Site icon আলাপী মন

“উপহার”

উপহার
-রাখী চক্রবর্তী

 

 

দিভাই তাড়াতাড়ি এসো। সবাই ফোঁটা নিয়ে নিল।আমার তো এখনও হলো না। মেসেজটা দিভাই-এর ফোনে দিয়েই অনি ঠাকুর ঘরে পাতা আসনে বসে পড়লো। অনির আর তর সইছে না কখন দিভাই-এর গিফটটা নিয়ে বন্ধুদের দেখাবে। অনি ক্লাস নাইনে পড়ে তবুও ছেলেমানুষির শেষ নেই। অনির একমাত্র দিভাই বিন্দু খুব বড়ো ঘরের বৌ। তার ওপর বিয়ের পর এই প্রথম ভাই ফোঁটা। কাজেই একটু উদ্দীপনা তো অনির থাকবেই।
–ও মা দিভাই তো ফোনও করছে না। কখন মেসেজ দিলাম। ফোন করছি তুলছে না।

অনির মা বলল,একটু ধৈর্য ধরে থাকো দিভাই এক্ষুনি চলে আসবে।
-এই আমি বসেই রইলাম ভাই ফোঁটার আসনে। ফোঁটা নিয়ে তবেই উঠব ।
মা হেসে বলল, “এই ভালো। আমি রান্না ঘরের কাজ সেরে নিই এই ফাঁকে। বিন্দু এসে গেলে তো হৈহৈ শুরু হয়ে যাবে।
ঘড়িতে সকাল দশটা বাজে। অনি বাবু হয়ে বসে আছে ঠাকুর ঘরের মেঝেতে পাতা আসনে। সামনে থালাতে প্রদীপ, ধান, দুববো দেশলাই,ঘি দই। সব অনির মা সাজিয়ে রেখেছে। বিন্দু এসে শুধু মিষ্টির প্লেটটা সাজাবে।
অনি চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে দিভাাই-এর প্রতীক্ষাতে ।
ভাইয়া,,, ভাইয়া
দিভাই কখন এলি
-এই তো এখনি এলাম।
মা মা দিভাই এসেছে ।
-এই চুপ কর ভাইয়া। মাকে ডাকিস না। ফোঁটাটা আগে নিয়ে নে। মাকে সারপ্রাইজ দেবো।
-ঠিক আছে দিভাই  “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, , ,,যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা “অনি দি ভাইকে প্রণাম করে তার আশীর্বাদ নিল। বিন্দু একটা হাতের রিং ভাইয়াকে দিয়ে বলল, “এইটা কোনদিন কাউকে দিবি না।আমরা আশীর্বাদ সবসময় তোর কাছে থাকবে ।খুব ভালো থাকিস ভাইয়া

– “দিভাই কোথায় গেলি। এইমাত্র ঘরেতে তো ছিলিস। মা মা করে চিৎকার করে ডাকছে অনি। মা রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে বলছে কি রে এত ডাকছিস কেন?কপালে ফোঁটা কে দিল?
অনি কেঁদে কেঁদে বলছে দিভাই ফোঁটা দিয়েই চলে গেল।
-দুর পাগল ছেলে তোর দিভাই এখনো আসেনি বুঝলি।এর মধ্যে অনির বাবা চিৎকার করে বলছে ওরা মেরে ফেলল আমাদের বিন্দুকে। পাড়ার সব লোকজন অনিদের বাড়িতে। পুলিশ ফোন করেছিল অনিদের বাড়িতে। কাল রাতে বিন্দুকে তার স্বামী আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। বিন্দু তার বাবার কাছ থেকে কোনও টাকা পয়সা চাইতে পারবে না এই ছিল তার অপরাধ।
বিন্দুর মৃতদেহ এল। অনি ভাই ফোঁটার উপহার নিয়ে দিভাই-এর মৃতদেহের সামনে এসে বলল, “এসে আবার চলে গেলি কেন দিভাই? আর বললি না কেন যে এটাই তোর ভাইয়াকে দেওয়া শেষ উপহার।” ভাইয়ের কপালে ফোঁটাটা তখনও জ্বল জ্বল করছে চিতায় যখন অনির দিভাই দ্বিতীয় বার জ্বলছে।

Exit mobile version