ক্ষত (পর্ব- ৩)

ক্ষত
-বিশ্বদীপ মুখার্জী

 

 

পর্ব-৩

কেয়ারটেকার রাতের খাবার দিয়ে যাওয়ার পর অন্বেষা মৃত্যুঞ্জয়ের ঘরে ঢুকলো। তখন প্রায় রাত দশটা বাজে। টেবিলের ওপর ঢাকা খাবারের থালা দেখে অন্বেষা বলল- ‘এখনও খাওনি?’
মৃত্যুঞ্জয় চেয়ারে বসে একাগ্রচিত্তে সিগারেটে টান দিয়ে যাচ্ছিলো। কেয়ারটেকার কখন রাত্রি আহার দিয়ে গেছে আর কখন অন্বেষা ঘরে প্রবেশ করেছে, তার হুঁশ নেই। কেয়ারটেকারটাও কথা বলে কম। মৃত্যুঞ্জয়কে চিন্তামগ্ন দেখে চুপিসারে খাবার রেখে চলে গেছে। মৃত্যুঞ্জয়ের সংবিৎ ফিরলো অন্বেষার কথায়। মৃত্যুঞ্জয়ের সামনের চেয়ারে অন্বেষা উপবেশন করলো।
‘কিছু চিন্তা করছো নাকি?’ জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা।
‘চিন্তার বিষয় হলে চিন্তা তো করতেই হয়। কোনো জিনিসের তদন্ত করতে গেলে নিজের চিন্তাধারাকে বহু দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। এমন অনেক সম্ভাবনার বিষয় ভাবতে হয়ে যেটা আদতে সম্ভাবনা হতেই পারে না।’
‘মানে?’
চেয়ার থেকে উঠে ঘরে পায়চারি শুরু করলো মৃত্যুঞ্জয়। বলল- ‘অনেক সম্ভাবনা। সত্যি বলতে আজ রাধিকার সাথে কথা বলার পর অনেক বিচিত্র বিচিত্র সম্ভাবনার উৎপত্তি মনের মধ্যে হলো।’
‘রাধিকার সাথে কথা হওয়ার পর?’ চমকে উঠল অন্বেষা।
‘হুম, রাধিকা। রাধিকার প্রতীকের সাথে প্রেমের সম্পর্কতে খটকা লাগছে আমার। হয়তো আমার খটকাটা নিছকই ভুল হতে পারে। পরশু রাতে তোমরা দেখতে পেয়েছিলে যে প্রতীকের বাসস্থান থেকে এক অন্য, তোমাদের অপরিচিত ছেলে বেরোয় এবং বাইকে করে চলে যায়। তার মানে এটাই হলো যে সে ছেলেটার বিষয় তোমরা আগে জানতে না। আজ রাধিকা আমায় বলল যে সে নাকি ওই অপরিচিত ছেলেটার বিষয় প্রতীককে জিজ্ঞেস করেছিল। কিন্তু কখন? কখন জিজ্ঞেস করেছিল সে? মেনে নিলাম গতকাল জিজ্ঞেস করেছিল। তাহলে কি প্রতীকের সন্দেহ হবে না? রাধিকা সেই ছেলেটার বিষয় কী করে জানলো, প্রতীক তাকে সেটা জিজ্ঞেস করবেই। তখন রাধিকা বলতে বাধ্য হবে তোমাদের রাতের অ্যাডভেঞ্চারের বিষয়। আসল খটকা তো আমার এখানেই লাগছে অন্বেষা। তাহলে কি রাধিকা বিকাশ পান্ডের বিষয় আগে থেকেই জানে? আর যদি জেনে থাকে তাহলে তোমার থেকে লুকিয়ে রাখলো কেন?’
অন্বেষা অবাক দৃষ্টে তাকিয়েছিলো মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে।
‘মাই গড! এ বিষয় তো আমি ভেবেই দেখিনি।’ বলল অন্বেষা।
‘ভেবে দেখতে হয় অন্বেষা, ভেবে দেখতে হয়। যখন তদন্ত করতে নেমেছো, তখন প্রতিটি জিনিসকে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। কখন কোন জিনিস থেকে কী দরকারী তথ্য বেরিয়ে আসবে, বলা কঠিন।’
পুনরায় চেয়ারে বসলো মৃত্যুঞ্জয়।
