সুপর্ণার নোবেল লাভ

সুপর্ণার নোবেল লাভ
-কুমার প্রণবেশ

 

 

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সুপর্ণা পতিতুন্ডী আনীত হলেন যমরাজ সমীপে।
যমরাজ সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চিত্রগুপ্তের দিকে তাকাতেই, চিত্রগুপ্ত খাতার পাতায় চোখ বুলিয়ে গড়গড় করে বলে গেলেন–
নাম– সুপর্ণা পতিতুন্ডী।
পূর্বতন জীবিকা– ওকালতি (শুধুমাত্র বিচ্ছেদগত)।
নিবাস– হলদিয়া।

জীবিতকালে উল্লেখযোগ্য কাজ– ১৭৫৬৩ দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ, আর কিছু নয়।

ধর্মরাজ বাঁ গালের নিচের দিকে একটু চুলকে নিলেন। পারিষদদের দিকে একটু তাকালেন। তারপরে বলে উঠলেন – “এ আবার কি কাজ। যাই হোক, ওহে পতিতুন্ডী, আপনার গুণকীর্তন একটু সবিস্তারে কহেন – আমরা সবাই শুনি, তারপর বিচার করব“।
সুপর্ণা শুরু করলেন– “শুনুন মি লর্ড“।
ধর্মরাজ বাধা দিয়ে বলে উঠলেন, “ওসব যাবনিক ভাষা প্রয়োগ এখানে চলবে না“।
“ঠিক আছে, শুনুন ধর্মাবতার –আমি হলদিয়া ল কলেজ থেকে ওকালতি পাশ করে খুব একটা সুবিধা করতে না পারায়, গৃহে ভয়ংকর অশান্তির মধ্যে বাস করছিলাম ।বরটাও ছিল অকর্মার ঢেঁকি।তাই শেষমেষ অনেক ভেবে চিন্তে একটা মামলা নিলাম, এটাই আমার প্রথম সফল মামলা হল নিজের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা। বিনা পারিশ্রমিকের মামলা। নিজেই উকীল– পারিশ্রমিক বিনা।
পয়সা এল না বটে, কিন্তু খুব নাম ছড়িয়ে পড়ল। একের পর এক বিচ্ছেদ ঘটাতে লাগলাম। সে সব বিচ্ছেদের অদ্ভুত অদ্ভুত কারণ। স্বামীর নাক ডাকা, ঘামের আর বদ বায়ুর দুর্গন্ধ, মদের দুর্গন্ধ, পরকীয়া, মারধোর ইত্যাদি নানাবিধ কারণ। আবার স্ত্রীদের ঝগড়া, টিভির রিমোট নিয়ে গন্ডগোল, বাপের বাড়ীকে মাথায় তোলা, পরকীয়া ইত্যাদি নিয়েও মামলা চলেছে। আমার বিচ্ছেদ নিয়ে আমি মোট ১৭৫৬৪ টি মামলার সফল উকীল“।
-“তা তোমার মামলার কারণ কি ছিল“।
“কিছুই ছিল না হুজুর। আমরা দু’জনেই তো আলোচনা করে মামলা সাজিয়েছিলাম। জজ সাহেব এক কথায় বিচ্ছেদ দিয়ে দিল। তারপর থেকে আমাদের রমরমা। যদিও বেআইনি, তবুও আমরা একসঙ্গেই এতোকাল থেকেছি ধর্মাবতার“।

“চিত্রগুপ্ত, এই মহিলা তো পৃথিবীর অনেক উপকার করেছেন। নোবেল সাহেবকে বলে ওকে একটা শান্তি পুরস্কারের বন্দোবস্ত করে দাও“।

Loading

Leave A Comment