ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
-পারমিতা চ্যাটার্জী

 

 

রুমির আজ মনটা বড়ো খারাপ — সবাই ভাইফোঁটা দিচ্ছে — ঘরে ঘরে বেজে উঠছে শঙ্খ উলুধ্বনি –।
তার বাড়িতেও তার ননদরা এসেছে — তাদের ভাইকে ফোঁটা দিতে — সেই শুধু বঞ্চিত এই উৎসব থেকে–।
অথচ তারও কিন্তু দাদা আছে– তার একমাত্র দাদা– কিন্তু সম্পর্কের ভাঙনে আজ সে বহুদূরে –।
মনে মনে ভাবে — ” দাদা তোর কি আজকের দিনেও একবার মনে পড়েনা ছোট্ট বোনটাকে– ফিরে তাকাস কোনদিন ফেলে আসা সেই স্মৃতিমধুর দিনগুলোতে “–?
– আমি এখনও চোখের সামনে দেখতে পাই ভাইফোঁটার সেই উৎসব মুখর দিনগুলো –মনে পড়ে তোর? মামারা সবাই আসত হাতে মায়ের জন্য শাড়িতে প্যাকেট নিয়ে– আর আমি বায়না করতাম- কিছুতেই দাদাকে আমি খালি হাতে ফোঁটা নিতে দেবোনা– আমারও জামা চাই —
আর তুই বলতিস– মা যে ভাইদের জন্য সব জামাকাপড় কিনেছে – তুই কেন আমায় খালি হাতে ফোঁটা দিবি–?
– আমার বিয়ে হোক তবে তো দেব- মায়ের তো বিয়ে হয়েছে তাই দিচ্ছে –
— তুই তখন হেসে আমায় আদর করে বলতিস– আমারও চাকরি হোক, তোকে খুব সুন্দর জামা কিনে দেব দেখিস– এবার শুধু চকোলেট নে–
আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলতাম — ও তুই এখনও চাকরি করিস না রে দাদা? তুই বড়ে হ, দেখবি এত্তো বড়ো চাকরি করবি-
— আর আমি তখন আমার বোনটিকে খুব সুন্দর জামা কিনে দেব–।
কোথায় হারিয়ে ফেললাম বল তো আমরা সেই সোনার দিনগুলো –?
কি করে তুই আমাকে এত ছোট মনের ভাবলি রে দাদা– এতদিনেও বোনকে চিনলি না ? বাবার বাড়িতে আমি অধিকার দেখাবো?– এ কথা আমি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি–।
তুচ্ছ একটা বাড়ির জন্য সম্পর্কটাই ভেঙে দিলি?
তুই জানিস না আমি আজও দেওয়ালে — তোর নামে ফোঁটা দিয়ে তবে জল খাই– ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা, যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দি আমার ভাইকে ফোঁটা। –
এই অধিকার টা তুই আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবিনা– যতদিন বাঁচব আমি দেওয়ালেই তোকে ফোঁটা দিয়ে যাবো–। যেখানেই থাকিস খুব ভালো থাকিস — জানি তুই খুব অসুস্থ- আমার জীবনও একটা সূতোয় ঝুলছে, যে কোন মুহূর্তে সুতোটা ছিঁড়ে যেতে পারে– তখনই সম্পর্কের সুতোটা সত্যি ছিঁড়ে যাবে– সেদিন আর দেওয়ালে ফোঁটা দেওয়ার জন্যেও কেউ থাকবেনা–।প্রার্থনা করি তুই সুস্থ হয়ে ওঠ–।
আমি আমার আজকের দিনের কাজটা সারি– তোর নামে দেওয়ালে ফোঁটা দি– ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা —-।

Loading

Leave A Comment