জীবিত মহল
-অযান্ত্রিক
যারা বৃষ্টি আর অন্ধকার ,
বৃষ্টি আর অন্ধকারের মতোই দেখে,
তাদের চুম্বনাসক্তি থাকে কিনা জানা নেই,
তাদের জন্য বড় কষ্ট হয় নিলোফার।
অভিধানে মন দিলে তাদের জন্য,
একটা করুন অনুভূতি ঠেলে আসতে থাকে;
দুই চোখের পরিধীতে যত টুকু আলোর দাগ,
তারা বুঝতে পারে শ্যামা পোকার মতো;
সেটা যে কতটা কম কতটা নির্জীব,
তারা জানেও না, জানার চেষ্টাও করে না।
কালের কলম তুলি থামার তোয়াক্কা না করেই,
তারা ছুটে যান এক ক্যানভাস থেকে অন্য ক্যানভাসে,
প্রতিবার ক্যানভাসের কোনায় লেখা ব্যবহারিক মূল্য,
দেখে মিলিয়ে দেখেন উদ্বৃত্ত খোলাম কুচি।
তাদের ভালোবাসা শরীরী ক্ষুধার বিবর্তীত চিত্ররূপ,
সেটাকেই প্রেমের মুখোশ পরিয়ে রাখেন,
তারা গান করেন না,কবিতা পড়েন না,
নিদেন পক্ষে প্রথম সূর্যের আলো সারা শরীরে মেখে,
বলেন না সুপ্রভাত।
তারা কেবলই ডুবন্ত সূর্যের সাক্ষী,
তাদের ভাবায় রুজিরোজগার,চালের দাম,দুধের হিসাব,
তারা প্রত্যেকেই বড় হন ,বুড়ো হন ,
শৈশবের দেওয়াল ডিঙিয়ে বর্তমান দেখেন,
কিন্তু ভবিষ্যৎ দেখেন সন্তানের মুখে,
নিজেরা নিজেদের আয়নায় দেখেন শুধু,
কতটা চামড়া ঝুলছে,
কতটা চুল পেকেছে,
আর শেষের কতটা বাকি তাই জানতে।
এদের অনেকেই বহুদিন রাতের আকাশে দেখেননি,
দেখেননি লক্ষী পেঁচা কেমন শুক্লা দ্বাদশীর জ্যোৎস্নায়,
হেমন্তের সদ্য প্রসবিত বুকভরা মাঠে,
মেখে নেয় নবান্নের নির্যাস ইঁদুর খোঁজার অছিলায়।
দেখেননি উন্মত্ত যৌবনা বাতাবী লেবুর গাছের গন্ধে,
মাতাল মাজরা পোকার দলের ছুটে যাওয়া।
এরা দেখেননি আকুল শিশিরের স্রোতে,
ঝরে যাওয়া শিউলির থরে থরে সায়িত তাপের শবদেহ।
ভোরের আলো মাটি ছুতেই,আশেপাশের পুকুরের জলের,
সদ্য বিবাহিতার মতো লজ্জা পাওয়া,
যেখানে দৃষ্টি আর আকাশের সীমারেখা আঁকা,
সেখানে কেমন ঝুপ করে নেমে আসে আঁধারের চাঁদর,
তার গায়ে জোনাকির জ্বলা নেভায় যে অবিস্মরণীয়,
কলমকারী নকশা ফুটে ওঠে,
তাও দেখেননি চোখ ভরে।
তাদের বৃষ্টিতে ভিজে খোলা মাঠে ছুটে যাওয়া নেই,
তাদের টিনের চালে বৃষ্টির জলের ঝরে পরার
নিরলস তরঙ্গের মূর্ছনায় স্বাদ জানা নেই,
অঝোর ধরা ঝালোরের ঢাকা মাঠে কোনো গাছের কোটোরে,
ফুটন্ত প্রেমের তপ্ত উচ্ছাসের অনুভূতিস্বাদ জানা নেই,
তারা শুধু পয়সার, ক্ষমতার প্রভুত্ব জানেন,
তারা শুধু বছর বছর সময়অধিকাল ধরে এক ভাবে বেঁচে থাকা জানেন।
যারা বৃষ্টি আর অন্ধকার ,বৃষ্টি আর অন্ধকারের মতোই দেখে,
তারা জানেনও না তারা সত্যিই মৃত
এই প্রাকৃতিক জীবিত মহলে