খানিক চুপ থাকার পর মৃত্যুঞ্জয় আবার বলল- ‘বিকাশ পান্ডের বিষয় বেশ কিছু ইনফরমেশন পাওয়া গেলো। কিন্তু যা ইনফরমেশন পাওয়া গেছে সেটা যথেষ্ট নয়। আমাদের জানতে হবে বিকাশ পান্ডের সাথে প্রতীক নেলসনের লিংক।’
‘সেটা কী ভাবে জানতে পারবো?’ জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা।
প্রায় বিড়বিড় করে মৃত্যুঞ্জয় নিজের মনেই বলল-‘পান্ডেজী’র বাড়িতে যেতে হবে একবার। দেখা যাক কেমেস্ট্রিতে এক্সট্রা অর্ডেনরি স্টুডেন্ট এখন কী করছে।’
দুজনেই খানিক চুপ থাকলো। কিছু একটা বলবার চেষ্টা করছে অন্বেষা, কিন্তু বলতে পারছে না। খানিক পর মুখটা পান্ডুবর্ণ করে বলল- ‘একটা খারাপ খবর আছে , মৃত্যুঞ্জয়দা।’
‘কী?’
‘আগামী কাল আমি অফিস থেকে ছুটি পাইনি। ছুটি পেলে সমস্তিপুর যাওয়া যেতে পারতো।’
একটা দীর্ঘস্বাস ফেলে মৃত্যুঞ্জয় বলল- ‘ঠিক আছে, তাহলে কাল আমি বিকাশ পান্ডের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। একটা কথা মনে রেখো অন্বেষা, এবার থেকে আমরা যা যা করবো সেটার বিষয় যেন রাধিকা না জানতে পারে।’
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো অন্বেষা। যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। বলল- ‘তুমি নিশ্চিন্তি থাকতে পারো মৃত্যুঞ্জয়দা। রাধিকা এবার থেকে কিছুই জানতে পারবে না।’
‘আর হ্যাঁ, সগুনা মোড়, দানাপুর কী করে যাবো, সেটা বলে দাও।’
সগুনা মোড় থেকে ডান দিকে একটা রাস্তা চলে গেছে। রাস্তা তাকে বড় গলি বললে ভালো হয়। রাস্তার দু’ধারে কোনো সময়ে খোলা মাঠ ছিলো, এখন সেখানে বড়ো বড়ো বাড়ির প্রাচুর্য। বড়ো বড়ো বাড়ি পেরিয়ে রাস্তার শেষ প্রান্তে বিকাশ পান্ডের বাড়ি খুঁজে পেলো মৃত্যুঞ্জয়। ছোট এক তলা বাড়ি। গেটের পাশে লেখা আছে- বিনয় পান্ডে। মৃত্যুঞ্জয় জানে বিনয় পান্ডে বিকাশের বাবার নাম। লোহার ফটকে টোকা মারলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘কৌন হ্যায়?’ ভেতর থেকে এক ভারী পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো।
‘বিকাশ সে মিলনা থা।’ মৃত্যুঞ্জয় বলল।
লোহার ফটক খুলে গেলো। হাত কাটা গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন। হিন্দীতেই বললেন- ‘বিকাশ তো অফিসে। বেলা বারোটা বাজে। এই সময় কি সে বাড়িতে থাকে?’
‘ফেরে কটায়?’ জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘রাত দশটা কিম্বা এগারোটার মধ্যে ফিরে আসে।’ ভদ্রলোক জবাব দিলেন।
‘আপনি কি তার বাবা?’
ভ্রুকুটি করে মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে তাকালেন ভদ্রলোক।
‘তুমি কে হে? এর আগে তো কোনো দিন দেখিনি তোমায়।’ সন্দেহের স্বরে বললেন পান্ডেজী।
‘আপনি আমাকে চিনবেন না। এটা জানুন যে আমি একটা কেসের ইনভেস্টিগেশনে এখানে এসেছি

