বুদ্ধি
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাস
বাড়ির ছোটো ছেলে আদরে আদরে বাঁদর হয়ে গেছে। পড়াশুনা কপালে জোটেনি কারণ মা যে জন্ম দিয়েই স্বর্গে চলে গেছে। বড়ো ভাই সে তো বিরাট বড়ো বিজ্ঞানী আমেরিকাতে থাকে। নিজেই আধ পাগল কারোর খোঁজ খবর নেবার সময় তার নেই। মেজো ছেলে Oxford বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। মেম বিয়ে করে সেখানকার বাসিন্দা হয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে দু’ একটা চিঠি আসে সব ইংরেজিতে লেখা বোঝার উপায় নেই। বাবা যত্ন করে রেখে দেন আর সুযোগ পেলেই স্কুল মাস্টারকে দিয়ে পড়িয়ে নেন। চিঠিগুলো বাবার পকেটেই থাকে যেন অমূল্য সম্পদ।
হঠাৎ এক দিন বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তার বাবু বলেছেন অপারেশন করতে হবে লাখ দুই টাকা লাগবে। দাদাদের কাছে ফোন করলে কি সব ইংরেজীতে বলে ছোটো ভাইয়ের তা সহ্য হয় না। ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ঘরে কুড়িয়ে কাছিয়ে 13 হাজার টাকা হলো সবই 100 টাকার নোট। সব টাকা একটি বাক্সে ভরে। একটি বিজ্ঞাপন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিলো।
“আমি একটি বাক্স ভর্তি কিছু টাকা পেয়েছি টাকার অঙ্ক দশ থেকে কুড়ি হাজারের মধ্যে। একশত টাকা জমা দিয়ে নাম লেখাতে হবে আর দুটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলেই সব টাকা তাঁর। প্রশ্ন দুটি হলো ১) কত টাকা? ২) কি কি নোট?
যারা নাম লেখাতে ইচ্ছুক আগামী কাল হ্যাপি ক্লাবের মাঠে সকাল সাতটা থেকে নাম লেখানো শুরু। রেজাল্ট সন্ধ্যা ছয়টায়। পরের দিন মাঠে পৌঁছে চক্ষু চড়ক গাছ তিল ধরবার জায়গা নেই। ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে দেখি দশ লাখ জমা পড়ে গেছে। ছয়টা বাজতে বাজতে কুড়ি লাখে পৌঁছে গেলো।
সন্ধ্যা সাতটায় রেজাল্ট বেরলো, মদন নামের এক জন পেয়েছে, মাইকে তার নাম ডাকা হচ্ছে মঞ্চে আসার জন্যে। একি ষোল সতের বছরের একটি ছেলে এসে বলল আমার নাম মদন। সবাই অবাক এই কিনা টাকার মালিক! বিশ্বাসই হচ্ছে না। সবাই চেপে ধরে বলল খোকা সত্যি করে বলো তো এই টাকা কি তোমার। এত লোক জন দেখে ও ঘাবড়ে গিয়ে সত্যি কথা বলে দিলো। বাবু আমি হলাম পকেট মার। আচ্ছা, সে তো বুঝলাম। কিন্তু খোকা তুমি সঠিক উত্তর কি করে লিখলে? ও বলল- বাবু পকেটমারদের মধ্যে আমার রোল নম্বর তের হাজার আর আমার মালিক্, যা পকেট মারি করে নিয়ে আসি সব নিয়ে নেয়, আর আমাকে রোজ একশত টাকা করে দেয় আমি এসবই লিখেছি । মঞ্চে সবাই অবাক হয়ে গেলো ।