Site icon আলাপী মন

শিকড়ের খোঁজ

শিকড়ের খোঁজ
-অযান্ত্রিক

 

 

এভাবে যদি পালানো যেতো ,নিজের থেকে;
যদি আমার কোনো বটগাছের শেকড়ের মতো টান থাকতো,
হারানো শেকড় খোঁজার অছিলায় পালানোর পথে থাকতো খোলা।
তাহলে পালিয়েই যেতাম,

যেতাম হঠাৎ করে কোনো হেমন্তের দুপুরে,যখন,
স্নান সেরে চকচক করতো রোদ্দুর,
গায়ে মেখে নিতাম আমার ছায়ার বিশ্বাসঘাতকতা,
আমার ছায়া সারাদিন আমার সাথে ঘুরঘুরির পর,
মিশে যেতো একটা রেখায়,

ছুটে গিয়ে উঠে পড়তাম ভিড় স্টেশনে,
কোনো সদ্য, বেঁচে উঠতে থাকা রেলের কামরায়,
একজন এগিয়ে এসে বলতো দাদা আগুন আছে ?
সপাট জবাবে না করে দিতাম,
সে আমায় চিনতে পারতেন না,
জানতে পারতেন না
আমি সদ্য আমার শহুরে শব দাহ করে এসেছি;
আমার আগুন ছোয়া মানা।

একজন ,জলের বোতল থেকে জল খেতে গিয়ে ,
আমায় দেখলেন ,ভাবলেন খুব চেনা লাগছে।
আমি তার দৃষ্টিতে সদ্য দাহিত চিতার ধোঁয়ার,
আড়াল খুঁজে পালিয়ে গেলাম,
আমার পরিচয় দেয়া মানা।

আমাকে দেখলেন একজন রাজনৈতিক নেতা,
যিনি তার পরবর্তী সভায় বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন।
আমাকে দেখলেন একজন ফল বিক্রেতা,
হাসলেন সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে মিল খুঁজে পেয়ে।
আমি তাদের সবাইকে মানুষের সামিল চেহারার কথা,
মনে করিয়ে দিলাম,

তারপর হঠাৎ করে কোনো অচেনা স্টেশনে নেবে পরে,
খুঁজতে শুরু করতাম আমার না থাকা শিকড়,
আমার গ্রামের বাড়ি, দুর্গাদালান, বেনে পুকুর,
একটা সামনের চায়ের দোকানে চা খেতে গেলাম,
যেখানে কোনো কল্প পরিচিত মুখে,
আমার হারিয়ে যাওয়ার কথা ,
আমার গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা আলোচনা হতে থাকলো।
কিন্তু কেউ আমায় চিনতে পারলো না
শুধু মধুকুপি ঘাসের ফাঁকে একটা অনন্য যৌবন লাউডুগি,
আমায় চেরা জিভ দেখিয়ে ভঙ্গিয়ে গেল।

আমি একটা পুরোনো সন্তানহারা ভেঙে পরা বাড়ির দরজায় টোকা দিলাম,
যে দরজাটা বহুদিন ধরে অপেক্ষায় আছে তার পরিচিত হাতের স্পর্শের জন্যে।
যে দরজার পিছনে দুটো কান অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়নি একটা স্বর শোনার জন্য।
যে স্বর দূর থেকে শুনলে না মনেহয়,
কিন্তু তীক্ষিত কানে “মা” ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।

সেই দরজা খুলে ফিরে পাবো সেই চেনা আঁচলের গন্ধ,
সেই আটপৌরে ভালোলাগা, ভাবনার ছাদ, বারান্দা,
সেই মুড়ির বাটি, কাঁসার গেলাসে জল।
যেখানা উড়ানের দাগ আজও সিঁথির সিঁদুরের মতো জ্বলছে।

কতগুলো কল্পিত মুখের সারি,চরম উত্তেজনায় চেয়ে থাকবে আমার দিকে,
তাদের রাশি রাশি জোনাকির মতো প্রশ্ন ছুটে আসবে আমার দিকে,
আমার শহুরে জীবন, আমার শহুরে পাওয়া ,শহুরে হারানো সব নিয়ে।
ধীরে ধীরে অন্ধকার ঢেকে ফেলবে আমার চোখ নাক, মুখ গলা

আমি একটা প্রদীপের আলো কে সাক্ষী করে চিৎকার করে উঠে বলবো
“আমি ওসবের কিছু জানি না,আমি ওসবের কিছু জানিনা”
কেউ বিশ্বাস করবেনা,
কেউ বিশ্বাস করবেনা,
আমার ঘুম ভেঙে যাবে।

Exit mobile version