‘ইনভেস্টিগেশন!’ ভদ্রলোক ঘাবড়ে গেলেন।
‘আজ্ঞে হ্যাঁ। বিকাশ কোন অফিসে কাজ করে?’
পান্ডেজী বিকাশের অফিসের নাম ও ঠিকানা দিলেন। মৃত্যুঞ্জয় আবার জিজ্ঞেস করলো- ‘ক’টায় ছুটি হয়ে তার?’

‘সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা।’
‘সন্ধ্যে সাতটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত সে কোথায় থাকে আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেননি?’
আমতা আমতা করে বিনয় পান্ডে বললেন- ‘নিজের…. নিজের বন্ধুদের বাড়ি । ‘
‘আপনি কি জানেন আপনার ছেলে বিকাশ পান্ডে রোজ সন্ধ্যেতে কংকড়বাগ কলোনী যায়?’
মৃত্যুঞ্জয়ের এই কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লেন বিনয় পান্ডে।
‘কংকড়বাগ কলোনী! সেখানে তো শুনেছি কোনো ভাড়াটে থাকে।’
এবার ভ্রুকুটি করে মৃত্যুঞ্জয় তাকালো।
‘ভাড়াটে থাকে মানে? সেখানে আপনার কোনো বাড়ি আছে নাকি?’ জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘আমার বাড়ি না। আমার এক ভাইয়ের বাড়ি। অনিরুদ্ধ তিওয়ারী তার নাম। কানপুরে থাকে সে। বাড়িটা খালি পড়েছিল তাই শুনেছি ভাড়া দিয়েছে কাউকে।’
‘ভাড়াটেকে আপনি চেনেন?’
‘চিনবো কী করে? তাকে তো চোখেও দেখিনি।’
‘আপনার ছেলে তাকে চেনে সেটা আপনি জানেন নিশ্চয়ই?’
‘জানি না। তবে আমার ছেলে যদি তাকে চেনে তাতে কোনো অসুবিধে তো নেই।’
‘অসুবিধে আছে কি না সেটা পরে জানা যাবে পান্ডেজী। তবে একটা কথা আপনাকে বলে রাখি, সেই বাড়িতে ভাড়াটে যে, সে কিন্তু সন্দিগ্ধ। শুনেছি আপনার ছেলে নাকি পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো।’
নিজের ছেলের প্রশংসা শুনে মুচকি হাসলেন বিনয় পান্ডে। বললেন- ‘তা তো ছিলো । আই.আই.টি. থেকে পড়ার ইচ্ছে ছিলো। আমি পুরো ব্যবস্থা করে নিয়েছিলাম। কিন্তু কি যে হলো তার কিছুই বুঝতে পারলাম না। বিকাশ বলল যে, সে পাটনাতেই থাকতে চায়। এখানেই কোনো এক কোম্পানীতে কাজ করবে সে। জেদ ধরে রইল। আমি বেশি কিছু বললাম না তাকে। এখন আফসোস হয়। যদি আই.আই.টি. থেকে পড়তো, তাহলে অনেক বেশি টাকা রোজগার করতে পারতো।’
কথার শেষে ভদ্রলোকের মুখে বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো।
‘তার আই.আই.টি. থেকে না পড়ার পেছনে কারণ জিজ্ঞেস করলেন না?’
‘করেছিলাম। কিন্তু জবাব দেয়নি সে।’
বেশিক্ষণ আর থাকলো না মৃত্যুঞ্জয় সেখানে। এবার তার গন্তব্য বিকাশের অফিস। বিকাশের অফিস ফ্রেজার রোডে। সগুনা মোড় থেকে বেশ অনেকটাই দূর। পথে অত্যাধিক ভিড়ের দরুণ সগুনা মোড় থেকে ফ্রেজার রোড পৌঁছাতে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রায় দু’ঘন্টা সময় লাগলো। পাটনা স্টেশন থেকে নাক বরাবর সোজা রাস্তা বেরিয়ে গেছে ফ্রেজার রোড। গান্ধী ময়দান পর্যন্ত চলে যাওয়া এই পথে আকাশবাণী সহিত প্রচুর বড় – বড় সরকারী আর বেসরকারী কার্যালয় আছে। সাথে আছে বেশ কিছু শপিং মল। আকাশবাণী থেকে একটু এগিয়েই এক বহুতল অট্টালিকার সামনে অটো থেকে নামলো মৃত্যুঞ্জয়। অট্টালিকার ভেতরে ঢুকবার সময় মৃত্যুঞ্জয় দেখলো তার পাশ দিয়ে এক জন বাইকে করে বেরিয়ে গেলো। হেলমেটে ঢাকা চেহারার জন্য মৃত্যুঞ্জয় চিনতে পারলো না তাকে। কিছু একটা সন্দেহ হতে ঘাড় ঘুরিয়ে বাইকের দিকে তাকালো সে। নম্বর প্লেটের দিকে নজর গেলো। নম্বরটা চেনে । জ্যামের কারণে বিকাশ পান্ডের বাইক অত্যন্ত ধীর গতিতে পাটনা স্টেশনের দিকে এগোচ্ছে। একটা অটো থামিয়ে সেটাতে বসলো মৃত্যুঞ্জয়। অটোটা বাইক থেকে প্রায় কুড়ি হাত পেছনে। মন্দ গতিতে অটো বাইকের পিছু নিচ্ছে। আফসোস হলো মৃত্যুঞ্জয়ের। এই মুহূর্তে যদি তার কাছেও বাইক থাকতো তাহলে বিকাশ পান্ডেকে নাগালে পেতে বেশি বেগ পেতে হতো না তাকে। মাঝে মাঝে বাইক আর অটোর দূরত্ব বাড়ছে। চারিপাশে বাইক, গাড়ি, অটোর ভিড়ের দরুণ চোখের আড়ালে হয়ে যাচ্ছে বিকাশ পান্ডে। অটোতে বসে ছটফট করছে মৃত্যুঞ্জয়। শেষ রক্ষা কি হবে? মৃত্যুঞ্জয় কি জানতে পারবে এই অসময় বিকাশ পান্ডে নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে কোন গন্তব্যের পানে রওনা দিয়েছে? মৃত্যুঞ্জয় জানে পাটনা স্টেশন থেকে এক্সিবিশন রোডের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। সে ফোন করলো অন্বেষাকে।

