রাতের অতিথি
-রাখী চক্রবর্তী
কনকদা রাইস মিলের কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল। গাঁয়ের পথে আলোর ব্যাবস্থা নেই বললেই চলে। শুধু শহরের বাবুদের বাড়িতে আলো ঝলমল করে। তবে ওনারা যখন গাঁয়ের বাড়িতে আসেন তখনই।
কনকদা বেশ সাহসী। ভুতের ভয় সে পায় না। তবে চোর ডাকাতদের বিশ্বাস নেই। কখন দাঁ দিয়ে কোপ বসাবে ঘাড়ে স্বয়ং ভগবানের ও জানার সাধ্যি নেই। কনকদা নানান কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে পালবাবুদের বাড়ির সামনে এসে পড়েছে তা নিজেই খেয়াল করেনি। হঠাৎ কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে পালবাবুদের বাড়ির দিকে তাকাতেই নজর পড়ল বাড়ির সদর দরজাটা খোলা। কনকদা একটু অবাকই হল। এত রাতে সদর দরজা খোলা।
–কনকদা! ও কনকদা এসো না!
–কে কে ডাকল আমাকে।
কনকদা একটু সাহসের সাথে ভেতরে গিয়ে দেখল, টেবিলের ওপর দু পা ছড়িয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে অনিমেষ পাল মানে ছোরদাবাবু। ছোড়দাবাবুকে সেই ছোট্ট থেকে দেখছে, ভুল হওয়ার কথা না।
-তা দাদাবাবু আপনি অন্ধকারে কেন? আলো জ্বালাননি কেন? এর মধ্যে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করছে দোতলার বারান্দা থেকে।
অনিমেষ বলল, অন্ধকারে থাকতে ভালো লাগছে তাই।
কনকদা বলল, দাদাবাবু আজ রাতে আমার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করবেন। চলুন আমার সাথে।
অনিমেষ বলল, যেটা বলতে এসেছি সেটা তোমাকে বলে দিই। মা যদি এখানে না আসতে পারে তবে তুমি কিন্তু এ বাড়ির দ্যাখা শোনা কোরো।
-তা ঠিক আছে দাদাবাবু। আপনি আছেন তো।
এই কথা বলতে বলতেই কনকদার চোখ ঝুল বারান্দার দিকে গেল। কুকুরের চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে। যেন গিলে খাবে এক্ষুনি। হা করে আছে। কনকদা খুব ভয় পেল। চেয়ারে দেখল দাদাবাবু নেই। কোথায় গেল নিমেষের মধ্যে। কনকদার গা ছমছম করছে। বাড়িটাকে আঁধার গ্রাস করছে। নিস্তব্ধ নিঝুম। দাদাবাবু……… দাদাবাবু……..!
-এই তো আমি….!
কনকদার সারা গা শিউরে উঠল। দাদাবাবুর পা শূন্যতে, হাত নেই। চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে পড়ছে। আঁশটে গন্ধ। কনকদা মাথা ঘুরে পড়ে গেল।
দে বাড়ির গিন্নিকে দাহ করে ফেরার সময় গায়ের ছেলেরা কনকদাকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে কিছুটা সুস্থ করে তুলল। ততক্ষণে পূবের আকাশে সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। কনকদা একটু সুস্থ হয়ে সবাইকে রাতের ঘটনাটা বলল। এর মধ্যে গ্রামে হৈচৈ পড়ে গ্যাছে , যে কাল বিকেল বেলায় পালবাবুর একমাত্র ছেলে ও পোষা কুকুর দুজনেই গাড়ি দূরঘটনায় মারা গেছে। কনকদা বুঝতে পারল যে কাল রাতে সে কাকে দেখেছে। এবার কনকদা স্বাভাবিক হতেই দাদাবাবুর ইচ্ছার কথা সবাইকে বললো। ছোড়দাবাবুর কথা মতো বাড়ি দেখাশোনা করে আজও কনকদা। কিন্তু বাগানের আনাচে কানাচে, ঝুল বারান্দায় দাদাবাবু ও কুকুর টাকে ঘুরতে দেখে মাঝে মধ্যে।