পুনর্মিলন ২

পুনর্মিলন ২
বিভূতি ভূষণ বিশ্বাস

 

 

তুমি আমার এক মাত্র পুত্র তোমার কথা শুনবো না তো কার কথা শুনবো!
—— আসলে কি বাবা তোমার তো দিন রাত সব সমান। চোখ দুটো তো আর ভালোই হলো না তাই বলছিলাম ফ্লাটে থাকা যে কথা আর বৃদ্ধাশ্রমে থাকা একই কথা। তোমার নাতি বড় হয়েছে! রুমের অভাবে ওর পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। তাই বলছিলাম আর কি!

পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে আজ আমি বড়ই ক্লান্ত। তুমি স্বর্গে চলে গেছো ভালোই করেছ। নইলে এই কষ্ট সইতে পারতে না। তুমি জানো দেখতে না পেলে কি হবে এই বৃদ্ধাশ্রমে আমার কতো সহৃদয় বন্ধু হয়েছে। হৃদয়ের কল্পনায় সবাইকে দেখতে পাই। না না আমার কোনো দুঃখ কষ্ট নেই।

ঐ যে ডাক্তার দিদিমণি আমার সব থেকে প্রিয় বান্ধবী। ও যত বারই আমার শরীর পরীক্ষা করে তত বারই আমার ছোট্ট বেলার কথা মনে পরে যায়। সেই খেলার মাঠ ফুট ফুটে চাঁদের মতো মেয়েটির হাত ধরে গোলা ছুট খেলা। জ্যোৎস্না রাতে লুকোচুরি খেলা সবই মনে পড়ে যায় ।

ভালোলাগা,  ভালোবাসা হ্যাঁ আমি ওকে খুবই ভালোবাসতাম কোনো দিন বলতে পারিনি হয়তো ও আমার মনের কথা বুঝতো। হঠাৎ এক দিন ওরা ভাড়া বাড়ি ছেড়ে কোথায় যে চলে গেলো। মনে মনে খুঁজেছি কউকে বলতে পারিনি পাছে দুর্নাম রটে যায় সেই ভয়ে।

আজ মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। তবুও সেই ছোট্ট বেলার স্মৃতিগুলো ঘুরে ফিরে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আবছা দেখতে পাচ্ছি চারি দিকে লোক জনের ভিড়। আমাকে সবাই দেখছে। কারা এরা কউকে চিনতে পারছি না। ভিড়ের মধ্য থেকে একটি মুখ ভেসে উঠল। ফুটফুটে সেই ছোট্ট মেয়েটি। না না এতো ডাক্তার দিদিমনি। আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল। আমিই তোমার সেই ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটি “রিতা”

ও আমার হাত দুটো চেপে ধরলো ওর চোখ থেকে যেন ফোঁটা ফোঁটা মুক্তোর ধারা আমার বুকে পড়তে লাগলো ধীরে ধীরে সব অস্পষ্ট হয়ে আসছে।

—– তুমিই সেই রিতা?
— হ্যাঁ আমিই সেই রিতা।
একটি কালো পর্দা উপর থেকে ধীরে ধীরে চোখের উপর এসে পড়লো। চারি দিক সব অন্ধকার হয়ে গেলো।

Loading

Leave A Comment