‘তুমি কি কিছুক্ষণের মধ্যে পাটনা জংশনে পৌঁছাতে পারবে? আসলে তোমার স্কুটিটার খুব প্রয়োজন আমার।’ অন্বেষাকে বলল মৃত্যুঞ্জয়।
‘ঠিক আছে, আমি আসছি। তুমি এখন কোথায়?’   ‘ফ্রেজার রোডে। খুব ভিড়। অটোতে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে স্টেশন পৌঁছাবো। তুমি দেখে নাও এক্সিবিশন রোডে জ্যাম আছে কি না।’

না, এক্সিবিশন রোডে জ্যাম ছিলো না। মৃত্যুঞ্জয়ের স্টেশন পৌঁছবার আগেই অন্বেষা সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলো। অন্বেষার স্টেশন পৌঁছবার ঠিক মিনিট দু’য়েক পর মৃত্যুঞ্জয়ের অটো থামলো স্টেশনের সামনে। অটো থেকে নামতেই অন্বেষাকে দেখতে পেলো সে। অন্বেষা নিজে একটা হেলমেট পরেছিলো এবং মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য নিজের কলিগের একটা হেলমেট জোগাড় করে নিয়ে এসেছিল। চটজলদি অটোর ভাড়া মিটিয়ে অন্বেষার কাছে এসে তার হাতে থাকা হেলমেটটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে নিজে পরলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘ব্যাপারটা কি মৃত্যুঞ্জয় দা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’ বলল অন্বেষা।
‘কোনো দিন এতো ভিড়, এতো জ্যামকে আমি মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসিনি যত আজ ভালোবাসলাম। আজ যদি রাস্তায় এতো ভিড় না হতো তাহলে হয়তো বিকাশ আমার নাগালের বাইরে চলে যেতো।’
স্কুটি স্টার্ট করলো মৃত্যুঞ্জয়, অন্বেষা পেছনে বসলো।
যে দিকে বিকাশ বাইক নিয়ে গিয়েছিল সে দিকে একটু এগোতেই সেই বাইককে দেখতে পেলো তারা। স্টেশনের পাশ দিয়ে একটা ফ্লাইওভারে উঠে পড়েছে দুজনের দু’ চাকা । খানিক পর বিকাশ নিজের বাহনকে ডান দিকে ঘুরিয়ে রাজেন্দ্র নগর স্টেশনের পথ ধরলো। তুলনামূলক এদিকে ভিড় কম। বিকাশের বাইক থেকে মৃত্যুঞ্জয় ও অন্বেষার স্কুটির দূরত্ব এখন মাত্র দশ হাত। ইচ্ছাকৃতই স্কুটির গতি অল্প কম করলো মৃত্যুঞ্জয়। সে চায় না বিকাশের কোনো রকমের সন্দেহ হোক। হঠাৎ মৃত্যুঞ্জয় ও অন্বেষা দেখলো রাজেন্দ্র নগর স্টেশনের কিছু আগে বিকাশ নিজের বাইক দাঁড় করলো। একজন অপেক্ষা করছিলো তার। বাইক দাঁড় করাতেই সে বসে গেলো বাইকের পেছনে। মৃত্যুঞ্জয় ও অন্বেষা দুজনেই চিনতে পারলো তাকে।
‘ওঃ মাই গড। এটা আমি কী দেখছি মৃত্যুঞ্জয় দা?’ বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা।
‘খুব সম্ভব আরও অনেক কিছুই দেখতে আর জানতে পাবে।’ চাপা গলায় মৃত্যুঞ্জয় বলল।
‘সেই কারণেই হয়তো রাধিকা আজ অফিসে আসেনি। কিন্তু এখনও আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’ অন্বেষা কথা শেষ করলো।
সামনের বাইক পুনরায় স্টার্ট হলো। রাধিকাকে পেছনে বসিয়ে এগিয়ে গেলো বিকাশ পান্ডে। মৃত্যুঞ্জয় তৎক্ষনাৎ তাদের পিছু নিলো না। খানিক দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য হলো অন্বেষা। বলল- ‘কী হলো? ফলো করবে না?’
‘করবো। একটু দূরত্ব রাখতেই হবে। আমাদের দেখে নিলে অসুবিধে আছে।’
বিকাশ ও রাধিকার এগিয়ে যাওয়ার প্রায় কুড়ি সেকেন্ড পর মৃত্যুঞ্জয় স্কুটি স্টার্ট করলো।
