়না যাবো মামার বাড়িতে।কালীপুজোর সময়। কনাদকে ব্যাগ গোছাতে দেখলাম।কি সব জিনিসপত্র নিচ্ছে বুঝি না বাবা।আমি ঘরে ঢুকতেই চমকে গেল কনাদ।

কাল সকালে রওনা দেবো।খুব মজা হবে।

রায়না পৌছতে আমাদের রাত্রি হয়ে গেল। খেয়ে দেয়ে আমরা যে যার মতো শুয়ে পরলাম।
ঠুকঠুক আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল। দেখি কনাদ একটা ঝোলা নিয়ে পেছনে বাগানের দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিছু না ভেবে আমি পিছু নিলাম ওর।শুনশান আলের পথ বেয়ে কনাদ যাচ্ছে পিছনে আমি।পথ চলতে চলতে ঘন জঙ্গলে আমরা প্রবেশ করলাম।আমার গা’টা ছ্যাৎ করে উঠল। সামনে বিশাল একটা ছায়া মূর্তি দেখে। তারপর ঝোপের আড়ালে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার শরীর পুরো ঠান্ডা হয়ে গেল।ছায়া মূর্তিটা একটা তান্ত্রিক-এর রূপ নিল। কনাদ ঝোলার থেকে একটা মাটির সরা বার করে তান্ত্রিককে দিল। তান্ত্রিক হিসু করে কনাদকে পান করতে বলল।কনাদ সেটা পান করল। আমার গা’টা ঘিনঘিন করে উঠল। কনাদ যেন একটা ঘোরে আছে। এবার জঙ্গলের পাশের ডোবার দিকে কনাদ গেল, জলে ঝাঁপ দিয়ে একটা পদ্ম ফুল তুলে যেই তান্ত্রিকের হাতে দিল ওমনি তান্ত্রিকটা সারা বিশ্ব কাঁপানো হাসি হাসলো। কনাদ এবার ঝোলার থেকে একটা ছুরি বের করে নিজের হাত কেটে রক্ত বের করে তান্ত্রিককে দিল আর নিজে নিজের রক্তর তিলক পড়ল। এবার কনাদ ক্রমশ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তান্ত্রিকটা অট্টহাসি হেসে কনাদের দেহটা টুকরো টুকরো করে লাল সুতোয় বেঁধে নিজের গলায় পড়ল।আমি এ সব দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তারপরের ঘটনা আমার মনে নেই। চোখ খুলে দেখি আমার সারা শরীর ব্যান্ডেজ করা। কিন্তু সবাই আমাকে কনাদ বলে ডাকছে কেন? আমি তো বিট্টু। সবাই কি আমাকে ভুলে গেল? দরজার পেছনে কে কে উঁকি মারছে? আমি জিগ্যেস করতেই ফুল কাকিমা আমাকে বলল,”বিট্টু কাল রাতে কোথায় গেছিল জানিস।” বিটটু আর বেঁচে নেই রে। আমি চীৎকার করে বলছি, “আমি ই বিট্টু।কনাদ মারা গেছে।” ফুল কাকিমা বলল,”বিট্টুর আত্মা যেন শান্তি পায়। কনাদ,,, কনাদ করে আমি ডাকছি।কনাদ আমার কানে কানে বলল, “আমাকে কোনোদিন  মৃত্যু স্পর্শ করতে পারবে না। হা হা হা। এক এক করে সবাইকে মেরে আমি তাদেরই দেহে নিজেকে ধারণ করে বাঁচবো বছরের পর বছর।”

আমি চিরকার করে মাকে ডাকছি। মা আমি বেঁচে আছি। মা কেন কাঁদছে আমার ফটো নিয়ে? আমি কনাদ না। বিশ্বাস করো। কেউ আমার কথা শুনতে পেল না।
কাল অমাবস্যার রাতে ঘন জঙ্গলে যেতে হবে।ডোবার থেকে পদ্ম ফুল তুলতে লাগবে। কে জানে আমার পিছু কে নেবে,,,,,,,,,??

Exit mobile version