রাজেন্দ্র নগরে বেশ বড় এক জলের ট্যাঙ্কি আছে। সেই ট্যাঙ্কিকে ঘিরে ছোট বড়ো বেশ কিছু বাড়ির ভীড়। ট্যাঙ্কির গা ঘেঁসে এক সরু গলি চলে গেছে। সেই গলির শুরুতেই এক দু’তলা বাড়ি সামনে নিজের বাইক দাঁড় করালো বিকাশ পান্ডে। নিচের তলা বন্ধ। ফটক খুলতেই পাশ দিয়ে চলে গেছে দু’ তলায় যাওয়ার সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে দুজনেই উঠে গেলো দু’ তলায়। জলের ট্যাঙ্কির কাছে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্যটা দেখছিল মৃত্যুঞ্জয় ও অন্বেষা। অন্বেষা বলল- ‘ মেন গেটে তো তালা লাগিয়ে দিলো। এবার আমরা ভেতরে ঢুকবো কী করে?’
‘রাধিকাকে কল করে মোবাইলটা আমাকে দাও।’ বলল মৃত্যুঞ্জয়।
মৃত্যুঞ্জয়ের কথা মতো কাজ করলো অন্বেষা। যে মুহূর্তে রাধিকার মোবাইলে রিং হলো, ফোনটা মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে ধরিয়ে দিলো সে।
‘হ্যাঁ বল অন্বেষা।’ ওপার থেকে রাধিকার গলা ভেসে এলো।
‘অন্বেষা নয়, মৃত্যুঞ্জয়। রাধিকা, কোনো জিনিসই বেশি দিন লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এক না এক দিন সত্য ঠিক সামনে চলে আসে। খুব প্রয়োজন না হলে আমি দরজা ভাঙ্গি না। তাই বলছি, আপনারা নিচে নামবেন, না আমার ওপরে উঠে দরজা ভাঙ্গবো?’
মৃত্যুঞ্জয়ের এহেন কথায় থতমত খেয়ে গেলো রাধিকা। কী বলবে কিছু বুঝতে না পেয়ে ফোন কেটে দিলো সে। কিছুক্ষণ পর দু’তলার ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো রাধিকা। সামনের বারান্দায় এসে রাস্তার দিকে তাকালো। তার ঠিক সামনে প্রায় পনেরো হাতের তফাতে জলের ট্যাঙ্কি। মৃত্যুঞ্জয়কে খোঁজার জন্য এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল সে। হঠাৎ জলের ট্যাঙ্কির দিকে নজর গেলো তার। দেখতে পেলো মৃত্যুঞ্জয় আর অন্বেষাকে । ম্লান দৃষ্টিতে খানিক চেয়ে রইল সে দিকে, তার পর সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো নিচে। মৃত্যুঞ্জয় আর অন্বেষাও বাড়ির দিকে এগোলো। ফটক খুলে তাদের ভেতরে ঢুকবার পথ করে দিলো রাধিকা। তার পান্ডুবর্ণ মুখের পানে খানিক এক দৃষ্টে চেয়ে অন্বেষা বলল- ‘তুই যে এতো বড় কথা আমার থেকে লুকিয়ে রাখবি এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।’
প্রত্যুত্তর দিলো না রাধিকা। তিনজনে দু’তলায় উঠলো। ঘরে একটা চেয়ারে ঘাড় হেঁট করে বসে বিকাশ। একটা খাট পাতা, অন্বেষা ও রাধিকা বসলো তাতে। মৃত্যুঞ্জয় বসলো না।
‘বিকাশবাবুর সাথে কথা পরে হবে। আগে রাধিকার সাথে কিছু কথা সেরে নেওয়া যাক আগে।’ রাধিকার দিকে তাকিয়ে মৃত্যুঞ্জয় জিজ্ঞেস করলো- ‘আপনার বিকাশ পান্ডের সাথে সম্পর্কটা কি?’
রাধিকা মাটির পানে চেয়ে বসে আসে। মুখে কথা নেই তার। রাধিকার বদলে বিকাশ বলল মৃত্যুঞ্জয়কে- ‘আমি বলছি আপনাকে। সব কথা খুলে বলছি আপনাকে।’
‘খুব ভালো। কিছু লুকাবেন না দয়া করে।’ বলল মৃত্যুঞ্জয়।
‘না। লুকাবো না।’ বিকাশ বলতে শুরু করলো- ‘রাধিকার সাথে আমার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। স্কুল লাইফ থেকে। রাধিকা যে প্রতীক নেলসনের সাথে প্রেমের খেলা খেলছে সেটা আমারই প্ল্যান। প্রতীকের বিচিত্র কান্ডকারখানার বিষয় জানা দরকার।’
‘প্রতীকের সাথে তো আপনার রোজ দেখা হয়, জিজ্ঞেস করেননি?’
‘দেখা তো রোজ হয়। জিজ্ঞেসও করেছি। কিন্তু জবাব দেয়নি সে। যে বাড়িতে প্রতীক ভাড়া থাকে সেটা আমার কাকার বাড়ি। আমি প্রতীককে এটাও বলেছি যে কারণ না বললে তার এই ভয়ানক সব কার্যকলাপের খবর আমি কাকাকে বলে দেবো।’
‘তারপর?’ জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা।
‘আমার হাতে-পায়ে পড়লো সে। কাকাকে বলতে মানা করলো।’
‘সে মানা করলো আর আপনি মেনে নিলেন?’ মৃত্যুঞ্জয় বলল।
পুনরায় ঘাড় হেঁট করলো বিকাশ।
‘বলুন বিকাশ বাবু, বলুন। আসল কথাটা কি সেটা বলুন। আপনাদের মধ্যে কোনো কি কোনো এগ্রিমেন্ট হয়েছিল? যেমন প্রতীক নেলসন সন্দেহজনক লোক, তেমন আপনিও কিছু কম না।’
মৃত্যুঞ্জয়ের এই কথায় চমকে উঠল বিকাশ পান্ডে।
‘ আ….আমি সন্দেহজনক?’ আমতা আমতা করে বললো সে।
‘হ্যাঁ, আপনিও। কেমেস্ট্রিতে আপনি এক্সট্রা অর্ডিনারি স্টুডেন্ট। আই.আই.টি. থেকে পড়ার ইচ্ছেও ছিলো আপনার। দেশের যে কোনো ভালো আই.আই.টি. কলেজে আপনার অ্যাডমিশন হয়ে যেতো। হঠাৎ আপার ইচ্ছেতে পরিবর্তন ঘটল। আপনি পাটনাতেই রয়ে গেলেন। সাফল্যকে নিজের হাতে ঠেলে দিলেন আপনি। কারণটা জানতে পারি কি?’
মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে খানিক অবাক দৃষ্টিতে তাকাবার পর বিকাশ বলল- ‘পাটনা থেকে চলে গেলে আমার গবেষনার কাজ পুরো হতো না। কেমেস্ট্রিতে আমি ভালো ছিলাম। একটা কেমিকেলের বিষয় গবেষণা করার পোকা আমার মাথায় বহু দিন আগেই ঢোকে। ক্ষমা করবেন, সেই গবেষণার বিষয় আপনাদের আমি বলতে পারবো না। ওটা কনফিডেন্সিয়াল। এটুকু কথা দিতে পারি যে আমার গবেষণা পুরো হলে ভবিষ্যতে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং ভালোই হবে। শুরুতে নিজের কিছু জমানো টাকা দিকে গবেষণা শুরু করলাম। কাকার বাড়িটা খালি ছিলো তখন। বাড়িতে দুটো ঘর। আমার গবেষণার জন্য একটা ঘর যথেষ্ট ছিলো। অর্থের অভাবে মাঝে বহু দিন আমি নিজের রিসার্চ বন্ধ রাখি। একটা চাকরী শুরু করি। স্যালারির টাকা দিয়ে আবার শুরু করি নিজের রিসার্চ। তারপর সেই বাড়িতে প্রতীক নেলসন আসে। কাকা আমাকে ফোন করে বলে দিয়েছিল যে তাকে একটা ঘর খুলে দিতে। আমি তাই করলাম। নিজের অফিস শেষ করে আমি রোজ সেই বাড়িতে যাই। রিসার্চের কাজ চালিয়ে যাই। এখন আর টাকার অভাব হয় না।’
‘বুঝলাম। ব্ল্যাকমেল। নিজের কাকাকে প্রতীকের বিষয় না বলার কারণ প্রতীক থেকে টাকা নেওয়া আর নিজের গোপন রিসার্চকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাই তো?’ বলল মৃত্যুঞ্জয়।
খানিক চুপ থেকে বিকাশ পুনরায় বলতে শুরু করলো- ‘কিন্তু সেটা করেও আমি শান্তি পাইনি। প্রতীকের শরীরে এমন সব চোট কী করে লাগে সেটার জানার প্রবল ইচ্ছে মনের ভেতর রয়ে গেলো। তারপর একদিন রাধিকা আমায় বলে যে তার অফিসে নাকি এক অদ্ভুত ছেলে জয়েন করেছে। রাধিকার মুখে তার নাম শুনলাম। তারপরেই আমার মাথায় এই প্ল্যানটা আসে। রাধিকা যদি প্রতীককে কোনোক্রমে নিজের প্রেমের জালে ফাঁসাতে পারে, তাহলে প্রতীকের চোটের কারণ জানা যেতে পারে।’
ইতিমধ্যে মৃত্যুঞ্জয় ঘরময় পায়চারি আরম্ভ করেছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পুরো ঘরটাকে দেখছে সে। হঠাৎ রাধিকার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো- ‘তো রাধিকা, কিছু জানতে পারলে?’
‘না। এখন অবধি কিছুই বলেনি সে। ওর পেট থেকে কথা বার করবার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আফসোস, সফল হয়েনি এখনও।’ বিষন্নতা মেশানো সুরে রাধিকা বলল।
‘আমরা এতোজন মিলেও যদি প্রতীকের শরীরে লাগা আঘাতের কারণ খুঁজে না বার করতে পারি, তাহলে তো সেটা আমাদের ফল্ট, মৃত্যুঞ্জয়দা।’ হতাশার স্বরে কথাটা বলল অন্বেষা।

মৃত্যুঞ্জয় যেন তার কথা শুনলোই না। সে বিকাশকে জিজ্ঞেস করলো- ‘তুমি ছাড়া সে বাড়িতে আর কে কে যায়?’
‘বলতে পারবো না। আমি প্রায় সন্ধ্যে সাতটায় ঢুকি আর রাত এগারোটায় বেরোই। এর মধ্যে তো কেউ আসে না। তারপরে যদি কেউ আসে, সেটা আমার জানা নেই। সারা সকাল আমি সেই বাড়িতে যাই না। কে আসছে, কে যাচ্ছে সেটা জানবো কী করে?’
‘এই বাড়িটা কার?’ মৃত্যুঞ্জয় জিজ্ঞেস করলো।
‘এই ঘরটা আমি ভাড়া নিয়েছি। আই.আই.টি. তে অ্যাডমিশন না নেওয়ার পর থেকেই বাড়ির সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। মাসে কিছু দিন বাড়িতে থাকি, ভালো না লাগলে এখানে চলে আসি।’ বিকাশ বলল।
‘তুমি বললে যে তোমার কাকার বাড়িতে দুটো ঘর। একটা ঘরে তুমি রিসার্চ করো আর একটা ঘরে প্রতীক থাকে।’
‘হ্যাঁ।’
‘প্রতীকের ঘরে কোনো দিন ঢুকেছো?’
‘না। সে নিজের ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয় না।’
‘হবে না। এমন করে হবে না। রহস্য ভেদ করতে গেলে তার ঘরে ঢুকতেই হবে।’
‘কিন্তু কী করে? চাবিও তো নেই আমার কাছে।’ বিকাশ বললো।
খানিক শূন্যের দিকে তাকিয়ে আবার রাধিকার দিকে ফিরলো মৃত্যুঞ্জয়। তাকালো ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে। রাধিকা মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে অবাক নেত্রে চেয়ে রইলো। তার ইঙ্গিত বুঝতে পারলো না সে। এবার মৃত্যুঞ্জয়কে নিজের মুখেই কথাটা বলতে হলো। রাধিকার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে বলল- ‘আর কোনো উপায় নেই রাধিকা। আমাদের প্রতীকের ঘরে ঢুকতেই হবে। আর সেটা করার জন্য তালা ভাঙ্গা অনিবার্য। প্রতীক নেলসনের সামনে সেটা করা অসম্ভব। পরশু রবিবার। সারা দিন তুমি প্রতীক নেলসনকে ব্যস্ত রাখবে। যেখানে খুশি ঘুরতে যাও তাকে নিয়ে। এই ফাঁকে আমরা দরজার তালা ভেঙ্গে তার ঘরে প্রবেশ করবো।’
‘কিন্তু যখন সে ফিরে এসে দেখবে যে তার ঘরের তালা ভাঙ্গা, তখন তো সন্দেহ হবে তার।’ বলল বিকাশ।
‘হবে বৈকি। সন্দেহ না হওয়ার কোন কারণ নেই। সেটারও একটা উপায় ভেবেছি।’
‘কি উপায় মৃত্যুঞ্জয়দা?’ জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা।
‘প্রতীক নেলসনের ঘরের তালা ভাঙ্গার সাথে সাথে বিকাশের ঘরের তালাও ভাঙ্গা হবে। বিকাশ নিজের ঘরের কিছু জিনিস সরিয়ে রাখবে। বিকাশ সেই ঘরে রিসার্চ করে। দরকার পড়লে দু’একটা টেস্ট টিউবও ভেঙ্গে দিতে পারে। পুরো ব্যাপারটাকে এমন করে সাজাতে হবে যাতে মনে হয়ে সেই বাড়িতে অন্য কারুর প্রবেশ ঘটেছিল। বিকাশ, তোমার গবেষণার বিষয় কি প্রতীক জানে?’
‘কিছু  কিছু জানে। প্রতীক এটা জানে যে আমি কিছু একটা নিয়ে রিসার্চ করছি। এ বিষয় কোনো ইন্টারেস্ট দেখায়নি সে।’ বিকাশ জবাব দিলো।
‘ভেরি গুড। তাহলে তো আরও সহজ হয়ে গেলো। প্রতীককে এটা বোঝাতে হবে সেই বাড়িতে এমন এক জনের প্রবেশ ঘটেছিলো যে বিকাশের গোপন গবেষণার বিষয় জানতে পেরেছিল। খালি বাড়ি পেয়ে ঘরে ঢোকে। সে জানতো না বিকাশের ঘর কোনটা। তাই দু’টো ঘরের তালাই সে ভেঙ্গে দেয়। সে হয়তো বিকাশের অজ্ঞাত প্রতিপক্ষ।’
‘এক্সিলেন্ট!’ উত্তেজনায় লাফিয়ে ওঠে অন্বেষা।
মৃত্যুঞ্জয় আবার বিকাশকে বলে- ‘আমি আর অন্বেষা সেই বাড়ির আশেপাশেই থাকবো। রাধিকা প্রতীককে ফোন করে সকাল সাড়ে ন’টায় দেখা করার কথা বলবে পাটনা জংশনের সামনে। প্রতীকের বেরোতে বেরোতে হয়তো দশটা বাজবে। সময় আগে পিছেও হতে পারে। তাও আমার বিশ্বাস খুব একটা দেরি সে করবে না। প্রতীকের সাথে রাধিকার দেখা হয়ে গেলে রাধিকা অন্বেষাকে ওয়াটসঅ্যাপে একটা ম্যাসেজ করবে। সেটাই হবে আমাদের গ্রীন সিগনাল। বিকাশ ঠিক সকাল সাড়ে দশটায় আমাদের অ্যাটেন্ড করবে। সাথে নিয়ে আসবে এক বড় হাতুড়ি। আমরা তিনজনে বেলা বাড়া পর্যন্ত বিকাশের ঘরে অপেক্ষা করবো। দুপুরের দিকে যখন রাস্তায় লোক চলাচল কম হবে তখন ভাঙ্গা হবে প্রতীকের ঘরের তালা। আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে অন্বেষা রাধিকার ওয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করবে। ততক্ষণ রাধিকার দায়িত্ব প্রতীক নেলসনকে ব্যস্ত রাখার। কি রাধিকা, পারবে তো?’
কোনো এক অজানা ভয়ে রাধিকার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয়ের কথায় শুধু ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দিলো যে সে একমত।

 

 

চলবে…………….

Loading

Leave A Comment